OpenAI Sora

maxresdefault (5)
কি কেন কিভাবে প্রযুক্তি

OpenAI Sora

নতুন এআই মডেল

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দিক থেকে প্রযুক্তি বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ কম্পানি ওপেনএআই। ওপেনএআই এর চ্যাট জিপিটির নাম আমরা সবাই শুনেছি। প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই কম্পানি, অতি সম্প্রতি সম্পূর্ণ নতুন এক প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে। এর নাম সোরা। জাপানি ভাষায় সোরা অর্থ আকাশ। ওপেনএআই এর আবিষ্কৃত সোরা একটি নতুন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই মডেল। যা টেক্সট প্রম্পট থেকে কাল্পনিক এবং হুবহু বাস্তবের মত উভয় ধরনের দৃশ্য তৈরী করতে পারে। যেমন এই দৃশ্যগুলোর কোনটিই বাস্তব নয়, এগুলোর সবই সোরা এআই মডেল ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে।

সোরা প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়েই এমনসব ভিডিও তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে, যা সত্যিকার অর্থেই অবাক করা। খুব মনোযোগ দিয়ে না দেখলে বোঝার তেমন কোন উপায়ই নেই যে, এগুলো আসলে কৃত্রিম দৃশ্য। সেকারণে প্রযুক্তিবিদেরা ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির ভয়াবহ অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন।

কৃত্রিম ভিডিও তৈরির ভয়ংকর নতুন প্রযুক্তি আনল OpenAI !

সোরা কি?

কোন এআই মডেল কে নির্দিষ্ট কাজ করার আদেশ দেওয়ার জন্য যে ধরনের কমান্ড লেখা হয়, তাকে টেক্সট প্রম্পট বলা হয়। বর্তমানে টেক্সট প্রম্পট দিয়ে কাল্পনিক বা হুবহু বাস্তবের মত ছবি তৈরীর জন্য মিডজার্নি এআই অত্যন্ত জনপ্রিয়। ওপেনএআই এরও টেক্সট প্রম্পট থেকে ছবি তৈরী করার একটি নিজস্ব এআই মডেল আছে। যেটি DALL-E নামে পরিচিত। ওপেনএআই এর সোরাও ডালি বা মিডজার্নির মত একই ধরনের কাজ করবে, তবে তারা ছবির পরিবর্তে এবার ভিডিও তৈরী করতে পারদর্শিতা অর্জন করেছে।

ওপেনএআই এর এই গবেষণা সম্পর্কে বাইরের লোকদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য এবং ভবিষ্যতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কেমন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে তার ধারণা দেওয়া জন্য সোরা কিছু স্যাম্পল ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেমন সোরাকে বলা হয়েছে, এমন একটি সিনেমার ট্রেইলার তৈরী করতে, যেখানে একজন নভোচারী উলের হেলমেট পরে আছে। আরেকটি দৃশ্য তৈরীর জন্য লেখা হয়েছে, একজন জাপানি মহিলা লাল জামা, কালো জ্যাকেট এবং কালো হাতব্যাগ নিয়ে, টোকিয়োর রাস্তায় হেটে যাচ্ছে। এই ধরনের ভিডিও তৈরী করার জন্য শুধু কয়েকটি শব্দ লেখা ছাড়া, আর কোন কিছুরই দরকার হয়নি।

সোরা কিভাবে কাজ করে?

অদ্ভূত, অকল্পনীয় সব দৃশ্য সোরা কিভাবে নিমিষেই তৈরী করে ফেলছে, তা সত্যিই বিষ্ময়কর। এই প্রযুক্তি আসলে যে পদ্ধতিতে কাজটি করছে, তার সহজ নাম হল মেশিন লার্নিং। সোরা নামের এই এআই মডেলকে লক্ষ কোটি স্যাম্পল ভিডিওর মাধ্যমে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। যেমন: সোরা কে বল হয়েছে, এক যুবক মেঘের উপর বসে বই পড়ছে। তার উত্তরে সোরা এই দৃশ্য তৈরী করেছে। ট্রেনিং এর সময় সোরাকে শেখানো হয়েছে, যুবক দেখতে কেমন, বই কেমন, আকাশ কেমন, মেঘ কেমন। এরপর তাকে যখন এগুলো মিলিয়ে একটি দৃশ্য তৈরী করতে বলা হল, তখন সে তার নিজের মত একটি আউটপুট দিয়েছে। এভাবে এআই মডেলটি যত বেশি দৃশ্য তৈরী করবে, সে তত বেশি নিঁখুত দৃশ্য তৈরী করার জন্য দক্ষ হয়ে উঠবে।

সোরার ভয়ংকর ভবিষ্যৎ

ওপেনএআই এর আবিষ্কৃত এই প্রযুক্তি একই সাথে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং ভয়ংকর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভিস্যুয়াল স্টোরি টেলিং বা গল্প বলার ক্ষেত্রে স্টক ফুটেজ তৈরী, বিজ্ঞাপন কিংবা ভিডিও ক্যাম্পেইন পরিচালনা সহ নানা ক্ষেত্রে সোরার তৈরী করা দৃশ্য ব্যবহার করা হতে পারে।

সোরা এখনও জনসাধারণের ব্যবহার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। বর্তমানে শুধুমাত্র এআই মডেল নির্মাতা এবং গবেষকরা সোরা ব্যবহার করতে পারছেন। সেই সাথে এর ব্যবহারে বেশ কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই মডেল ব্যবহার করে কোন যৌন উত্তেজক কন্টেন্ট, সহিংসতা, এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের মত দেখতে কারো দৃশ্য তৈরী করা যাবে না। সেই সাথে ভিডিওগুলো দৈর্ঘ্য শুধুমাত্র ১ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে এবং ভিডিওর এক কোনায় ওয়াটার মার্ক থাকবে। তবে একসাথে দুই তিনটি ভিডিও জোড়া দিয়ে বা ভিডিওর ফ্রেম ক্রপ করে এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা কোন ব্যাপারই না। 

সোরার অপব্যবহার ঠেকানোর জন্য এই শর্তগুলোই যথেষ্ট নয়। এমনিতেই সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া সংবাদের অভাব নেই। এরপর সেসব ভুয়া সংবাদকে আরো আকর্ষনীয় করতে যদি, তার সাথে এ ধরনের নিঁখুত কৃত্রিম দৃশ্য জুড়ে দেওয়া হয়, তাহলে কী হবে? কোন রাজনৈতিক সহি  ংসতা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মত বিষয়ের কৃত্রিম দৃশ্য তৈরী করে, খুব সহজেই সমাজ এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা যাবে। এর মাধ্যমে এমন সব ভূল তথ্য, ভুয়া সংবাদ এবং বিভ্রান্তিকর ভিডিও তৈরী করা সম্ভব, যা হয়ত আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।

মাত্র কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টগনের হামলার এক ভুয়া ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মূল ধারার বেশ কিছু গণমাধ্যম সেই ভুয়া ছবি শেয়ার করে সংবাদও প্রচার করেছিল। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, ছবিটি কৃত্রিমভাবে তৈরী করা। এই ভুয়া সংবাদ ক্ষণিকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটেও প্রভাব ফেলেছিল। এই ধরনের ভুয়া সংবাদ যদি এখন থেকে ভিডিওর মাধ্যমে প্রচার করা হয়, তাহলে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যাবে।

ওপেনএআই জানিয়েছে তারা তাদের এই ডিজিটাল প্রডাক্ট বাজারে ছাড়ার আগে আরো বেশ কিছু নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু এটিই যথেষ্ট নয়। প্রযুক্তি দানব গুগলও একই ধরনের একটি এআই মডেল তৈরী করেছে, যার নাম Lumiere। শুধু গুগল বা ওপেনএআই ই নয়, আরো বেশ কিছু কম্পানি এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। যার অনেকগুলোই ব্যবসা করার জন্য নৈতিকতার কোন বালাই রাখছে না। এসব ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই বিখ্যাত রাজনীতিবিদদের ভুয়া ভিডিও এবং বিখ্যাত নারী তারকাদের পর্নো ভিডিও তৈরী করার মত ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি দিয়ে, যে কারো চেহারা ব্যবহার করে ভুয়া দৃশ্য তৈরী করা, সাধারণ টেক্টস মেসেজ লেখার মত সহজ বিষয়ে পরিণত হবে।

বর্তমানে এআই টুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যাটজিপিটি মাত্র বছর খানেক আগে বাজারে এসেছে। চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা দেখে, একই ধরনের অসংখ্য এআই টেক্টটস জেনারেটরে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। একইভাবে সোরা যখন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, তখন এর অপব্যবহার ঠেকানো শুধু কঠিনই নয়, বরং তা অসম্ভবের কাছাকাছি হয়ে উঠবে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।