সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ

maxresdefault (7)
জীবনযাপন

সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ

ভূমিকা

বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপ হল অস্ট্রেলিয়ার “ইনল্যান্ড টাইপান” Inland Taipan। এই সাপের বিষের অভাবনীয় শক্তির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই বিষ মূলত ইঁদুর বা অন্যান্য ছোট প্রাণী শিকার করতে তারা ব্যবহার করে।

ইনল্যান্ড তাইপান সাপের মাত্র এক মিলিগ্রাম বিষ হাজার হাজার প্রাণীকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। যা অন্য যে কোন সাপের তুলনায় এদেরকে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপ ইনল্যান্ড টাইপান !

ইনল্যান্ড তাইপানের পরিচয় এবং বাসভূমি

ইনল্যান্ড তাইপান সাপের বৈজ্ঞানিক নাম অক্সিউরানাস মাইক্রোলেপিডোটাস (Oxyuranus microlepidotus)। এদের মূলত অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম নিউ সাউথ ওয়েলসের কিছু অংশে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত নদী বা জলাশয়ের কাছাকাছি, পাথুরে উপত্যকা, শুষ্ক তৃণভূমি এবং পুরাতন ইঁদুরের গর্তে বাস করে।

ইনল্যান্ড তাইপান সাপ তাদের পরিবেশের সাথে অত্যন্ত ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। এদের গায়ের রঙ এদের বাসস্থানের পরিবেশের সাথে মিশে থাকার জন্য বেশ সহায়ক। সাধারণত এদের গায়ের রঙ বাদামী বা হলুদাভ-বাদামী হয়, যা ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। শীতকালে এরা একটু গাঢ় রঙের এবং গ্রীষ্মকালে হালকা রঙের হয়।

বিষের ক্ষমতা

সাপের বিষের তীব্রতা মাপার একক কে বলা হয় LD₅₀। LD₅₀ এর পূর্ণরূপ হলো Lethal Dose, 50%। এর মানে হলো গবেষণাগারের একটি ইঁদুরকে মারতে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিষ দরকার হয়, সেটিই সেই বিষের LD₅₀ মান। এই মান যত বেশি, বিষ তত কম ক্ষতিকর। আর LD মান যত কম, বিষ তত বেশি তীব্র। ইনল্যান্ড টাইপান সাপের বিষের LD₅₀ মান অত্যন্ত কম, তাই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপ হিসেবে পরিচিত। এর LD₅₀ মান মাত্র ০.০২ মিলিগ্রাম/কেজি। এই বিষ পৃথিবীর সকল সাপের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

ইনল্যান্ড তাইপানের এক দংশনে প্রায় ৪৪ মিলিগ্রাম বিষ নির্গত হতে পারে, যা দিয়ে প্রায় ২.৫ লক্ষ ইঁদুরকে মেরে ফেলা যাবে। তাছাড়া এই সাপের এক কামড়ে যে পরিমাণ বিষ বের হয়, তা ১০০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।

তবে আশার ব্যাপার হলো, এই সাপটি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির এবং এরা সাধারণত মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই লুকিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। যদি এরা কোনোভাবে আক্রান্ত হয়, তবুও এরা পালানোর চেষ্টা করে। শুধুমাত্র কোণঠাসা হয়ে পড়লেই, ইনল্যান্ড তাইপান আত্মরক্ষার জন্য দংশন করে। এদের বিষের প্রধান উপাদান হলো নিউরোটক্সিন, যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এই বিষ রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং পেশীগুলোকে প্যারালাইসড করে দেয়। তবে ইনল্যান্ড তাইপানের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টি-ভেনম তৈরি করা হয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

চমকপ্রদ তথ্য

অতীতে ইনল্যান্ড তাইপানের নাম ছিল Fierce Snake বা ছোট-আঁশওয়ালা সাপ। কারণ সেসময় এর বিষের ক্ষমতা সম্পর্কে কারো তেমন কোন ধারণা ছিল না। পরবর্তীতে এর বিষের কার্যকারিতা প্রমাণিত হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন “ইনল্যান্ড তাইপান”।

এই সাপটি অত্যন্ত সতর্ক এবং দ্রুত নড়াচড়া করতে পারে। ইনল্যান্ড তাইপান প্রধানত ইঁদুর, ছুঁচো এবং ছোট পাখি শিকার করে। শিকারকে ধরার পর এরা দ্রুত বিষ প্রয়োগ করে এবং শিকার স্থির হয়ে গেলে তা গিলে খায়।

এই সাপটি মানুষের আবাসন থেকে দূরে থাকে। তাই এদের দেখা পাওয়া অত্যন্ত বিরল। সাধারণত প্রাণীবিজ্ঞানী বা সাপ উদ্ধারকারীরাই মাঝেমধ্যে এদের দেখতে পায়। এরা আক্রমণাত্মক নয় বলে, খুব কম মানুষই ইনল্যান্ড তাইপানের কামড়ে মারা গেছে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।