আল আকসা মসজিদ

maxresdefault (36)
জীবনযাপন

আল আকসা মসজিদ

ইসলামের অন্যতম গুরুত্ববাহী একটি স্থাপনা আল-আকসা মসজিদ, যা মসজিদুল আকসা নামেও পরিচিত। পবিত্রতার দিক থেকে মক্কা ও মদীনার পরই মসজিদুল আকসার স্থান। কাবা শরীফের পূর্বে এই মসজিদ মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল। আল-কুরআনে উল্লেখিত পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে মসজিদুল আকসা অন্যতম। বর্তমানে মসজিদটি মুসলিমদের অধিকারে থাকলেও, ভৌগলিকভাবে এ অঞ্চলটি দখল করে রেখেছে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল।

আল-আকসা মসজিদ | ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান

ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আঃ) জেরুজালেমে মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে হজরত দাউদ (আঃ) এর নির্দেশে হযরত সুলাইমান (আঃ) মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করেন। পূর্বে এর নাম ছিলো ‘বাইতুল মাকদিস’। পরবর্তীতে কুরআন শরীফে এর নামকরণ করা হয় ‘আল মাসজিদুল আকসা’। মসজিদুল আকসা অর্থ “দূরের মসজিদ”। নবী কারীম (সাঃ) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদীনার মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসা এর উদ্দেশ্যে সফরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে আছে হিজরতের এক বছর আগে ২৭ রজব মিরাজের রাতে মহানবী (সাঃ) প্রথমে বাইতুল আকসায় উপনীত হন। এরপর বোরাককে বাইরে বেঁধে মহানবী (সাঃ) মসজিদে আকসায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।

মসজিদুল আকসা কোন একক মসজিদ নয়। মসজিদ এ কিবলি, মসজিদে মারোয়ানি, মাসজিদুল করিম, মাসজিদুল বোরাক্ এবং তুব্বাতুর সাকরাম এই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন মসজিদের সমন্বয়ে মসজিদুল আকসা গঠিত। এর ঠিক মাঝখানে রয়েছে গোলাকৃতির ডোম অব দ্য রক বা, গম্বুজে সাখরা। সাখরা অর্থ পাথর। এটি বিশ্বের বুকে থাকা তিনটি বরকতময় পাথরের মধ্যে একটি। অপর দুটি বরকতময় পাথর হল পবিত্র মক্কার হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহীম। ২৭ একর ভূমির ওপর অবস্থিত এই মসজিদে একসাথে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে।

মসজিদুল আকসার বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ৭৪৬ সালে একটি ভূমিকম্পে মসজিদুল আকসা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ৭৫৪ সালে খলিফা আল মনসুর পুনরায় মসজিদটি নির্মান করেন। ৭৮০ সালে এটি আবারও সংস্কার করা হয়। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে ১০৩৩ সালে মসজিদটি আরেক ভূমিকম্পে আবার ধ্বংস হয়ে যায়। দু’বছর পর ফাতেমীয় খলিফা আলী আজ জাহির আবারও সে জায়গায় মসজিদটি পুনঃনির্মান করেন। বর্তমান মসজিদুল আকসা খলিফা আলীর বানানো জায়গার ওপরই দাড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধাপে সংস্কার কাজের সময় মসজিদের মিম্বর ও মিনার সহ বেশ কিছু অংশ সংযোজন করা হয়।

মসজিদুল আকসার কর্তৃত্ব বহুবার হাতবদল হয়েছে। ৬৩৮ সালে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রাঃ) এর সময়ে জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে আসে। তার সাড়ে ৪০০ বছর পর ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন অঞ্চল দখল করে নেয়। সেসময় মসজিদুল আকসা কে তারা একটি গীর্জায় পরিণত করে। তখন ৮৮ বছর খ্রিষ্টানদের দখলে থাকার পর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবি পুনরায় মসজিদুল আকসা সহ জেরুজালেম শহরকে মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। ১৯৬৭ সালে “ছয় দিনের যুদ্ধ” নামে খ্যাত আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরায়েলের বিপক্ষে মিসর, জর্ডান, ও সিরিয়া লড়াই করে। মুসলমানরা এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মসজিদুল আকসা এলাকার নিয়ন্ত্রণ হরায়। তখন থেকে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ আজও তাদের আবাস ভূমি এবং মসজিদুল আকসা উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৩ই অক্টোবর জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো ভোট গ্রহণের মাধ্যমে ঘোষণা করে যে, মসজিদুল আকসা কেবলই মুসলামানদের অধিকারে থাকবে এবং এখানে ইসরায়েলের কোনো হস্তক্ষেপ চলবে না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন তো হয়ইনি, বরঞ্চ অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল, ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণের উপর সহিংসতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।