Twitter কেন ‘X’ হয়ে গেল

maxresdefault (54)
কি কেন কিভাবে

Twitter কেন ‘X’ হয়ে গেল

ইলোন মাস্ক টুইটার কিনে নেওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে বহু জল ঘোলা হয়েছে। টুইটার বিতর্কের সর্বশেষ অধ্যায় হল, টুইটারের নাম ও লোগো পবির্তন। টুইটারের সেই চিরচেনা লোগোটির বদলে এখন ‘X’ লোগোটি শোভা পাচ্ছে। ‘X’ অক্ষরটি যে মাস্কের ভীষণ পছন্দ তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার মহাকাশ সংস্থার নাম SpaceX, তার জনপ্রিয় গাড়ির কম্পানি টেসলার একটি মডেলের নাম ‘X’, এছাড়াও তার নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পানির নাম xAI। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্রাউজারে x.com লিখলে টুইটারে চলে যাচ্ছে। এটি টুইটারের জন্য নতুন ঠিকান হলেও, x.com মোটেও নতুন কিছু নয়। অতীতে ইন্টারনেট ভিত্তিক জনপ্রিয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান paypal এর জন্যও এই x.com ডোমেইন ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু PayPal এই ঠিকানা বেশিদিন ব্যবহার করেনি, কারণ অনেকের কাছেই x.com বলতে নোংরা ওয়েবসাইট বোঝায়।

টুইটার কেন ‘X’ হয়ে গেল ?

x.com এর সূচনা

ইলোন মাস্ক তার x.com এর যাত্রা শুরু করেছিল আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে। ১৯৯৯ সালে ইলোন মাস্ক তার প্রথম স্টার্টআপ Zip2 বিক্রি করার পর, x.com নামে একটি ব্যাংকিং সাইট লঞ্চ করেন। তার ইচ্ছা ছিল সেই x.com সাইটকে one-stop shop financial services provider হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তারমানে এই একটি সাইটের মাধ্যমেই যেন গ্রহক তার ব্যাংকিং, মর্টগেজ থেকে শুরু করে সকল ধরনের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। ইলোন মনে করেন, x.com হল “The coolest URL on the internet.” অর্থাৎ তার মতে এটিই ইন্টারনেটের সবচেয়ে সেরা ওয়েব এড্রেস। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, x.com খুবই ছোট্ট একটি শব্দ, এটি ব্রাউজারে লিখেতেও খুব কম সময় লাগে। আরেকটি কারণ হল, X দিয়ে যে কোন কিছু কে বোঝানো হয়। যেমন, অংক করার সময় আমরা লিখি, মনে করি একটি সংখ্যা ‘X’। তেমনিভাবে মাস্কও চাচ্ছিলেন তার x.com কে তিনি তার সুবিধামত যেকোন দিকে পরিচালিত করতে পারবেন।

PayPal এর সাথে যাত্রা

২০০০ সালে x.com Confinity নামের একটি কম্পানির সাথে একত্রিত হয়ে যায়। এই Confinity হল PayPal এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান। পেপালের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স লেভচিন এবং পিটার থিয়েল এর সাথে ইলোন মাস্কের বেশ কিছু বিষয়ে মত পার্থক্য দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হয়ে দাড়ায় প্রতিষ্ঠানটি কি নামে সামনে আগাবে। মাস্ক চাচ্ছিলেন এখন থেকে এটি x.com নামের অনলাইন ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে। কিন্তু PayPal এর প্রতিষ্ঠাতারা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। তাদের কাছে x.com একটি অশুভ নাম মনে হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, x.com কোন নেংরা ওয়েবসাইটের সাথে যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে নয়। এমন অভিযোগ তারা গ্রাহকদের কাছ থেকেও পেয়েছেন।

নামের বিতর্ক ছাড়াও পেপালের আরো বেশ কিছু অসুবিধা ছিল। প্রধান সমস্যা হল প্রতিষ্ঠানটি তখনও পর্যন্ত লাভ করতে পারছিল না। এমন অবস্থায় তারা নামের বিতর্ককে খুব বেশি প্রাধান্য দেয়নি। Confinity টিমের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা PayPal নামেই তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে চায়। এক পর্যায়ে ইলোন মাস্ককে কম্পানি থেকে করে বের করে দেওয়া হয়। এবং সেখানেই x.com চাপা পড়ে যায়।

x.com এর প্রত্যাবর্তন

ইলোন মাস্ক ২০১৭ সালে আবারো তার প্রিয় x.com ডোমেইনটি PayPal এর কাছ থেকে কিনে নেন। তিনি বলেন তার কাছে এই ডোমেইন এর একিটি আবেগীয় মূল্য আছে। তার ২০ বছরের লালিত স্বপ্ন তিনি x.com এর মাধ্যমে আবারো পূর্ণ করতে চলেছেন। তিনি বলেন, PayPal যদি আমার পরিকল্পনামত কাজ করত, তাহলে আজকে তারা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কম্পানিতে পরিণত হতে পারত।

ইলোন মাস্ক একটি পডকাস্টে বলেছিলেন, টুইটার কেনার আগে তিনি চীনের WeChat এর মত একটি অ্যাপ বানানোর কথা ভাবছিলেন। WeChat হল চীনের একটি সুপার অ্যাপ। ফেসবুক, টুইটার এর মত সামাজিক মাধ্যম, মেসেঞ্জার, ওয়াটস অ্যাপের মত মেসেজিং, বিকাশ, নগদের মত মোবাইল ব্যাংকিং, উবার, পাঠাও এর মত রাইড শেয়ারিং, ফুডপান্ডার মত খাবার ডেলিভারি থেকে শুরু করে, যাবতীয় কাজ শুধুমাত্র WeChat এর মাধ্যমেই করা যায়। সেকারণে চীনাদের স্মার্টফোনে শুধু WeChat থাকলেই আর কোন অ্যাপের দরকার হয় না। ইলোন মাস্ক এমন একটি অ্যাপ প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী চালু করতে চাচ্ছিলেন। ২০২২ সালের শেষের দিকে টু্ইটার কেনার সময়, তার x.com এর পরিকল্পনা মাথায় ছিল। টুইটার কেনার সাথে সাথে তিনি বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারীর একটি প্লাটফর্ম পেয়ে যান। নিয়মিত ব্যবহারকারী সংগ্রহের জন্য তাকে নতুন করে শুরু করতে হয়নি। টুইটারের বর্তমান সিইও লিন্ডা ইয়াকারিনো আভাস দিয়েছেন, এই সাইটটি মাস্কের আদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চলেছে।

১৯৯৯ সালে x.com যেখানে ব্যার্থ হয়েছিল, সেখান থেকেই তারা যাত্রা শুরু করবে। তৎকালীন সময়ে ইন্টারনেট অনেক ধীরগতির ছিল। একেকটি ওয়েবপেজ লোড হতে অনেক সময় নিত। তাছাড়া তখন কোন স্মার্টফোন বা মোবাইল অ্যাপ এর মত ধারণাও ছিল না। কিন্তু ১৯৯৯ সালের মত একটি সমস্যা এখনও রয়ে গেছে, আর তা হল এর নাম, x.com। এই নামের প্রতি ইলোন মাস্ক এর যতই আবেগ আর ভালোবাস থাকুক না কেন, সাধারণ ব্যবহারকারীরা এখনও x.com নামটি কে ভালোভাবে দেখছে না।

তাছাড়া ইলোন মাস্ক টুইটার কিনে নেওয়ার বিষয়টিও অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। এরপর থেকে টুইটারের বিজ্ঞাপন অনেক কমে গেছে, কম্পানিটি বিপুল পরিমাণ লোকসানও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোন কম্পানি চীনের WeChat এর মকত সুপার অ্যাপ হবার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। তাছাড়া দেশটির নীতিনির্ধারকরা সামাজিক মাধ্যমগুলোর আর্থিক খঅতে জড়িত হবার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালে ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা ক্রিপ্টো পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া অনেক কঠিন। তাই ইলোন মাস্কের  one-stop shop financial services বা সুপার অ্যাপ তৈরী করা অতটা সহজ হবে না। তবে মাস্ক এমন অনেক কিছুই অর্জন করচেন, যা অতীতে অনেকেই অসম্ভব বলে মনে করত। এখন সময়ই বলে দিবে x.com কোথায় গিয়ে ঠেকে। আপনার কি মনে হয়, x.com কি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে পারবে?

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।