জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক

maxresdefault (27)
জীবনযাপন

জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক

ভূমিকা

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি, বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আয়নাঘরে বন্দি থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লহিল আমান আযমী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ উল্লেখ করে, জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার দাবি জানান। এরপর থেকেই দেশের নাগরিকরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদল বলছে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে কোন আপোষ নয়, এই সঙ্গীত বাঙালীর সর্বোচ্চ আবেগের জায়গা। অন্য দল বলছে, গানটি যেহেতু সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছিল; এবং তা ছিল বাংলাদেশ ধারণার পরিপন্থী; তাই এই জাতীয় সংগীত অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।

জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক কেন ?

রচনার প্রেক্ষাপট

আমার সোনার বাংলা  গানটির মূল পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, তাই এর রচনাকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না। তবে গানটি যে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচিত হয়েছিল, সে বিষয়ে সবাই একমত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন নদীয়া জেলা, বর্তমান কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসে এই গানটি রচনা করেছিলেন। তৎকালীন বিখ্যাত বাউল সঙ্গীত রচয়িতা গগন হরকরার রচিত, “আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে” এই গানটির সুর নকল করে “আমার সোনার বাংলা” গানটি রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য আয়োজিত ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট একটি প্রতিবাদ সভায়, কলকাতা টাউন হলে সর্বপ্রথম এই গানটি গাওয়া হয়েছিল। একই বছর ৭ সেপ্টেম্বর সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষর সহ গানটি প্রকাশিত হয়।

জাতীয় সঙ্গীত হল কিভাবে

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রচর্চা একপ্রকার নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি পরিবেশন করে। এই গান গাওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। এরপর ১৯৫৩-৫৪ সালের ডাকসুর অভিষেক অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে কার্জন হলে পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকজন সংসদ সদস্যের সম্মানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সনজীদা খাতুনকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে অনুরোধ করেন। সনজীদা খাতুন পরবর্তীতে বলেছিলেন, এই গানটি বাঙালীদের কতটা আবেগ তাড়িত করে, তা বোঝানোর জন্যই বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিদেরকে গানটি শোনাতে চেয়েছিলেন।

আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করার পর ১৯৫৮ সালে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বাঙালিত্ব এবং রবীন্দ্রচর্চা কে পাকিস্তান বিরোধী আচরণ হিসেবে কঠোর হস্তে দমন করার হুঁশিয়ার দেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন করা হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদেও রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। এর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে রবীন্দ্র সংগীত চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করেছিল। সেই ইশতেহারে আমার সোনার বাংলা কে জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের বিখ্যাত সেই ভাষণের আগেও আমার সোনার বাংলা গাওয়া হয়েছিল। এরপর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার এই গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পরিবেশন করা হত। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আমার সোনার বাংলা গানের প্রথম ১০ লাইন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আয়োজিত যেকোন আন্দোলন এবং প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানুষ আমার সোনার বাংলা গানটি গাইতো। সে কারণে তৎকালীন সঙ্গীতজ্ঞ এবং বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিভিন্ন আন্দোলনে গাইতে গাইতেই মূলত এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হয়ে উঠেছে।

বঙ্গভঙ্গ প্রসঙ্গ

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত এই গানটি যেসব কারণে বিতর্কিত; তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এখানে “বাংলা” বলতে শুধু বাংলাদেশকেই বোঝানো হয়নি; এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও জড়িত। সেকারণে, এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না। তার চেয়েও বড় কথা হল, এই গানটি বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে রচনা করা হয়েছিল।

বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। অতীতে বঙ্গপ্রদেশের আয়তন ছিল ৪ লক্ষ ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮৫ লাখ। এত বিস্তৃত এলাকা একটি মাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে থাকার কারণে, এই অঞ্চলে সুষ্ঠু শাসন কার্য পরিচালনা করা ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে দুরহ হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া তৎকালীন বঙ্গপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের এলাকাগুলো অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়েছিল। তখন এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য “পূর্ববঙ্গ ও আসাম” নামে নতুন একটি প্রদেশ গঠন করা হয়; এবং ঢাকা কে করা হয় এর রাজধানী। ১৯০৫ সালের ১৬ ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়।

বাংলাকে ভাগ করার পর পশ্চিমবঙ্গে প্রচন্ড রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এর কারণ হলো; দীর্ঘদিন থেকে বাংলা প্রদেশে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের প্রাধান্য বিরাজমান ছিল। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে নতুন প্রদেশ গঠনের ফলে, পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান সহ সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতির ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের সম্ভ্রান্ত গোষ্ঠী তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য হারানোর কারণে বাংলার বিভক্তি মেনে নিতে পারেনি। সেকারণে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ ব্যাপক আন্দোলন করে ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়; এবং ১৯১১ সালে দুই বাংলা আবার একত্রিত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থপর সম্ভ্রান্ত হিন্দু গোষ্ঠী, পূর্ব বাংলার সুখ সইতে না পেরে ঈর্ষায় কাতর হয়ে পড়েছিল। তাদের আন্দোলনের কারণে নতুন প্রদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকার মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়। তখন থেকেই পূর্ব বাংলার মুসলিমরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতা এতটাই তীব্র হয়েছিল যে; ব্রিটিশ সরকার ১৯১২ সালে ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা থেকে নয়া দিল্লিতে স্থানান্তর করে নেয়। পশ্চিমবঙ্গের সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের চক্রান্তের ফলে ঢাকার পাশাপাশি কলকাতাও তার গুরুত্ব হারায়। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সেই আন্দোলনের সময় প্রচুর জাতীয়তাবাদী লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। সেই প্রেক্ষিতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার সোনার বাংলা গানটি রচনা করেছিলেন।

জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের চেষ্টা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর স্বঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল খন্দকার মোশতাক আহমেদ। এই পদে তিনি মাত্র ৮৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এই অল্প সময়ে খন্দকার মোশতাক যে কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম একটি হল বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের উদ্যোগ। তখনকার কমিটি, কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’ এবং ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ কবিতাকে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব রাখে।

পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করেন। তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি চিঠিতে রেডিও, টেলিভিশন এবং সব সরকারি অনুষ্ঠানে প্রথম বাংলাদেশ গানটি প্রচারের নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গানটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জন্যে একটি যৌথ সুপারিশপত্র তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে জমা দেন। বেগম খালেদা জিয়া দুই মন্ত্রীর সেই সুপারিশকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিষয়টি তাদের এখতিয়ার ভুক্ত নয় বলে এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

সাম্প্রতিক বিতর্ক

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের বিষয়টি আবারো নতুন করে উঠে এসেছে, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের সন্তান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর এক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর আয়নাঘরের বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হবার পর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন:

[বক্তব্য]

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমীর এই বক্তব্যের পর অনেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে পক্ষে -বিপক্ষে নানান মত তৈরী হয়।

 বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সহ একাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয় সংগীত নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার কর্মসূচি পালন করেছে। জাতীয় সংগীত নিয়ে কটাক্ষ করার নিন্দা জানিয়ে দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।

বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বলেছেন, আন্তবর্তীকালীন সরকার এমন কোন পদক্ষেপ নিবে না, যা বিতর্ক সৃষ্টি করে।

পরিবর্তন সম্ভব?

বিশ্বের বহু দেশেরই জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করার নজির রয়েছে। কোন কোন দেশে হয়ত জাতীয় সঙ্গীতের কয়েকটি শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করা হয়েছে, আবার অন্য কোথাও পুরো গানই বদলে ফেলা হয়েছে।

জাতীয় সংগীত একটি দেশের ঐতিহ্য ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় সঙ্গীত ইস্যুকে কেন্দ্র করে যেভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে; তা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের বিষয়টি সহজেই সমাধান হবার নয় এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করা হলে, দেশের ঐক্য নষ্ট হবে।

বর্তমান জাতীয় সঙ্গীতের সাথে গণমানুষের আবেগ জড়িয়ে থাকার পাশাপাশি, এই গানের বেশ কিছু স্বীকৃতিও রয়েছে। ২০০৬ সালে শ্রোতাদের পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার তৈরি করা সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় আমার সোনার বাংলা গানটি প্রথম স্থান দখল করে। বিশ্বের শিল্পকলা নিয়ে প্রতিবেদন করা বিখ্যাত ওয়েবসাইট দ্য আর্টস ডেস্ক ২০১২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা এবং জঘন্য জাতীয় সংগীত গুলোর তালিকা তৈরি করে। সেখানে বিশ্বের সেরা জাতীয় সংগীত গুলোর তালিকায় রাশিয়া, ইতালি এবং জাপানের পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত চতুর্থ স্থান লাভ করেছে। ২০১৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় প্যারেড ময়দানে আড়াই লক্ষেরও বেশি মানুষ একসাথে জাতীয় সংগীত গাওয়ার গিনেস বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছে।

২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তরুণেরা কাজী নজরুল ইসলামের বেশ কিছু কবিতা এবং গান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। রাজপথে মিছিলে গাওয়া হয়েছে সেসব প্রতিবাদী গান। তাই অনেকের দাবি জাতীয় কবি নজরুলের কোন গান জাতীয় সঙ্গীত করা হোক। এর পাশাপাশি কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের রচিত “ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা” গানটিও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্মের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। তাই আরেকটি পক্ষ এই গানটিকেও জাতীয় সঙ্গীত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে সত্যিকার অর্থে এই গানটিও বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেই রচিত হয়েছিল।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।