এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কি যানজট কমাতে পারবে

maxresdefault (48)
কি কেন কিভাবে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কি যানজট কমাতে পারবে

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বাংলাদেশের চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে এই উড়াল পথটি শেষ হবে। বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ধাপ হিসেবে বিমানবন্দরের সামনে থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সে হিসেবে এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৯১ কোটি টাকারও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক। সেই সাথে সড়কটিকে বানিজ্যিকভাবে টেকসই করতে বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্পে আরো ৪১৩ কোটি টাকা প্রদান করবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হল, ঢাকার বাইরের গাড়িগুলোকে বাইপাস করে শহর পার করে দেওয়া এবং রাজধানীর যানজট নিরসন করা। তবে আংশিক খুলে দেওয়ার জন্য, গাড়িগুলো শহরের ভেতর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আবারো শহরের ভেতরেই নামবে। এর ফলে রাজধানীর যানজট কতটা কমবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। নগর পরিকল্পনাবিদ এবং পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক খুলে দেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা দুটিই থাকবে। 

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কি যানজট কমাতে পারবে ?

প্রকল্পের বর্ণনা

কোথাও না থেমে একটানা চলার উপযোগী মহাসড়কগুলোকে এক্সপ্রেসওয়ে বলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মহাসড়কে অসংখ্য মোড় এবং সড়কের দুই পাশে থাকা অসংখ্য হাট বাজার যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মধ্যে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। এর সমাধান হিসেবেই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মান করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে হল ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে। তবে সেই এক্সপ্রেসওয়েটি সাধারণ রাস্তার মত ভূমির সমতলেই ছিল। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েকে যখন পিলারের সাহায্যে মাটি থেকে উপরে নির্মাণ করা হয়, তখন তাকে বলে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে। তবে এটি কোন সরকারি প্রকল্প নয়। এটি মূলত একটি পিপিপি বা ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ প্রকল্প। তারমানে বেশ কিছু বেসকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের সাথে চুক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্প নির্মাণ করছে। ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড বা FDEE নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানে বিনিয়োগ করছে। FDEE কম্পানিতে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। বর্তমানে এই এক্সপ্রেসওয়ের ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশ চালু করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং নামার পথকে বলা হয় র‌্যাম্প। চালু হওয়া অংশে ১৫ টি র‌্যাম্প আছে। তবে এর মধ্যে দুটি র‌্যাম্পের কাজ শেষ না হওয়ায়, ১৩ টি র‌্যাম্প খুলে দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে র‍্যাম্পসহ চালু হওয়া পথের মোট দৈর্ঘ্য দাড়িয়েছে ২২.৫ কিলোমিটার। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশে, বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি র‌্যাম্প আছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরো প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবার আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। এবং প্রকল্পটির চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর। চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় এক যুগ পর শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ উদ্বোধন করা হয়েছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে শুধুমাত্র দ্রুতগামী যানবাহন চলাচল করবে। এতে সিএনজি বা মোটরসাইকেলের মত যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। চলাচল করা যানবাহনের কাছ থেকে চারটি ক্যাটাগরিতে টোল আদায় করা হবে। সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। যদিও শুরুর দিকে ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলার কথা বলা হয়েছিল। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য চালু হওয়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ চালকেরা এ নির্দেশনা মানছেন না। তারা ঘণ্টায় ১০০ হতে ১২০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। উচ্চগতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ওই এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

যানজট কি কমবে?

ঢাকার বাইরের গাড়িগুলোকে বাইপাস করে শহর পার করে দেওয়া এবং রাজধানীর যানজট নিরসনের উদ্দেশ্য নিয়ে ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ করা হয়েছে। আপাতত শাহজালাল আন্তার্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উঠে বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেটে নামছে এই উড়ালপথটি। ফলে দেখা যাচ্ছে উড়ালপথটি শহরের ভেতর থেকে উঠে আবার শহরের ভেতরেই নামছে। এর ফলে যানজট নিরসনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উড়ালপথ রাজধানীর যানজট কমাতে পারবে। এই রাস্তা ব্যবহার করলে বিমানবন্দর থেকে সর্বোচ্চ ১২ মিনিটে ফার্মগেট পৌঁছানো যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পের সামনে যদি যানজট থাকে, তাহলে সেই জট এক্সপ্রেসওয়েতেও পৌছে যাবে। এক্সপ্রেসওয়েটি যদি ঢাকা শহরকে পুরোপুরি বাইপাস করতে পারতো তাহলেই, এই সড়কটি কার্যকর হতো। কারওয়ান বাজার থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত অংশে ট্রাফিক সিগন্যালে সহজে ছাড়ে না। এই রাস্তায় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। নিচের সড়কের গাড়ি যদি চলতে না পারে, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে গাড়িগুলো নিচে নামতে পারবে না। তখন দুই তলা জ্যামের সৃষ্টি হবে। সেকারণে নগর পরিকল্পনাবিদেরা মনে করছেন, আংশিকভাবে খুলে দেওয়ার ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর যানজট নিরসনে তেমন কোন ভূমিকা হয়ত রাখতে পারবে না।

পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যখন কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত সংযোগ করা যাবে, তখনই শুধু এই অবকাঠামো তার মূল উদ্দেশ্য পূরণে সফল হবে। তখন ট্রাকের মত ভারী যানবাহন এবং আন্ত জেলা বাসগুলো, ঢাকার মধ্যে প্রবেশ না করেই ২৪ ঘণ্টা ঢাকা ক্রস করতে পারবে। যখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে এই যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করতে পারবে, তখন নিচের রাস্তাগুলো অনেকটা হালকা হয়ে যাবে। ফলে শুধুমাত্র তখনই যানজট মুক্ত ঢাকা পাওয়া যেতে পারে। তবে সেই সুবিধা ভোগ করার জন্য ২০২৬-২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এক্সপ্রেসওয়ের অসুবিধা 

এক্সপ্রেসওয়ের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এ ধরনের রাস্তায় গাড়িগুলো বাধাহীনভাবে চলে যেতে পারে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অনেক জায়গায় র‍্যাম্প নামানো হয়েছে। এতে করে হয়তো বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়বে। তবে শহরের মধ্যে যেসব জায়গায় র‍্যাম্প থাকবে, সেখানকার ট্রাফিক ঠিক মত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, যানজট বাড়তেই থাকবে। 

পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিক আওয়ারে যেমন যানজট সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না; তেমনিভাবে অফপিক আওয়ারে এই এক্সপ্রেসওয়ে ফাঁকাই পড়ে থাকবে। এর কারণ হল, পিক আওয়ারে অধিক যানবাহনের চাপে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং নামার জন্য বাস এবং ট্রাকের মত বড় বড় যানবাহনগুলোকে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হবে। আবার গভীর রাতে এবং ভোরের দিকে নিচের রাস্তা ফাঁকা থাকায়, যানবাহনগেুলোর বাড়তি টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেতে চাইবে না। কারণ তখন তারা নিচের সড়ক দিয়ে বিনামূল্যে পাড় হতে পারবে। তবে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো এই এক্সপ্রেসওয়ের বেশি সুবিধা পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদেরা মনে করছেন, ২০১৩ সালে যখন এই এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার কথা ছিল, তখকার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। তাই পুরো পথ না খোলা পর্যন্ত এর সকল সুবিধা অসুবিধার প্রকৃত চিত্র যাচাই করা সম্ভব নয়।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নতুন পথ তৈরি করেছে। নিচের পথের অর্ধেক গাড়িও যদি ওপরে চলে আসে, তাহলেও নিচের পথ অনেকটা খালি হবে। এতে করে ট্রাফিক জ্যামও কিছুটা হলেও কমবে। তবে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সবাই সুবিধা পাবে।

আমাদের ভিডিওগুলো ফেসবুকে দেখতে চাইলে কিকেনকিভাবে র ফেসবুক পেজ লাইক এবং ফলো করুন। পরবর্তী ভিডিও আপলোড হওয়ার সাথে সাথে দেখতে চাইলে, কিকেনকিভাবে সাবস্ক্রাইব করে বেল আইকনটিতে ক্লিক করুন।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।