সত্যের খোঁজে

ট্রাম্প এবার গাজা দখল করতে চায় কেন

সূচনা ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তার আগ্রাসী ভূ-রাজনৈতিক নীতির প্রকাশ ঘটছে। পানামা খাল পুনরায় দখলের ঘোষণা, জোর করে গ্রীনল্যান্ড দ্বীপ কেনার চেষ্টা এবং কানাডার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশের পর এবার তিনি নজর দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বিতর্কিত অঞ্চল গাজা উপত্যকার দিকে।  ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজাকে সহিংসতা ও ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনার জন্য এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গাজার ২০ লাখ বাসিন্দাকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।  ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার এই দখলদারী মনোভাব বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ট্রাম্প কেন গাজা দখল করতে চায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে কিকেনকিভাবে র এই পর্বে। ট্রম্পের গাজা নীতি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত হওয়ার পর, ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রবেশের আগেই গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করে সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। অনেকেই মনে করছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ত ফিলিস্তিনিদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাইডেন প্রশাসনের চেয়েও অনেক বেশি বিধ্বংসী হতে যাচ্ছে।  ২০১৭ সালে ট্রাম্পই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। যা ছিল জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘন। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় জেরুজালেমকে ইসরায়েল বা ফিলিস্তিন কোন দেশের নিয়ন্ত্রণে না দিয়ে, একে আন্তর্জাতিক অঞ্চল হিসেবে রাখার কথা বলা হয়েছিল।  ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মধ্যস্থতায়, আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে আরব বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশকে ফিলিস্তিন ইস্যু পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল।  ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সর্বপ্রথম বিদেশি কোন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন।  বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা নিয়ে তার সবচেয়ে ভয়ংকর পরিকল্পনার কথা জানান। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজাবাসীদের অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে। তিনি গাজাকে একটি ধ্বংসস্তূপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে। তার মতে, অবিস্ফোরিত বোমা অপসারণ, গাজার পুনর্গঠন এবং সেখানকার অর্থনীতিকে পুনরায় সচল করাই হবে মূল লক্ষ্য। ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন যে, গাজা উপত্যকা বহু দশক ধরে মৃত্যু ও ধ্বংসের প্রতীক হয়ে রয়েছে এবং এই অঞ্চলটিকে তিনি ‘দুর্ভাগা’ হিসেবেও বর্ণনা করেন। ট্রাম্পের দাবি গাজার মানুষ সেখানে থাকতে চায় না; বরং তারা অন্য দেশে চলে যেতে আগ্রহী। তার মতে গাজার লোকেদের আসলে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলেই তারা গাঁজায় ফিরে যাচ্ছে। ট্রাম্প বরাবরই তার নিজস্ব মনগড়া বক্তব্যকে ফ্যাক্ট হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করে। মাত্র কিছুদিন আগেই ট্রাম্প বলেছিল গ্রীনল্যান্ডের বাসিন্দারাও নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হতে চায়। অথচ তারা দীর্ঘদিন থেকে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছে। অতীতে বাইডেন প্রশাসন গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে নগ্ন মিথ্যাচারের মাধ্যমে অনায্য যুদ্ধকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, ট্রাম্প প্রশাসন কোন রাখঢাক না রেখে, সরাসরি গাঁজা দখলে নেওয়ার মতো বেআইনি বিষয়কে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।  ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত জীবনে একজন সফল ডেভলপমেন্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। সে কারণে তিনি গাঁজা কেউ একটি আকর্ষণীয় প্রপার্টি হিসেবে দেখছেন। এই বিষয়টি তিনি নিজ মুখে স্বীকার করে বলেছেন গাঁজায় চমৎকার সব ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তৈরি করা হবে এবং এর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো অর্থায়ন করবে। তিনি বিশেষ করে সৌদি আরবের কথা বলেছেন। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পেছনে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ ব্যয় করেছে সেগুলোর মধ্যে ইলোন মাস্কের পরেই রয়েছে সৌদি আরবের সরকারী তহবিল পাবিলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। ট্রাম্প শুধু গাজা দখলই নয়; অতীতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে যেসকল অবৈধ ইসরায়েলী স্যাটেলমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল; ট্রাম্প সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তারমানে ফিলিস্তিনের বাকি অঞ্চলে দখলদারি চালানোর বিষয়ে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আরো প্রত্যক্ষ মদদ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, “হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বন্ধু আপনি।” নেতা নিয়াহু এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বাইডেন প্রশাসনের অধীনে যেসব অস্ত্র আটকে ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর সেসব অস্ত্র আবারো ইসরায়েলে সরবরাহ শুরু করেছেন। এছাড়া, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-কে ট্রাম্প প্রশাসন আর তহবিল না দেওয়ার ঘোষণা করার কারণেও নেতানিয়াহু সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সত্যের খোঁজে

ট্রাম্প পানামা খাল দখল করতে চায় কেন

ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে দখলদারী মনোভাব পোষণ করে আসছিল। ক্ষমতা গ্রহণের দিন উদ্বোধনী ভাষণেই ট্রাম্প পানামা খাল দখেলে নেওয়ার বিষয়ে জোড়ালো মন্তব্য করেন। এছাড়ও গ্রীনলান্ড দ্বীপ বা কানাডার মত দেশ দখল করে যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করার মত নানা বিষয়ে ট্রাম্প একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেই চলেছে। পানামা খাল কিভাবে তৈরী করা হয়েছিল, এই খাল কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং ট্রাম্প কেন পানামা খাল দখল করতে চায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে কিকেনকিভাবে র এই পর্বে। পানামা খালের গুরুত্ব বিশ্ব বাণিজ্য ও রাজনীতিতে পনামা খাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খালটি একই সাথে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। সমগ্র বিশ্ব বানিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয় পানামা খাল দিয়ে।  অতীতে আর্জেন্টিনার কেপ হর্ণের জলপথ ঘুরে, আমেরিকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে নৌযানভেদে সময় লাগত প্রায় ২ থেকে ৬ মাস। পরবর্তীতে পানাম খাল তৈরী হবার পর মাত্র ২০-৩০ ঘন্টার মধ্যেই আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যাতায়াত করা যায়। ১৫৩৪ সালে সর্বপ্রথম স্প্যানিশ প্রকৌশলীরা একটি জরিপ করে, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ ঘটানোর জন্য পানামায় একটি খালের প্রস্তাব দেন। তৎকালীন সময়ের নির্মান পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতার কারনে এই প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়।  প্রথম খাল খনন চেষ্টা তৎকালীন সময়ে পানামা ছিল কলম্বিয়ার অংশ। ১৮৫৯ সালে মিশরের মরুভূমির মধ্য দিয়ে সুয়েজ খাল নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হবার পর পানামা খাল নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু মরুভূমির মাঝে সুয়েজ খাল খনন আর, পানামার পাহাড়ি জঙ্গলে খাল নির্মাণ এক বিষয় নয়। সেই সাথে পানামার এই জঙ্গলে ছিল আগ্নেয় শিলার স্তুপ, দুরারোগ্য ব্যাধির সংক্রমন, হিংস্র বন্যপ্রাণী এবং বিষাক্ত পোকামাকড় সহ নানা রকমের প্রতবন্ধকতা। তাই পানামা খাল খনন করাটা, সুয়েজ খাল খননের চেয়েও অনেক বেশি কঠিন ছিল।  ১৮৮১ সালে একটি ফ্রেঞ্চ কোম্পানি ক্যারিবিয়ান ও ইন্ডিয়ান শ্রমিকদের দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করার মাধ্যমে পানামা খাল খননের কাজ শুরু করে। জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে ইয়েলো ফিভার আর ম্যালেরিয়া সহ বিষাক্ত পোকামাকড়, আর সাপের কামড়ে প্রচুর সংখ্যক শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ার মারা যায়। সেসময় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন শ্রমিক মারা যেতে থাকে। এছাড়া পানামার পর্বতময় এলাকার ভেতর দিয়ে খাল খনন করতে গিয়ে নিয়মিত ভূমি ধ্বস হতে থাকে। ফলে এক পা আগালে তিন পা পিছিয়ে আসতে হচ্ছিল। ম্যালেরিয়ার বিস্তার আর মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতির কারনে ১৮৮৯ সালে, ২০ হাজারেরও বেশী কর্মীর লাশ পেছনে ফেলে, ফ্রেঞ্চ কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পানামা খাল খননের কাজে ইস্তফা দেয়। সেই বিশাল ব্যর্থতায় ফ্রান্স সরকারের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। পানামা খাল খনন ১৮৯৮ সালে স্প্যানিশ আমেরিকান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হলেও, আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৈন্য পরিবহণ ও রসদ সরবারাহের ক্ষেত্রে আমেরিকানরা বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল। সেকারণে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট নতুন করে পানামা খাল খনন করার পরিকল্পনা করেন। তখনও পর্যন্ত কাগজে কলমে পানামার মালিক ছিল কলম্বিয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ার সাথে কোন চুক্তি না করে, পানামার বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনা করতে থাকে। ১৯০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র পানামার বিদ্রোহী গোষ্ঠী কে প্রস্তাব দেয়: তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে পানামার উপর খাল খননের অনুমতি দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র পানামা কে কলম্বিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করবে। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ খবরদারিতে রক্তপাত বিহীন এক বিদ্রোহের মাধ্যমে পানামা স্বাধীনতা লাভ করে। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল এলাকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখানে একটি মার্কিন ছিটমহল গড়ে তোলে। এবং ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল খননের কাজ শুরু করে। পানামা খালের প্রযুক্তি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর কে সংযুক্ত করার জন্য পানামা খাল খনন করা হলেও, পানামার এই অঞ্চলের ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত। সেকারণে পানামার দুই প্রান্তে বেশ কিছু লক বা জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এগুলো অনেকটা পানি দিয়ে তৈরী জাহাজের লিফটের মত কাজ করে। এগুলোর মাধ্যমে জাহাজগুলোকে পর্যায়ক্রমে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৬ মিটার বা প্রায় ৭ তলার সমান উঁচুতে তোলা হয়।  তবে পানামা খালের সমস্ত অংশই খাল খননের মাধ্যমে তৈরী করা হয়নি। এই অঞ্চলে প্রবাহিত চার্গেস নদীতে বাঁধ দিয়ে, গাটুন নামে এখানে একটি কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি করা হয়। বাঁধের পানি দিয়ে প্লাবিত ১৬৪ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত গাটুন হ্রদ; তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। এই হ্রদ থেকে আবারো বেশ কিছু জলকপাটের মাধ্যমে, জাহাজগুলোকে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের স্তরে নামিয়ে আনা হয়। পানামা খাল তৈরী করতে এখানকার কুলেবড়া পর্বতকে ৮ মাইল লম্বা, ৩০০ ফিট চওড়া ও ৫০ ফিট গভীর করে খনন করা হয়। দুসাধ্য এই কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ২৭ হাজার শ্রমিক মারা যায়। অবশেষে ১৯১৪ সালের ৩ অগাস্ট, পানামা খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। পানামা খালের বাণিজ্যিক এবং ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে পানামার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র পানামায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর থেকে, পানামাবাসী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পানামা খাল হস্তান্তর চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এবং তার প্রায় ২২ বছর পর ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পানামাবাসী পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তখন থেকে দেশটির সরকারী প্রতিষ্ঠান পানামা ক্যানাল অথরিটি খালটি ব্যবস্থাপনার দ্বায়িত্ব পালন করে আসছে। ট্রাম্প দখল করতে চায় কেন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু পানামা খাল খনন করেছিল, তাই বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন পানামা খাল আবারো যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসা উচিত। তাছাড়া ট্রাম্পের যুক্তি হল, পানামা খালে মার্কিন জাহাজ চলাচলে অধিক শুল্ক আরোপ করা হয়, এবং পানামা সরকারকে হাত করে, চীন কৌশলে এই খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সেকারণেই ট্রাম্প আবারো পানামা খালকে মার্কিন সরকারের দখলে আনতে চায়। ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণেও এ বিষয়ে হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্প শুধু মৌখিক হুমকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সে অনেকটা পদক্ষেপও নিতে শুরু করেছে। সাধারণত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথমে বড় বড় মিত্রদেশগুলোতে সফর করেন। তবে ট্রাম্পের পররাস্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও তার প্রথম সফরেই পানামায় গেছেন।  বর্তমানে বছরে প্রায় ১১ হাজারেরও বেশি নৌযান পনামা খাল দিয়ে যাতায়াত করে। যা পানামার জাতীয় অর্থনীতির ৬ শতাংশের জোগান দেয়। পানামা খাল দিয়ে চলাচলকারী জাহাজের ৭৪ শতাংশই মার্কিন জাহাজ। এরপরই রয়েছে চীনের অবস্থান। পানামা খালে চলা প্রায় ২১ শতাংশ জাহাজ চীনের।  পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেছেন, ‘খালটির ওপর চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো শক্তিরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’ সকল ধরনের নৌযান, এমনকি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন এই খাল দিয়ে চলাচল করতে পারে। পানামার সাথে চুক্তির মাধ্যমে খাল নির্মাণের সময় থেকে প্রায় ১০০ বছর যুক্তরাষ্ট্র এখানে এক ধরনের ছিটমহল তৈরী করে রেখেছিল। পানামার মধ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেই ছিটমহলে, মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, পুলিশ, এমনকি মার্কিন আদালত পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার স্বভাবসুলভ আগ্রাসনের মাধ্যমে, পানামা খালে চীনের দখলদারির কাল্পনিক অভিযোগ তুলে, বিশ্ব বানিজ্যের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পানামা

সত্যের খোঁজে

ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল কতটা ভয়াবহ

ভূমিকা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে এক ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। শুষ্ক আবহাওয়া, মরুভূমির তীব্র বাতাস এবং দীর্ঘস্থায়ী খরার ফলে এই আগুন একের পর এক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডস থেকে শুরু হওয়া এই দাবানল এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ এলাকা পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে, তার আয়তন সমগ্র ঢাকা শহরের আয়তনের চেয়েও প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। বিশাল এই বিপর্যয় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা হলেও, এর পেছনে মানবসৃষ্ট কারণও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দাবানল আসলে কী, দাবানল কিভাবে তৈরী হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল এতটা মারাত্নক হয়ে উঠল কেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে কিকেনকিভাবে র এই পর্বে। দাবানল কী? সাধারণত বনাঞ্চলে সংঘটিত অগ্নিকান্ডকে দাবানল বলা হয়। দাবানল সৃষ্টি হবার মত শুষ্ক পরিবেশে কোন বনে আগুন লাগলে, তা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বনের ঝড়া পাতা থেকে শুরু করে ছোট বড় সকল বৃক্ষ এই আগুনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে থাকে। ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই আগুন সামনে যা কিছু পায়, সবকিছু পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়। সেকারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাবানলের আগুন আপন মনে যতক্ষণ খুশি জ্বলতে থাকে। তবে অধিকাংশ সময়ই এই আগুনের সূত্রপাত হয় মানুষের দ্বারা। ইউএস ফরেস্ট সার্ভিসের তথ্য মতে, আমেরিকার প্রায় ৮৫ শতাংশ দাবানল মানুষের কারণে হয়ে থাকে। অযত্নে ফেলে রাখা ক্যাম্পফায়ারের আগুন বা সিগারেটের আগুন এর মত, মানুষের অসতর্ক আগুন থেকে সবচেয়ে বেশি দাবানল সৃষ্টি হয়। কোন কোন গবেষক বলেন, মাত্র ১ শতাংশ দাবানল প্রাকৃতিক আগুন থেকে তৈরী হয়। এগুলো মধ্যে বজ্রপাত এবং আগ্নেয়গিরির আগুনই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।  দাবানল কিভাবে তৈরী হয়? সমগ্র আমেরিকার বনাঞ্চলে বিভিন্ন উপায়ে বছরে প্রায় এক লক্ষ বার আগুন লাগে। এর ফলে প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ হেক্টর জমি পুড়ে যায়। গত তিরিশ বছরে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বন, আফ্রিকার কঙ্গোর রেইন ফরেস্ট এলাকা এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের লক্ষ লক্ষ একর এলাকার বনভূমি মানব সৃষ্ট দাবানলে ধ্বংস হয়েছে। সাধারণত চাষাবাদের নতুন জমি সৃষ্টি করার জন্য বনে আগুন দেওয়ার পর, এসব দাবানল সৃষ্টি হয়।  দাবানলের ক্ষতিকর প্রভাব আক্রান্ত অঞ্চল ছাড়াও আরো বহু দূর ছড়িয়ে পড়ে। দাবানলের আগুন থেকে অগ্নি ঝড়, আগুনে সাইক্লোন বা আগুনের টর্নেডোও তৈরী হতে পারে। যা নদীর মত বাঁধা পার করেও দাবনলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, দাবানলের ধোাঁয়া ও ছাইও অনেক দূরবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।  সাইবেরিয়ার তাইগা বনে তৈরী হওয়া দাবানলের ধোঁয়া ৩ হাজার মাইল দূরে জাপানের ওসাকা শহরকে অন্ধকার করে দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার ব্ল্যাক ফ্রাইডে বুশ-ফায়ারের ছাই ২ হাজার মাইল উড়ে গিয়ে নিউজিল্যান্ডে পড়েছিল।  দাবানল মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক যেভাবেই হোক না কেন, প্রথমত এটি ক্ষতিকর রূপ নিলেও, এ ভেতরে বেশ কিছু কল্যাণকর দিকও আছে। দাবনলের কারণে বনের মৃত ও পচনশীল দ্রব্যাদি পুড়ে গিয়ে পরিবেশ শুদ্ধ হয়। গাছের কাণ্ডে জমে থাকা পুষ্টি, অগ্নিকান্ডের পরে আবারো জমিতে ফেরত আসে। এছাড়া যাবতীয় ক্ষতিকর পোকামাকড় এবং রোগশোকের জীবাণুও ধ্বংস হয়ে যায়; যার ফলে নির্দিষ্ট সময় পর বনের বাস্তুসংস্থান আবারো নতুন করে গড়ে ওঠে। ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল সাম্প্রতিক সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় যে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রের ইতহাসের অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একটি বিষয় পরিষ্কার করা জরুরী, আর তা হল, ক্যালিফোর্নিয়ায় তৈরী হওয়া দাবানল কোন একক দাবানল নয়। কাছাকাছি সময়ে প্রায় ৫টি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় দাবানল তৈরী হয়েছে। প্রথম দাবানল শুরু হয়েছিল প্যালিসেডসে, এরপর ইটন, হার্স্ট, লিডিয়া এবং কেনেথ এলাকায় একের পর এক দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। সেকারণেই দাবানল পরিস্থিতি ক্যালিফোর্নিয়ায় এতটা ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।  যেহেতু দাবানল সৃষ্টি হবার প্রায় চার দিন পেরিয়ে গেলেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি; তাই এর প্রকৃত ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এই দাবানলে ইতোমধ্যেই অন্তত ১১ জন মারা গেছেন, ১০,০০০-এরও বেশি ঘরবাড়ি এবং স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে, এবং ১,৫৩,০০০-এরও বেশি মানুষকে তাদের এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই দাবানল প্রথম শুরু হয়েছিল প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায়, সেখানে এখন পর্যন্ত ২১,০০০ একরের বেশি জমি পুড়ে গেছে। এছাড়া ইটন দাবানল প্রায় ১৪,০০০ একর জমি ধ্বংস করেছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দাবানলগুলোর মধ্যে হার্স্ট দাবানলে ৭৭১ একর, লিডিয়া দাবানলে ৪০০ একর এবং কেনেথ দাবানলে ১,০০০ একর জমি পুড়ে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়া এমনিতেই দাবানলপ্রবণ এলাকা। ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমি এবং আবহাওয়া দাবানলের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ি এলাকা এবং ঘন গাছপালা দাবানলের বিস্তারকে সহজ করে তোলে। শুষ্ক ঘাস, ঝোপঝাড় এবং গাছপালা দ্রুত জ্বলে ওঠার কারণে আগুন সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তারা অতীতে ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড় এবং বনাঞ্চলে দাবানলের আগুন দেখেছেন, কিন্তু এবার তারা চোখের সামনে দাবানলে তাদের শহর পুড়ে যেত দেখল। কেন এত ভয়াবহ হল ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল এত দ্রুত ছড়ানোর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী খরা, শুষ্ক আবহাওয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমি অঞ্চল থেকে আসা তীব্র বাতাস। এই বাতাসকে সান্তা আনা বাতাস নামে অভিহিত করা হয়। যার গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৬০ কিমি পর্যন্তও পৌঁছেছে। এই ঝড়ো বাতাসই মূলত আগুনকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। দাবানল শুরু হওয়ার কারণ এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে, ক্যালিফোর্নিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উদ্ভিদ এবং ভূমি অত্যন্ত শুষ্ক হয়ে গিয়েছিল, যা আগুন ছড়ানোর জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে।  বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তীব্র বাতাসের প্রভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলে পড়ে, তখন বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুন শুরু হতে পারে। তবে প্রাথমিক তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়নি। তবে সমগ্র আমেরিকার প্রায় ৮৫ শতাংশ দাবানল মানুষের কারণে হয়ে থাকলেও, ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় ৯৫ শতাংশ দাবানলের আগুনই মানবসৃষ্ট। ৭,৫০০ অগ্নিনির্বাপক কর্মী এবং ন্যাশনাল গার্ড ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। তবে পানির সংকট এবং বাতাসের উচ্চ গতি দাবানল নেভানোর প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপনে পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত ফায়ার হাইড্রেন্ট গুলোতে পর্যাপ্ত পানির চাপ ছিল না। এরই মধ্যে আবার দাবানল তৈরী হবার কয়দিন আগে, প্যাসিফিক প্যালিসেডসের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, গত মাসেই ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের জন্য ৭ মিলিয়ন ডলার বাজেট কর্তন করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে দাবানল তৈরী হবার মাত্র ২০ দিন আগে, এখানকার ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান উচ্চপদস্থ  কর্মকর্তাদের চিঠি লিখে সতর্ক করেছিলেন যে, বাজেট কাটছাঁটের কারণে দাবানল, বন্যা, ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এসব বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তারমানে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল যদি সরাসির মানবসৃষ্ট কারণে নাও ঘটে থাকে, তবে মানুষের অদূরদর্শী আচরণের কারণে তা আরো বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দাবানলের সরাসরি সংযোগ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ খরা এবং বৃষ্টির অনিয়মিত চক্র পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে এমন বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এই সঙ্কট আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো, এই মুহুর্তে ‍পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সত্যের খোঁজে

হলিউড কী পুড়ে গেছে

সূচনা বিশ্ব চলচিত্র এবং বিনোদনের রাজধানী হলিউড। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলে হলিউড পুড়ে যাওয়ার কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আসলেই কী বিশ্ব বিনোদনের শীর্ষ ইন্ডাস্ট্রি হলিউড পুড়ে গেছে? সে সম্পর্কেই জানব কিকেনকিভাবে র এই পর্বে। হলিউড কী? আমরা মনে করি, হলিউড হয়ত বাংলাদেশের এফডিসির মত কোন একটি বিশাল স্টুডিও। কিন্তু বাস্তবে হলিউড নিজে কোনো স্টুডিও নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একটি বিখ্যাত এলাকা। তবে এটি বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, এবং বিনোদন শিল্পের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, হলিউড হল সেই জায়গা যেখানে ইউনিভার্সাল, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, এবং ডিজনির মত বহু বিখ্যাত স্টুডিও তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। এবং এখানেই ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল, ব্যয়বহুল এবং বড় বড় সিনেমা বানানো হয়েছে। যে “হলিউড” নামটি শুনলে মানুষের মনে বিখ্যাত সব সিনেমা আর গ্ল্যামারের ছবি ভেসে ওঠে, তা মূলত এই এলাকার চারপাশে গড়ে ওঠা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য। তাই হলিউড কোনো নির্দিষ্ট স্টুডিও নয়, এটি লস অ্যাঞ্জেলস শহরের একটি এলাকা যা বিশ্ব বিনোদন জগতের অলিখিত রাজধানী হিসেবে পরিচিত। হলিউড এর আইকন হলিউডের সবচেয়ে অাইকনিক জায়গা হল এই হলিউড সাইন। এটি লস অ্যাঞ্জেলেসের সান্তা মনিকা পাহাড়ের হলিউড হিলসের মাউন্ট লি তে অবস্থিত গ্লিফিথ পার্কের একটি অংশ। হলিউড হিলসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখান থেকে পুরো লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের এক অনন্য দৃশ্য দেখা যায়। বিশাল সাদা অক্ষরে “HOLLYWOOD” লেখা সাইনটি, অনেক দূর থেকেও দেখা যায়। সর্বপ্রথম প্রথম ১৯২৩ সালে, একটি আবাসন প্রকল্পের বিজ্ঞাপনের জন্য “HOLLYWOODLAND” নামে এখানে একটি সাইন বোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। যার প্রতিটি অক্ষর ছিল প্রায় ৫০ ফুট লম্বা। ১৯৪৯ সালে, “LAND” অংশটি সরিয়ে ফেলা হয়, এবং তখন থেকে এটি শুধু “HOLLYWOOD” হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে এটিই লস অ্যাঞ্জেলেস এবং পুরো বিনোদন জগতের প্রতীক হয়ে উঠেছে। হলিউডের আরো দুটি বিখ্যাত জায়গা হল Hollywood Boulevard এবং Sunset Boulevard। হলিউড বুলেভার্ড মূলত হলিউড ওয়াক অফ ফেম, চায়না থিয়েটার এবং ডলবি থিয়েটারের জন্য বিখ্যাত। এই ডলবি থিয়েটারেই প্রতি বছর অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা “অস্কার” পুরষ্কার প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, হলিউডের গ্ল্যামারাস জীবনের ঝলক সামনা সামনি উপভোগের জায়গা হল সানসেট বুলেভার্ড। এই সড়কটি স্ট্রিট পারফর্মারদের নানারকম প্রদর্শনী, হলিউড থিমযুক্ত দোকান, বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট, নাইটক্লাব, এবং মিউজিক মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জন্য জনপ্রিয়। হলিউড কী সত্যি পুড়েছে? লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান দাবানলের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে যে, বিখ্যাত হলিউড সাইন পুড়ে গেছে। কিন্তু এটি একটি ভুয়া খবর। হলিউড সাইন ট্রাস্টের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, সাইনটি অক্ষত আছে এবং দাবানলের কারণে কোনো ক্ষতি হয়নি। এমনকি সাইনটি আগুনের সরাসরি হুমকিতেও ছিল না। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ছবি ও ভিডিওগুলো সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। তবে হলিউড সাইন থেকে প্রায় ১০ িকলোমিটার দূরে হলিউডের অন্য দুটি বিখ্যাত এলাকা হলিউড বুলেভার্ড এবং সানসেট বুলেভার্ড সহ আশে পাশের এলাকায় সত্যি সত্যি দাবানলের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া হলিউড সাইন থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্রতীরবর্তী প্যাসিফিক প্যালিসেডসে বহু হলিউড তারকার বিলাসবহুল বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  সহজ করে বলতে গেলে, হলিউড যেহেতু কোন একক জায়গা নয়, তাই সেই অর্থে হলিউড পুড়ে যায়নি। কিন্তু বিশ্ব বিনোদনের রাজধানী হলিউড দাবানলের কারণে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছে। আরেকটি বিষয় পরিষ্কার করা জরুরী, আর তা হল, ক্যালিফোর্নিয়ায় তৈরী হওয়া দাবানল কোন একক দাবানল নয়। কাছাকাছি সময়ে প্রায় ৫টি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় দাবানল তৈরী হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এই দাবানল কতটা ভয়াবহ সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কিকেনকিভাবে র এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

Shopping Cart
Scroll to Top