ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং
ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিদ্যার প্রধান কাজই হল বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করা। বিজ্ঞান এবং গণিতের মূলনীতিগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটিয়ে, নকশা প্রণয়ন, নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন, প্রচলিত যন্ত্রের উন্নয়ন সাধনের মত, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করাই প্রকৌশল বিদ্যার উদ্দেশ্য।
ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। শিল্প উৎপাদনের বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়াকে সহজিকরণ এবং উৎপাদনের ধাপগুলোকে অপটিমাইজ করাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ।
সিভিল, আর্কিটেক্ট, মেকানিক্যাল বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত প্রচলিত অন্যান্য প্রকৌশল বিদ্যার শাখাগুলো সম্পর্কে আমাদের কমবেশি ধারণা থাকলেও, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে আমরা খুব কমই সচেতন। অথচ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিজ্ঞান হল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং।
IPE কী?
আন্তর্জাতিকভাবে Industrial and Production Engineering বা IPE কে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা হয়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিল্পের উন্নয়নে এবং পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া সহজীকরণে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক অবদান রয়েছে। বর্হি:বিশ্বে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং আলাদা আলাদা সাবজেক্ট হিসেবে পড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই দুটি বিষয় এক সাথে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হিসেবে পড়ানো হয়। Mathemaics, Manufacturing, Mechanical Engineering, Engineering Science, Engineering Management, Egonomics এবং Social Science এর মত বিষয়গুলোর সম্মিলিত জ্ঞানকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাজে লাগানো হয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান কাজ হল প্রসেস অপটিমাইজেশন। অন্যদিকে প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রধান কাজ হল ম্যানুফ্যাকচারিং।
কোনো ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামাল সোর্সিং কিংবা প্রকিউরমেন্ট থেকে শুরু করে সাপ্লাই চেইন প্ল্যানিং, সরাসরি প্রোডাকশন ফ্লোরে থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং ও প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করা থেকে ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ও লজিস্টিকস ম্যানেজমেন্ট, সর্বক্ষেত্রেই IPE ইঞ্জিনিয়াররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধীনে Supply Chain Management, Quality Control, Operations Research, Ergonomics, Project Management, Operations Management এর মত বিষয়গুলো পড়ানো হয়। প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধীনে Manufacturing Process, Machine Tools, Product Design, Computer Aided Design এর মত বিষয়গুলো পড়ানো হয়।
সহজ করে বলতে গেলে, একটি শিল্প কারখানার যে বিষয়গুলো উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, সেসব অসুবিধা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিরসন করা এবং শিল্প উৎপাদনে কাঁচামালের অপচয় রোধ করাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রধান কাজের ক্ষেত্র। সেই সাথে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিস্টেমের দক্ষতা, কার্যক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা এবং সর্বোপরি মুনাফা বৃদ্ধি করা এই ইঞ্জিনিয়ারিং এর আসল উদ্দেশ্য।
একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার শুধু কারখানার মেশিন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়েই কাজ করেন না; ইন্ডাট্রিয়াল সেক্টরে বড় টিমকে ম্যানেজ করাও IPE ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের অংশ। সে দিক বিবেচনায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রকৌশল বিদ্যার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা বিষয়েও পাঠদান করা হয়।
IPE কেন দরকার?
বিশ্বের বহুজাতিক প্রায় সকল শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। সকল প্রতিষ্ঠান মূলত দুই ধরনের কার্যক্রম চালায়; হয় তারা Product বা পণ্য উৎপাদন করে অথবা Service বা সেবা প্রদান করে। একটি কলম অথবা, কোমল পানীয় হল পণ্য। অন্যদিকে হাসপাতাল বা ব্যাংকের ব্যবসা হল সেবামূলক কার্যক্রম। পণ্য উৎপাদন বা সেবাদান, ব্যবসার ধরণ যেমনই হোক না কেন, উভয় ক্ষেত্রেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর দরকার আছে।
একটি কোম্পানি কীভাবে অল্প সময়ে সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ পণ্য তৈরি করবে, অথবা কম্পানিটি কীভাবে খুব সহজে তার বিপুল পরিমাণ গ্রাহককে সেবা প্রদান করবে, সেই প্রক্রিয়া উদ্ভাবন এবং পরিচালনার কাজে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদান অনস্বীকার্য।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার একটি কাজকে শুরু থেকেই সঠিক উপায়ে করার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন। কোন নতুন সিস্টেম গড়ে তোলার সময় Man, Material, Machine, Money এবং Management এর বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে একটি ইন্ডাস্ট্রির নকশা করা হয়। এর বাইরেও, উৎপাদিত পণ্যের Producivity, Quality এবং Efficiency কেমন হবে, তার জন্যও IPE ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করেন। অন্যদিকে, কোন শিল্পকারখানার বিদ্যমান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উন্নতি সাধন করার ক্ষেত্রে একজন IPE ইঞ্জিনিয়ার যে কাজটি করেন, তা হল Optimization।
একটি সিস্টেম, প্রসেস বা কোম্পানি কে অপটিমাইজ করা বলতে বোঝায়, কোন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়ানো, যার ফলে কম্পানির মুনাফা বাড়ে। সাবান, কোমল পানীয় বা গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানিতে এ ধরনের অপটিমাইজেশন করা হয়। অন্যদিকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের অপটিমাইজেশন হল, কম্পানির সেবার মান বৃদ্ধি করে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করা, যার মাধ্যমে কম্পানির মুনাফা বাড়ে। ব্যাংক, হাসপাতাল বা পরিবহণ সেবা কোম্পানিতে এ ধরনের অপটিমাইজেশন করা হয়।
শিল্প কারখানার প্রচলিত কাঠামো অপটিমাইজ করার সময়, একটি প্রতিষ্ঠানের Time, Man Hour, Money, Materials, Machine Time এবং Energy & Resources এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, এ সকল বিষয় থেকে অপচয় রোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের কাজে আসে না এমন বিষয়গুলো যদি সম্পূর্ণ রোধ করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তা যথাসম্ভব হ্রাস করে অপটিমাইজ করা হয়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কেন দরকার; তা আরো সহজ করে বলতে গেলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং মোটাদাগে ৫ টি কাজ করে থাকে, সেকারণেই যে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার দরকার। বিষয়গুলো হল: ১. Synchronization & Optimization ২. Elimination ৩. Reduction ৪. Increment এবং ৫. Improvement। IPE ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার কর্মী, মেশিন, কাঁচামাল, উৎপাদন পদ্ধতি, বিনিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার সমন্বয় সাধন এবং অপটিমাইজেশন করে। প্রকৌশলবিদ্যার এই ধারা সময়, সম্পদ, মেশিন, শক্তি এবং অর্থের অপচয় রোধ করে। সেই সাথে উৎপাদনশীলতা, কার্যক্ষমতা এবং সর্বোপরি মুনাফা বাড়ায়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং উৎপাদন খরচ, অপচয়, অগুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং ঝুঁকি কমায়। সেই সাথে পদ্ধতি, দক্ষতা, গুণমান এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করে। [এই অংশটুকু সহজ মোশন গ্রাফিকসের সাহায্যে উপস্থাপন করা হবে]
বাংলাদেশে IPE
বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা IPE এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে। তখন বুয়েটের IPE বিভাগের অধীনে শুধু মাত্র স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হত। দেশের শিল্প ব্যবস্থাপনায় বিশেষ সক্ষমতা অর্জন এবং, দেশে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি করার জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে বুয়েট এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ স্নাতক পর্যায়ের পাঠদান শুরু করে।
বুয়েটে IPE ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকে, বিভাগটি Manufacturing Engineering, Production Engineering, Expert Systems প্রতিষ্ঠা এবং দেশীয় উৎস থেকে মেশিন ও ইন্সট্রুমেন্ট উন্নয়নের ব্যাপারে ব্যাপক পরিসরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের শিল্পখাতে একদিকে যেমন উৎপাদনশীলতা এবং পণ্যের গুণগতমানে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, অন্যদিকে পণ্য উৎপাদনে ব্যাপক অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রকৌশল বিদ্যা এবং ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। আরো সহজ করে বলতে গেলে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া একজন শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি একজন MBA গ্রাজুয়েটের মত ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা অর্জন করেন। যার ফলে বুয়েট IPE বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে তাদের কর্মক্ষেত্রে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা সমাধানই নয়, বরং দক্ষ ম্যানেজারের মত শিল্প উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করেন।
বুয়েটের IPE বিভাগ বাংলাদেশে বিজ্ঞানের এই শাখায় পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করলেও, বর্তমানে দেশের আরো বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে বুয়েটের বাইরে খুলনা, রাজশাহী, যশোর, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরো কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। [স্ক্রিনে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখানো হবে।] এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ আরো কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। [স্ক্রিনে সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখানো হবে।]
বুয়েট এর IPE ডিপার্টমেন্ট থেকে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষার্থীরা শুধু দেশের শিল্পখাতেই অবদান রাখছে না; বরং সারা বিশ্বের শীর্ষ প্রায় সকল কোম্পানিতে বুয়েট গ্রাজুয়েটরা কাজ করছেন। দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওয়ালটন, প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার, এসিআই, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, আকিজ, মেঘনা, নাভানা, আনোয়ার গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ সহ আরো বেশ কিছু শীর্ষ কোম্পানিতে বুয়েট IPE গ্রাজুয়েটরা কাজ করছেন।
তাছাড়া বাংলাদেশে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনিলিভার, নেসলে, রেকিট বেনকিজার, সেভরন, গ্রামীনফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, কোকাকোলা, বার্জার, ম্যারিকো সহ শীর্ষ প্রায় সকল বহুজাতিক কোম্পানিতে বুয়েট IPE গ্রাজুয়েটরা কর্মরত আছেন।
এখানেই শেষ নয়, এ তো গেল দেশের মধ্যে, দেশের বাইরেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বুয়েট ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাজন, টেসলা, ইন্টেল, বোয়িং, জেনারেল মটরস, ভলভো, ওয়ালমার্ট, ইউপিএস সহ বিশ্বের শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়াররা তাদের সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
IPE এর ভবিষ্যৎ
ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নির্ভর উদীয়মান শিল্প জগতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিয়ে আসবে। ভবিষ্যতের শিল্প ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে এমন কিছু দিক হল:
১. Industry 4.0 and Smart Manufacturing
২. Additive Manufacturing (3D Printing)
৩. Sustainable Manufacturing
৪. Advanced Robotics
৫. Digital Twins and Simulation
৬. Supply Chain Optimization
৭. Continuous Improvement and Lean Principles
বিষয়গুলোকে আরো সহজ করে বলতে গেলে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে Internet of Things বা IoT, Artificial Intelligence বা AI, Big Data Analytics এবং Automation হবে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নির্ভর এই শিল্প ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে, ফ্যাক্টরিগুলোকেও হতে হবে বুদ্ধিমান; অর্থাৎ ফ্যাক্টরিগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং Real-time বা তাৎক্ষণিক অপটিমাইজেশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেজন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন বিকল্প নেই।
থ্রিডি প্রিন্টিং এর ব্যাপক বিস্তারের সাথে সাথে দ্রুত Prototyping, Customization এবং জটিল যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা যাচ্ছে খুব সহজে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই ধারায় যত সম্ভব কম বর্জ্য উৎপাদন করে পরিবেশ বান্ধব কারখানা পরিচালনার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে এমন ধরনের রোবট, শিল্প কারখানায় আরো বেশি জায়গা দখল করে নিবে। সেই সাথে বাস্তব কারখানার ভার্চুয়াল রেপ্লিকা তৈরি করে, কারখানা পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং অপটিমাইজেশনের Computer Simulation তৈরি করার ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। এর মাধ্যমে কোন কারখানা তার যাত্রা শুরু করার আগেই ভবিষ্যৎ সমস্যা এবং সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে পারবে।
ব্লক চেইনের মত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, কারখানার Supply Chain, Inventory Management এবং Logistics এর মত বিষয়গুলোর আরো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে। সেই সাথে Lean Manufacturing এবং ক্রমাগত উন্নয়নের মত প্রচলিত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতে শিল্প কারখানার দক্ষতা এবং গুণগত মান উন্নয়নে এক সাথে কাজ করবে।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর অনেক কিছুই এখন আর ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নয়; বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের শিল্প কারখানাতেই, ইতোমধ্যে এর অনেক পদ্ধতিই সফলতার সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিপুল ভোক্তাশ্রেণীর বিপরীতে কাঁচামাল আর দক্ষ জনবলের সংকট রয়েছে। দেশীয় শিল্প কারখানার এই চিরায়ত সমস্যা সমাধানে এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশে বহু দক্ষ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার এর দরকার।
বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেকেই, অন্যদের দেখাদেখি গতানুগতিক ধারার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার প্রতি বেশি আগ্রহী। শুধু তরুণদের মধ্যেই নয়, দেশের শিল্পকারখানা মালিকদের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর মত ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে, দেশের বহু শিল্পখাতে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিকশিত হতে পারছে না।