সমকামিতা বাড়ছে কেন
সমকামিতা বাড়ছে কেন
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী সমকামিতার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। মাত্র ৭০ বছর আগে, যেখানে সমকামী জনসংখ্যার হার ছিল মাত্র ০.৮%, সেখানে আজকের প্রজন্মে এটি প্রায় ২১% এ পৌঁছেছে। তারমানে বর্তমানে প্রতি ৫ জনে একজন সমকামী।
সমকামী ব্যক্তি ও তাদের সমর্থকরা দাবি করেন, এটি কোনো রোগ বা অপরাধ নয়, বরং একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি। তবে, মানব সভ্যতার দীর্ঘ এক লক্ষ বছরের ইতিহাসে কখনও এত বিপুল সংখ্যক মানুষ সমকামিতার মত বিকৃত যৌনাচারে আসক্ত ছিল না। তাহলে, গত ৭০ বছরে কী এমন পরিবর্তন ঘটল, যার ফলে এত বিপুল পরিমাণ মানুষ সমকামিতার মত ভয়ংকর ছোঁয়াচে সামাজিক মহামারির শিকার হল?
LGBTQ+ কী
ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের মত বিশ্বের বহু ধর্ম এবং সমাজে সমকামিতাকে নিষিদ্ধ ও পাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত লুত (আ.)-এর জাতির কাহিনি থেকে বোঝা যায় যে, সৃষ্টিকর্তা সমকামীতাকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের সমকামিতা লুত (আ.) এর জাতির পাপাচারকেও বহু গুণে ছাড়িয়ে গেছে।
আজকাল সমকামিতার প্রসঙ্গে একটি শব্দ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, তা হল LGBTQ। যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের দিক থেকে যারা সমাজের প্রচলিত কাঠামোর বাইরের অবস্থান করে, তাদের বোঝাতে LGBTQ ব্যবহার করা হয়। এখানে
- L → তে Lesbian (লেসবিয়ান) বোঝানো হয়। এরা এমন নারী যারা অন্য নারীদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে।
- G → তে Gay (গে) বোঝানো হয়। এরা এমন পুরুষ যারা অন্য পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। তবে অনেক সময় সকল সমকামিদের বোঝাতেও গে শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
- B → তে Bisexual (বাইসেক্সুয়াল) বোঝানো হয়। এরা এমন ব্যক্তি যারা নারী ও পুরুষ উভয় লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে।
- T → তে Transgender (ট্রান্সজেন্ডার) বোঝানো হয়। যারা তাদের জন্মগতভ লিঙ্গের বাইরে গিয়ে অন্য কোন লিঙ্গ ধারণ করে। এবং সবশেষে
- Q → বলতে বোঝায় Queer বা Questioning (কুইয়ার বা কোয়েশ্চনিং):
- Queer হল তারা যারা প্রচলিত লিঙ্গ পরিচয় ও যৌন প্রবণতার বাইরে নিজেদের পরিচয় ধারণ করে। এবং
- Questioning দ্বারা এমন ব্যক্তিদের বোঝায়, যারা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে এখনো সন্দিহান।
সবকিছু মিলিয়ে, LGBTQ এর বিকৃত মানসিকতায় মানুষ এখন আর শুধু নারী-পুরুষের মত দুটি লিঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বর্তমানে সমাজে প্রায় ১৪টির বেশি ধরনের লিঙ্গ তৈরী হয়েছে। সেকারণে LGBTQ এর পরবর্তী সংস্করণ হল LGBTQ+। এই ‘+’ চিহ্ন দিয়ে বাকি ১২ টি লিঙ্গ প্রকাশ করা হয়।
সমকামিতার অস্বভাবিক বৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজার্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের এক জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাঁচজনে একজন Gen Z সমকামি। এটি শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, বরং বর্তমান সমাজের ভয়াবহ পরিবর্তনশীলতার বাস্তবতার প্রতিফলন। বিগত মাত্র এক দশকে LGBTQ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
একটি প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সমকামিতার বিষ কেমন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে সে সম্পর্কে বুঝতে হল প্রজন্ম গুলো নিয়ে আলোচনা করা জরুরী।
১৯৪৬ সালের আগে যারা জন্মেছিল তাদের বলা হয় ট্রাডিশনালিস্ট। ১৯৪৬-১৯৬৪ সালের মধ্যে যারা জন্মেছিল, তাদের বলা হয় বেবি বুমারস। ১৯৬৫-১৯৮০ সালের মধ্যে যারা জন্মেছিল, তাদের বলা হয় জেনারেশন এক্স। ১৯৮১-১৯৯৬ সালের মধ্যে যারা জন্মেছিল, তারা হল মিলেনিয়ালস। ১৯৯৭-২০১০ সালের মধ্যে যারা জন্মেছে তারা হল জেনারেশন জি বা জেন-জি। ২০১০-২০২৪ এর মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুরা জেনারেশন আলফা এবং ২০২৫ থেকে ২০৩৯ সাল এর মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুরা হবে জেনারেশন বিটা।
এবার জেনারেশন অনুযায়ী সমকামিতার হার লক্ষ্য করি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
ট্রাডিশনালিস্টদের মধ্যে সমকামী ছিল মাত্র ০.৮%, বেবি বুমারস ২.৬%, জেনারেশন এক্স ৫%, মিলেনিয়ালস ১০% এবং সবশেষে জেনজির মধ্যে সমকামিতার হার প্রায় ২১-২২%। এই হার দেখে সহজেই অনুমান করা যায় জেনারেশন আলফার ক্ষেত্রে জনসংখ্যার অর্ধেকই হবে সমকামি। এবং জেনারেশন বিটা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তখন পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষই হবে সমকামি।
সমকামিতা যদি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়ই হয়ে থাকে, তাহলে তো মানব সভ্যতার শুরু থেকেই, সমাজে বিপুল পরিমাণ সমকামি থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে, জেনারেশনের সাথে সাথে সমকামিতার হার বাড়ছে েকন?
সমকামিতা বাড়ছে কেন?
সমকামিতার ভয়াবহ বিস্তার মোটেও কোন প্রাকৃতিক বিষয় নয়। একে পরিকল্পিতভাবে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় পরিমন্ডলের বাইরেও বিভিন্ন সমাজ এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে সমকামিতাকে প্রতিকার যোগ্য মানসিক রোগ হিসেবে গণ্য করা হত।
অতীতে বিশ্বজুড়ে প্রায় সকল সমাজে সমকামিতা অবৈধ ও সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল। তবে ২০ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে একে বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৭৯১ সালে ফ্রান্স প্রথম দেশ হিসেবে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়। এরপর ১৮০০-এর দশকে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রাজিলের মতো কিছু দেশও সমকামিতাকে অপরাধের তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়।
আধুনিক যুগে ১৯৬৭ সালে, যুক্তরাজ্যে শুধুমাত্র ২১ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য আংশিকভাবে সমকামিতা বৈধ করা হয়। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্কে ঘটে “স্টোনওয়াল দাঙ্গা”, যা সমকামী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এরপর ১৯৭৩ সালে, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (APA) সমকামিতাকে মানসিক ব্যাধির তালিকা থেকে বাদ দেয়।
১৯৭৮ সালে, সুইডেন প্রথম দেশ হিসেবে সমকামীদের আইনগত স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯৯ সালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সমকামিতাকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলে। ২০০১ সালে, নেদারল্যান্ডস বিশ্বে প্রথম সমকামী বিয়ে বৈধ করে। ২০১৫ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের মধ্যে, বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়।
তারমানে ১৯৬০ এর দশকে সমকামিতা সম্পর্কিত আইন শীথিল হওয়ার সাথে সাথে এই ব্যাধি মহামারির মত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে ৭০টিরও বেশি দেশে সমকামিতা এখনও অবৈধ, এবং কিছু দেশে এটি মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে বিশ্বব্যাপি সমকামী বিবাহ, সমান অধিকার, এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের আইনগত স্বীকৃতি অনেকটাই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সমকামিতা কিভাবে বাড়ছে?
১৯৩০ থেকে ১৯৬০-এর দশকেও পশ্চিমা সমাজে সমকামিতাকে অত্যন্ত অবৈধ ও অশ্লীল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সেকারণ এই বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খোলাখুলি আলোচনাও হতো না। ১৯৬০ এর দশকের পর থেকে সমকামীদের বিভিন্ন ইভেন্ট গণম্যাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হতে থাকে। কিন্তু ১৯৯০-এর দশক থেকে হলিউডে সমকামী চরিত্রকে স্বাভাবিকভাবে দেখানো শুরু করে। সেকারণেই মিলেনিয়ালদের মধ্যে হঠাৎ করেই বিপুল পরিমাণ নারী-পুরুষ সমকামী হয়ে ওঠে।
বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এর মত সোশ্যাল মিডিয়া LGBTQ সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আগে যেখানে সিনেমা ও টিভি সিরিজগুলোতে সমকামী চরিত্র খুব কম দেখা যেত, অথবা দেখা গেলেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হতো, এখন সেখানে সমকামী চরিত্রকে প্রধান চরিত্র বা আদর্শ চরিত্র হিসেবে দেখানো হচ্ছে। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম বা ডিজনি+ এর মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অনেক সিরিজ ও সিনেমায় LGBTQ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সমকামী ভালবাসাকে মহান করে প্রচার করা হচ্ছে। একটা সময় যেমন, নাটক সিনেমার সিংহভাগ গল্পই গড়ে উঠত নর-নারীর প্রেম ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে; সমকামীতার প্রচারণাও বর্তমানে ঠিক সেই জায়গায় রয়েছে। জেনারেশন আলফার জন্য যেসব চলচ্চিত্র তৈরী করা হবে তার সিংহভাগ হবে সমকামী ভালোবাসার গল্প।
শুধু তাই নয়, ডিজনি ও মার্ভেল এর মত বড় বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো সমকামী সুপারহিরো চরিত্র তৈরি করছে, যার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে এটি আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলা হচ্ছে।
বর্তমানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, ইউটিউব, টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে LGBTQ বিষয়ক কনটেন্টের জোয়ার বইছে। প্রচুর সমকামী ইনফ্লুয়েন্সার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে কথা বলছেন, যা তরুণদেরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জন্য Pride Month বা গর্বের মাস ঘটা করে উদযাপন করা হচ্ছে, যা বিষয়টিকে আরও জনপ্রিয় করে তুলছে। Google, Apple, Nike এর মত বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং ক্যাম্পেইনে LGBTQ সম্প্রদায়কে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে। তাছাড়া CNN, BBC, The Guardian, The New York Times এর মত বৈশ্বিক মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সমকামিতার খবর অত্যন্ত আবেগ প্রবণ করে উপস্থাপন করছে, যার ফলে তরুণ সমাজ এর প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে।
কথায় আছে, প্রচারেই প্রসার। সমকামিতার বিস্তারের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে।
শুধু প্রচারণায় যদি কাজ না হয়, সেকারণে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের পাঠ্যক্রমে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়; এমনকি শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে LGBTQ বিষয়ক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের শুধু কে সমকামিতার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখতে শেখানো হচ্ছে না, বরং রীতিমত সমকামি হওয়ার জন্য শিশুদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। শিশুদের নমনীয় মস্তিষ্কে তাদের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সংশয় তৈরী করে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে শিশুরা নিজেদের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারছে না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে হঠাৎ করে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা ৪০০০% বেড়ে গেছে; যারা বুঝতে পারছে না তারা আসলে কোন লিঙ্গের। সমকামিতা যদি স্বাভাবিকই হয়, তাহলে হঠাৎ করে শিশুদের মধ্যে এই প্রবণা এত বাড়ছে কেন?
শুধু তাই নয়, শিশু শিক্ষার নামে ৭ বছর বয়সীদের সমকামিতার নানা যৌন আচরণ স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে শেখানো হচ্ছে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে সমকামিতাকে এমনভাবে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষও এই পরিচয় প্রকাশে উত্সাহিত হয়।
বহু আন্তর্জাতিক সংগঠন সমকামিতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গোপনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। সেকারণেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল দেশেও সমকামিতার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে।
মানব সভ্যতা ধ্বংসের এই নীল নকশার সম্পূর্ণ চিত্র এই একটি ভিডিওতে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই এই গোপন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ভবিষ্যতে কিকেনকিভাবে আরো ধারাবাহিক ভিডিও প্রকাশ করবে।