বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়ছে কেন ?

maxresdefault (50)
কি কেন কিভাবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়ছে কেন ?

ভূমিকা

শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে অস্থিতিশীলতা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। তবে গত ২৫ নভেম্বর নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা ঢাকা শহরকে গ্রাস করে ফেলেছিল। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত একের পর এক সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও রাস্তা বন্ধের ঘটনায় ঢাকা শহর কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলন থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং সারাদেশ থেকে লোক জোর করে এনে অহিংস গণ অভ্যুত্থান ঘটানোর মতো অপচেষ্টা নগরবাসীর জনজীবনে বড়সড় প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশে অস্থিরতা বাড়ছে কেন ?

আলোচিত ২৫ নভেম্বর

ঢাকায় প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো গোষ্ঠী তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত হলেও, কিছু আন্দোলনে পতিত স্বৈরাচারের দালালদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং পরোক্ষ উসকানির সন্দেহ রয়েছে।

২৫ নভেম্বর সকালে ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রিক্সা চালকেরা আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যা ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বড়সড় প্রভাব ফেলে।

তার আগের দিন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুতে তাদের সহপাঠীর মৃত্যুর প্রতিবাদে, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করেছিল। তাদের সাথে যাত্রাবাড়ী–ডেমরা এলাকার আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর করেছে। সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই হামলার প্রতিশোধ নিতে গেলে, ২৫ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থেকে মাতুয়াইল পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে ‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস এবং মাইক্রোবাসে করে লোক নিয়ে এসে শাহবাগে জড়ো করতে থাকে। বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলে এসব লোকজনকে ঢাকায় আনা হয়েছিল।

অন্যান্য অস্থিতিশীলতা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ মাস পূর্তি হওয়ার পর থেকে ঢাকা শহরে অস্থিতিশীলতার মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। এমন কোন দিন নেই যেদিন ঢাকা শহরে কোন না কোন আন্দোলন, বিক্ষোভ বা অস্থিরতার ঘটনা ঘটছে না। বিশেষ করে ছাত্ররা অত্যন্ত তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক অসহিষ্ণু আচরণ করে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে বাসে চড়া কে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের সাথে সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফা হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। অন্যদিকে চা খাওয়ার সময় কথা কাটাকাটি কে েকন্দ্র করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

তারও আগে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকার সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা আন্দোলন চালানোর সময় চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে নারী ও শিশু সহ কয়েকজনকে আহতও করেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রাহ্মচারীকে জাতীয় পতাকার অবমাননার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের অনেকেই সহিংস আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

এছাড়াও চাকরিতে ৩৫ প্রত্যাশীদের আন্দোলন, সরকারের নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ বিতর্ক, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এর মত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান সহ; রাজধানীর আশপাশের শিল্প এলাকাগুলোতে পোশাক শ্রমিকেরা প্রায়ই বিক্ষোভে নামছেন, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোও সহিংস হয়ে উঠছে।

শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা হারানোর প্রতিশোধ হিসেবে দেশব্যাপী এই অস্থিতিশীলতার নীল নকশা তৈরী করে যাচ্ছে।

আনসার বিদ্রোহ থেকে শুরু করে সনাতনী সম্প্রদায় কে দিয়ে অন্তবর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা তারই প্রমাণ। এছাড়া শেখ হাসিনার কূট কৌশলের বেশ কিছু বিষয় ফাঁস হওয়া ফোনালাপেও শোনা গেছে। হাসিনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি নিয়ে আনন্দ মিছিলের নামে যে ধরনের ষড়যন্ত্র সাজিয়েছে, তা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ।

শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শন যে কতটা হীন পর্যায়ের সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছিলেন, তার এক সময়কার একান্ত সহকারী মতিউর রহমান রেন্টু। মতিউর রহমান রেন্টু তার লেখা “আমার ফাঁসি চাই” বইতে ব্যক্তি শেখ হাসিনার চরিত্রের যে ধরনের বর্ণনা দিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফাঁস হওয়া ফোনালাপে শেখ হাসিনার ঠিক সেই ধরনের চরিত্রই বারবার উঠে আসছে।

শেখ হাসিনা ভারতে বসে দিন রাত ২৪ ঘন্টা দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। মাত্র কয়েকটি ফোন কল ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও গোপনে যে আরো কত যড়যন্ত্র করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

যদিও এখনও পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রায় প্রতিটি ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। তবে এখানেই সে থেমে থাকবে না। “আমার ফাঁসি চাই” বই থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের দুটি অব্যর্থ ট্রাম্প কার্ড হল সাম্প্রদায়িক উষ্কানি এবং লাশের রাজনীতি। ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত থেকেই সাম্প্রদায়িক উষ্কানির যড়যন্ত্র শুরু করা হলেও, লাশের রাজনীতি এখনও শুরু করতে পারেনি।

সাম্প্রতিক সময়ের অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে আওয়ামীলীগ বড় রকমের হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চাইছে। যাতে করে নিহতের লাশের উপর ভর করে তারা আবার বড় রকমের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে অন্যদিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিয়ে তারা ব্যাপক গুজব আর অপপ্রচার শুরু করেছে। তারা বলছে মুগ্ধ নামে নাকি কেউ ছিলই না, আবু সাইদ কে নাকি বন্দুকের গুলিতে মারা যায়নি; এমনকি গণঅভ্যুত্থানে মারা যাওয়াদের কেউই নাকি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়নি, এরকম আরো বহু অপপ্রচার।

ইউনুস সরকারের ব্যর্থতা

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতা বৃদ্ধির পেছনে, শুধু পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের দায়ী করলেই হবে না। এর অন্যতম একটি কারণ হল অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাঠামোগত পরিকল্পনার অভাব এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর অক্ষমতা।

জাতির পিতা বিতর্কের পর, সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ড. মুহাম্মাদ ইউনুস কে বলছেন জাতির মামা। কারণ নামে বেনামে বহু গোষ্ঠী প্রায় প্রতিদিনই ড. ইউনুসের কাছে মামা বাড়ির আবদার নিয়ে হাজির হচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে মানুষের যত দাবি-দাওয়া ছিল সব এখন প্রকাশ করা হচ্ছে। এমনকি বহু মিমাংসিত বিষয় নিয়েও নতুন নতুন দাবি তুলে রাজধানী ঢাকাকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে।

তবে সরকার এর প্রেক্ষিতে তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর অভিজ্ঞতা সীমিত। সেই সাথে যোগ হয়েছে অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিষ্ক্রিয়তা, প্রশাসনের অসহযোগীতা এবং পুলিশ বাহিনীর ভগ্নদশা।

সুদ মুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে সারা দেশ থেকে শাহবাগে মানুষ নিয়ে আসা হল, কিন্তু ডিবি, এসবি, এনএসঅই বা ডিজিএফআই এর মত এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থা তার কিছুই জানতে পারল না। পলিথিন কারখানার শ্রমিক কিংবা ব্যাটারি চালিত রিকশাওয়ালাদের বিকল্প উপার্জনের ব্যবস্থা না করে, তাদেরকে রাস্তায় নামতে অন্তবর্তী সরকারই বাধ্য করেছে। সেই সাথে দেশের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি থামাতেও সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে না।

যার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপ্লব পরবর্তী এই সরকারও ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে যদি আওয়ামীলীগের মত নিকৃষ্ট দল আবারো বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফিরে আসে, তবে তারা নিজেদের যোগ্যতায় ফিরবে না। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের অযোগ্যতাই আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনবে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।