জীবনযাপন

ভারত বনাম পাকিস্তান সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

ভূমিকা ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই রয়েছে। কাশ্মির ইস্যু, সীমান্ত সংঘাত এবং পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা উভয় দেশের সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন যে, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে কে জিতবে? এর উত্তরটা আসলে বেশ জটিল। দুই দেশের সামরিক জনবল, অস্ত্রশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বাজেট, পারমাণবিক ক্ষমতা, এবং কৌশলগত নীতি ও অবস্থান সহ আরো বেশ কিছু বিষয়ের উপর যুদ্ধের ফলাফল নির্ভর করে। ভারত-পাকিস্তানের তুলনা সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকি সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সামরিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পরেই ভারতের অবস্থান। ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে স্বীকৃত। এই সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১২ তম। তারমানে সামরিক শক্তির দিক থেকে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে ৮ ধাপ এগিয়ে। তবে সেই অর্থে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি ভারতের তুলনায় একেবারেও দুর্বল নয়। ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে পাকিস্তানের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ৭.৬৪ বিলিয়ন ডলার। তারমানে ভারতের প্রতিক্ষা বাজেট পাকিস্তানের প্রায় ১০ গুণ বেশি। তবে ভারত বনাম পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজর্ভের দিকে তাকালে বিষয়টি খুব বেশি অস্বাভাবিকও লাগবে না। কারণ ভারতের রিজার্ভ ৬২৭ বিলিয়ন ডলার অন্যদিকে পাকিস্তানের রিজার্ভ আছে মাত্র ১৩.৭ বিলিয়ন ডলার। জনসংখ্যার দিক থেকেও ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ভারতে জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। ২০২২ সালে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি।  । সামরিক শক্তির তুলনা আধুনিক সামরিক শক্তি মূলত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, কৌশল এবং অস্ত্রের মানের ওপর নির্ভর করে। সেনা সদস্যের সংখ্যা একটি দেশের সামরিক সক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটি সামগ্রিক সামরিক শক্তি নির্ধারণের একমাত্র সূচক নয়। ভারতের সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ ৫৫ হাজার, অন্যদিকে পাকিস্তানের সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার। ভারতের রিজার্ভ সৈন্য ১১ লক্ষ ৫৫ হাজার এবং পাকিস্তানের রিজার্ভ সৈন্য ৫.৫ লক্ষ। ভারতের আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার এবং পাকিস্তানের আধা-সামরিক বাহিনীতে প্রায় ৫ লক্ষ সদস্য রয়েছে। ভারতের ট্যাংকের সংখ্যা ৪ হাজার ২০১টি, পাকিস্তানের ট্যাংক আছে ২ হাজার ৬২৭টি। ভারতের সাঁজোয়া যান আছে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৯৪ টি, পাকিস্তানের সাঁজোয়া যান আছে ১৭ হাজার ৫১৬টি। ভারতের বিমান বাহিনীতে মোট বিমানের সংখ্যা ২ হাজার ২২৯ টি। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯টি। ভারতের যুদ্ধ বিমান আছে ৫১৩টি; পাকিস্তানের যুদ্ধ বিমান ৩২৮টি। এট্যাক হেলিকপ্টার সহ ভারতের মোট হেলিকপ্টার আছে ৮৯৯ টি, পাকিস্তানের আছে ৩৭৩টি হেলিকপ্টার। এছাড়া ভারতের পরিবহন বিমান ২৭০ টি এবং পাকিস্তানের পরিবহণ বিমান ৬৪ টি। ভারতের কাছে ফ্রান্সের তৈরী রাফাল যুদ্ধবিমানের মত আধুনিক বিমান আছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে থাকা সর্বাধুনিক যুদ্ধ বিমান হল, চীন ও পাকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত JF-17 Thunder যুদ্ধবিমানের সর্বশেষ সংস্করণ Block III। তবে ভারতেও নিজস্ব প্রযুক্তিতে নির্মিত তেজস সিরিজের বেশ কয়েকটি মডেলের উন্নত যুদ্ধবিমান রয়েছে। লজিসস্টিকসের দিক থেকে ভারতের বিমানবন্দর আছে ৩১১টি আর পাকিস্তানের আছে ১১৬টি। ভারতীয় নৌ বাহিনীতে মোট নৌযানের সংখ্যা ২৯৩ টি। পাকিস্তান নৌ বাহিনীর মোট নৌযানের সংখ্যা ১২১টি। ভারতের ফ্রিগেট যুদ্ধ জাহাজ আছে ১৪ টি, পাকিস্তানের ৯টি। ভারতের ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধ জাহাজ আছে ১৩ টি। কিন্তু পাকিস্তানের কোন ডেস্ট্রয়ার নেই। ছোট আকারের করভেট যুদ্ধ জাহাজ ভারতের আছে ১৮টি আর পাকিস্তানের ৯টি। ভারতের সাবমেরিন আছে ১৮টি, পাকিস্তানের ৮টি। এছাড়া ভারতের টহল নৌযান আছে ১৩৫টি এবং পাকিস্তানের টহল নৌযান আছে ৬৯টি। এসবের বাইরে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই পারমানবিক অস্ত্রভান্ডার আছে। ভারতের কাছে আনুমানিক ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ১৭০টি। ভারত “No First Use” অর্থাৎ প্রথমে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতিতে অটল। তারমানে ভারত শুধুমাত্র আত্মরক্ষার প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। কিন্তু পাকিস্তান “No First Use” নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়; তারা অস্তিত্বগত হুমকির মুখে প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য ভূমি-ভিত্তিক Agni সিরিজ, সমুদ্র-ভিত্তিক Arihant শ্রেণির সাবমেরিন, এবং বিমান-ভিত্তিক একাধিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য Shaheen ও Ghaznavi সিরিজের ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছে। তবে পাকিস্তান এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ২০০-২৫০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। উপরের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয় যে সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের দিক থেকে ভারত পাকিস্তানের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে। তবে পাকিস্তান পারমানবিক অস্ত্রের মজুদ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহারের নীতিমালার দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। কে এগিয়ে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বারবার গণতন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটেছে। দেশটি বেশিরভাগ সময়ই সামরিক বাহিনীর শাসনে পরিচালিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশের রাজনীতি, প্রশাসন এমনকি অর্থনীতির একটি বড় অংশও নিয়ন্ত্রণ করে। সেনাবাহিনীর রয়েছে নিজস্ব ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য, ব্যাংক, আবাসন প্রকল্প, এমনকি খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণনেও তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে যুদ্ধ বা সংঘাতের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা একটি যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরী। অন্যদিকে, ভারত অন্তত কাগজে কলমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই যুদ্ধের নীতিনির্ধারণে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, এবং সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে বিভিন্ন স্তরের পর্যালোচনা দরকার হয়। ভারতের একটি জটিল চ্যালেঞ্জ হল তাদের সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ চীন সীমান্তে ব্যস্ত থাকে। বিশেষ করে লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশ এলাকায় ভারত চীনের দিক থেকে বরাবরেই চাপের মধ্যে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে বিশাল স্থল সীমান্ত, সেটিও কৌশলগতভাবে অনেকটাই সংবেদনশীল। গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, কারণ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। অতীতে বাংলাদেশকে “মিত্র” রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করলেও, এখন ভারত নীতিগতভাবে বাংলাদেশকে একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্যের পর থেকে। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের আরো এটি বড় সুবিধা রয়েছে। আর তা হল পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন। ভারত-চীন সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীন ও পাকিস্তানের দ্বৈত চাপ ভারতের কৌশলগত অবস্থান দুর্বল করে দিতে পারে। এছাড়াও, পাকিস্তান তুলনামূলক অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলেও, তারা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক খাতে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করে চলেছে শুধুমাত্র ভারতকে মোকোবেলা করার জন্য। তাই পাকিস্তান না খেয়ে হলেও ভারতকে দমন করার বিষয়ে কোন ছাড় দিতে চাইবে না। প্রথাগতগত যুদ্ধে যদি পাকিস্তানের অবস্থান ভেঙেও পড়ে, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান ভারতের আগে পারমানবিক হামলা চালাতে পারে। সব মিলিয়ে, ভারত সামরিক সংখ্যার বিচারে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও, একসাথে সব শক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কারণ চীন, বাংলাদেশ, এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা – এই তিনটি ফ্রন্টে ভারতকে সমানভাবে নজর রাখতে হয়। তাই পাকিস্তানকে সামরিকভাবে মোকাবেলা করা ভারতের জন্য কখনোই খুব সহজ কাজ নয়।

জীবনযাপন

হজ্জ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ

ভূমিকা মুসলিমদের জীবনের এক বিশেষ আধ্যাত্মিক সফর হজ্জ। প্রতি বছর পৃথিবীর সকল দেশ থেকে আগত প্রায় ৩০ লক্ষ মুসলিম হজ্জ পালন করেন। তাই হজ্জ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত। ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি লোক হজ্জ পালন করতে যায়। হজ্জ পালনে শীর্ষ ৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান পঞ্চম। হজ্জের উৎপত্তি  হজ্জ ইসলামের ৫ টি মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। হজ্জের আভিধানিক অর্থ ‘কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করা, ‘সংকল্প করা’বা ‘চক্রাকারে প্রদক্ষিণ করা’। ইসলামের পরিভাষায় হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর দেখানো প্রক্রিয়ায়, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থেকে নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করার নামই হজ্জ। শারিরিক ও আর্থিকভাবে সামর্থবান মুসলিমদের উপর জীবনে অন্তত একবার হজ্জ পালন করা আবশ্যক। হিজরী বর্ষপঞ্জির সর্বশেষ মাস জিলহজ্জের ৮ থেকে ১২ তারিখ হল হজ্জের জন্য নির্ধারিত সময়। বর্তমানে প্রচলিত হজ্জ হযরত মুহাম্মদ (স) এর দেখানো পথে পালন করা হলেও, আল্লাহর নির্দেশে সকলের জন্য হজ্জের প্রবর্তন করেন হয়রত ইব্রাহিম (আ)। হয়রত ইব্রাহিম (আ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ) পবিত্র কাবা শরীফ পুনঃনির্মান করে হজ্জ পালন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে বহু লোক হজ্জ পালন করতে কাবা শরীফে একত্রি হয়। মুসলিমরা কিভাবে হজ্জ পালন করবেন, তার পূর্নাঙ্গ প্রক্রিয়া হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর বিদায়ী হজ্জে দেখিয়ে গিয়েছেন। হজ্বকালীন সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় ইহরাম; যার প্রধান চিহ্ন হলো দুই খন্ড সেলাইবিহীন সাদা কাপড়। ইহরাম পরিধানের কিছু নির্দ্দিষ্ট স্থানকে বলা হয় মিকাত। মিকাত অতিক্রমের আগেই ইহরাম করতে হয়। ইহরাম হল সৃষ্টিকর্তার কাছে সকলের সমতা ও একতার প্রতীক। ইহরামে থাকা অবস্থায় সবাই সমান, কে ধনী কে গরিব বাইরে থেকে দেখে তা বোঝার কোন উপায় নেই। ইহরামের পর থেকে তালবিয়াহ নামক দোয়া পাঠ করা হয় এবং এই দোয়া পুরো হজ্জ ব্যপী জারি থাকে। তালবিয়াহ হলো-‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা। ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা লাকা ওয়াাল মুলকা লা-শারীকা লাক। এর অর্থ হলো, হে আল্লাহ, আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই। উমরাহ হজ্জের মতই বিশেষ এক তীর্থ যাত্রা হল উমরাহ। হজ্জের সাথে উমরার সাদৃশ্য থাকলেও; হজ্জের গুরুত্ব উমরার চেয়ে অনেক বেশি। ফরজ হজ্জের জন্য বছরের নির্ধারিত সময় থাকলেও, উমরার জন্য কোনো দিন-তারিখ নির্দিষ্ট নেই। উমরা বছরের যেকোন সময় করা যায়। আরবি ভাষায় উমরা শব্দের অর্থ হল জনবহুল স্থানে ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় উমরা বলতে, ইহরাম অবস্থায় কাবার চারপাশে তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে সায়ী করা বা দৌড়ানোকে বোঝায়। হজ্জ ও উমরাহ পালনের পরম্পরার ভিন্নতার জন্য হজ্জ তিন প্রকার হতে পারে। যেমন: ১. হজ্জে ইফরাদ ২. হজ্জে কেরান এবং ৩. হজ্জে তামাত্তু। হজ্জে ইফরাদ হল, শুধুমাত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম করা। হজ্জে কিরান হল, হজ্জ ও উমরা উভয়ের উদ্দেশ্যে এক সঙ্গে ইহরাম করা; এক্ষেত্রে প্রথমে উমরা সম্পাদন করে পরে হজ্জ করতে হয়। এবং হজ্জে তামাত্তু হল, প্রথমে শুধু উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম করা ও উমরা শেষে ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে, পুনরায় হজ্জের ইহরাম করে হজ্জ সম্পাদন করা। হজ্জের গুরুত্ত্বপূর্ন অংশ হল তাওয়াফ। তাওয়াফ হল মসজিদুল হারামের কেন্দ্রে অবস্থিত ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা কে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করা। হজ্জের শুরুতে এবং শেষে হাজীরা ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ৭ বার কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করেন। হজের মূল কাজ হজের মূল কাজ শুরু হয় ৮ জিলহজ এবং শেষ হয় ১২ জিলহজ। এ পাঁচ দিনের ফরজ ও ওয়াজিব কাজগুলো হাজীদের সচেতনতার সাথে যথার্থভাবে আদায় করতে হয়। ৮ জিলহজ হাজিদের মক্কার কাছাকাছি একটি উপশহর মিনায় পৌঁছাতে হয়। মিনা তাবুর শহর হিসেবেও পরিচিত। মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। মক্কা থেকে আরাফাতের দিকে যাওয়ার রাস্তার পাশে প্রায় ২০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে মিনার অবস্থান। এখানকার লক্ষাধিক তাবুতে হাজিদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ৯ জিলহজের সকালে মিনা থেকে রওনা হয়ে আরাফাতের প্রান্তরে পৌঁছতে হয়। সেদিন সূর্যাস্তের পর হাজিরা আরাফা থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা হন। ৯ তারিখের দিবাগত রাতে মুজদালিফায় বিশ্রাম নিয়ে, সূর্যোদয়ের আগেই আবার মিনার উদ্দেশে যাত্রা করতে হয়। ১০ জিলহজের কাজ হল শুধুমাত্র শয়তানের বড় স্তম্ভে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা। পাথর মারার পর কুরবানির নির্দিষ্ট নিয়মে হাজিরা কুরবানি সম্পন্ন করেন। কোরবানি করার পর পুরুষেরা মাথা কামিয়ে ফেলে এবং নারীদের চুলের অংশ বিশেষ ছাঁটতে হয়। ১০ জিলহজ মাথা মুন্ডনের পরই ইহরাম অবস্থার অবসান ঘটে। এসমস্ত কাজ শেষে সেদিন কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে হয়। অবশ্য ভিড় এড়ানোর জন্য এ তাওয়াফ ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করা যেতে পারে। ১১ জিলহজে হাজীরা শয়তানের তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করেন। ১২ জিলহজে আবারো শয়তানের তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে মোট ২১টি পাথর মারতে হয়। ১১ ও ১২ তারিখে পাথর মারার সময় ছোট থেকে বড় স্তম্ভের দিকে যেতে হয়। ১২ তারিখের পর একজন হাজী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। মদিনা সফর একজন হাজী হজের আগে মদিনায় না গেলে, হজ্জ পরবর্তী সময়ে মদিনায় গিয়ে আট দিন অবস্থান করতে হয় এবং মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। মদিনায় যাওয়া যদিও হজের অংশ নয়। তবুও বিনা কারণে মদিনায় না যাওয়া রাসূল (সা) এর সাথে বেয়াদবির সামিল। হজের পরে মক্কা শরিফে অবস্থান কালে হাজিরা একাধিক ওমরা পালন করতে পারেন। হজ্জ থেকে নিজ দেশে ফেরার আগে হাজীদেরকে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়, এটিও হজ্জের গুরুত্বপূর্ন অংশ। হজ্জ সম্পাদন করতে পারা প্রতিটি মুসলিমের জীবনের বিশেষ অর্জন। হজ্জ শুধুমাত্র ধনীদের জন্য ফরজ হলেও, বহু দরিদ্র মুসলিম জীবনে একবার হজ্জ করার উদ্দেশ্যে সারাজীবন একটু একটু করে অর্থ সঞ্চয় করেন। বাংলা অঞ্চলে মুসলিম বিজয় ও ইসলাম প্রচারের পর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা হজ্জ পালন করে আসছেন। ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশের মুসল্লিগণ ভারতের মুম্বাই হয়ে, জাহাজে চড়ে হজ্জ করতে যেতেন। যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে মুম্বাই পর্যন্ত গিয়েই অনেকে অসুস্থ হয়ে ফিরে আসতেন; তাঁদের বলা হতো মুম্বাই হাজী। বৃহত্তম মানব সমাবেশ বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক মুসলিম প্রতিবছর হজ্জ পালন করতে যায়। হজ্জ পালনে শীর্ষ ৫ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান পঞ্চম। প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি লোক হজ্জ করতে যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে। শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য দেশগুলো হল পাকিস্তান, ভারত ও মিশর। বাংলাদেশ থেকে হজ্জ যাত্রার বাইরেও, সৌদি আরব প্রবাসী বহু বাংলাদেশী প্রতিবছর হজ্জ পালন করে থাকেন। হজ্জের মৌসুমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মানব সমাবেশের ভিড় সামলাতে, প্রায় ১ লক্ষ নিরাপত্তা কর্মী এবং ২৫ হাজার চিকিৎসা সেবী নিয়োজিত থাকে। একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে লক্ষ লক্ষ হাজী অবস্থান করায়, হজ্জের প্রায় সবগুলো আচার পালন করতে গিয়েই প্রচন্ড ভিড়ের সৃষ্টি হয়। অতীতে বহুবার ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে বহু সংখ্যক হাজী মৃত্যু বরণ করেছেন। ১৯৯০ সালে এরকমই এক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৪২৬ জন হাজী পদদলিত হয়ে মারা যায়। সর্বশেষ বড় দুর্ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে, সেবছর প্রায়

জীবনযাপন

রোজার বিজ্ঞানভিত্তিক উপকারিতা কী

রোজার বিজ্ঞানভিত্তিক উপকারিতা কী? পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি। ইসলাম ধর্মের এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমই নয়, বরং এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। রমজান মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি আত্মসংযম, ধৈর্য, এবং সহানুভূতির মতো গুণাবলী অর্জন করে। এছাড়া, বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোজা শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানসিক চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  রোজার বহুমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে কিকেনকিভাবে র এই পর্বে। শারীরিক উপকারিতা প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মে উপবাসের চর্চা রয়েছে, এবং আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে যে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ইসলাম ধর্মে আত্মশুদ্ধি, সংযম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা পালন করা হয়। তবে বিজ্ঞানীরা একে স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এক কার্যকরী কৌশল হিসেবেও ব্যাখ্যা করেছেন।  রোজার সময় দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার ফলে দেহের অভ্যন্তরে জমে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থগুলো প্রাকৃতিকভাবে বের হয়ে যায়। লিভার, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গগুলো এই সময়ে তাদের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করে এবং দেহকে পরিষ্কার করে। রোজার সময় পাকস্থলী এবং হজমতন্ত্র বিশ্রাম পায়, যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, রোজার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, অ্যাসিডিটি এবং বদহজমের মতো সমস্যাগুলো কমে যায়। যখন আমরা দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকি, তখন শরীর গ্লুকোজের পরিবর্তে সঞ্চিত চর্বি থেকে শক্তি উৎপাদন শুরু করে। এই প্রক্রিয়া ‘কিটোসিস’ নামে পরিচিত; যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, রোজা রাখার সময় শরীর ‘অটোফেজি’ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরনো ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পরিষ্কার করে নতুন কোষ তৈরি করে। ২০১৬ সালে জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহসুমি এই অটোফেজি প্রক্রিয়ার গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে যে, উপবাসের মাধ্যমে শরীরের এই প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, যা ক্যান্সার ও আলঝেইমারের মতো রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ২০১৯ সালে ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোজার মত নিয়ন্ত্রিত উপবাস শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।  এছাড়া, রোজা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত উপবাস করেন, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সমস্যা কম দেখা যায়। ২০১৪ সালে ‘সেল স্টেম সেল’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দীর্ঘায়িত উপবাস শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়া শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী করে তোলে। রোজার মানসিক ও আত্মিক উপকারিতা রোজা রাখার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার ইচ্ছাশক্তি ও সংযমকে উন্নত করতে শেখে। এটি শুধুমাত্র খাবার গ্রহণের বিরতি নয়, বরং এটি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়। রোজা রাখার মাধ্যমে ধৈর্যশীলতা ও মনোসংযোগ বৃদ্ধির অভ্যাস গড়ে তোলা সহজ হয়। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে উপবাস করলেই কর্টিসল (Cortisol) নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে। রোজা রাখার ফলে ব্রেইনের নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (Brain-Derived Neurotrophic Factor, BDNF) বৃদ্ধি পায়, যা স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের নিউরোনাল সংযোগ উন্নত করে। এটি মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতেও সাহায্য করে।  রোজা রাখার অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো ধৈর্য ও সহানুভূতি অর্জন করা। যখন কেউ ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করে, তখন সে অভাবী ও দরিদ্রদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। এর ফলে সমাজে সহমর্মিতা ও সহানুভূতির মানসিকতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমান যুগে সুস্থ জীবনধারার অংশ হিসেবে রোজা বা উপবাসের গুরুত্ব নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে। রোজার মাধ্যমে দেহের ডিটক্সিফিকেশন, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তির উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নতি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা যায়। তবে, রোজার উপকারিতা পুরোপুরি লাভ করতে হলে এটি সঠিকভাবে পালন করা জরুরি। ইফতার ও সেহরির সময় সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা এই প্রক্রিয়াকে আরও ফলপ্রসূ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে রোজার স্বাস্থ্য উপকারিতা কমে যেতে পারে। তাই, রোজার বিজ্ঞানভিত্তিক উপকারিতা লাভ করার জন্য, রোজা পালনের সময় স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যসূত্র: de Cabo, R., & Mattson, M. P. (2019). Effects of Intermittent Fasting on Health, Aging, and Disease. New England Journal of Medicine, 381(26), 2541-2551. Ohsumi, Y. (2016). Autophagy: A Nobel Prize-Winning Discovery. Cell, 167(6), 1430-1442. Mattson, M. P., et al. (2018). Impact of Intermittent Fasting on Brain Health. Journal of Neuroscience, 38(45), 9739-9747. Longo, V. D., & Panda, S. (2014). Fasting, Circadian Rhythms, and Immune System Regeneration. Cell Stem Cell, 14(6), 810-821. Longo, V. D., & Mattson, M. P. (2014). Fasting: Molecular Mechanisms and Clinical Applications. Cell Metabolism, 19(2), 181-192. Patterson, R. E., & Sears, D. D. (2017). Metabolic Effects of Intermittent Fasting. Annual Review of Nutrition, 37, 371-393. Trepanowski, J. F., & Bloomer, R. J. (2010). The Impact of Religious Fasting on Human Health. Nutrition Journal, 9(1), 57. Faris, M. A. I. E., et al. (2012). Intermittent Fasting During Ramadan Attenuates Proinflammatory Cytokines and Immune Cells in Healthy Subjects. Nutrition Research, 32(12), 947-955. Mattson, M. P., et al. (2018). Intermittent Metabolic Switching, Neuroplasticity and Brain Health. Nature Reviews Neuroscience, 19(2), 63-80. Alghamdi, A. S., et al. (2013). The Effect of Ramadan Fasting on Glycemic Control in Patients with Type 2 Diabetes Mellitus. Journal of Family and Community Medicine, 20(3), 143-148. Saleh, S. A., et al. (2014). The Effect of Ramadan Fasting on Cardiovascular Parameters in Hypertensive Patients. Journal of Clinical Hypertension, 16(9), 629-633

Shopping Cart
Scroll to Top