এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম নদী তৈরি করছে আফগানিস্তান

maxresdefault (4)
জীবনযাপন

এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম নদী তৈরি করছে আফগানিস্তান

কোশ টেপা খাল

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং চ্যালেঞ্জিং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দেশের কথা বললে হয়ত, আফগানিস্তানের নাম আসবে সবার নিচে। কিন্তু সেই আফগানিস্তানই এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম খাল খনন করছে। ২৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের নাম কোশ টেপা খাল। যা দৈর্ঘ্যে সুয়েজ খালের চেয়েও প্রায় ১০০ কিলোমিটার বড়। এই খালটি মূলত এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘতম নদী আমু দরিয়ার পানি পরিবহণ করার জন্য তৈরী করা হচ্ছে। নদীর পানিকে খালের মাধ্যম প্রবাহিত করে প্রায় ৫ লক্ষ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হবে। সেকারণে কোশ টেপা খালকে বলা হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম নদী।

আফগানিস্তান কেন কৃত্রিম নদী বানাচ্ছে ?

খাল কেন দরকার

আপগানিস্তান থেকে দখলদার মার্কিন বাহিনী পলায়ন করার পর, পশ্চিমারা ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে, আফগানিস্তানের ভাগ্যে অনেক খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। কিন্তু সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে, তালেবান সরকারের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বের যেসমস্ত দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে, আফগানিস্তান সেসব দেশের মধ্যে অন্যতম নাজুক অবস্থায় আছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, তীব্র খড়া, হিমবাহ গলা পানিতে সৃষ্ট আকষ্মিক বন্যার মত নানান কারণে দেশটির কৃষি ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। জাতি সংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসেব মতে, প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ আফগানি জনগণ পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না। প্রতি তিন জনে এক জন আফগানিস্তানি জানে না কখন তারা তাদের পরবর্তী বেলার খাবার খেতে পাবে।

তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারের সক্ষমতার একটি নতুন প্রতীক হল দেশটির সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প কোশ টেপা খাল। মরুভূমির মধ্য দিয়ে নির্মাণাধীন এই খালে আমু দরিয়া নদীর পানি প্রবাহিত করে, দেশটির বিস্তৃত অঞ্চলকে সবুজ শ্যামল করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমু দরিয়া নদীটি তাজিকিস্তান ও আগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় সৃষ্টি হয়ে উজবেকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবহিত হয়ে আরাল সাগরে পতিত হয়েছে। যার কারণে প্রাকৃতিকভাবে আফগানিস্তান এই নদী থেকে খুব একটা লাভবান হয় না। তাই খাল খননের মাধ্যমে আমু দরিয়া নদীর প্রায় ২০ শতাংশ পানি দেশটির মরু অঞ্চলে প্রবাহিত করা হবে। খাল খনন শেষ হলে এর মাধ্যমে মরুভূমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে এবং চাষের আওতায় আসবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমি। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ বেড়ে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবার পর আফগানিস্তান খাদ্য উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে খাল খনন করার পরিকল্পনাটি বিগত কয়েক দশক ধরেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে পালাক্রমে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে থাকায়, কোন সরকারই এত বড় খাল খনন করার মত সক্ষমতা অর্জন করেনি।

২৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কোশ টেপা খাল প্রকল্প বস্তবায়ন করতে তালেবান সরকারকে প্রায় ৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগানে আফগানিস্তান কোন বিদেশী সহায়তা পাচ্ছে না। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে খনন করা এই খালের জন্য ইতোমধ্যেই দেশটির রাজস্বের প্রায় ৮ শতাংশ খরচ হয়ে গেছে।

তালেবান সরকার জানিয়েছে, প্রায় ৫ হাজার কর্মী ও তিন হাজার ভাড়ি যন্ত্র ব্যবহার করে, দিনরাত ২৪ ঘন্টা এই প্রকল্পের কাজ চলছে। খালটির গতিপথে থাকা বালির পাহাড়গুলো কেটে খালের সমতলে নিয়ে আসা, এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। এখনও পর্যন্ত ৩ কোটি ২০ লক্ষ ঘন মিটারের বেশি বালি অপসারণ করা হয়েছে।

আফগানিস্তান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের টেকনিক্যাল টিম এবং দেশটির ইসলামিক আামিরাতের শীর্ষ নেতা ও সরকারী কর্মকর্তারা সরাসরি এই প্রকল্পের তদারকি করছেন। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কোশ টেপা খাল বিগত ১০ মাসে প্রায় ১০০ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। তারা নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

বিরূপ প্রভাব

প্রকৌশলীরা বলছেন, কাজ দ্রুত শেষ করা মানেই ভালো কাজ নয়। অনেকেই মনে করছেন তালেবান সরকার তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে, খাল ভালোভাবে আচ্ছাদিত করছে না। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের শুষ্ক মাটি খালের বেশিরভাগ পানি শুষে নিতে পারে। তাছাড়া খাল তৈরীর প্রকল্পে সবচেয়ে সহজ কাজটিই হল খাল খনন করা। পরবর্তীতে খালে পানি প্রবাহ বজায় রাখা এবং মরুভূমির মধ্যে খাল রক্ষণাবেক্ষণই আসল চ্যালেঞ্জ।

বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে, আঞ্চলিক বিবাদ বাড়তে পারে। কারণ উজবেকিস্তান আমু দরিয়ার পানি দিয়ে তাদের প্রধান অর্থকরী ফসল তুলার ক্ষেতে সেচ দেয়। সেখানে পানির প্রবাহ কমে গেলে উজবেক সরকার আফগানিস্তানে বিদ্যুৎ রপ্তনি বন্ধ করে দিতে পারে। আফগনিস্তান মূলত উজবেকিস্তান থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের ঘাটতি পূরণের জন্য উজবেকিস্তান আফগানিস্তানে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে আফগনিস্তানের রাজধানী কাবুলের বাসিন্দারা দিনে মাত্র দুই ঘন্টা বিদ্যুৎ পেয়েছে। ফলে আমু দরিয়ার পানি নিয়ে যদি দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হয়, তাহলে তা আফগানিস্তানের জন্যই বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।