পার্বত্য চট্টগ্রাম কি স্বাধীন হবে
পার্বত্য চট্টগ্রাম কি স্বাধীন হবে
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলার একাধিক জায়গায় পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন থেকে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যকার পরস্পর বিরোধী মনোভাব, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলায় নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল।
কিন্তু সেই শান্তি চুক্তি পাহাড়ে এখনো পর্যন্ত শান্তি নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং কিছু সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এই অঞ্চলে ব্যাপক সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি দল পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে স্বাধীন জুমল্যান্ড গঠনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
উপজাতি বনাম আদিবাসী বিতর্ক
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দাদের নিয়ে প্রধান বিতর্কটি হলো তারা উপজাত নাকি আদিবাসী। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ের ২৩ এর ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, [২৩ক। রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।] এখানে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, সংবিধানে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।
আদিবাসী বলতে মূলত একটি ভূমির আদি অধিবাসীদেরকে বোঝানো হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রায় চার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে মূলত বাঙালি নৃগোষ্ঠীই বৃহৎ পরিসরে বসবাস করে আসছে। তাই বাঙালিরাই মূলত এই অঞ্চলের আদিবাসী। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সকল উপজাতি সম্প্রদায় ষোল, সতের এবং আঠার শতকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে বসতি শুরু করেছে। মাত্র কয়েকশ বছর আগে তারা বাংলাদেশে আসার কারণে, পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জনগণ এই অঞ্চলের আদিবাসী নয়। এমনকি এই জনগোষ্ঠীর আদিনিবাস ভারত ও মিয়ানমারেও তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতী গোষ্ঠীগুলো নিজেদেরকে এই অঞ্চলের আদিবাসী হিসেবে দাবি করে। এবং তারা মনে করে এই অঞ্চলের ভূমিতে শুধুমাত্র তাদেরই অধিকার রয়েছে।
২০০৭ সালের জাতিসংঘে United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples শিরোনামে প্রস্তাবনা পাস হয়। বাংলাদেশ সেই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেনি, কারণ সরকারীভাবে মনে করা হয় বাংলাদেশে বাঙালিরাই প্রকৃত আদিবাসী। জাতিসংঘের নীতি অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গুলোকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে; তাদেরকে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা দিতে হবে। তবে পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে পাহাড়িদের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও সে শান্তি চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি বলেই মনে করে পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা। সেই চুক্তিতেও এসব নৃগোষ্ঠীর লোকজনকে উপজাতি হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাঙালি সেটেলার ও জনসংহতি সমিতি
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ উপজাতি চাকমাদের ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। চাকমাদের তৎকালীন রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়িরা বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শুরু করে। তখন পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিনিধি দল চাকমা রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার নেতৃত্বে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করে। সেই আলোচনায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, পার্বত্য অঞ্চলের নৃ-গোষ্ঠীরা বাঙালি পরিচয় গ্রহণ করবে। তারা যেহেতু সত্যিকার অর্থেই বাঙালি নয়; তাই এই পরিচয় তারা মেনে নিতে পারেনি। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যেমন বাঙালিদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল; পাহাড়িদের উপরও তেমনিভাবে বাঙালি পরিচয় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
এর প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমস্ত উপজাতির একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালে জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী যাত্রা শুরু করে। শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহীরা ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সংগ্রহ করে। ১৯৭৭ সালে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর প্রথম আক্রমণ চালায়। শান্তি বাহিনীর সাথে সেনাবাহিনীর সংঘাত চলার সময় বহু পাহাড়ি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। অনেকে পার্বত্য এলাকার ভেতরেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিল।
জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন, তখন তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিহীন প্রায় লক্ষাধিক বাঙালিকে পার্বত্য এলাকায় পুনর্বাসন করেন। পাহারিরা এই বাঙ্গালীদের কে বলে সেটেলার। পাহাড়িদের অভিযোগ হচ্ছে, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত যেসব বাঙালিকে পার্বত্য এলাকায় আনা হয়েছিল, তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল পাহাড়িদের ভূমিতে। পাহাড়িদের দাবি হচ্ছে, সেসব ‘সেটেলারদের’ কাছ থেকে ভূমি নিয়ে পাহাড়িদের ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বাঙালিরা বলছেন তাদের কাছে ভূমির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। এরকম ছোট বড় আরো বেশ কিছু কারণে, শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ১৯৮০ এবং ৯০ এর দশকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে নিয়মিত লড়াই করেছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি
হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসন অবসান হবার পর, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএস এর সাথে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় যাবার পর, শান্তি আলোচনার অগ্রগতি হয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বা সন্তু লারমা জেএসএস এর পক্ষে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তির মূল কয়েকটি বিষয় হল:
- তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। উপজাতীয় আইন এবং সামাজিক বিচারকাজ এই পরিষদের অধীনে থাকবে।
- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে।
- উপজাতীয়দের ভূমি মালিকানা অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে।
- পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।
পাহাড়ি এবং বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই পার্বত্য শান্তি চুক্তি নিয়ে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা যায়। শান্তি চুক্তির পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জটিল এক রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়। এই চুক্তির ফলে পাহাড়ে থাকা বাঙালিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে যায়। কারণ চুক্তিতে পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙালিদের সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। চুক্তির পর থেকে বাঙালিরা পাহাড়ে জমি কেনার অধিকার হারায়।
অন্যদিকে, পাহাড়িদেরও একটি অংশ শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে, ১৯৯৮ সালে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ নামে আরেকটি সশস্ত্র দল গঠন করে। তারপর থেকে পার্বত্য ৩ জেলার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র বিদ্রোহ।
বর্তমান অস্থিরতার কারণ
সন্তু লারমার নেতৃত্ব অস্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে তরুণদের একটি অংশ বের হয়ে ইউপিডিএফ গঠন করেছিল। তখন থেকে ইউপিডিএফ যত বড় হতে থাকে, সন্তু লারমার প্রভাবও ততই কমতে থাকে।
বর্তমানে জেএসএস এবং ইউপিডিএফ উভয় সংগঠনই দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পড়েছে। এই চারটি দলের সবাই পরস্পরের প্রতিপক্ষ। গত কয়েক বছর যাবত এসব সংগঠন একে অপরের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হবার ফলে, পাহাড়ে খুনা-খুনি একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, কোথাও কাউকে খুন করা হলে, এর প্রতিশোধ হিসেবে কিছুদিনের মধ্যেই অন্য আরেকজনকে খুন করা হয়। এসব গোষ্ঠীর অবৈধ অস্ত্র এবং চাঁদাবাজি পাহাড়ে সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। পার্বত্য এলাকার তিনটি জেলার মধ্যে সন্তু লারমার জেএসএস বান্দরবানে এবং ইউপিডিএফ খাগড়াছড়িতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এবং রাঙামাটিতে উভয় পক্ষের সমান-সমান অবস্থান ধরে রেখেছে।
পাহাড়ি নেতাদের অনেকে অভিযোগ করে থাকে যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীই তাদের মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে, ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতি বাস্তবায়ন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করে, সন্তু লারমার প্রভাব কমানোর জন্যই নিরাপত্তা বাহিনীর ছত্রছায়ায় ইউপিডিএফ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এখন ইউপিডিএফ এতোটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তাদের শক্তি খর্ব করার জন্য সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ এর মধ্যেও বিভক্তি তৈরী করেছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শুধু অপরাধ দমনের জন্যই কাজ করে। সেনাবাহিনী মনে করে, ইউপিডিএফের কিছু নেতা তাদের রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যূত হয়ে, অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়েছে। ইউপিডিএফ এর একটি অংশের হাতে বিপুল অস্ত্র মজুদ রয়েছে। ফলে তারাই মূলত পাহাড়ে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরী করে রেখেছে।
জুম্মল্যান্ড
পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র দলগুলো একে অপরের প্রতি আগ্রাসী হলেও, তাদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য একটাই, আর তা হল স্বায়ত্বশাসন। ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তিতে স্বায়ত্বশাসনের আশ্বাসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলেও, সেগুলোর হাতে তেমন কোন ক্ষমতা নেই বলে মনে করেন পাহাড়ি নেতারা। তাদের অনেকের মতে, সন্ত্রাস দমনের নামে সেনাবাহিনী দিয়ে পাহাড়ে সামরিক শাসন চালানো হচ্ছে।
তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী একাধিক গোষ্ঠী আড়ালে থেকে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন করে, জুমল্যান্ড নামে নতুন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার উপজাতি জনগণকে সামগ্রিকভাবে বোঝাতে জুম জনগোষ্ঠী বলা হয়। এই জুম জনগোষ্ঠীর দেশ হবে জুমল্যান্ড। জানা গেছে, ভিতরে ভিতরে তারা তাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় দিবস এবং পৃথক মুদ্রাও ঘোষণা করেছে। তবে পার্বত্য অঞ্চলের সকল পাহাড়ি বাসিন্দাই এই জুমল্যান্ড দাবির সাথে একমত নন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা জানান, শান্তি চুক্তির আগে থেকেই বিদেশী ষড়যন্ত্র এবং বেশ কিছু জাতীয়-আন্তর্জাতিক এনজিওর এ বিষয়ে তৎপরতা চালিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, কথিত জুমল্যান্ডের নেতারা বিদেশে গিয়ে, বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যও রেখেছে।
পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ নাগরিকরা জুমল্যান্ড দাবির সাথে এক মত পোষণ করুক বা না করুক, তারা সবাই চায় পাহাড় থেকে বাঙালিদের এবং সামরিক বাহিনীকে অপসারণ করা হোক। কিন্তু সেনাবাহিনী থাকার পরও পাহাড়ে যে পরিমাণ সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিরাজমান; সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে এই অঞ্চলে মারাত্নক বিশৃঙ্খলা তৈরী করবে। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র দলগুলোর নিজেদের মধ্যেই কোন ঐক্য নেই। তবে এই অঞ্চলকে স্বাধীন করার স্বার্থে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতেও হয়ত সময় লাগবে না। এর ফলে স্বাধীন জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হোক বা না হোক, উপজাতীয় সশস্ত্র বাহিনীগুলোর নেতৃত্বে পার্বত্য অঞ্চলে একাধিক মুক্তাঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি।