ভারত পাকিস্তান কি যু্দ্ধ শুরু হয়ে গেছে
ভারত পাকিস্তান কি যু্দ্ধ শুরু হয়ে গেছে
ভূমিকা
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত “অপারেশন সিন্দুর” নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যার অধীনে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে ভারত দাবি করেছে যে তারা লস্কর-ই-তইয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। এই ঘটনা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের কাশ্মীর বিরোধের সর্বশেষ অধ্যায় হিসেবে দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সূচনা, নাকি সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া?
যুদ্ধ শুরু হয়েছে কি?
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সামরিক সংঘর্ষের পর্যায়েই রয়েছে। একে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। যেখানে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করে এবং কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তারপর থেকে দুই দেশের সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি আর সংঘর্ষের ঘটনা চলতে থাকে। গত ৬ মে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ, কোটলি এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাবের ভাওয়ালপুর-সহ ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, এই হামলায় ৭০ জন জঙ্গী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, হামলায় শিশু সহ ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছে। ভারত জঙ্গি আস্তানা ধ্বংস করার কথা বললেও, এর মধ্যে তারা টার্গেট করে মসজিদ মাদ্রাসার মত ধর্মীয় স্থাপনাতেও আঘাত করেছে।
৭ মে পাকিস্তান ভারত-শাসিত কাশ্মীরে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এবং দাবি করে যে তারা ভারতীয় ২ থেকে ৫টি যুদ্ধবিমান এবং একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে। ভারত এই দাবি অস্বীকার করে বলে যে তারা পাকিস্তানের একটি অনুপ্রবেশকারী যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
তবে ভারত পাকিস্তানের এই পাল্টাপাল্টি হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নিয়ে কোন তথ্যই নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেও গুজবের উৎপত্তি হচ্ছে।
বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তান ৪৮ ঘণ্টার জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে, এবং সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। এই পরিস্থিতি এখনও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নেয়নি, তবে পরমাণু শক্তিধর এই দুই দেশের সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অপারেশন সিন্দুর
ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চালানো প্রতিশোধমূলক অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। “সিন্দুর” সিঁদুর মূলত হিন্দু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতের একটি গভীর প্রতীকী অর্থ বহন করে। বিবাহিত হিন্দু নারীরা কপালে তাদের স্বামীর জীবিত থাকার এবং গর্বের প্রতীক হিসেবে সিঁদুর পরিধান করেন। স্বামী মারা গেলে সিঁদুর মুছে ফেলতে হয়, যা বিধবা হওয়ার প্রতীক।
ভারতের সেনাবাহিনীর মতে, কাশ্মীরের পেহলগাম হামলায় নিহত ২৬ জনই পুরুষ, যাঁদের অনেকেই ছিলেন সদ্য বিবাহিত। এই হামলার মাধ্যমে বহু হিন্দু নারী বিধবা হয়ে পড়েন। তাই, প্রতীকী অর্থে, তাদের “সিন্দুর” মুছে ফেলা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পাল্টা হামলাকে “অপারেশন সিন্দুর” নাম দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ভারত প্রতিকীভবে বোঝাতে চায় যে, “এই নারীদের কপালের সিন্দুর ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে”।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, এই অভিযানে লক্ষ্যবস্তু ছিল লস্কর-ই-তইয়্যেবা এবং অন্যান্য জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির, যারা এই হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল। তবে পাকিস্তান এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, ভারতের হামলায় সাধারণ নাগরিক, মসজিদ এবং আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য জানায়, এই অভিযানে খুবই নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করে হামলা চালানো হয় এবং পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটি নয় বরং সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোকেই টার্গেট করা হয়।
‘সিন্দুর’ নামটি সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের মনে একটি মানসিক প্রতিশোধ ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। নিহত সৈনিকদের স্ত্রী বা মায়েরা মিডিয়ায় এই নামকরণের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মতে, এই নাম শুধু অভিযানের প্রতিশোধ নয়, এক ধরনের সম্মানও — যা নিহতদের পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে।
এই নামকরণ ভারত সরকার এবং সামরিক বাহিনীর একটি অভিনব কৌশল। যা শুধুমাত্র গোলা-বারুদের খেলা নয়, বরং জনমতকে প্রভাবিত করার এক চমৎকার মনস্তাত্ত্বিক চালও বটে। এর মাধ্যমে তারা বিনা প্রমাণে পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করলেও, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।