অযোধ্যা কি হিন্দুদের ভ্যাটিকান সিটি হবে

maxresdefault (8)
কি কেন কিভাবে

অযোধ্যা কি হিন্দুদের ভ্যাটিকান সিটি হবে

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহরে রাম মন্দির উদ্বোধন করা হয়েছে। অতীতে এই জায়গাটিতেই ছিল বাবরি মসজিদ। নরেন্দ্র মোদির সরকার বাবরি মসজিদের জায়গায় শুধু রাম মন্দির প্রতিষ্ঠাই নয়, বরং সমগ্র অযোধ্যা শহরকেই বদলে দিতে চায়। সেকারণে অযোধ্যা শহর জুড়ে এমনসব মহাপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অযোধ্যা হবে হিন্দৃু তীর্থ যাত্রার শীর্ষস্থান। সেকারণে বেশ কয়েকজন হিন্দুত্ববাদী নেতা অযোধ্যাকে “হিন্দুদের ভ্যাটিকান সিটি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির হল, এরপর কী ?

রামমন্দির বিতর্ক

রামচন্দ্রকে হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ অনুযায়ী, রাম ছিলেন অযোধ্যার রাজা এবং তিনি অযোধ্যাতেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। সেকারণে হিন্দুরা দীর্ঘদিন যাবৎ অযোধ্যায় শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল।

১৫২৮ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে তার সেনাপতি মীর বাকি অযোধ্যার এই জায়গায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। হিন্দুদের দাবি, রামচন্দ্রের জন্মস্থানে থাকা রামমন্দির ভেঙে তার উপর বাবরি মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল। এই বিষয়টি নিয়ে আঠার শতক থেকেই হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে। ১৯৯২ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, ভারতীয় জনতা পার্টি ও শিবসেনা সমর্থকদের মত, উগ্রপন্থী হিন্দু মৌলবাদীরা আক্রমণ চালিয়ে বাবরি মসজিদ সম্পূণর্রূপে ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলশ্রুতিতে সমগ্রভারত জুড়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। সেই দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজারেরও অধিক লোক মারা যায়; যাদের বেশিরভাগই ছিল মুসলিম। বাবরি মসজিদে হামলা ও ধ্বংসের এই ঘটনার পিছনে জড়িয়ে আছে কয়েকশ বছরের সাম্প্রদায়িক ক্ষোভ এবং একাধিক ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে শুরু করে বিজেপি সরকারের আমল পর্যন্ত বাবরি মসজিদ বনাম রাম মন্দির নিয়ে, ভারতের আদালতে দীর্ঘ এক আইনী লড়াই চলে আসছে। অবশেষে ২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত পুরো জায়গাজুড়ে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেয়।

বাবরি মসজিদ কিভাবে ভাঙা হয়েছিল সে সম্পর্কে কিকেনকিভাবে র ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি ভিডিও আছে; প্রয়োজনে সেই ভিডিওটি দেখতে পারেন। এই ভিডিওতে রাম মন্দির এবং অযোধ্যা শহরকে কেন্দ্র করে বিজেপি সরকারের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

অযোধ্যার মহাপরিকল্পনা

বিজেপি সরকার অযোধ্যাকে একটি বৈশ্বিক অাধ্যাতিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সংস্কৃত পন্ডিত কবি তুলসীদাস রচিত রামচরিতমানসে বলা হয়েছে, শ্রীরামের জন্মভূমি অযোধ্যা ছিল অত্যন্ত সুন্দর একটি শহর। শহরের নকশা ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত; এর যায়গায় যায়গায় ছিল বড় বড় মন্দির, দালান এবং বাগান। অযোধ্যার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরায়ু নদীর কারণে এখানে পানির কোন অভাব ছিল না। এখানকার অর্থনীতিও ছিল বেশ মজবুত, সেকারণে দূরবর্তী বহু ব্যবসায়ী এখানে বানিজ্য করতে আসত। শহরটি শিল্প এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও ছিল সম্বৃদ্ধ। বহু িবদ্বান সাধু এখানে বসবাস করত, সেকারণে শিক্ষা এবং আদ্ধাতিকতায়ও অযোধ্যা ছিল অনেক এগিয়ে। হিন্দুরা মনে করে, তৎকালীন সময়ে অযোদ্ধা ছিল পৃথিবীর অন্যতম সেরা শহর। ভারতের বিজেপি সরকার অযোদ্ধার সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন করে অতি উচ্চাভিলাসী প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর থেকে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। তিন তলা বিশিষ্ট এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে, হিন্দু ভোটারদেরকে চাঙা করতে, নরেন্দ্র মোদি নির্মানাধীন এই মন্দির অসম্পূর্ণ অবস্থায়ই উদ্বোধন করেছেন। রামমন্দির নির্মাণকাজ শেষ হবার পর এটি হবে সারা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মন্দির। সেই সাথে এটি হিন্দুদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ স্থান হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।

রামমন্দিরের চারপাশে শিব, মা অন্নপূর্ণা, গণেশ, সূর্য দেবতা, হনুমান এবং মা ভগবতীর জন্য আরো ছয়টি মন্দির নির্মাণ করা হবে। শুধু তাই নয়, দেব-দেবী ছা্ড়াও মহর্ষি বাল্মিকী, মহর্ষি বিশ্বমিত্র, মহর্ষি বশিষ্ঠ, মহর্ষি অগস্ত্য সহ আরো বেশ কয়েক জন মহারথির নামেও রাম মন্দিরের আশে পাশে মন্দির নির্মিত হবে। অযোধ্যায় প্রবেশের অনেক আগে থেকেই মন্দিরের মত বড় বড় বেশ কয়েকটি গেট নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে এমন ছয়টি গেট নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব গেট তৈরীর উদ্দেশ্য হল, এখান দিয়ে প্রবেশ করার সময় পর্যটকেরা যেন বুঝতে পারে যে, তারা ভারতের মন্দির নগরীতে প্রবেশ করছে। এসব গেটের নামও রামায়ণের চরিত্রগুলোর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এগুলোর নাম হবে, শ্রী রাম দুয়ার, লক্ষণ দুয়ার, হনুমান দুয়ার, ভারত দুয়ার, জটায়ু দুয়ার এবং গরুড় দুয়ার।

অযোধ্যা শহরে শ্রীরামের এক বিশাল মূর্তি তৈরী করা হবে, যা হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্ট্যাচু। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু হল গুজরাটের স্ট্যাচু অব ইউনিটি। এর উচ্চতা হল ৭৯০ ফুট। কিন্ত অযোধ্যায় শ্রী রামের পরিকল্পনাধীন মূর্তির উচ্চতা হবে ৮২০ ফুট।

অযোধ্যার ৫০ একর জায়গা নিয়ে একটি টেম্পল মিউজিয়াম নির্মাণ করা হবে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর ইতিহাস এবং দর্শন নিয়ে এই জাদুঘর সাজানো হবে। এসব মন্দির কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং সেখানে কি ধরনের পুজা করা হয়, এরকম বিষয়েও দর্শনার্থীদের ধারণা দেওয়া হবে।

বিজেপি সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল, অযোধ্যায় ভ্রমণ করা সকল বয়সী দর্শনার্থীদেরকে শ্রী রামের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত করা। সেকারণে শিশুদেরকেও এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। শিশুদের জন্য ডিজনিল্যান্ডের এক ভারতীয় সংস্করণ তৈরী করা হবে, যার নাম হবে রামল্যান্ড। এখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রী রামের জীবনী উপস্থাপন করা হবে। রামায়ণে যেসব জায়গার কথা বলা হয়েছে, সেসব জায়গার হুবহু প্রতিরূপ তৈরী করা হবে। আলট্রা মডার্ন রাইড এবং নানামুখী এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থাও রাখা হবে এখানে। এখানে হিন্দু ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষা এবং বিনোদনের এক মিশেল প্রদান করা হবে।

অযোধ্যার যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা

অযোধ্যার শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির কেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ লাখ তীর্থযাত্রী এখানে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেজন্য অযোধ্যার যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পপনা করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অযোধ্যার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য শহরের সাথে সংযোগকারী বেশ কয়েকটি মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। অযোধ্যা-জগদিশপুর এনএইচ-৩৩০ হাইওয়ে এবং অযোধ্যা-আকবরপুর-ভাস্করী ফোর লেন হাইওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অযোধ্যার চারদিকে ৭০ কিলোমিটার রিং রোডও নির্মাণ করা হবে। শহরের ভেতর দিয়ে রাম মন্দির পর্যন্ত যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে রাম পথ, লক্ষণ পথ, ধর্ম পথ, ভক্তি পথ, শ্রদ্ধা পথ এবং ভ্রমণ পথ নামে আলাদা ছয়টি প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব সড়ক নির্মাণ করা জন্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে শহরের বহু লোকের ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। অযোধ্যা শহরে আসা বাসগুলোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের বাস টার্মিনালও নির্মাণ করা হচ্ছে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি রুপি।

রেল যোগাযোগের জন্য ২৪০ কোটি রুপি খরচ করে অযোধ্যা ধাম রেলওয়ে জংশন তৈরী করা হয়েছে। তিন তলা বিশিষ্ট এই স্টেশনের নকশাও করা হয়েছে রামমন্দিরের নকশার আদলে। ইতোমধ্যে ভারতের সেরা ট্রেনগুলোও এই স্টেশন থেকে চালু করা হয়েছে। সুযোগ সুবিধার দিক থেকে অযোধ্যা ধাম রেলওয়ে স্টেশন কোন বিমান বন্দরের চেয়ে কম নয়।

অযোধ্যার বিমান বন্দরটিও রাম মন্দিরের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত। বিমান বন্দরের নাম, রামায়ণ রচয়িতার নামানুসারে মহর্ষি বাল্মিকি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতরে নানা চিত্রের মাধ্যমে শ্রী রামের জীবনী ফঁুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিমানবন্দরটি ভেতরে-বাইরে প্রাচীন ঐতিহ্য ধারণ করলেও, এখানে সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ যাত্রী এই বিমান বন্দরটি ব্যবহার করবে।

শুধু সড়ক, রেল এবং আকাশ পথেই নয়, জলপথেও অযোধ্যায় যাতায়াতের জন্য নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অযোধ্যা শহরে ভারতের দ্বিতীয় এবং উত্তর প্রদেশের প্রথম ওয়াটার মেট্রো চালু করা হয়েছে। এই ওয়াটার মেট্রো অযোধ্যা থেকে বারানসি পর্যন্ত চলাচলা করবে।

অযোধ্যার আবাসন মহাপরিকল্পনা

যোগাযোগের সকল মাধ্যম ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ লোক অযোধ্যা আসার পর, তাদের থাকার জন্য অনেক জায়গার দরকার হবে। সেজন্য বেশ কয়েকটি টেন্ট সিটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব তাবুর শহরের প্রধান উদ্দেশ্য হল, খুব সামান্য খরচে হাজার হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা। এগুলোর মধ্যে বিলাসবহুল তাবুও থাকবে। এর বাইরে উত্তর প্রদেশ আঞ্চলিক সরকারের প্রায় ২৫ হাজার হোটেল রুম সংযুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। অযোধ্যার পর্যটন খাতের সম্ভাব্য বিষ্ফোরণ অাঁচ করতে পেরে বহু বিলাসবহুল হোটেল চেইনও এখানে তাদের শাখা খোলার পরিকল্পনা করছে। ভারতের বহুর্জাতিক হোটেল চেইন অয়য়ো অযোধ্যায় প্রায় এক হাজার হোটেল রুম চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া তাজ গ্রুপ, উইন্ডহাম ও সারোভার হোটেল এন্ড রিসোর্ট অযোধ্যায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। এবং রেডিসন ইতোমধ্যে তাদের ফাইভ স্টার হোটেল চালুও করে ফেলেছে। অন্যদিকে সস্তা এবং বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য হোমস্টে, গেস্ট হাউজ এবং ধর্মশালার ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে বাড়ছে।

অন্যান্য মহাপরিকল্পনা

অযোধ্যা উত্তর প্রদেশের প্রথম সোলার সিটি হতে যাচ্ছে। এর পেছনেরও ধর্মীয় কারণ রয়েছে। হিন্দুরা মনে করে শ্রী রাম হল সূর্যবংশী; অর্থাৎ তিনি সূর্যের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। সেকারণে অযোধ্যা হল সূর্যবংশের রাজধানী। আর তাই উত্তর প্রদেশ সরকারের পরিকল্পনা হল, অযোধ্যার সকল ইলেকট্রিসিটি সৌর শক্তি থেকেই আনতে হবে। সেজন্য শহরের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে সোলার ট্রি লাগানো হবে। এসবের সাথে সোলার প্যানেল সংযুক্ত থাকবে এবং এর নিচে বসে ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্য করার ব্যবস্থাও থাকবে।

অযোধ্যায় প্রবাহিত সরায়ু নদী এবং এর তীরবর্তী অঞ্চলেরও ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হবে। যার বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি রুপি। এছাড়া সরায়ু নদীতে সৌরশক্তি চালিত দুটি মিনি ক্রুজ শিপ পরিচালনার করা হবে। এগুলোর নাম হবে রামায়ন জাহাজ। এর বাইরে এখানে হাউজ বোটেরও ব্যবস্থা থাকবে।

অযোধ্যায় বিশেষ আরেকটি আকর্ষণ হবে দিপাবলী উৎযাপন। এমনিতেও বিশ্বের যেকোন জায়গার তুলনায় অযোধ্যায় সবচেয়ে আকর্ষনীয়ভাবে দিপাবলী উৎযাপণ করা হয়। ২০২৩ সালে প্রায় ২৫ হাজার সেচ্ছাসেবক মিলে অযোধ্যার ৫১ ঘাটে প্রায় ২২ লাখ দিয়া প্রজ্জ্বলিত করেছিল। যা একটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। এর সাথে গ্রান্ড লেজার শো এবং ড্রোন শো এরও আয়োজন করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে এসব উৎসব উৎযাপনের পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে।

এসবের বাইরেও অযোধ্যা শহরের ঘরবাড়ি গুলোকেও মন্দিরের রং এর সাথে মিলিয়ে রাঙানো হচ্ছে। দোকানের শাটার গুলোতে হিন্দু ধর্মের প্রচলিত প্রতীকগুলো অঙ্কন করা হচ্ছে। শহরের দেয়াল এবং ফ্লাইওভারগুলোতেও রামায়ন প্রভাবিত নানা ধরনের চিত্র অঙ্কন করা হচ্ছে। এর বাইরে সড়ক গুলোকে হিন্দু থিমে সাজানো হচ্ছে।

এতসব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হল অযোধ্যায় ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য ফুঁটিয়ে তোলা। একই সাথে অযোধ্যা যেন আধুনিক শহর হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পায়, সেদিকটিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

সমালোচনা

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ভারতের ৬৮ কোটি মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের মত মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। অর্থাৎ দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করলেও, বিজেপি সরকার প্রকৃত সমস্যা সমাধান করার বদলে, হাজার হাজার কোটি রুপি খরচ করে মন্দির শহর নির্মাণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে।

৯০ এর দশকের শুরুতেও জনগণের মাঝে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব ছড়ানো এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে, বিজেপি বিপুল সংখ্যক হিন্দু ভোটারকে তাদের ভোট ব্যাংকে পরিণত করে। ২০০৯ সালে লিবারহান কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সাথে জড়িত ৬৮ জনের অধিকাংশই ছিল বিজেপি নেতা। বাবরি মসজিদ ভাঙায় নেতৃত্ব দিয়ে, পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপি হাতেনাতে তার সুফল পায়। সেই নির্বাচনে বিজেপি অতিতের তুলনায় লোকসভায় অনেক বেশি আসন লাভ করে এবং উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

হিন্দু ধর্মের প্রকৃত সাধকরা বলছেন, বিজেপি যা করছে তার সাথে হিন্দু ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলো যেমন ইসলাম ধর্মের নাম ভাঙিয়ে মুসলমানদের ক্ষতি করছে, বিজেপিও ঠিক একইভাবে হিন্দুত্ববাদের দোহায় দিয়ে, প্রকৃত হিন্দু ধর্মের অবমূল্যায়ন করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অসম্পূর্ণ রাম মন্দির উদ্বোধন করার বিষয়ে ভারতীয় মহাপন্ডিতরা আপত্তি জানালেও, বিজেপি তা আমলে নেয়নি। রাম মন্দির উদ্বোধনের সময় ভারতীয় রাষ্ট্রপতি সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য কোন ব্যক্তিকে মন্দিরে হাজির করা হয়নি। এর উদ্দেশ্য ছিল, রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার সকল কৃতিত্ব যেন শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদির বলে প্রচার করা যায়। শঙ্করাচার্য হিসেবে পরিচিত, সর্বভারতীয় শীর্ষ চারজন হিন্দু পুরোহিত মনে করেন, রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হিন্দু শাস্ত্রমতে শুদ্ধ হয়নি, এটি মূলত একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।

সমালোকেরা বলছেন, বিজেপি রামের পূজা করলেও, তারা রাজ্য পরিচালনা করছে রাবণের মত। রাম মন্দির কেন্দ্রিক অযোধ্যা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হোক বা না হোক, বিজেপি সরকারের নির্বাচনে জয়লাভ করার আসল উদ্দেশ্য যে সফল হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।