রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার

maxresdefault (2)
জীবনযাপন

রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার

সূচনা

বর্তমান সময়ে আমাদের বাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলোর একটি হলো রেফ্রিজারেটর, বা ফ্রিজ। খাবার সংরক্ষণ, ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম, সবই এই যন্ত্রের বদৌলতে সম্ভব। কিন্তু এটা কি হঠাৎ করেই আমাদের ঘরে এসেছে? মোটেও না! এই আবিষ্কারের পেছনে আছে হাজার বছরের প্রচেষ্টা, নানা ধরনের ব্যর্থতা, আর অনেকগুলো মানুষের কঠোর পরিশ্রম।

ফ্রিজ কিভাবে আবিষ্কার হয়েছে ?

প্রাচীন কালের ঠান্ডা রাখার কৌশল

মানুষ যখন থেকে আগুন পোহাতে শিখেছে, তখন থেকেই উল্টোভাবে ঠান্ডা রাখার কৌশল নিয়েও চিন্তা শুরু করেছে। প্রাচীন মিশর, গ্রীস আর চীনের মানুষরা খাবার ঠান্ডা রাখার জন্য বরফ আর তুষার ব্যবহার করতো। শীতে পাহাড় থেকে বরফ এনে গুহায় জমা করে রাখা হতো, যেটা গ্রীষ্মে ব্যবহার করা হতো খাবার সংরক্ষণে। রোমানদের আমলেও “বরফঘর” বা ice houses ব্যবহৃত হতো।

ভারতেও রাজপ্রাসাদে বা নবাবদের দরবারে বরফ আনার ব্যবস্থা থাকত। সেসময় কাশ্মীর বা হিমালয় থেকে হাতির পিঠে করে বরফ আনা হতো, যা মোটা মোটা কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখা হতো যেন পরিবহনের পথে গলে না যায়।

১৮শ শতকের দিকে বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, যেহেতু প্রাকৃতিক বরফ সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য, তাহলে আমরা নিজেরাই কোনভাবে ঠান্ডা তৈরি করতে পারি কিনা? ১৭৫৫ সালে স্কটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম কালেন প্রথমবারের মতো পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে ঠান্ডা উৎপাদনের একটি পদ্ধতি দেখান। তবে তখন এটি কেবল একটি বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী ছিল, ব্যবহারিক কোন যন্ত্র নয়।

এরপর ১৮৩৪ সালে আমেরিকান আবিষ্কারক জ্যাকব পারকিন্স “ভ্যাপর কমপ্রেশন” পদ্ধতিতে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করেন। যদিও সেই যন্ত্রটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি।

আধুনিক রেফ্রিজারেটরের ভিত্তি

রেফ্রিজারেটরের মূলনীতি হল, এক ধরনের বিশেষ গ্যাসকে compress বা সংকুচিত করে তরল করা হয়, তারপর সেই গ্যাসকে অাবার expand বা বিস্তার করতে দিলে; তা আশপাশের তাপ শুষে নেয় এবং ঠান্ডা তৈরি করে। ১৮৭৬ সালে কার্ল ভন লিন্ড নামে এক জার্মান প্রকৌশলী এই ধারণাটি পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করেন । তিনি প্রথম শিল্পকারখানায় ব্যবহারযোগ্য রেফ্রিজারেশন প্রযুক্তি চালু করেন।

তবে গৃহস্থালীতে ব্যবহারের জন্য সর্ব প্রথম কার্যকর এবং নিরাপদ ফ্রিজ বাজারে আসে ১৯১৩ সালে। সেই ফ্রিজের নাম ছিল Domelre যার অর্থ Domestic Electric Refrigerator। পরে ১৯২৭ সালে General Electric কোম্পানি “Monitor Top” নামের রেফ্রিজারেটর নিয়ে আসে, যা তৎকালীন সময়ে অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে প্রথমদিকে শুধু উচ্চবিত্তদের ঘরে ফ্রিজ দেখা যেত। ১৯৮০ ও ৯০ দশকে ধীরে ধীরে যন্ত্রটি মধ্যবিত্তদের ঘরেও ঢুকতে শুরু করে। আর বর্তমানে গ্রামের ঘরেও ফ্রিজ দেখা যায়। বেশ কিছু দেশীয় কোম্পানি ফ্রিজ তৈরি শুরু করার পর থেকে, এই যন্ত্রটি এতটা জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক পণ্যে পরিণত হয়েছে।

রেফ্রিজারেটর শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তা, এবং আধুনিক জীবনযাপনের অন্যতম প্রতীক। আগে যেখানে খাবার একদিনেই নষ্ট হয়ে যেত, এখন সেই খাবার কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত টিকে থাকে। ফ্রিজ শুধু আমাদের খাবারই বাঁচায় না, যন্ত্রটি কোটি কোটি মানুষের জীবনও সহজ করে তুলেছে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।