ইসরায়েল কেন অবৈধ রাষ্ট্র

maxresdefault (37)
কি কেন কিভাবে

ইসরায়েল কেন অবৈধ রাষ্ট্র

ইসরায়েল ফিলিস্তিন দ্বন্দ সম্পর্কে আমরা নিয়মিত নানান খবর শুনি। কিন্তু কোথাও এই সমস্যার উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় না। অবৈধভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের কারণেই, প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে অস্থিরতা চলছে। ইসরায়েলই পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যা একটি দেশের প্রকৃত নাগরিকদেরকে উচ্ছেদ করে, অবৈধভাবে দখলের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ব রাজনীতির মোড়লড়া কিছু বলা তো দূরের কথা, উল্টো সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলকেই সমর্থন করে। জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য দেশের ১৬৫ টি দেশই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ সেই দেশের যারা ন্যায়সঙ্গত মালিক, সেই ফিলিস্তিনীরা আজও স্বাধীন দেশ হিসেবেই আত্নপ্রকাশ করতে পারেনি।

ইসরায়েল কেন অবৈধ রাষ্ট্র ?

ফিলিস্তিনের ইতিহাস

অতীতে ফিলিস্তিন বৃহত্তর সিরিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচিত হত। ফিলিস্তিনের এই অঞ্চল ১৫১৬ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। এবং ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত অঞ্চলটি সরাসরি অটোমানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রদেশ হিসেবে ফিলিস্তিন ছিল অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা। এখানকার জেরুজালেম, জাফা এবং হাইফা শহরে বানিজ্যিক কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। তৎকালীন ফিলিস্তিনের জনগণও ছিল অত্যন্ত সৃজনশীল, বুদ্ধিমান এবং কর্মঠ।

কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এখানকার সব কিছু বদলে দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান দুটি পক্ষ হল মিত্র শক্তি এবং কেন্দ্রীয় শক্তি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি এবং জাপান মিলে গড়ে উঠেছিল মিত্র শক্তি এবং অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শক্তির দলে ছিল জার্মানী, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং অটোমান সাম্রাজ্য। ১৯১৮ সালের নভেম্বরে মিত্র শক্তি কেন্দ্রীয় শক্তিকে পরাজিত করে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের আগে থেকেই এই অঞ্চলটি ইউরোপীয় দখলদারদের নজর ছিল। ফলে বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বৃহত্তর সিরিয়াকে তাদের নিজেদের সুবিধামত ভাগ করে নেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯২০ সালে ইতালির সান রিমো কনফারেন্সে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট বা কর্তৃত্ব লাভ করে। ১৯২২ সালে লীগ অব নেশনস এই ম্যান্ডেট অনুমোদন দেয়।

জায়নবাদ

ফিলিস্তিন অঞ্চলে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল বীজ রোপিত হয়েছিল জায়নবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। জায়োনিস্ট বা জায়নবাদীরা মনে করে যে, ইহুদি শুধু একটি ধর্মই নয়, এটি একটি রাষ্ট্রও বটে। উনিশ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষ বাড়তে থাকলে, ইহুদীরা নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন দেশের আকাঙ্খা করতে থাকে। শুধু ইহদিরাই জায়নিস্ট হতে পারে বিষয়টি এমন নয়। যারাই ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদিদের বসবাসের জন্য রাষ্ট্র গঠন করতে চায়, তারাই জায়নবাদী। ইহুদিরা নিজেদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করারও দুইশ বছর আগে থেকে জায়নবাদী খ্রিষ্টানরা ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন শুরু করেছিল। জায়নিস্টরা বলতে থাকে, ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত জায়গাটি ইহুদিদের ঐতিহাসিক বাসভূমি, এবং এখানেই ইহুদিদের জন্য আলাদা দেশ গড়তে হবে।

১৮৯৭ সা সালে সুইজার‌ল্যান্ডের বাসেল শহরে ২০৮ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রথম জায়নিস্ট কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, তৎকালীন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিক থিয়োডর হার্জেল। তিনি আধুনিক জায়নবাদের জনক। ১৮৯৬ সালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিক থিওডোর হার্জেল তার প্রকাশিত ‘দ্য জুইশ স্টেট’ বইয়ের মাধ্যমে জায়নবাদকে আন্তর্জাতিক আন্দোলনে রূপ দেন। প্রথম জায়নিস্ট সম্মেলনের পর থেকে জায়নবাদীরা ইউরোপের শাসক থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য তদবির করতে থাকে।

বেলফোর ঘোষণা

মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে এবং সুয়েজ খালে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সেখানে একটি ব্রিটিশ অনুগত রাষ্ট্র প্রয়োজন ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলো কিছুদিন আগে অথবা পরে স্বাধীন হয়েই যেত। কিন্তু ফিলিস্তিনে যদি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে সেখানকার ভূরাজনীতিতে ব্রিটিশ আধিপত্য অক্ষুণ্ণ রাখা যাবে, এই বিবেচনায় ব্রিটিশ প্রশাসন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়। 

তাছাড়া ইউরোপে ইহুদিরা অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকায় তাদের এই প্রচেষ্টা সহজেই সফল হয়। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ জুড়ে রথসচাইল্ড পরিবারের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ অনেকাংশে সহজ করে দিয়েছে। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর, তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বেলফোর যুক্তরাজ্যের ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা লিওনেল ওয়াল্টার রথসচাইল্ডের কাছে এক চিঠি লেখেন এবং এই চিঠিটি যুক্তরাজ্যের জায়নিস্ট ফেডারেশনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান। একেই ঐতিহাসিক বেলফোর ডিক্লারেশন বা বেলফোর ঘোষণা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদিদের জন্য একটি ‘জাতীয় আবাসভূমি’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বেলফোর ঘোষণা ছিল আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর একটি। এই ঘোষণা এমন একটি জায়গায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয় যেখানে দশ শতাংশেরও কম ইহুদি বসবাস করে। তারচেয়েও বড় কথা হল, যখন এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জায়গাটি অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং সেখানে ব্রিটিশদের কোন অধিকারই ছিল না।

জায়নবাদীদের মিথ্যাচার

ব্রিটিশরা যখন ফিলিস্তিন দখল করে, তখন থেকে কিছু খ্রিস্টান এবং ইহুদী জায়নবাদী লেখক ফিলিস্তিনকে “Land Without People” বা “জনশূণ্য ভূমি” হিসেবে উল্লেখ করে। তবে এই ধারার সূচনা হয়েছিল আরো আগে। আধুনিক রাজনৈতিক জায়নবাদের জনক থিয়োডর হার্জেলও ফিলিস্তিনকে বিরানভূমি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ তিনি নিজে ১৮৯৮ সালে ফিলিস্তিনে ভ্রমণ করেছেন। সেসময় ফিলিস্তিনে জেরুজালেম ছাড়াও একাধিক উন্নত শহর, বহু প্রতিষ্ঠিত বন্দর এবং ব্যাপক বানিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালিত হত। শুরু থেকেই মিথ্যাচারের মাধ্যমে জায়নবাদীরা ফিলিস্তিনকে তাদের ভবিষ্যৎ ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছিল। তারা বলে, ফিলিস্তিনে শুধুমাত্র কিছু বেদুইন আর কৃষক রয়েছে, যাদের কোন সভ্যতা নেই। এমনকি তারা এও বলে যে, ফিলিস্তিনে উল্লেখ করার মত তেমন কিছুই নেই। অথচ তখন ফিলিস্তিন ছিল সমগ্র আরব অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত এবং বানিজ্যিকভাবে ব্যস্ততম অঞ্চল। তৎকালীন সময়ে এসব কথাবার্তা যদি, দুবাই বা কাতার সম্পর্কে বলা হত, তাও মেনে নেওয়া যেত। বিংশ শতকের শুরুর দিকে ধারণ করা, ফিলিস্তিনের এসব চলচ্চিত্র দেখলে সহজেই বোঝা যায়, তৎকালীন সময়ে ফিলিস্তিন কতটা উন্নত ছিল। ঐতিহাসিকরা জায়নবাদীদের মিথ্যাদাবির তীব্র বিরোধীতা করে বলেন, জনমানবশূণ্য বিরাণভূমি তো দূরের কথা, ফিলিস্তিন ছিল সবচেয়ে প্রাণবন্ত আরব দেশ, যার উন্নয়নশীল বানিজ্যিক এবং সাম্প্রদায়িক কাঠামো ছিল।

ইহুদিদের আগমন

ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন দখলের পর হাই কমিশনার হিসেবে প্রথমেই হারবার্ট সামুয়েল কে পাঠায়। এই ব্যক্তি ব্রিটিশ মন্ত্রী সভাকে বেলফোর ঘোষণার পক্ষে রাজি করিয়েছিলেন। হারবার্ট সামুয়েল ফিলিস্তিনে এসেই ইহুদিদের স্বার্থে কাজ করা শুরু করেন। সামুয়েল স্থানীয় ফিলিস্তিনীদেরকে তাদের জমি ইহুদীদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য ফুসলাতে থাকে। কিন্তু স্থানীয় ফিলিস্তিনীরা সামিুয়েলের প্রস্তাব সরাসরি প্রতাখ্যান করে।

১৯২০ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনে জায়নবাদ প্রতিষ্ঠা অনেকটাই ব্যার্থ হয়েছিল। প্রথমদিকে শুধুমাত্র জাফা শহরের আশে পাশে ইহুদিরা বসতি স্থাপন করতে থাকে। কারণ তখন জাফা ছিল ফিলিস্তিনের প্রধান শহর। তখন ফিলিস্তিনিরা বিষয়টি নিয়ে তেমন পাত্তা দেয়নি। কারণ তারা একে একটি ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে দেখছিল। ১৮৮২ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত জাফা শহরে মাত্র দুই হাজার ইহুদি ছিল। এই সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনে আগত ইহুদি অভিবাসীদের অধিকাংশই অন্যত্র চলে যাচ্ছিল। কারণ তারা এই অঞ্চলের আবহাওয়া, খাবার, সংস্কৃতি কোন কিছুর সাথেই মানিয়ে নিতে পারছিল না।

উনিশ শতকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনে ইহুদী ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনে ইহুদি জনসংখ্যা বেড়ে হয় মাত্র ৯ শতাংশ। এবং ১৯৩৫ সালের মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৭ শতাংশ। তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনীদের কাছ থেকে তাদের রাষ্ট্র কেড়ে নিতে চাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনীদের হাতে আসলে তেমন কিছুই করার ছিল না। ১৯২৫ এর আগ পর্যন্ত ইহুদি অভিবাসীরা সাধারণত আমেরিকায় যেতে চাইত। কিন্তু ইহুদি অভিবাসনের উপর আমেরিকায় বিধিনিষেধ আসার কারণে, ইহুদিরা দলে দলে ফিলিস্তিনে আসতে শুরু করে। ১৯২৯ সালে জেরুজালেমে আরব বনাম জায়নবাদী ইহুদীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৩৫ সালে অস্বাভাবিক হারে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে থাকে। এই এক বছরে ৬৫ হাজার ইহুদী ফিলিস্তিনে আসে। শুধু তাই নয়, ব্রিট্রিশরা বানের জলের মত ভেসে আসা ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনী নাগরিকত্ব দিতে থাকে। ১৯২৩ সালেই ব্রিটিশরা আইন করে রেখেছিল যে, ফিলিস্তিনে আগত সকল ইহুদিকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। যদিও এ বিষয়ে ফিলিস্তিনীদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা করা হয়নি।

ইহুদিদের অবৈধ আগমন চলতেই তাকে। ইহুদি ভর্তি একেকটি জাহাজ ফিলিস্তিনের উপকূলে ভেড়ে, আর অসংখ্য ইহুদিকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে থাকে। “হাগানাহ” নামে ইহুদীদের এক গোপন বাহিনী   বিভিন্ন জায়গা থেকে ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে নিয়ে আসতে থাকে। আর তাদের কাগজ পত্র তৈরী করার দ্বায়িত্ব ছিল ইহুদি ব্রিটিশ কর্মীদের উপর। যেসব ইহুদির কোনভাবে ফিলিস্তিনের নাগরিকত্বই পাওয়ার কথা নয়, তাদেরকে ধরে ধরে ফিলিস্তিনী পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল।

ইসরায়েলের জন্ম

১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশরা ঘোষণা করে যে, আগামী ৫ মাস পর ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ শাসন শেষ হতে যাচ্ছে। তখন থেকে জায়নবাধী সশস্ত্র ইহুদি সন্ত্রীরা সারাদেশে সহিংসতা শুরু করে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ব্রিটিশ হুকুম শেষ হবার আগের দিন, ইহুদি এজেন্সির প্রধান ডেভিড বেনগুরিয়ন ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেয়। নতুন এই অবৈধ রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশ জায়গা দখল করে। যার ফলে সাত লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনীদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়। বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনী শরনার্থী হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়।

এরপর থেকে ইহুদি সন্ত্রাসীরা ফিলিস্তিনীদের উপর জাতিগত নিধন চালানো শুরু করে। ইসরায়েলি সন্ত্রাসীরা শহরে গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ আর বোমা হামলা চালায়। ফিলিস্তিনীরা সহিংসতার ভয়ে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়। যারাই আশ্রয়ের জন্য নিজের বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে গেছে, কয়দিন পর ফিরে এসে দেখে, তাদের সবকিছু দখল হয়ে গেছে। এমনকি যারা নিজেদের বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরেও আশ্রয় নিতে গিয়েছিল, তারাও আর তাদের বাড়িঘর ফিরে পায়নি।

১৯৪৮ এবং ৪৯ সালে যখন ফিলিস্তিনের প্রধান প্রধান শহরে ইহুদি আগ্রাসন চলছিল, তখনও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাহাজ এবং বিমানে করে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে থাকে। এসব অবৈধ অভিবাসীদেরকে ফিলিস্তিনে আসার সাথে সাথে ফিলিস্তিনীদের বাড়িঘরের মালিকানা দিয়ে দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনী জনগণের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করে তাদেরকে বিতাড়িত করার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হাগানাহ বাহিনীকে। সেই জঙ্গী সংগঠন হাগানাহ ই পরবর্তীতে ইসরায়েলী সেনাবহিনী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।

বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে একে একে সকল ফিলিস্তিনীদেরকে উচ্ছেদ করার হয়। এগুলো যদি পূর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত না হত, তাহলে জয়ানবাদীদের প্রজেক্ট বাস্তবায়নে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখিন হতে হত। লাখ লাখ ইহুদিকে যে ফিলিস্তিনে আনা হচ্ছে, তারা কোথায় থাকবে? আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল যে, ফিলিস্তিনীদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে, ইহুদিদের থাকতে দেওয়া হবে। গ্রামের পর গ্রাম, বাড়িঘর এমনকি স্কুল ভবনও ইহুদিরা দখল করে নেয়। জায়নবাদীরা শুধু বাসস্থান দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ফিলিস্তিনীদের আসবাবপত্র, গাড়ি, বাগান, ক্ষেত-খামার, কারখানা, ব্যাংক, বাজার, ধর্মীয় স্থাপনা, কবরস্থান, মসজিদ সবকিছু দখল করেছিল। জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র নতুন এক সীমানা নির্ধারণ করে, যার মধ্যে ফিলিস্তিনীদেরকে ঠেলে দিয়ে, তাদেরকে সম্পূর্ণ আরব বিশ্ব থেকে আলাদা করে ফেলা হয়।

ইসরায়েল নামের অবৈধ রাষ্ট্র তাদের মহা চুরি, মহা ডাকাতি এত সুনিপুণভাবে পরিকল্পনা করেছিল যে, তাদের এত বড় অন্যায়কে তারা আইনসঙ্গতভাবে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করে। অথচ ইসরায়েল পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যা ন্যায়সঙ্গত বাসিন্দাদেরকে উচ্ছেদ করে, অবৈধভাবে দখলের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।