মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভ

maxresdefault (5)
কি কেন কিভাবে

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফিলিস্তিনে চলমান গনহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরব হয়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল নিউ ইয়র্কে অবস্থিত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে একত্রে বোঝাতে বলা হয় Ivy League। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করার পর থেকে, একে একে সকল আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করতে শুরু করে। তবে বর্তমানে এই আন্দোলন শুধু আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যেই সীমাবন্ধ নেই; যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সকল প্রধান সারির বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই আন্দোলনের ডাক ছড়িয়ে পড়েছে।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হচ্ছে কেন ?

পটভূমি

মার্কিন-ইসরায়েল সহযোগিতা চুক্তির ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সাথে ইসরায়েলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা মুখী কার্যক্রম চালু রয়েছে। কলাম্বিয়া, স্ট্যানফোর্ড, ইয়েল, এমআইটি সহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসরায়েলের তেল আবিব, হিব্রু এবং বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সহ ১৩ টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে দিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এসব চুক্তির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থী আদান প্রদান এবং একসাথে বহু গবেষণা পরিচালনা করে। এর বাইরেও ইসরায়েলের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন তহবিল সংগ্রহ করে।

গাজায় নির্বিচার গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনীদের জাতিগত নিধন বন্ধে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবার আগে আন্দোলন শুরু করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায় যে, ইসরায়েলের সাথে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যত ধরনের সম্পর্ক আছে তা ছিন্ন করতে হবে। এ ধরনের আন্দোলন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই প্রথম নয়। অতীতে আমেরিকা ভিয়েতনামে আক্রমণ চালানোর পরও ১৯৬৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমেরিকার অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল।

ফিলিস্তিনের পক্ষে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করার পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় চত্তরে তাবু টাঙিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। এরপর থেকে হারভার্ড, এমআইটি, বোস্টন, জর্জটাউন, ইয়েল, পিন্সটন, মিনেসোটা, জর্জ ওয়াশিংটন, ইউসি বার্কলে, স্ট্যানফোর্ড, সাউদার্ণ ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীরা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে ক্যাম্পাসে তাবু খাটিয়ে অবস্থান নেয়। ইসরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের সাথে সকল সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন বাতিল করাই তাদের একমাত্র দাবি নয়, বরং তারা চায় যেসকল কম্পানি ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে এবং প্রযুক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাতে সহায়তা করছে, সেই সকল প্রতিষ্ঠানকেও বয়কট করতে হবে। গুগল, এমাজন, মাইক্রোসফটের মত প্রতিষ্ঠানগুলো গাজায় গণহত্যা চালাতে ইসরায়েলকে সরাসরি সহায়তা করছে। তাই ছাত্ররা এই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবস্থান নিতে বলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো এই আন্দোলনের কারণে উভয় সংকটে পড়েছে। একদিকে ছাত্ররা ইসরায়েল পন্থী সকল পক্ষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করতে বলছে। অন্যদিকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান দেওয়া বেশ কিছু বিলিয়নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসব সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিত্তশালী প্রাক্তন ছাত্রদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করে। যাদের মধ্যে আছে বেশ কয়েকজন মার্কিন ইহুদি বিলিয়নিয়ার। ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করার পর থেকে এসব ধনকুবেরদের অনেকেই জানিয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা আর কোন অনুদান দিবে না।

এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ আন্দোলন দমনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ দিয়ে, ছাত্র-ছাত্রীদের ধর-পাকড় শুরু করে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা সহ ব্যাপক দমন পীড়ন চালায়। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের উপর পুলিশী হামলার পর এই আন্দোলন আরো বেগবান হয়। এরপরও নানা ধাপে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আন্দোলনরত ছাত্ররা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন হারাতে পারে। এদের অনেকেরই একাডেমিক ক্রেডিট বাতিল করা হতে পারে, এর ফলে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন হবার আগেই ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এমন সব ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে আন্দোলন ত্যাগ করানো হয়েছে। যাদের অধিকাংশই হাজার হাজার ডলার এডুকেশন লোন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে।

এই আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের অনেকেরই ছবি সহ সকল বৃত্তান্ত বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে, তাদের উপর সহজে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানো যায়।

আন্দোলন দমন

যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেকোন মূল্যে এই আন্দোলন দমন করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা বিশ্ববিদ্যলয় গুলোর গলা চেপে ধরার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে কথ বলেছে। এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নানা ধরনের কর আরোপ করতে পারে তারা। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ফেডারেল গভমেন্টের ফান্ডিং বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছ। যা বিশ্ববদ্যালয়গুলোকে মারাত্নক সমষ্যায় ফেলে দিবে। কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষতা নির্ভর করে মূলত গবেষনার উপর।

মর্কিন ভন্ড রাজনীতিবিদেরা নিজেদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বন্ধ করার জন্য সকল ধরনের ঘৃণ্য অচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এরাই আবার সারা বিশ্বে বাক স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করার কথা বলে গলা ফাটায়। কিন্তু এখন ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে তারা “ইহুদি বিদ্বেষী” বলে আখ্যা দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরী হওয়া এই আন্দোলন অসহায় ফিলিস্তিনীদের পক্ষে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রতি পশ্চিমাদের অন্ধ সমর্থনেও পরিবর্তন আনছে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।