বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট

maxresdefault (28)
বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট

লোডশেডিং বাংলাদেশের একটি নিয়মিত সমস্যা। হাসিনা সরকার বাংলাদেশের প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের লোডশেডিং সমস্যা দূর করা যাচ্ছে না কেন তা অনেকের মনেই প্রশ্ন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মূলত দেশের জনগণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেনি, তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছিল ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদেরকে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

হাসিনা বিদ্যুৎ খাত ধ্বংস করেছে কিভাবে ?

লুটপাটের আইন

বাংলাদেশকে লোডশেডিং মুক্ত করতে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভাড়া নিতে শুরু করে। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর, ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী দ্রুত সরবরাহ করার জন্য একটি বিশেষ আইন পাস করে। এই আইনটি হয়ে ওঠে বিদ্যুৎ খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের হাতিয়ার। নতুন আইনের অধীনে দরপত্র ছাড়াই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হতে থাকে। আওয়ামী লীগের বহু নেতা এবং তাদের সুবিধাভোগীরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা নিতে থাকে। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল মাত্র ৫ হাজার মেগাওয়াট। এবং সরকার পতনে আগে সেই সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল ২৮ হাজার মেগাওয়াট। তারমানে বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে ৫ গুণেরও বেশি, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৩.৬ গুণ। সেই সাথে ১৬ গুণ বেড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সুবিধা দিতেই মাত্র ১৫ বছরে এত অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষম বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে অর্ধেকের মত বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ অলস পড়ে থাকে। কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অলস পড়ে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ভাড়াও সরকারকে পরিশোধ করতে হয়। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এই ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। ২০০৮-৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ২ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। আর গতবছর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে  ৩২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। চলতি বছর এই ভাড়া ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন; বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বিনা কারণে অলস পড়ে থাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার কারণেই; গ্রাহক পর্যায়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ১৫ বছর আগে বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ ছিল ২ টাকা ৫৩ পয়সা। বর্তমানে সেটি বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৩৩ পয়সা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১২ বার এবং খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেও এইসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ পোষানো যায়নি। সে কারণে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ অর্থবছরেও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হিসেবে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

জ্বালানী ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্র

গ্রীষ্মকাল এলেই বাংলাদেশে লোডশেডিং এর মাত্রা চরমে পৌঁছায়। প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকার পরও, শুধুমাত্র জ্বালানির অভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি গুলোই হয়েছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। সে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নিশ্চিত না করেই নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। জ্বালানি না থাকলেও ব্যবসায়ীদের কোন সমস্যা নেই কারণ তারা তাদের টাকা ঠিকই পাবে; কিন্তু গ্রাহক তাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাবে না।

বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন একেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে একেক রকম দামে চুক্তি করা হয়েছে। এর ফলে সরকারের ঘনিষ্ঠরা তাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে। অভিযোগ আছে ভাড়ায় নেওয়া বেসরকারি অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে কোন মেশিনই ছিল না। বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করাই ছিল এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মার্কিন ডলারে। যখন চুক্তি করা হয়েছিল তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ টাকা আর বর্তমানে ডলারের দাম ১২০ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে শুধুমাত্র ডলারে চুক্তি করার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে টাকার হিসেবে চুক্তি করা হলে এই খরচ মোটেও বাড়তো না।

বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। তাদের মতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের ৬৫ শতাংশই শুধু জ্বালানির পেছনে খরচ হয়। এবং সেই জ্বালানির দাম ১৬৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের দাবি জ্বালানির দাম না বাড়লে এই খাতে সরকারের কোন ভর্তুকির প্রয়োজন হতো না।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে, নতুন করে আর কোন চুক্তি করা হবে না। সেই সাথে যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র অধিকাংশ সময় অলস বসে থাকে সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়া

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে, ২০১৪ সাল থেকে টানা দুইবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন নসরুল হামিদ বিপু। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও, খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীই ছিলেন এই খাতে লুটপাটের মাফিয়া সিন্ডিকেটের প্রধান। বিদ্যুৎ খাতের মাফিয়াদের মধ্যে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন শেখ হাসিনার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও আহমেদ কায়কাউস, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান, বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের একাধিক সচিব এবং বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের কয়েকজন প্রকৌশলী।

জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের মহোৎসব কে বৈধতা দিতে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে, শেখ হাসিনা সরকারের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব দের সহায়তায় এই মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রকল্প অনুমোদন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ টি ধাপে এই মাফিয়া সিন্ডিকেট কে টাকা দিতে হতো। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা করতো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতারা।

আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে শেখ হাসিনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠদের একজন ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ ইনফর্মেশন বা সিআরআই অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। শেখ হাসিনার জীবনের উপর নির্মিত হাসিনা আ ডটারস টেল তথ্যচিত্রটি ও নসরুল হামিদ বিপু প্রযোজনা করেছিলেন। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে যতসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার অধিকাংশের কাজই দেওয়া হয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু সহ তার আত্নীয় স্বজনদেরকে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শেখ হাসিনার আমলে প্রায় ১০০ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোন ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর মাফিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ক্ষমতার শেষের দিকেও নজরুল হামিদ বিপু ২৭ টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফাইল চূড়ান্ত করেছিল। ২৭ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকাংশেরই মালিক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী এমপিরা; এমনকি এর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাইয়েরই দুইটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে।

২০১০ সাল থেকেই অবৈধভাবে অনুমোদন দেওয়া এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ থাকলেও, এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়ইনি উল্টো আইন পাস করে এদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন শেখ হাসিনার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী। ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছে সামিট গ্রুপ কে। সে কারণে অবসরের পর তিনি সামিট গ্রুপের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি পান।

সামিট গ্রুপ

বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছিল সামিট গ্রুপ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫ ভাগের ১ ভাগ বিদ্যুৎই উৎপাদন করা হয় সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো থেকে। শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাথে সামিট গ্রুপের মালিক আজিজ খানের ঘনিষ্ঠতার কারণে সামিট গ্রুপের পক্ষে একের পর এক অন্যায় চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু বিদ্যুৎ খাতেই নয় জ্বালানি বাণিজ, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন এবং আবাসন খাত সহ বহু ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে সামিট গ্রুপ।

আজিজ খানের আরেকটি পরিচয় হলো তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই। ফারুক খান আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বানিজ্য মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে রাজাকারদের প্রতি আক্রোশ ঝাড়লেও, হাসিনা নিজেই ছিলেন রাজাকারের পৃষ্ঠপোষক। গোপালগঞ্জ ১ আসন থেকে টানা পাঁচবারের নির্বাচিত এই এমপি, ১৯৭১ সালে দিনাজপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফারুক খান পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রথম অপারেশন চালায় এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা করে।

সেই রাজাকার পরিবারের সামিট গ্রুপ অধিকাংশ ব্যবসা বাংলাদেশের পরিচালনা করলেও, এই শিল্প গোষ্ঠীর মালিক মোহাম্মদ আজিজ খান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হয়েছেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো আজিজ খান ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনে সিঙ্গাপুরের ৪১ তম শীর্ষ ধনী হিসেবে উঠে এসেছে। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এই সম্পদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করার মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে। কারণ ২০১৬ সালে অর্থ পাচার সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে প্রকাশিত পানামা পেপারসে আজিজ খানের নাম শীর্ষে উঠে এসেছিল। শেখ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে; আজিজ খান সামিট গ্রুপের বহু রাষ্ট্রীয় ফি মওকুফ করিয়ে নিয়েছে। বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে সামিট গ্রুপ পল্লী বিদ্যুতের কাছ থেকেই ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে।

সামিট গ্রুপ ছাড়াও বিদ্যুৎ খাতে অবৈধ সুবিধা পাওয়া অন্যান্য শিল্প গোষ্ঠ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এস আলম গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ, কনফিডেন্স গ্রুপ, ডরিন গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ, রিজেন্ট এবং বারাকা সহ বেশ কিছু কোম্পানি।

দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপুল লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের সাবেক বেশ কয়েকজন সচিব এবং আমলারা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন একের পর এক পদোন্নতি। এরাই শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প হাতে নেয়। যে প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনা একাই প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন দেখানো হলেও; এর পুরোটাই ছিল মূলত শুভঙ্করের ফাঁকি। সেকারণেই দেশের চাহিদার তুলনায় দ্গিুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও, বাংলাদেশের জনগণ লোডশেডিং এর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।