সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এত জটিলতার কারণ কী
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এত জটিলতার কারণ কী
ভূমিকা
বাংলাদেশের পর্যটনের সবচেয়ে সেরা গন্তব্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে দ্বীপটির জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ায়, অন্তবর্তী সরকার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বর্তমান পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান নিজেই একজন পরিবেশ অধিকার কর্মী হওয়ায়, সরকার সেন্ট মার্টিনের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে পর্যটন ব্যবসায়ীরা সেন্ট মার্টিনে পর্যটন সীমিত করার বিপক্ষে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
সেন্টমার্টিনের অবনতি
নৈসর্গিক সুন্দর সেন্টমার্টিন একসময় ছিল জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে সেন্ট মার্টিনে প্রতিবছর মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ জন পর্যটক ভ্রমণ করতো। আর বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখেরও বেশি পর্যটক ছোট্ট এই দ্বীপটিতে ভ্রমণ করে। পর্যটনের এমন অতিরিক্ত চাপের কারণেই সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি রক্ষায় ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন কে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাগত শুধু অবনতিই হচ্ছিল। ২০২২ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কে কেন্দ্র করে বঙ্গোপসাগরের ১৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সেন্ট মার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এনভায়রনমেন্টাল এডভান্স নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, শুধুমাত্র অধিক পর্যটকের কারণেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সেন্ট মার্টিন এর তাপমাত্রা কমপক্ষে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এর বাইরেও গত দুই যুগের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে সেন্ট মার্টিন ২০ ধরনের বিপদের মুখে পড়েছে। দ্বীপের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন উজাড়, নানা ধরনের দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কচ্ছপের আবাস ধ্বংস, প্লাস্টিকের ব্যবহার, মিঠাপানির সংকট, সৈকত ভাঙনের মত নানা বিপদ ক্রমশই বাড়ছে।
সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয় বরং সারাবিশ্বের মধ্যেই ছিল অনন্য। গবেষণা থেকে জানা যায় ১৯৮০ সালে সেন্ট মার্টিনে প্রায় ১৪১ প্রজাতির প্রবাল ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে ১০০ এরও বেশি প্রজাতির প্রবাল সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সেন্ট মার্টিন সম্পূর্ণ প্রবাল শূন্য হয়ে যাবে।
সেন্ট মার্টিন এর মত এমন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর একটি দ্বীপ তৈরি হতে প্রায় হাজার বছর সময় লাগে। কিন্তু পর্যটকদের মাত্র কয়েক যুগের অত্যাচারেই; মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এমন একটি দ্বীপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েক বছর থেকে, সেন্ট মার্টিন ধ্বংসের জন্য প্রধানত দায়ী অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
পবিবেশ ধ্বংস
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মাত্র ১০ বছর আগেও আবাসিক হোটেল ছিল মাত্র ২০-২৫ টি। আর বর্তমানে সেন্ট মার্টিন প্রায় আড়াইশর বেশি হোটেল মোটেল ও কটেজ রয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য এত এত আবাসন তৈরি করতে গিয়ে সেন্ট মার্টিন এর প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি নারকেল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ সেন্টমার্টিনের মূল আকর্ষণই ছিল নারকেল গাছ। একসময় এই দ্বীপে অধিক নারিকেল গাছ থাকার কারণে, সেন্ট মার্টিন এর আরেক নামই হলো নারিকেল জিঞ্জিরা।
মাত্র ১ যোগ আগেও সেন্ট মার্টিন ১১০০০ নারিকেল গাছ ছিল। কিন্তু বর্তমানে দীপ্তিতে নারকেল গাছ আছে মাত্র ৫০০০ এর মত। সেন্ট মার্টিনের এসব নারিকেল গাছের জন্য আরেকটি বড় বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে সাদা মাছির উৎপাত। এসব সাদা মাছির মোরগের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টি গাছ মারা যাচ্ছে। সেই সাথে সেন্ট মার্টিনের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়া এবং পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণেও দ্বীপের উদ্ভিদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
যে সেন্ট মার্টিন একসময় ডাবের জন্য বিখ্যাত ছিল; সেই সেন্টমার্টিনেই পর্যটন মৌসুমে বরিশাল, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা এবং কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ডাম আমদানি করতে হচ্ছে। সেন্টমার্টিনের উৎপাদিত ডাব বিক্রি করে স্থানীয় কৃষকরা বেশ ভালো উপার্জন করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে তাদের সেই উপার্জন প্রায় বন্ধের পথে।
সেন্ট মার্টিন এর আরেকটি গুরুতর অসুবিধা হলো মিঠাপানির সংকট। সাগরের মাঝখানে অবস্থিত হওয়ার কারণে প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট বিভিন্ন উপায়ে দ্বীপের মিঠাপানির উৎসের সাথে সামুদ্রিক লোনা পানি মিশে গেছে । যার ফলে সেন্ট মার্টিনের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সেই সাথে আর্সেনিক এবং আয়রনের সমস্যাও রয়েছে । দ্বীপটির তিনটি এলাকা ডেইলপাড়া, কোনাপাড়া ও ছেঁড়াদিয়া মূলত সুপেয় পানি পাওয়া যেত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এইসব এলাকার টিউবওয়েল দিয়েও লবণাক্ত পানি বের হচ্ছে। নিয়মিত লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে দ্বীপের বাসীন্দাদের মধ্যে নানা ধরনের রোগব্যাধি ও ছড়িয়ে পড়েছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক ভাবে যতটুকু সুপেয় পানি ছিল শুধুমাত্র দ্বীপের বাসিন্দারা তা ব্যবহার করলে আরো দীর্ঘদিন অটুট থাকতো। কিন্তু মাত্র ১০-১২ হাজার বাসিন্দার একটি দ্বীপে প্রতি বছর এক েদড় লাখ পর্যটকের বাড়তি চাপের কারণে সেই মিঠা পানি বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বড় পরিহাসের বিষয় হলো সেন্ট মার্টিন এর মানুষজন চারিদিকে পানির মাঝে বসবাস করলেও বর্তমানে খাবার পানিই তাদের সবচেয়ে বড় সংকট।
সেন্ট মার্টিনের সুপেয় পানির অভাবে একমাত্র হুমকি নয়। সেন্টমার্টিনের আশেপাশের সামুদ্রিক পানীয় মারাত্মক দূষিত হয়ে গেছে। কারণ সেন্টমার্টিনে প্রায় নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এখানকার শুয়োরেজের লাইনগুলো সরাসরি পাইপের মাধ্যমে সাগরে উন্মুক্ত হয়। ফলে দীপের বাসিন্দা এবং পর্যটকদের মলমূত্রের কারণে সেন্টমার্টিনের আশেপাশের সাগর ভয়াবহ দূষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, সেন্টমার্টিনের আশেপাশের সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২৮ জুন বেশি দূষিত। এবং পর্যটন মৌসুমে এই দূষণের পরিমাণ ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই শুধুমাত্র মানব বর্জ্য সেন্টমার্টিনের সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য ভ ভ ভ ভয়াবহ বিপদ ডেকে এনেছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপ
২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস নামের একটি গবেষণা সংস্থা কে সেন্টমার্টিনের পর সমীক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছিল। গবেষণা শেষে প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে জানিয়েছিল যে, দীপটি রক্ষা করতে হলে এই দ্বীপে কোনভাবেই পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি দেওয়া যাবে না। এবং শীতকালে পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ১২০০ জনের বেশি পর্যটক এই দ্বীপে যাওয়া ঠিক হবে না। সেই গবেষণা ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার তিন দফায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পর্যটন সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পর্যটন ব্যবসায়ীদের চাপের কারণে সরকার সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেন্ট মার্টিনে সীমিত পরিসরে পর্যটন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যেতে পারলেও, দ্বীপটিতে রাতে অবস্থান করতে পারবে না। শুধুমাত্র ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকরা রাতেও সেন্ট মার্টিনে থাকতে পারবে; তবে সেসময় প্রতিদিন ২০০০ এর বেশি পর্যটক যেতে পারবে না। এবং ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন আবার বন্ধ হয়ে যাবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট’ নামের একটি সংগঠন। মূলত পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা টোয়াব এর সদস্যরা এই জোট গড়ে তুলেছে। জোটের নেতৃত্বে থাকা অনেকের সেন্ট মার্টিনে আবাসিক হোটেল রয়েছে। আন্দোলনকারিদের মতে, সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ ও পর্যটন সীমিত করার বিষয়ে সরকার আত্নঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে পর্যটনশিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ উদ্যোক্তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।
তবে সত্যিকার অর্থে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণ অবৈধ জেনেও পর্যটন ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে সেন্ট মার্টিন কে একটি হোটেলের বস্তিতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, এই দ্বীপে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যার মাধ্যমে দ্বীপের পানি, মাটি, বায়ু বা প্রাণীর ক্ষতি হয়। এবং এখানে কোনো প্রকার অবকাঠামো নির্মাণও করা যাবে না। ২০২২ সালে সরকার ঘোষিত একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনে ইট-সিমেন্টের মত স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়াও নিষিদ্ধ। দ্বীপটিতে শুধু বাঁশ-কাঠ দিয়ে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো করা যেতে পারে।
নতুন হোটেল মোটেল নির্মাণের সময় বহুবার নির্মাণ সামগ্রী জব্দ করা, হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে মামলা দেওয়া সহ সহ নানাভাবে আবাসন নির্মাণ বন্ধ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনে পর্যটন ব্যবসার টেকসই হবে না জেনেও, ব্যবসায়ীরা প্রভাব খাটিয়ে অবাধে হোটেল রিসোর্ট নির্মাণ চালিয়ে গেছে। আগে থেকে জেনে শুনে এমন ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিষিদ্ধ এলাকায় বিনিয়োগ করাটাই তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। প্রথমত তারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে পর্যটন ব্যবসা করেছে; এরপর সরকার যখন দ্বীপটি রক্ষায় উদ্যোগী হচ্ছে; তখন পর্যটন ব্যবসায়ীরা তাদের মুনাফা লাভের আশায় দেশের অমূল্য সম্পদ সেন্টমার্টিনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে সেন্ট মার্টিনে পর্যটন সীমিত করলে সত্যিকার অর্থেই যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার লোক সেন্টমার্টিনে বসবাস করে। অতীতে এদের সবার পূর্বপুরুষ ই ছিল জেলে; যারা সাগরে মাছ শিকার এবং এবং স্থানীয়ভাবে সামান্য কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু সেন্টমার্টিনে পর্যটন বিকাশের সাথে সাথে; দ্বীপের প্রায় সবাই পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মানুষজন শুধুমাত্র পর্যটন মৌসুমে আয় করা সামান্য টাকা দিয়ে সারা বছরের সংসার খরচ চালায়। সে কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিতে পর্যটন সীমিত করলে, স্থানীয় বাসিন্দারা আর্থিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই সরকারের উচিত সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের জন্য পর্যটনের বিকল্প এমন কোন ব্যবস্থা তৈরি করা যা দিয়ে তারা সারা বছর ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।