সৌদি আরব কেন ইসরাইল এর সাথে বন্ধুত্ব করছে
সৌদি আরব কেন ইসরাইল এর সাথে বন্ধুত্ব করছে
সৌদি-ইসরায়েল বন্ধুত্ব
দীর্ঘদিন যাবৎ আরব বিশ্বের দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ছিল। ইসরায়েলের মত একটি অবৈধ রাষ্ট্রের সাথে আরবদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কল্পনাও করা যেত না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু আরব দেশ সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তির আওতায় বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো এবং সুদান ইসরায়েলের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আমেরিকার মধ্যস্থতায় সৌদি আরবও গোপনে গোপনে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। সৌদি আরব আর ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক বন্ধুত্ব সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরবের এই সম্পর্ক ফিলিস্তিনীদের সাথে সরাসরি প্রতারনার সামিল।
সম্পর্ক স্বভাবিকীকরণ
ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা আর আঞ্চলিক নিরাপত্তার অযুহাতে আরব দেশগুলো তাদের চীরশত্রু ইসলায়েলের সাথে হাত মেলাতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। সৌদি ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকীকরণ শব্দটি বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। কূটনীতির ভাষায় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ বলতে এমন দুটি দেশের সম্পর্ক স্থাপন কে বোঝায়, যাদের মধ্যে অতীতে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল না, সেই সাথে দুটি দেশের মধ্যে কোন ধরনের বানিজ্য চুক্তি, দূতাবাস এমনকি সরাসরি বিমান পরিসেবাও ছিল না।
আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ
অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্মের সময় থেকেই, পারস্য উপসাগীর দেশগুলোর সাথে এর খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করছিল। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের সাড়ে সাত লাখ জনগণকে ভিটেমাটি ছাড়া করার মধ্য দিয়ে, ইসরায়েল অবৈধভাবে নতুন দেশ গঠনের ঘোষণা দেয়। সেকারণে একাধিকবার আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ বাঁধে। ১৯৪৮-৪৯, ১৯৫৬, ১৯৬৭, ১৯৭৩, ১৯৮২ এবং ২০০৬ সালে আরব দেশগুলো এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথমত ইসলায়েলের জন্মই হয়েছে ফিলিস্তিনীদের জমি দখল করে। তারপর যে সামান্য ভূখন্ড ফিলিস্তিনীদের ছিল, সেখানেও ইসলায়েলীরা অবৈধভাবে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করে একটু একটু করে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে যাচ্ছে। তাছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে ফেলে দখলদার ইসরায়েল। এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, সৌদি আরব বরাবরই ফিলিস্তিনের সাথে ছিল। বিশেষ করে বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলোকে সাথে নিয়ে ২০০২ সালেও ফিলিস্তিনীদের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু ৮৭ বছর বয়সী বাদশা সালমান এখন আর সত্যিকারের ক্ষমতায় নেই। বর্তমানে সৌদি আরব চলছে তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের ইচ্ছে মত। মোহাম্মদ বিন সালমান বা এমবিএস প্রথম থেকেই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল।
সৌদি-মার্কিন বন্ধুত্ব
ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক না থাকলেও, ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবেরও খুব কাছের বন্ধু। সৌদি আরব এবং আমেরিকার বন্ধুত্ব অবশ্য বহু পুরনো। ১৯৪৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আব্দুল আজিজের সাথে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হলেও, সৌদি-মার্কিন বন্ধুত্বে কখনও চিড় ধরেনি। ১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন সমর্থিত রেজা শাহ এর পতন ঘটার পর, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের আরো ঘনিষ্ট হয়ে ওঠে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের পর আয়াতুল্লাহ খোমেনি আমেরিকাকে “গ্রেট শয়তান” আখ্যা দেন। তখন থেকে আমেরিকাও মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার লড়াইয়ে, সবসময় সৌদিকে সমর্থন দিয়ে গেছে। ১৯৯০ সালে ইরাক কুয়েত দখল করে নেওয়ার পর, মার্কিন বাহিনীকে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সৌদি আরব। বাদশাহ ফাহাদ এবং বাদশাহ আব্দুল্লাহর সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। ২০০১ সালে সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেন টুইন টাওয়ারে হামলা চালালেও, সেই বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরেনি। টুইন টাওয়ারে সরাসরি হামলাকারীরা ১৯ জন ব্যক্তির ১৫ জনই ছিল সৌদি নাগরিক। সে হিসেবে আমেরিকার টুইন টাওয়ার হামলার প্রতিশোধ নেওয়া উচিত ছিল সৌদি আরবের কাছ থেকে। কিন্তু আমেরিকা সৌদি আরবের বদলে আক্রমণ করে ইরাকে এবং সৌদি সেই ইরাক আক্রমণে সহায়তা করে। পরবর্তীতেও সৌদি আরব কর্তৃক ইয়েমেনে হামলা, কাতারের সাথে কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার মত চাঞ্চল্যকর বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সৌদি আরবের পক্ষ নিয়েছে।
সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ওরফে এমবিএস প্রথম থেকেই নিজেকে একজন আধুনিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছিলেন। ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। মার্কিন এবং ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, সেসময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেগানিয়াহুও গোপনে সৌদি আরব গিয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরব বিষয়টি সমপূর্ণ অস্বীকার করে। পরবর্তীতে সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যাকান্ড নিয়ে, সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক যখন খারাপ হবার পথে যাচ্ছিল, তখনও ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং জামাতা জেরাড কুশনার মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। এরপর মনে করা হয়েছিল যে, ট্রাম্প প্রশাসন চলে গেেল হয়ত, সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে ভাটা পড়বে। কিন্তু পরবর্তীতে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরও সৌদির সাথে আগের সম্পর্ক বজায় থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র সৌদি ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরী করার প্রথম কারণ হিসেবে দেখা হয়, তাদের তিন দেশেরই সাধারণ শত্রু ইরানকে দমন করা। যদিও এই প্রকল্প চলাকালীন সময়ে সেই সমীকরণ অনেকটাই বদলে গেছে। কারন চীনের মধ্যস্থতায় ইরান সৌদি আরবও তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলেছে।
সৌদি আরব আমেরিকার কাছ থেকে বেশ কিছু দাবি দাওয়া আদায় করার জন্যই মূলত, ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব করছে। সৌদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যাটোর মত একটি চুক্তি আদায় করতে চায়। যাকে বলা হয় Article 5 Commitment। ন্যাটোর Article 5 এ বলা হয়েছে, এর সদস্য দেশগুলোর কোন একটিতে সামরিক হামলা হলে, তা বাকি সদস্য দেশগুলোর বিরুদ্ধেও হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে। তারমানে সৌদি আরবে কোন হামলা হলে, সেটি আমেরিকার বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এই বিষয়ে মার্কিনরা সম্মত হবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। ২০২২ সালে জো বাইডেন এবং এমবিএস এর বৈঠকে এই আলোচনা প্রথম শুরু হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সাথে ন্যাটোর মত চুক্তি না করলেও আরেক ধরনের সামরিক চুক্তি করতে পারে। যা US-Saudi Defence Pact বা মার্কিন সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের ১৫ টি দেশের সাথে মার্কিনদের এই ধরনের চুক্তি রয়েছে। একে Non-NATO Allies বা ন্যাটো বর্হিঃভূত মিত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ইসরায়েল, কুয়েত, বাহরাইন, জর্ডান এমনকি পাকিস্তানও আছে এই তালিকায়।
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ ধরনে সামরিক চুক্তি চাচ্ছে। পাকিস্তানের মত দেশ যে চুক্তির আওতায় আছে, সে ধরনের সাধারণ চুক্তি নিয়ে সৌদি আরব সন্তুষ্ট হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে চুক্তির শর্ত যাই হোক না কেন, সৌদি আরব চায় আমেরিকার নিশ্চয়তা। কিন্তু বাইডেন যেহেতু এমবিএস এর মত এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে না। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সহ প্রশাসন এ ব্যাপারে যা সিদ্ধন্ত নিবে, তাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
সৌদির অন্যান্য আবদার
আমেরিকার কাছে সৌদি আরবের দ্বিতীয় আবদার হল, পারমানবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের নিশ্চয়তা। সৌদি আরব US Atomic Energy Act এর এক, দুই এবং তিন নম্বর ধারায় চুক্তি করতে চায়। এসব ধারার অধীনে পারমানবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অতীতে সৌদিকে এসব ধারা মেনে চুক্তি করার আওভান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন সৌদি আরব চুক্তির শর্ত মেনে পারমানবিক শক্তি ব্যবহার করতে চায়নি। এবার তারা চুক্তির শর্তগুলো মেনে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে।
সৌদি আরবের তৃতীয় দাবি হল, ফিলিস্তিনীদের বিষয়টি যেন একেবারে পরিত্যাগ করা না হয়। তারমানে ফিলিস্তিনীদের বিষয়টি এখন আর আগের মত জোড়ালো নেই। যেহেতু সৌদি আরব মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা, এবং এখনও পর্যন্ত সৌদিরাই আরব শান্তি উদ্যোগের নেতৃত্বে আছে, তাই ফিলিস্তিন ইস্যুকে আলোচনায় না রাখলেই নয়। এটা অনেকটা গাঁ বাঁচানোর মত দাবি। যাতে করে কেউ সৌদি কে সরাসরি দোষোরোপ করতে না পারে যে, তারা ফিলিস্তিনকে পরিত্যাগ করেছে। ভবিষ্যতে সৌদি আরকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছু জিজ্ঞেস করলে, তারা যেন এর উত্তরে বলতে পারে যে, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। অথবা, ফিলিস্তিন ইস্যুকে আমরা ভুলে যাই নি। যদিও অতীতে সৌদি আরব বলেছিল যে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের আগে, ইসরায়েলকে কিছুতেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। আর এখন ইসরায়েলকে শুধু স্বীকৃতি নয়, রীতিমত ঘনিষ্ঠ মিত্র বানানোর প্রস্তুতি চলছে। তাও আবার ফিলিস্তিন ইস্যুকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে।
ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধান সম্ভব?
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা, সমাধানের ধারে কাছেও নেই, বরং এই সমস্যা সর্বকালের সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে এসে পড়েছে। সর্বপ্রথম যখন সৌদি ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের কথা উঠেছিল, তখনই ফিলিস্তিনিরা সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে ঝাপিয়ে পড়েছিল, যেন সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলিদের কাছে তাদের দাবিগুলো পেশ করে। ফিলিস্তিনিদের দাবিগুলো হল: ১. ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমতীরের অঞ্চলগুলো ফিলিস্তিনিদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ২. ফিলিস্তিনি এলাকাগুলোতে ইহুদি বসতি বন্ধ করতে হবে। এবং ৩. পশ্চিমতীরে সকল ধরনের সম্প্রসারণ রোধ করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল ইসরায়েল কখনও এসব দাবির সাথে একমত হবে না। ইসরায়েলে এখন ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে কট্টোর ডানপন্থী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যে জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেই জোটের শরীকরা ক্ষতায় টিকে থাকার জন্য কখনই ফিলিস্তিনিদের দাবি মেনে নিবে না। তাই সৌদি আরব, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের যে শর্ত জুড়ে দিয়েছে, সেই সব দাবি কখনই পূরণ হবার নয়। কিন্তু তাই বলে সৌদি ইসরায়েল বন্ধুত্ব থেমে থাকবে না। সৌদি আরবের মূল দাবি গুলো বাস্তবায়িত হলেই, স্বাভাবিকরণের এই চুক্তি আলোর মুখ দেখবে।
ইসরায়েলে কী বলে?
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথমত অর্থনৈতিক করিডোর প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে, জ্বালানী, পরিবহণ এবং যোগাযোগের মত বিষয়গুলো ভৌগলিকভাবেই অগ্রাধিকার পাবে।
ব্লুমবার্গের সাংবাদিক যখন নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করে যে, সৌদির সাথে সম্পর্ক স্বভাবিক করার বদলে, ইসরায়েল কি দিবে? ইসরায়ের কি পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন বন্ধ করবে? এই প্রশ্ন শুনেই নেতানিয়াহু কিছুটা চটে যান। তিনি বলেন, এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার দরকার। তিনি আরো বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে এমন কোন কিছুই আমি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। এমনকি নেতানিয়াহুর বক্তব্য থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তারা কখনও ফিলিস্তিনিদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে দিবে না। তার মতে, ফিলিস্তিনিরা স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়া মানে, তা হবে ইরান নিয়ন্ত্রিত একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। এই ধরনের মতাদর্শ যারা ধারণ করে, তারা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিবে, তা সৌদি আরবের বোঝার বাকি থাকার কথা নয়। তবুও শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য, ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে জলাঞ্জলি দিতে যাচ্ছে মোহাম্মদ বিন সালমান।
আমেরিকার স্বার্থ
প্রশ্ন আসতে পারে সৌদি-ইসরায়েল বন্ধুত্ব তৈরী করে আমেরিকার লাভ কী? আমেরিকার প্রধান আগ্রহ হল, তাদের চীর শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের প্রতিরোধ বলয় তৈরী করা। তাছাড়া আমেরিকার বহু ইহুদি প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর শীর্ষ ব্যবসায়ীরা, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের জন্য একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে চায়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই কাজে মধ্যস্থতা করলে, আগামী নির্বাচনের প্রচারণায় তা অনেক ভালোভাবে কাজে আসবে। তাছাড়া তার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পও আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে আরব-ইসরায়েল উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত করেছিল। সেদিক থেকেও বাইডেন প্রশাসনের উপর এক ধরনের অদৃশ্য চাপ রয়েছে। তাছাড়া চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি যখন ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল, তখন তা মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখা হয়। সেদিক থেকে, সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি, মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের জবাব হিসেবেও আমেরিকার পক্ষে কাজ করবে।