কোলার সোনার খনি
কোলার সোনার খনি
ভারতের একটি বিখ্যাত সোনার খনি কোলার গোল্ড ফিল্ডস, যা কেজিএফ নামে ব্যাপক পরিচিত। কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু শহর থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে এই সোনার খনির অবস্থান। ধারণা করা হয় এটিই ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন স্বর্ণক্ষেত্র। কেজিএফ নামের একটি বলিউড সিনেমার কারণে এই সোনার খনি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। অতীতে এই খনি থেকে প্রায় ৯০০ টন সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে যার বাজার মূল্য ৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। খনিটি এখন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও, অতীতে কেজিএফ ছিল ব্রিটিশ সরকারের অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে বড় উৎস।
ঐতিহাসিক বিভিন্ন উল্লেখ থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে ৯০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ভারতের এই অঞ্চল থেকে সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। অতীতে এই অঞ্চলের মানুষ হাত দিয়ে সামান্য মাটি খুঁড়লেই সোনা খুঁজে পেত। পরবর্তীতে ষোল শতকের বিজয়নগর সা¤্রাজ্য এবং আঠার শতকে মাইসোরের রাজা টিপু সুলতানের সময়ও এখানে সোনা খনন করা হয়েছে। ১৮০৪ সালে, এশিয়াটিক জার্নাল নামের একটি ম্যাগাজিনে ভারতের প্রাচীন সোনার খনি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে কর্ণাটকে অবস্থিত এই সোনার খনির বর্ণনা ছিল। প্রতিবেদন প্রকাশের ৬৭ বছর পর, ১৮৭১ সালে মাইকেল ফিটজেরাল্ড লেভেলি নামের এক ব্রিটিশ সৈনিক সেই জার্নাল পড়ে কোলার গোল্ড ফিল্ডস সম্পর্কে জানতে পারেন। তখন তিনি কর্ণাটকের এই সোনার খনি অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি গরুর গাড়িতে চড়ে বেঙ্গালুরু থেকে কোলার পর্যন্ত দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে মাইকেল লেভেলি কোলার এলাকার মাটিতে সোনার অবশিষ্টাংশ খুঁজে পান। তখন তিনি সেখানে প্রায় ২ বছর গবেষণা করেন। ১৮৭৩ সালে, মাইকেল লেভেলি অত্র এলাকা মাইসুরের মহারাজার কাছে কোলার অঞ্চলে খনন করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। এর প্রেক্ষিতে তাকে ২০ বছরের জন্য ওই এলাকায় খনন করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সৈনিক মাইকেল লেভি তার দলবল নিয়ে কোলারে খনন কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রথম বছরগুলোতে মাটি খননের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ এবং শ্রমিক জোগাড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমের পর সোনা উত্তোলনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়। সেই ব্রিটিশ সৈন্যের খনন কাজ শুরু করার পর থেকে জায়গাটির নাম হয় কেজিএফ বা কোলার গোল্ড ফিল্ডস।
তৎকালীন সময়ে কেজিএফ এ খনন কাজ করা ছিল খুবই কঠিন। কারণ খনির ভেতরটা ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন পরিস্থিতিতে সে সময় খনির ভেতর আলো জ্বালানোর জন্য মশাল ও লণ্ঠন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু খনির গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এক সময় মশালের আলো খুব একটা কাজে আসছিল না। তখন ব্রিটিশরা সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত নেয়। খনি থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে কাবেরী পাওয়ার স্টেশন নামে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। যা ছিল জাপানের পরে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শুধু এই খনিই নয়, সেই বিদ্যুতের ফলে এই এলাকাও আলোকিত হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে কোলার গোল্ড ফিল্ডস হয়ে ওঠে ভারতের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত শহর। খনিতে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর পর, স্বর্ণ খননের কাজ বেশ জোরদার হয়। যার ফলে ১৯০২ সাল নাগাদ ভারতের ৯৫ শতাংশ সোনা কেজিএফ থেকে তোলা হচ্ছিল। ১৮৭৫ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত কেজিএফ এ চলছিল রমরমা সোনার ব্যবসা। মাত্র ত্রিশ বছরে এত পরিমাণ সোনা উত্তোলন করা হয় যে, তৎকালীন বিশ্বের স্বর্ণ উত্তোলনের দিক থেকে ভারত ষষ্ঠ অবস্থানে উঠে আসে। স্বর্ণ উত্তোলনের কারণে কোলার এলাকার অবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসে। সেকারণে ব্রিটিশ অফিসাররা কোলার এলাকায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। কোলারে স্বর্নের মজুদ ছাড়াও আরেকটি কারনে ব্রিটিশরা এখানে বসতি গড়ত, আর তা হল কোলারের ঠান্ডা জলবায়ু। ধীরে ধীরে প্রচুর ব্রিটিশ বসতির কারণে কোলার ফিল্ড এলাকা দেখতে অনেকটা ইংল্যান্ডের মত মনে হত। তাই ব্রিটিশ অফিসাররা এই জায়গাটিকে লিটল ইংল্যান্ড বলে ডাকত। বলা হয়ে থাকে যে, তৎকালীন সময়ে ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাড়িগুলো কোলার গোল্ড ফিল্ডস এর আশে পাশেই ছিল। সোনার খনি এবং ইংল্যান্ডের মত সুন্দর সুন্দর বাড়ি, সব মিলিয়ে কোলার গোল্ড ফিল্ডস একটি আকর্ষনীয় জায়গায় পরিণত হয়েছিল। সেজন্য তখন আশে পাশের রাজ্য থেকে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক এই খনিতে কাজ করতে আসত।
ভিডিওর এই পর্যায়ে আমাদের আজকের স্পনসর সম্পর্কে কিছু কথা বলি। আপনি কি জানেন এখন ঘরে বসেই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে, সহজেই ঔষধ সহ যাবতীয় ঐবধষঃযপধৎব ঢ়ৎড়ফঁপঃ অর্ডার করতে পারবেন আরোগ্য এপে? আরোগ্য একটি হেলথকেয়ার প্লাটফর্ম, যেখানে প্রতিটি ঔষধের বিস্তারিত বিবরণ, জেনেরিক অনুযায়ী বিকল্প কোম্পানীর ঔষধের বিবরণ ও দাম সম্বলিত সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়াও প্রতি অর্ডারের সাথে থাকছে আকর্ষনীয় ডিস্কাউন্ট, ক্যাশব্যাক এবং সামগ্র দেশজুড়ে ফ্রী হোম ডেলিভারি। আমরা জানি, মাঝে মাঝে কিছু মেডিসিন অনেক ফার্মেসীতে খুঁজেও পাওয়া যায়না, সেক্ষেত্রে বেশ ভোগান্তিরও শিকার হতে হয়। এই সমস্যাটির সমাধান আরোগ্য এপেই পেয়ে যাবেন, কারন যাবতীয় সকল ঔষধ রয়েছে আরোগ্যতে। এপটি ইন্সটলের সাথে সাথে ৪০ টাকা বোনাস পেতে চাইলে ডেস্ক্রিপশন বক্সের লিংক থেকে ইন্সটল করুন অথবা এপ স্টোরে গিয়ে ধৎড়মমধ লিখে সার্চ করুন। সেক্ষত্রে বোনাস পেতে কওকঊঘঙ কোডটি ব্যাবহার করুন এপের রেফার বক্সে।
আবার মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক; ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর, ভারত সরকার কোলার গোল্ড ফিল্ডস অধিগ্রহণ করে। ১৯৩০ সালের দিকেও কেজিএফ এ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারের বেশি। যারা দিনরাত খনিতে মাটি থেকে সোনা আহরণ করত। কিন্তু ভারতের ভাগ্যে হয়ত সোনা ছিল না, তাই ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে কেজিএফ থেকে সোনা আসাও বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৬ সালে, ভারত গোল্ড মাইনস লিমিটেড কোম্পানি নামে নতুন করে সোনা উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। তখন আবার কিছুটা সেনা পাওয়া গেলেও, ১৯৭০ এর দশকে খনি থেকে স্বর্ণ বের হওয়ার পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। তারপর থেকে এই খনি টিকিয়ে রাখা দিন দিন বেশ ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, স্বর্ণ খনি সচল রাখতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, খনি থেকে উত্তোলিত সোন বিক্রি করে সেই পরিমাণ টাকাও আসে না। এক পর্যায়ে খনির কার্যক্রম চালু রাখতে গিয়ে কম্পানি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ২০০১ সালে ভারত গোল্ড মাইনস লিমিটেড কোম্পানি কেজিএফ এ সোনা খননের কাজ বন্ধ করে দেয়। তার পর থেকেই জায়গাটি জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে আছে।
কোলার গোল্ড ফিল্ডস খনিতে মাটির নিচে প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। এত গভীরে খননের জন্য অত্যন্ত কর্যক্ষম বিশেষ যন্ত্রপাতির দরকার হত। সেজন্য কেজিএফে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় উইন্ডিং ড্রাম। এই ড্রামটি ১৯৪০ সালে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারে তৈরী করা হয়েছিল। যন্ত্রটির কাজ হল খনির গভীর থেকে মজবুত তারের সাহায্যে খনিজ পদার্থ টেনে তোলা। যন্ত্রটি অনেকটা বর্তমান কালের লিফটের মত কাজ করত। কোলার গোল্ড ফিল্ডস থেকে একটানা প্রায় ১২০ বছর সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে এই খনি থেকে ৯০০ টনেরও বেশি সোনা পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। এসব সোনার বেশির ভাগই ব্রিটিশদের সময়ে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে ১ কেজি স্বর্ণের দাম ৫৪ লক্ষ টাকা। সেখানে ব্রিটিশরা ৯০০ টন বা, ৯ লক্ষ কেজি সোনার সিংহভাগ ভারত থেকে নিয়ে গেছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য হিসেব করলে হয় প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকার সমান। কেজিএফ আজ জনশূন্য হলেও এলাকার মাটিতে এখনও প্রচুর সোনা রয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। ২০১০ সালের জুলাই মাসে, ভারতের শীর্ষ আদালত থেকে বলা হয় যে, ভারতের সোনার খনিগুলো নিলাম করে, আবারো খনন প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। ২০১৬ সালে, নরেন্দ্র মোদী সরকার কেজিএফ এর নিলাম ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে, ভূতের শহরে পরিণত হওয়া, দক্ষিণ ভারতের প্রথম আলোকজ্জ্বল শহর, আবারো আলোকিত হবার সম্ভাবনা তৈরী হয়।