বিমানের ব্ল্যাক বক্স আসলে কী
বিমানের ব্ল্যাক বক্স আসলে কী
ভূমিকা
বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনলেই একটা শব্দ প্রায়ই কানে আসে, আর তা হল ব্ল্যাক বক্স। এই ব্ল্যাক বক্স কিন্তু মোটেও কালো নয়। বরং ব্ল্যাক বক্সের রং হয় কমলা; যাতে বিমানের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এই যন্ত্রটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
কমলা রঙের এই যন্ত্রটাকে কেন ‘ব্ল্যাক’ বক্স বলা হয়? বিমান দুর্ঘটনার পর ব্ল্যাক বক্স কেনইবা এত গুরুত্ব হয়ে ওঠে? – সে সম্পর্কে জানব কিকেনকিভাবে র এই পর্বে।
ব্ল্যাক আসলে কী?
‘ব্ল্যাক বক্স’ নামটি এসেছে ১৯৪০ এর দশকে। শুরুতে যন্ত্রটি কালো রঙেরই ছিল। তাছাড়া অনেক সময় প্রযুক্তিগত জটিলতা বোঝাতে বিজ্ঞানীরা ‘ব্ল্যাক বক্স’ শব্দ ব্যবহার করতেন; মানে যেটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না কিন্তু ভেতরে জটিল কিছু চলছে।
‘ব্ল্যাক বক্স’ মূল দুইটি যন্ত্র মিলে গঠিত। যন্ত্রগুলোর প্রকৃত নাম হলো Flight Data Recorder (FDR) এবং Cockpit Voice Recorder (CVR)।
Flight Data Recorder বিমানের উচ্চতা, গতি, দিক, ইঞ্জিনের অবস্থা, ফ্ল্যাপ ও গিয়ার পজিশনসহ শতাধিক ধরণের সেন্সরের তথ্য রেকর্ড করে। অন্যদিকে Cockpit Voice Recorder ককপিটে থাকা পাইলটদের কথাবার্তা, এলার্ম সিস্টেমের শব্দ, রেডিও যোগাযোগ সহ সবকিছুর অডিও রেকর্ড রাখে।
এই তথ্যগুলো একটি শক্তিশালী চিপের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে এবং প্রতি ২৫ ঘণ্টার তথ্য এটি লুপ করে সংরক্ষণ করে। তারমানে ২৫ ঘন্টার পুরনো তথ্য মুছে দিয়ে নতুন তথ্য রেকর্ড হয়। যাতে করে সবসময় সর্বশেষ তথ্য ব্ল্যাক বক্সে সংরক্ষিত থাকে।
কেন ব্ল্যাক কিভাবে কাজ করে?
ব্ল্যাক বক্সে যেহেতু পােইলটদের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়, তাই অনেকেই মনে করেন ব্ল্যাক বক্স হয়ত ককপিটে থাকে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। ব্ল্যাক বক্স সাধারণত বিমানের টেইল সেকশন বা বিমানের লেজের দিকে থাকে। কারণ দুর্ঘটনার পর এই অংশটি বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম থাকে।
ব্ল্যাক বক্স এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি তীব্র বিস্ফোরণ, আগুন, পানিতে ডুবে থাকা এবং ১ হাজার ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার মত বহু ধরনের চরম অবস্থা সহ্য করতে পারে। এমনকি এটি ২০ হাজার ফুট গভীর পানির নিচে থাকলেও ৩০ দিন পর্যন্ত বিশেষ সাউন্ড সিগন্যাল পাঠাতে পারে। যাতে অনুসন্ধানকারী দল সেটি সহজেই খুঁজে পেতে পারে।
অনেক সময় দুর্ঘটনার পরে ব্ল্যাক বক্স খুঁজে পাওয়া না গেলে, দুর্ঘটনা তদন্তে বড় ধরনের সমস্যা হয়। তখন কেবল ধ্বংসাবশেষ আর অনুমানের উপর ভরসা করতে হয়। তবে ব্ল্যাক বক্স পেয়ে গেলে তাতে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে, দুর্ঘটনার কারণ প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
ব্ল্যাক বক্সের তথ্য থেকে একটি দুর্ঘটনা তদন্ত শেষে; পরবর্তীতে নতুন নিয়ম, নীতিমালা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়। তাই ব্ল্যাক বক্সের তথ্য ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করে।