কে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস

maxresdefault (51)
কি কেন কিভাবে

কে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস

ভূমিকা

বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের নেতা ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার এবং জামিন না মঞ্জুরের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীরা একজন আইনজীবী কে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

চিন্ময় কৃষ্ণ কে গ্রেফতারের পর থেকে ভারতের উদ্বেগ এবং ইসকনের বিবৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অথচ মাত্র কয়েক মাস আগে খোদ ইসকনই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছিল।

কে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ?

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কে

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশে সনাতন ধর্মের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। তার আসল নাম চন্দন কুমার ধর। তিনি সনাতন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তাকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও দর্শনের প্রতি তার গভীর অনুরাগ এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের একাধিক সংগঠনের নেতৃত্ব তাকে একটি বিশেষ পরিচিতি এনে দেয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে অবস্থিত পুণ্ডরীক ধামের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, যা সনাতন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই পুন্ডরিক ধাম রাধারাণীর বাপের বাড়ী হিসেবে পরিচিত। ইস্কনের আচার্য্যবর্গের অন্যতম শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরু মহারাজ, এই পুণ্ড্ররীক ধাম থেকেই বাংলাদেশে প্রথম মন্দিরভিত্তিক ইসকনের কার্যক্রম শুরু করেন।

এমন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় তীর্থস্থানের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস তার অনুসারীদের কাছে “চিন্ময় প্রভু” হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার বক্তৃতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং ভক্তদের প্রতি আবেগপূর্ণ দিকনির্দেশনা তাকে সনাতন সম্প্রদায়ের একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়

সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। গত ৩১শে অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সহ ১৯ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় একটি মামলাটি করেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিল।

২৫শে অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। সেই সমাবেশের সময়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার টানানো জাতীয় পতাকার উপর সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকন গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে। যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে অস্বীকারের শামিল।

সেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

চিন্ময় দাসের জামিন বাতিলের পর আদালত প্রাঙ্গণে তার অনুসারীদের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। তাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি ঘিরে ধরে কয়েক ঘন্টা আটকে রাখে বিক্ষুব্ধ হিন্দুরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রিজন ভ্যান থেকেই পুলিশের হ্যান্ডমাইকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস তার সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার আহ্বান জানান। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না আসায়, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। তখন পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা চট্টগ্রাম আদালতের আশেপাশে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে সাধারণ মানুষের জান মালের ক্ষতি করতে থাকে। এমনকি তারা আশেপাশের মসিজদে পর্যন্ত হামলা চালায়। তখন সাধারণ ছাত্র-জনতাও বিক্ষোভকারী হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

একপর্যায়ে হিন্দু জঙ্গীরা সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন আইনজীবীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও সংঘর্ষে আরো অন্তত ২০ জন আহত হয়। এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার হয় যে, হিন্দুত্ববাদী ইসকনের সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বড় ধরনের সহিংসতার জন্য প্রস্তুত ছিল।

চিন্ময়ের বিতর্কিত কর্মকান্ড

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটকের পরই ইসকন বিষয়টিতে ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশে ইসকনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ পূর্বে তিনি ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে গত জুলাই মাসে চিন্ময় কে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়। মাত্র কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে একটি সংঘর্ষের ঘটনার পরও, ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ইসকন বাংলাদেশ জানিয়েছিল যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের হাজারি গলির একজন ব্যবসায়ী ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার পর, ইসকনের সন্ত্রাসীরা তার দোকান ভাঙচুর করে এবং তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। স্থানীয়রা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনী হাজারি গলিতে প্রবেশ করলে, হিন্দুরা সেনাবাহিনীর উপর এসিড নিক্ষেপ করে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে শিশু নিপিড়নেরও অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর ইসকন ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড প্রটেকশন অফিস চিন্ময়ের উপর সাময়িক বিধিনিষেধও আরোপ করেছিল। সেখানে বলা হয়, ১৮ বছরের নিচে কেউ যাতে তার সান্নিধ্যে না যায় এবং চিন্ময় দাস যেন ইসকনের কোন অবকাঠামোতে রাত্রিযাপন না করে।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়েও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে।

ভারতের অপচেষ্টা

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ভারত সরকার এবং ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে। চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সামনেও বিক্ষোভ করেছে বিজেপির বিধায়করা।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ এ ঘটনা বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর চরমপন্থীদের দ্বারা ধারাবাহিক হামলারই অনুসরন”। বাংলাদেশ সরকার এর বিপরীতে বলেছে, এমন অপ্রমাণিত বিবৃতি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বরাবরের মতই এই ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে। আদালতে হিন্দৃত্ববাদীদের আক্রমণে একজন নিরীহ আইনজীবী খুন হওয়ার বিষয়টি পাশ কাটিয়ে, তারা বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের কাল্পনিক ঘটনা প্রচার করছে।

এমন কোন ঘটনা যদি ভারতে ঘটত, যে একদল মুসলিম কোন আদালত প্রাঙ্গনে একজন হিন্দু আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে; তাহলে এতক্ষনে তার প্রতিশোধ হিসেবে আরো বহু মুসলিমকে প্রাণ দিতে হত। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি মোটেও অতটা ভয়াবহ নয়।

বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনে যতটা না শেখ হাসিনা ক্ষতি হয়েছে, তারচেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে ভারতের। কারণ এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান হয়েছে। তাই ভারত যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরী করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে।

হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে ভারতের দালাল হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ক্রমাগত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরীর চেষ্টা করে যাচ্ছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সেই ভারতীয় দালালদের অন্যতম একজন নেতা। চট্টগ্রামের হিন্দুত্ববাদীদের যে মহা সমাবেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ উঠেছে, সেই সমাবেশে থেকেও তারা ঢাকা শহর অবরোধ করার হুমকি দিয়েছিল। হাসিনা সরকার পতনের পর মাত্র ৩ মাসে তারা যত প্রতিবাদ করেছে, বিগত ১৫ বছরেও তারা এর সামান্যও করেনি। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মত ভারতীয় দালালেরা আসলে, সাধারণ সনাতন হিন্দুদের ধর্মীয় আবেগ কে পঁুজি করে, বাংলাদেশে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদ কায়েম করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

ভারতে যেহেতু উগ্র হিন্দুরা সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন করছে, তাই বাংলাদেশেও সেই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি আনার জন্য; তারা বাংলাদেশে মুসলিমবিরোধী বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে বাংলাদেশের মুসলমানরা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ক্ষেপে যায়। এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।