৩৬ জুলাই

maxresdefault (34)
জীবনযাপন

৩৬ জুলাই

সূচনা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ৩৬ জুলাই। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যখন একের পর এক উত্তপ্ত, ক্ষত-বিক্ষত আর রক্তাক্ত হচ্ছিল, তখন জনমনে এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল যে, এই রক্তাক্ত জুলাই কেন শেষ হয় না। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শেষ দিকে এসে স্বৈরাচার পতন আর দেশ সংস্কারের আন্দোলনে রূপ নেয়; তখন বাঙালীরা ভাবতে থাকে এই রক্তাক্ত জুলাই অার শেষ হতেও দেওয়া যাবে না।

জনগণের রাজনৈতিক সংস্কারের সেই গভীর আকাঙ্খা থেকেই, ২০২৪ সালের জুলাই মাস শেষ হয়ে আগস্ট মাসে গড়ালেও, ৩১ এর পর ৩২, ৩৩ এভাবে জুলাই মাস গণনা চলতেই থাকে। অবশেষে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর, বাংলাদেশীরা যেন দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার আনন্দ পায়। আর সেই থেকে ৫ আগস্ট আমাদের কাছে হয়ে ওঠে ৩৬ জুলাই।

৩৬ জুলাই কিভাবে গণঅভ্যুত্থান সফল হল ?

মুক্তিযোদ্ধা কোটা

কোটা সংস্কার আন্দোলন সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। তখন  প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির নিয়োগে, মোট ৫৬ শতাংশ নিয়োগই হত কোটা থেকে। বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হত সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের মধ্য থেকে। তারমানে তখন নিয়োগে প্রকৃত মেধাবীরাই ছিল সংখ্যালঘু।

৫৬ শতাংশ কোটার মধ্যে নারী কোটা ১০%, জেলা কোটা ১০%, উপজাতি কোটা ৫% এবং প্রতিবন্ধী কোটা এক শতাংশ মিলে সাধারণ কোটা ছিল মোট ২৬ শতাংশ। অন্যদিকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটাই ছিল ৩০ শতাংশ। সেকারণে সরকারি চাকরির নিয়োগে এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছিল।

আর্থসামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য যে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেটিই একসময় বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে দিয়েছিল।

পরবর্তীতে, ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাবার জন্য, উচ্চ আদালতে রিট করেন। তারই প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জুন মাসের ৫ তারিখে হাইকোর্ট, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত কে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এর মাধ্যমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারো পুনর্বহাল হয়ে যায়।

২০২৪ সালে হাইকোর্টের ওই রায়ের পর থেকেই তা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। এবং পহেলা জুলাই থেকে বৈষম্য বিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

আন্দোলনের গতিপথ

আওয়ামীলীগ সরকার শুরু থেকেই ছাত্রদের দাবি মনোযোগ দিয়ে শোনেনি। ছাত্ররা ২০১৮ সালেই কোটা সংস্কার চেয়েছিল, কোটা বাতিল নয়। কিন্তু তখন শেখ হাসিনা সরকার কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিল করেই আরেকটি অসন্তোষের বীজ বপন করেছিল। ২০২৪ সালের আন্দোলন শেখ হাসিনার সেই সিদ্ধান্তেরই ফসল।

দ্বিতীয়বারও যখন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, তখনও সরকার বলেছে তারা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত। আন্দোলনের শুরু থেকেই উভয় পক্ষ একমত হওয়া সত্ত্বেও, শুধুমাত্র সংলাপের অভাবে, রাজপথের সহিংসতায় বহু লোককে প্রাণ দিতে হয়।

সরকার বারবার বলেছে, এটা আদালতের বিষয়, এখানে সরকারের করার কিছু নেই। অন্যদিকে আদালত বলেছে সরকার চাইলে এটি সংস্কার করতে পারে। শিক্ষার্থীদের যুক্তি ছিল, আদালতে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে মামলা চলছিল, কিন্তু আন্দোলনকারীরা চায় সকল শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে, সকল কোটার সংস্কার। ছাত্র সমাজের এই সাধারণ দাবির বিষয়টি কেউ মনোযোগ দিয়ে শোনার প্রয়োজনীয়তাই বোধ করেনি।

দেশের গণমাধ্যমগুলোও এই অতি সাধারণ বিষয়টি পরিষ্কার করে তুলে ধরতে ব্যার্থ হয়েছে। বরং একটি সাধারণ আন্দোলন এত বড় পর্যায়ে আসার পেছনেও কিছু অপেশাদার সাংবাদিকের দায় রয়েছে। অযোগ্য এসব সাংবাদিক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামনে এমনভাবে এক অবাঞ্ছিত প্রশ্ন রাখেন, শেখ হাসিনা যার উত্তর দেওয়ার পর, সেখান থেকে আন্দোলন সম্পূর্ণ এক নতুন মাত্রা পায়।

প্রধানমন্ত্রী: মুক্তি যোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না তো কি রাজাকারের …

এই বক্তব্যের পর ছাত্র সমাজ ফুঁসে ওঠে। সেই হতাশা থেকেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। বাংলাদেশের পুলিশ আন্দোলন দমনের জন্য, বাংলাদেশেরই নিরস্ত্র ছাত্রদের বুকে গুলি চালায়, যার ফলে বহু ছাত্র শহীদ হয়।

সরকারী হিসেবে নিহতের সংখ্যা দেড়শর কাছাকাছি। বেসরকারী হিসেবে বলা হয় নিহত আড়াইশর বেশি। তবে জুলাই আন্দোলন শেষে আমরা জানতে পারি প্রায় দেড় হাজার সাধারণ নাগরিক সেসময় নিহত হয়েছিল। যাদের অনেকেরেই আন্দোলনের সাথে কোন রকম সম্পর্ক ছিল না।

জীবনঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে এত কঠোরভাবে আন্দোলন দমনের জন্য আওয়ামীলীগ সরকার যুক্তি দিয়েছিল যে, জামাত-শিবির এবং বিএনপি এই আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই সরকার বলে দেয়, মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন, সেতু ভবন সহ সরকারী গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ধ্বংস করেছে জামাত-শিবির, বিএনপি। যার জের ধরে সরকার অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাহী আদেশে জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয়।

সরকারী অবকাঠামো ধ্বংস করার প্রতিশোধ হিসেবে পুলিশ সাধারণ ছাত্রদের উপর নির্বিচারে গুলি চলাতে থাকে। উঁচু ভবনের ছাদ থেকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করানো হয়, হেলিকপ্টার থেকে বুলেট, কাদানে গ্যাস ছোড়া হয়।

নাশকতাকারীদের গ্রেফতারের বদলে, হাজার হাজার নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হতে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইন মন্ত্রী সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তা ব্যক্তিরা বলেছে, সাধারণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। অথচ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সহ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরকেও বিনা অপরাধে নাশকতার মামলা দিয়ে, কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

একপর্যায়ে সরকারের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে আন্দোলন আর কোটা সংস্কারের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে না। সমগ্র দেশবাসী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যের উপর অতিষ্ঠ হয়ে রাজপথে নেমে আসে। ছাত্ররা তখন পুলিশ এবং সরকারের নানা অন্যায়ের বিচার চাইতে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে।

কিন্তু সরকার তখনও বরাবরের মতই ছাত্রদের দাবির কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে চায় না। সেকারণেই সরকার বলতে থাকে, কোটা সংস্কারের দাবি আদায়ের পরও কেন আন্দোলন চলছে? কারণ ততদিনে হাইকোর্টের রায়ে সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার একটি যৌক্তিক সমাধান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সারা দেশের মানুষ তখনও এই আন্দোলনের সময় চলমান সরকারী আগ্রসন আর পুলিশি সহিংসতা মেনে নিতে পারছিল না।

ইন্টারনেট বন্ধ

মূলত দুটি ঘটনার পর ছাত্র সমাজের এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে। একটি হল প্রধানমন্ত্রীর রাজাকারের নাতিপুতি সম্পর্কিত উক্তি এবং রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাইদের মৃত্যু। আবু সাইদের মৃত্যুর পর এই আন্দোলন সারা দেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি করে, ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এরপর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। ঢাকা সহ সারা দেশে পুলিশের গুলিতে বহু শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর আসতে থাকে।

এক পর্যায়ে আন্দোলন দমন করতে, ১৭ জুলাই সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়।

পলক: ইন্টারনেট বন্ধ করিনি, বন্ধ হয়ে গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি, দুর্বৃত্তদের হামলায় দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি দেশজুড়ে কার্ফিউ জারি করা হয় এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা সহ। ইন্টারনেট বন্ধের মাধ্যমে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মচাঞ্চল্যই স্থবির হয়ে পড়ে না, বরং দেশের মানুষ যেন বাকস্বাধীনতা হারিয়ে ফেলে। তার প্রায় ১ সপ্তাহ পর ২৩ জুলাই আবারো ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়।

ব্যাংক থেকে শুরু করে গার্মেন্টস শিল্প পর্যন্ত দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনমুখী বহু সেবা খাত ইন্টারনেটের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। ফ্রিলান্সিং, ই -কমার্স, এফ -কমার্স খাতের বহু উদ্যোক্তা ইন্টারনেট সেবা বঞ্চিত হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানো হচ্ছিল দাবি করে, সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল। কিন্তু ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধের পর বিক্ষোভ কিংবা সহিংসতা তো কমেইনি বরং তা আগের চেয়ে আরো বেড়েছে।  শুধু তাই নয়, আওয়ামীলীগ সরকার নিজেই রীতিমত গুজবের দোকান খুলে বসেছিল। আর সেই সরকারী গুজব প্রচারণার মূল দ্বায়িত্বে ছিল ছাত্র লীগ।

শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের জন্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন এদের মোকাবেলার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এরপর থেকেই আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার চিত্র গণমাধ্যমে উঠে আসতে থাকে। এমনকি নারী শিক্ষার্থীদেরকে মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগও পাওয়া যায়।

তবে এবারই বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়ত প্রথমবার, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী একত্রিত হয়ে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করার নজির সৃষ্টি হয়েছে।

আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান

একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাজই যেখানে আলোচনার মধ্যমে সরকার পরিচালনা করা, সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যকর বিরোধী দলের উপস্থিতি না থাকার কারণে, আওয়ামীলীগ সরকার যে কোন বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ এবং আলোচনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল।

কারো সাথে মতের অমিল হলে, তাকে জামাত শিবির রাজাকার ট্যাগ দেওয়া হত। দেশের শিক্ষক, অভিভাবক থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মী, শিল্পী সমাজ সহ নানা স্তরের মানুষ এর প্রতিবাদে পথে নেমে আসে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনার পথিকৃত প্রখ্যাত লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, ১৯৫২ থেকে যত গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে তারমধ্যে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানই সবচেয়ে ব্যাপক।

আন্দোলন দমনের নামে নির্বিচানে গুলি করে মানুষ হত্যা, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে ঘরের ভেতরে থাকা শিশুদের হত্যা সহ, এমনসব ঘৃণ্য কর্মকান্ড আওয়ামীলীগ সরকার করেছিল; যার কারণে ছাত্রদের একটি দাবি আদায়ের আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়।

সরকারী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ যখন লাগাম ছাড়া হয়ে পড়ে, সেই পরিস্থিতিতে ৩ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ৯ দফার বদলে ১ দফা ঘোষণা করে। যার মূল উদ্দেশ্য হল শেখ হাসিনার পতন।

নাহিদ: এখন আমাদের ১ দফা। এই সরকার আর ১ মিনিটও ক্ষমতায় থাকতে পারে না।

ছাত্রদের সমাবেশ থেকে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে ৬ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরদিন ৪ আগস্ট দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় একদিনে প্রায় ৯৯ জন মানুষ প্রাণ হারায়। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, সকল অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে, ৪ জুলাই সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কারফিউ প্রত্যাখ্যান করে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্টের পরিবর্তে, একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেয়।

৩৬ জুলাই

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, শিক্ষার্থীদের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষ কারফিউ ভেঙে ঢাকার রাস্তায় নেমে অাসে। সকাল ১০ টা পর্যন্ত বহু মানুষকে ঢাকার উত্তরা এবং যাত্রাবাড়িতে আটকে রাখা হয়। তাদেরকে শহরের ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুসের ঢল বাড়তে থাকে, ফলে এত বিপুল পরিমাণ মানুষকে আটকে রাখা আর সম্ভব হয় না।

এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দ্বািয়ত্বে থাকা সামরিক কর্মকর্তারা, শেখ হাসিনাকে গোছানোর জন্য ৪৫ মিনিট সময় দেয়। এরপর বেলা ১২ টার দিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়।

শেখ হাসিনার পালানোর খবরে মানুষ বাঁধ বাঙা উচ্ছাসে ফেটে পড়ে। তারপর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সংসদ ভবনের দখল নিয়ে নেয়।

সেদিন রাস্তায় নেমে আসা প্রতিটি বাঙালির চোখে মুখে ছিল অন্যরকমের আনন্দ। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসেনের অবসানের পর, ৩৬ জুলাই বাঙালি যেন নতুন এক স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাদ উপভোগ করতে পারছিল। ৩৬ জুলাই এর সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল, লাখো মানুষ যখন একসাথে জেগে ওঠে, তখন সবচেয়ে নির্মম স্বৈরাচারকেও পালিয়ে বাঁচতে হয়।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।