হঠাৎ এত শীতের কারণ কী
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন যাবৎ তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চল সহ, রাজধানী ঢাকাতেও ব্যাপক শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
চলতি বছর শীতকালের শুরুদিকে তেমন কোন শীতই ছিল না; কিন্তু হঠাৎ করে এত ঢান্ডা আবহাওয়া তৈরী হওয়ার কারণ কী?
শৈত্যপ্রবাহ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, কোন অঞ্চলে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, তখন হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। বর্তমানেও উত্তরবঙ্গ সহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও কম। এছাড়া রাজধানী সহ এর আশে পাশের অঞ্চলের তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম অনুভূত হচ্ছে।
তবে তীব্র শীত পড়লেও, এখনও তা পুরোপপুরি শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে পড়েনি। নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
তীব্র শীতের কারণ
বাংলাদেশে কোনদিক থেকে বাতাস প্রবেশ করে এবং সেই বাতাস কতটা ঠান্ডা তার ওপর শীতের অনুভূতি নির্ভর করে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তৈরী হয়েছে। অর্থাৎ এই অঞ্চলে বাতাসের চাপ বেশি থাকায়, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে শীতের ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সেকারণেই মূলত বাংলাদেশে শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে।
এছাড়াও সমগ্র পৃথিবী জুড়ে উর্ধ্ব আকাশে, পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এক ধরনের সরু বাতাস উচ্চ বেগে প্রবাহিত হয়; একে বলা হয় Jet stream। জেট স্ট্রিম আমাদের পৃথিবীর আবহাওয়াকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। বর্তমানে প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন জেট স্ট্রিমে কম্পনের ফলে, তা এই অঞ্চলে খানিকটা নিচের দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উর্দ্ধ আকাশের ঠান্ডা বাতাস নিচের দিকে নেম আসার জন্যও এই অঞ্চলে শীত বেড়ে গেছে।
বর্তমানে প্রচন্ড ঠান্ডার আরেকটি কারণ হল, ঘন কুয়াশা। মধ্যরাত থেকে দুুপুর বা বিকেল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকার কারণে, সূর্যের আলো দিনের বেলা অতি ঘন কুয়াশার স্তর ভেদ করে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করতে পারে না। সূর্য ওঠার দুই ঘণ্টা পর থেকে সূর্য ডোবার দুই ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সময়কে বলা হয় কিরণকাল। এই ঋতুতে সূর্যের কিরণকালও থাকে কম। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় মাটি শীতল থাকে; যার ফলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।