বাংলাদেশে কি ইসলামি শাসন কায়েম হবে ?

maxresdefault (26)
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে কি ইসলামি শাসন কায়েম হবে ?

বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হওয়ার পর থেকে সমাজের সকল স্তরে সংস্কারের আশা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়েও নানা ধরনের মতামত তৈরি হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করে আওয়ামী লীগ দেশকে ডুবিয়েছে; অতীতে বিএনপির জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চেতনায়ও বাংলাদেশে শাসনের নামে দুঃশাসন হয়েছে। সে কারণে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, এবার বাংলাদেশে কুরআনের আইন বা শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করে খিলাফত শাসন কায়েম করতে হবে। এই বিষয়ে দেশের নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে কি ইসলামি শাসন কায়েম হবে ?

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী

ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ইসলামকে শুধু একটি ধর্ম নয়, রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তার অন্তর্ধানের পর ইসলামী সরকার ব্যবস্থা যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাকে বলা হয় খিলাফত। খিলাফত সরকার ব্যবস্থার প্রধান হলেন একজন খলিফা। খলিফা যে আইনের দ্বারা রাষ্ট্রপরিচালনা করেন তাকে বলা হয় শরিয়া আইন; একে কুরআনের শাসনও বলা যায়।

বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। ইসলামের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিমেরই শরিয়া আইনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। খিলাফত ব্যবস্থার বাইরে অন্য কোন ধরনের শাসন ব্যবস্থা ইসলাম অনুমোদিত নয়।

বাংলাদেশে মোটাদাগে তিন ধরনের গোষ্ঠী ইসলামি শাসনের পক্ষে। প্রথমপক্ষ, বেশ কিছু ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে দেশে ইসলামী শাসন কায়েম করতে চায়। দ্বিতীয় দল, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নয়, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এবং তৃতীয় দল, ইসলামের মূলনীতি অনুসরণ করে, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। যদিও এই তৃতীয় দলের অনুসারীরা খুবই নিষ্ক্রিয়।

বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর মনোভাব হলো তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশের শাসন ক্ষমতায় আসীন হয়ে, তখন দেশের সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু এই বিষয়টি হবে দেশের জনগণের সাথে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। কারণ তারা এখন কাজ করছে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু তারা ক্ষমতায় গিয়ে যখন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করবে, তখন তাদের কর্মকান্ড শুধু দেশের জনগণের সাথে প্রতারণাই হবে না, বরং তা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে এক ধরনের বিদ্রোহের শামিল। কারণ ইসলাম ধর্মে মনে করা হয় আইন শুধুমাত্র মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসতে পারে। সেখানে ইসলামী দলগুলো জাতীয় সংসদের সদস্য হবার মধ্য দিয়ে নিজেরা আইন প্রণেতা হওয়ার জন্য কাজ করছে। এই ধরনের ইসলামী দল দেশের শাসন ক্ষমতায় গেলে, সাধারণ মুসলিম জনগণ এদের বিরোধিতা করতে গিয়ে সরাসরি আল্লাহর সাথে বিরোধিতা করতে শুরু করবে। তা দেশে ইসলাম কায়েমের নামে উল্টো জনগণকে আরো বেশি বিপথগামী করে তুলতে পারে।

অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে যারা ইসলাম কায়েম করতে চায়, তারা নিজেরাই ইসলাম থেকে বিচ্যূত। কারণ ইসলাম হল শান্তির ধর্ম, এই ধর্মে কোন অমুসলিম তো দূরের কথা, বিনা কারণে কোন প্রাণী হত্যাও নিষেধ করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের মুসলিম পন্ডিতরা এ ব্যাপারে একমত যে, যারা অস্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েম করতে চায়, তারা নিসেন্দেহে পথভ্রষ্ট। বরং এই গোষ্ঠীর কারণেই সমগ্র বিশ্বে ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে। জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িত মুসলিম নামধারীরা, শুধু অমুসলিমদেরই নয়, বরং ইসলামেরই সবচেয়ে বড় শত্রু।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে ইসলামী খিলাফত চাওয়া সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় গোষ্ঠী হল; যারা নিজেরা দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম পালন করে, কিন্তু কোন ইসলামী রাজনৈতিক দলের সাথেও নেই এবং ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরও মন থেকে ঘৃণা করে। এরা মূলত একজন যোগ্য মুসলিম নেতার আগমনের অপেক্ষায় বসে আছে; কিন্তু নিজের ধর্ম পালনের বাইরে, দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য এরা খুব বেশি সক্রিয় নয়। তবে জঙ্গিবাদের বাইরে, বাংলাদেশের খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হলে তৃতীয় দল নিশ্চয়ই এর সমর্থনে থাকবে।

ইসলাম বিদ্বেষ

বাংলাদেশে যারা পোশাক আশাকে ইসলামী ঐতিহ্য ধারণ করে চলে, তাদেরকে হুজুর বলে সম্বোধন করা হয়। সাধারণত মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসা শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ ধর্মীয়পন্ডিত যারা আলেম -ওলামা হিসেবে পরিচিত; এবং উনাদের বাইরেও যারা দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অধিক চর্চা করে থাকেন তাদেরকেই হুজুর বলে ডাকা হয়। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও, এই দেশের হুজুরেরা তথা ইসলাম পালনকারী ব্যক্তিরা পদে পদে নিগৃহীত হয়। অনেকের দাবি স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে হুজুররাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার। এর পেছনের অন্যতম একটি কারণ হলো ইসলামবিদ্বেষ।

সমগ্র পৃথিবীতেই নানানভাবে মুসলিমদেরকে খল চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করে ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামবিদ্বেষের চর্চা করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষের বীজ বপন করা হয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানপন্থী রাজাকারদের মাধ্যমে। চিত্রশিল্প নাটক কিংবা সিনেমার মতো সকল ধরনের দৃশ্য মাধ্যমে রাজাকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখানো হয়েছে হুজুরদের মত দাড়ি টুপি। এর ফলে সবার মনে এক ধরনের বদ্ধমূল ধারণা বপন করে দেওয়া হয়েছে যে, রাজাকার মানেই হুজুর। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ৭১ সালের বহু রাজাকারের ছবি দেখেছি; যাদের বাহ্যিক উপস্থিতি মোটেও হুজুরদের মত নয়। তবে হুজুরদেরকে পাকিস্তানপন্থী বা রাজাকার মনে করার আরেকটি কারণ হলো, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা কে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে।

যদি কোন হুজুর যুদ্ধাপরাধ করে থাকে, জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত থাকে অথবা যেকোনো ধরনের খারাপ কাজ করে থাকে; তবে সেটি একান্তই তার ব্যক্তিগত বা তাদের দলীয় অপরাধ। এরজন্য সকল হুজুর বা ধর্মপ্রাণ মুসলিমকে অপরাধীর চোখে দেখা বিশাল অন্যায়। শেখ হাসিনার মত একজন অপরাধী জামদানি শাড়ি পড়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক রাজনৈতিক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। তাই বলে ভবিষ্যতে অন্যকোন নারী নেত্রী যদি শেখ হাসিনার মত জামদানি শাড়ি পড়ে আসে, তবে তাকে কী আমরা শুধু তার পোশাকের কারণে অপরাধীর চোখে দেখব? অব্যশই না। তাহলে, অতীতের কোন অন্যায়কারী হুজুরের জন্য, কেন ভবিষ্যতে অন্যকোন হুজুর আমাদের নেতৃত্ব দিতে চাইলে, তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করব? বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও, একজন হুজুর এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে, আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না। অথচ বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা নেতাদের একজন ছিলেন, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।

খিলাফত রাষ্ট্র সম্পর্কে ইসলাম বিদ্বেষীরা যতসব ভুল ধারণা প্রচার করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো; খিলাফত রাষ্ট্রে অমুসলিম নারী এবং সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা এবং ইসলামবিদ্বেষীদের পরিকল্পিত প্রচারণার ফসল। একটি খিলাফত রাষ্ট্রে খলিফার অন্যতম প্রধান দায়িত্বই হলো সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে সকলের অধিকার নিশ্চিত করা।

গনতন্ত্র বনাম খিলাফত

প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্র থেকে গণতন্ত্র ধারণার উদ্ভব হয়েছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন নামে মাত্র গণতন্ত্র চলছে। বাংলাদেশও সেইসব দেশের মধ্যে অন্যতম। গণতন্ত্র পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা হলেও এটি নানান দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ।

গণতন্ত্রের অন্যতম একটি ভিত্তি হলো Theory of Natural Right। এই তত্ত্ব মতে, প্রত্যেকেই তার নিজের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার নিয়ে জন্মায়; এবং এখানে সবার সমান অধিকার। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় যে তত্ত্বের মাধ্যমে, তাতে বলা হয়েছে Greatest Good Of The Greatest Number। তারমানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেভাবে চাইবে সেভাবেই দেশ পরিচালিত হবে। গণতন্ত্রের প্রধান দুটি তত্ত্বই সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী। একদিকে বলা হচ্ছে সবার সমান অধিকার, আবার অন্যদিকে বলা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা বলবে, তাই করতে হবে। এখন বাংলাদেশে যদি খিলাফত শাসনের প্রসঙ্গে একটি গণভোট আয়োজন করা হয়; এবং ৫১ শতাংশ লোক যদি খিলাফতের পক্ষে এবং ৪৯ শতাংশ লোক খিলাফতের বিপক্ষে ভোট দেয়; তাহলে কি গণভোটে পরাজিত পক্ষ এই ফলাফল মেনে নিবে? কখনোই মানবে না এবং এটাই গণতন্ত্রের ভন্ডামি। এ তো গেল গণতন্ত্রের মৌলিক ত্রুটি; এর বাইরে গণতন্ত্রের অসংখ্য ত্রুটি রয়েছে। সে কারণেই বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেছেন গণতন্ত্র হলো অযোগ্যদের শাসনব্যবস্থা।

তাহলে কোন ধরনের শাসন থাকলে একটি দেশ উন্নত হতে পারে? এর উত্তর হলো ন্যায় পরায়ণ একনায়কতন্ত্র। এ ধরনের সরকার ব্যবস্থার উৎকৃষ্ট উদাহরণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইনের মত দেশগুলো বাংলাদেশের সমসাময়িক সময়ে স্বাধীন হলেও, আজ তারা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী রাষ্ট্র। এসব দেশ যদিও রাজতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সত্যিকারের ন্যায় পরায়ণ একনায়ক তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল লিবিয়া এবং ইরাকে। কিন্তু একজন শাসক দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে তিনি শেষ পর্যন্ত ন্যায়পরায়নতা ধরে রাখতে পারেন না। যার কারণে লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ইরাকের সাদ্দাম হোসেনও শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে তাদের সুনাম হারিয়েছিলেন।

এছাড়া গণতন্ত্রের মোড়কে ন্যায়পরায়ণ একনায়কতন্ত্রের আরো দুটি ভালো উদাহরণ হচ্ছে, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ, যিনি একটানা ৩১ বছর সিঙ্গাপুর শাসন করেছিলেন, এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ, যিনি দীর্ঘ ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনাদের আমলেই সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু, তারাও সম্পূর্ণ বিতর্কের উর্দ্ধে নন।

তাই ন্যায়পরায়ণ একনায়কতন্ত্রের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হল ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা। খিলাফতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একজন খলিফা সব সময় নিজেকে অযোগ্য মনে করবেন; এবং নিজে ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাপারে সব সময় অনীহা প্রদর্শন করবেন। বরং সমাজের লোকেরা তাকে যোগ্য মনে করে, তার হাতে ক্ষমতা সমর্পণের জন্য, তাকে নেতৃত্ব গ্রহণের অনুরোধ করে ক্ষমতায় নিয়ে আসবেন। ইসলামের প্রথম চার খলিফা ছিলেন এই বৈশিষ্ট্যের অন্যন্য নজির।

কিন্তু বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে এই ধরনের বৈশিষ্ট্য একেবারেই অনুপস্থিত। একজন ন্যায়পরায়ণ খলিফা ক্ষমতা গ্রহণের ব্যাপারে অনীহা পোষণ করার মূল কারণ হলো, একটি জাতির দায়িত্ব নিয়ে সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ। ন্যায়পরায়ণ খলিফা হবার যোগ্য ব্যক্তি সব সময় ভাববেন তিনি যদি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন তাহলে মহান আল্লাহর কাছে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ ইসলামী রাজনৈতিক দলকে এতটাই আত্মবিশ্বাসী দেখা যায় যে, তাদের মনোভাব হল ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে দেশের সকল ক্ষেত্রে তারা জাদুকরী সমাধান নিয়ে হাজির হবেন।

 ইসলামি শাসন কায়েমের প্রক্রিয়া

হয়রত মুহাম্মদ (সা) যখন ইসলাম প্রচার করতে শুরু করেছিলেন, তখন মক্বার কাফেররা ইসলাম প্রচার বন্ধ করার বিনিময়ে, নবীজী (সা) এর হাতে মক্কার শাসন ক্ষমতা তুলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। কারণ মুসলিমদের কাছে যেকোন মূল্যে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করাই মূখ্য নয়। নবীজী (সা) চাইলে মক্কার শাসনভার গ্রহণ করে, এরপর জোড় করে মক্কার নাগরিকদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে, নিজে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে, মানুষের অন্তরে ইসলামের সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠার কাজ করে গেছেন। যখন অধিকাংশ মানুষ ইসলামের মূলনীতিগুলো তাদের অন্তরে ধারণ করেছে, তখন শুধু মক্কা নয়, বরং পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ অঞ্চলে সরাসরি ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জোড় করে ক্ষমতা দখল করলে ইসলামের এত বিস্তার তো হতই না, বরং সেই ক্ষমতাও হত ক্ষণস্থায়ী। রাজনৈতিক শক্তি কিংবা তরবারির জোড়ে নয়, মুসলিমদের উত্তম চরিত্রের কারণে বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

বাংলাদেশের বেশকিছু আলেম-ওলামা আছেন যারা সাধারণ ভালো কথাও এত উত্তেজিত ভাবে বলেন, যা দেখতে অত্যন্ত দৃষ্টিকটু লাগে। তাদের কথা শুনে অমুসলিমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া তো দূরের কথা; উল্টো মুসলিমদেরই ইসলামের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়।

বর্তমানে যে সমস্ত রাজনীতিবিদ হুজুর দেশে ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায়, তারা নিজেরাই নানা দিক থেকে ইসলামের মূলনীতি ভঙ্গ করছে। তারা ভাবছে ছলে বলে কৌশলে একবার দেশের ক্ষমতায় যেতে পারলেই, একের পর এক ইসলামি আইন পাশ করে দেশে শরীয়া শাসন বাস্তবায়ন করে ফেলবে। কিন্তু, এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় না।

সত্যিকার অর্থে খিলাফত ব্যবস্থা প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়েও অনেক উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ, এমনকি ধর্মীয় নেতারাও খিলাফত শাসন কায়েম করার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। মনে রাখতে হবে, আইন প্রনয়ন করে বা অস্ত্রের মুখে খিলাফত শাসন কায়েম করা যায় না। ইসলামকে যদি মানুষের অন্তরে স্থাপন করা না যায়, তাহলে সেই ইসলামি খেলাফত মোটেও টেকসই হবে না। তাই দেশের আলেম ওলামা সহ প্রতিটি মুসলিমের উচিত জনসেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া এবং দেশ গঠনের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে, মানুষের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।