সেভেন সিস্টার্স
সেভেন সিস্টার্স
ভূমিকা
বাংলাদেশ তিন দিক থেকে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। তবে বাংলাদেশের কারণে ভারতের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য দেশটির মানচিত্র থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে থাকা এই রাজ্যগুলো হলো মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ। এই সাতটি রাজ্যকে একসাথে বলা হয় সেভেন সিস্টার্স। এই সাতটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়েছে। এই ভূখণ্ডের আকৃতি মানচিত্রে দেখতে অনেকটা মুরগির ঘাড়ের মতো বলে, একে চিকেন্স নেক বলা হয়।
সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে কৌশলগতভাবে খানিকটা দুর্গম হাওয়ায় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এই অঞ্চলের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের একটি বক্তব্যের জের ধরে, সেভেন সিস্টার্স হঠাৎ করেই বেশ আলোচনায় উঠে এসেছে।
সেভেন সিস্টার্স নামকরণ
ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে থাকা সাতটি রাজ্য বরাবরই বেশ রহস্যে ঘেরা। ভারতের অন্যান্য রাজ্য সম্পর্কে যতটা জানা যায়, সেই তুলনায় সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়া সত্বেও, এদের সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি।
এই রাজ্যগুলো একসাথে সেভেন সিস্টার্স নামটি পেয়েছিল ১৯৭২ সালে। জ্যোতি প্রশাদ সাইকিয়া নামের ত্রিপুরার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, একটি রেডিও টকশোতে মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ কে একসাথে উল্লেখ করতে সর্বপ্রথম সেভেন সিস্টার্স শব্দটি উল্লেখ করেন। এই সাতটি রাজ্যের উপর তিনি একটি বইও লিখেছিলেন যার নাম ল্যান্ড অফ সেভেন সিস্টার্স। মূলত তারপর থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি ভারতীয় রাজ্য সেভেন সিস্টার্স নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
রাজ্যগুলোর বর্ণনা
সেভেন সিস্টার্স এর রাজ্যগুলো জাতিগত এবং ধর্মীয় দিক থেকে বেশ বৈচিত্রপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, এরা একে অপরের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। সেই সাথে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সংস্কৃতিও অনেকটাই আলাদা। এসব রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই নানান আদিবাসী জাতি এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের। ভূ রাজনৈতিকভাবে এদের অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৈচিত্র্যময় সামাজিক কাঠামোর কারণে এই অঞ্চলটি সারাবিশ্বে অতুলনীয়। এই রাজ্যগুলোর সামাজিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতার কারণেই মূলত এদেরকে সাত বোন বা সেভেন সিস্টার্স বলা হয়।
সেভেন সিস্টার্স এর অধীনে থাকা সাতটি রাজ্যের মোট আয়তন ২ লক্ষ ৬২ হাজার ১৮৪ বর্গ কিলোমিটার। যা ভারতের মোট আয়তনের প্রায় ৪ শতাংশ। সেভেন সিস্টার্স এর সাতটি রাজ্যের মধ্যে চারটি রাজ্যের সরাসরি বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত সংযোগ থাকা রাজ্য গুলো হলো মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম এবং মিজোরাম। এছাড়া মনিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশ বাংলাদেশ থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত।
অরুণাচল প্রদেশ
সেভেন সিস্টার্স রাজ্য গুলোর মধ্যে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য হল অরুণাচল প্রদেশ। অরুণাচল প্রদেশের আয়তন ৮৩ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার। অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী হল ইটানগর। এই রাজ্যটির পশ্চিমে ভুটান উত্তরে চীন এবং পূর্ব দিকে মিয়ানমারের অবস্থান।
অরুণাচল প্রদেশ ২৬ প্রধান আদিবাসী এবং ১০০ টিরও বেশি উপজাতি সম্প্রদায় বসবাস করে। এই চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মনোরম পাহাড়, উপত্যকা এবং প্রাকৃতিক হ্রদের জন্য অরুণাচল বিখ্যাত। সেকারণে অরুণাচলকে বলা হয় ভোরের সূর্যের দেশ।
আসাম
সেভেন সিস্টার্স এর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য হল আসাম। আসাম রাজ্যের আয়তন ৭৮ হাজার ৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার। আসামের রাজধানীর নাম দিসপুর। তবে এই প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহরটি হলো গুয়াহাটি। ১৮২৬ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে আসাম সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই অঞ্চলের অসমতল ভূমির কারণেই অতীতে এর নাম হয়েছিল অসম। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় নামটি আসাম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আসামের অধিবাসী এবং আসামের ভাষাকে বলা হয় অসমীয়া। এই ভাষার সাথে বাংলা ভাষার অনেক মিল আছে। শুধু তাই নয় আসামের জনসংখ্যার তিন ভাগ এক ভাগই বাঙালি। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আসামকে বলা হয় নীল পাহাড় এবং লাল নদীর দেশ।
মেঘালয়
সেভেন সিস্টার্স এর মধ্যে থাকা বাংলাদেশের প্রতিবেশী আরেকটি রাজ্য মেঘালয়। এই রাজ্যটির আয়তন ২২ হাজার ৪২৯ বর্গ কিলোমিটার। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। অতীতে এই রাজ্যটি ছিল আসামের একটি অংশ। ১৯৭০ সালে আসামের দুটি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘালয় রাজ্যের জন্ম হয়েছে।
মেঘালয় মূলত একটি পাহাড়ি রাজ্য। গারো পাহাড়, খাসি পাহাড় এবং জয়ন্তীয়া পাহাড়ের সমন্বয়ে মেঘালয় রাজ্যটি গড়ে উঠেছে। ছবির মতো সুন্দর মেঘালয় রাজ্য সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় মেঘালয়ে। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে মেঘালয় কে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড।
মিজোরাম
সেভেন সিস্টার্সের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মিজোরাম। এই রাজ্যটির আয়তন ২১ হাজার ৮৭ বর্গ কিলোমিটার। মিজোরামের রাজধানী আইজল। মিজোরাম রাজ্যটির বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত রয়েছে।
মিজোরাম কে বলা হয় নীল পাহাড়ের দেশ। মিজোরাম শব্দটির মি অর্থ মানুষ, জো অর্থ পাহাড় এবং রাম অর্থ দেশ। তারমানে মিজোরাম অর্থ পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের দেশ। এই রাজ্যটির ৯১ শতাংশ এলাকা জুড়েই রয়েছে ঘন পাহাড়ি বন।
নাগাল্যান্ড
সেভেন সিস্টার্স এর একটি রহস্যময় রাজ্য নাগাল্যান্ড। নাগাল্যান্ডের রাজধানীর নাম কোহিমা। তবে এই রাজ্যের বৃহত্তম শহর হলো ডিমাপুর। নাগাল্যান্ডের আয়তন ১৬ হাজার ৫৭৯ বর্গ কিলোমিটার। নাগাল্যান্ড ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য গুলোর মধ্যে একটি। এই রাজ্যের মানুষ সারাবছর উৎসবে মেতে থাকার কারণে নাগাল্যান্ড কে বলা হয় উৎসবের দেশ।
১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগের দিন নাগারা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তারা তাদের সেই স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারেনি। এরপর ১৯৫১ সালে আরেকটি গণভোটের মাধ্যমে নাগারা নিজেদেরকে পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তখনো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের স্বাধীনতা হরণ করে। যদিও তখনও পর্যন্ত নাগাল্যান্ড আসামের অংশ ছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে আসাম থেকে আলাদা করে নাগাল্যান্ড কে ভারতের ১৬ তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ত্রিপুরা
ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য হল ত্রিপুরা। এই রাজ্যটির আয়তন ১০ হাজার ৪৯১ বর্গ কিলোমিটার। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণে এই শহরের নাম আমরা সবাই শুনেছি। ১৯৬৮ সালের শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে আগরতলায় গিয়েছিলেন। তখন আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
ব্রিটিশ আমলে ত্রিপুরা সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল না। এই অঞ্চলটি স্থানীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত হতো। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা স্বাধীন ভারতের অংশ হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে ত্রিপুরাকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৭২ সালে ত্রিপুরা ভারতের একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।
মনিপুর
মনিপুর রাজ্যের রাজধানী হল ইম্ফল। এই রাজ্যের আয়তন প্রায় ২২ হাজার ৩২৭ বর্গ কিলোমিটার। মনিপুর কে বলা হয় ভারতের রত্ন ভূমি। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে মনিপুর অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
১৮২৪ সালে বার্মার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মনিপুরের রাজা ব্রিটিশদের সহায়তা চায়। তখন থেকে মনিপুর ভারতের একটি দেশীয় রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে মনিপুর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ইচ্ছা পোষণ করে। সে সময়ও বার্মার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে মনিপুরের রাজা ১৯৪৯ সালে ভারতের সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে মনিপুর ভারতের কেন্দ্রশাসিত রাজ্যে পরিণত হয়। এবং ১৯৭২ সালে মনিপুর ভারতের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়।
কেন গুরুত্বপূর্ণ
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের ৬৩৫টি উপজাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যে, ২১৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীই রয়েছে এই অঞ্চলে। এসব উপজাতিদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। তারা ভারতের মূলধারায় একত্রিত হওয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করে। সেকারণেই মূলত সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে থাকা বেশ কিছু জাতি ভারত থেকে স্বাধীন হতে চায়। কিছু কিছু গোষ্ঠী ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন থেকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়। অন্যদিকে কিছু আদিবাসী সশস্ত্র বাহিনী ভারত থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হতে চায়। স্বাধীনতাকামী এসব দলগুলোকে ভারত সরকার নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে স্বাধীনতাকামী দলগুলো গড়ে ওঠার আরেকটি ঐতিহাসিক কারণ হলো, অতীতে ব্রিটিশ শাসনের সময় এই অঞ্চলের জাতি গোষ্ঠীগুলোকে খেয়ালখুশিমত ভাগ করা হয়েছে। বাঙালিরা এক জাতি হওয়ার সত্ত্বেও যেমন, আমাদেরকে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তানের মত দুটি দেশে আলাদা করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে এই অঞ্চলের বেশ কিছু জাতি ভারত, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মত তিনটি আলাদা দেশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
এই অঞ্চলে যেসব সংগঠন ভারত থেকে স্বাধীনতা দাবি করে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম বা উলফা। বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যেসব অস্ত্র আটক করা হয়েছিল তা আসামের এই উলফার জন্যই আমদানি করা হয়েছিল। উলফাকে সহযোগিতা করার প্রচেষ্টার জন্যই বিএনপি আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
সেভেন সিস্টার্স এর বিচ্ছিন্নতাবাদী আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হলো, আসাম রাজ্যের বোরো উপজাতিদের জন্য স্বাধীনতার লড়াই করা বোরোল্যান্ড ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, ভারত এবং মিয়ানমারের নাগা অধ্যুষিত এলাকাকে স্বাধীন করতে চাওয়া সোশ্যাল কাউন্সিল অফ নাগাল্যান্ড, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি অংশ দখলে নিতে চাওয়া কামতাপুর মুক্তি সংস্থা, মনিপুর রাজ্যকে স্বাধীন করতে চাওয়া ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ মনিপুর ও মনিপুর পিপলস লিবারেশন আর্মি এবং ত্রিপুরী জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা ও অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স। এগুলোর বাইরেও আরো বেশ কিছু সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে সক্রিয় রয়েছে।
সুদীর্ঘ কাল ধরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এইসব রাজ্যের জনগণ ভারত সরকারের কাছ থেকে, অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দিক বঞ্চিত। শুধু সরকারিভাবেই নয় বেসরকারি বিনিয়োগের দিক থেকেও এই অঞ্চলে, ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের তেমন প্রসার ঘটেনি।
ভৌগোলিকভাবে দুর্গম হওয়ার কারণে ভারতের মূলধারার রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থায় এই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল অতীতে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে। যে বৈষম্য বিলোপের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছিল, একই কারণে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এসব রাজ্যের অনেকেই ভারত থেকে স্বাধীন হতে চায়।
সেভেন সিস্টার্স এর অনুন্নত অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর কারণেই; ভারত কখনোই বাংলাদেশের উন্নতি চায়না। কারণ স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে সেভেন সিস্টার্স এর অনেক জাতির কাছেই বাংলাদেশ একটি অনুপ্রেরণার নাম। তার উপর যদি বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়; তাহলে এইসব রাজ্যের স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে। কারণ ভারতের সাথে সংযুক্ত থাকার কারণেই তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যতটা মাতামাতি করে; আসাম, মনিপুর কিংবা নাগাল্যান্ডের ইস্যু নিয়ে তারা এর সামান্যও করে না। কারণ তারা ভালোভাবেই জানে ভারত সরকার শুধুমাত্র অস্ত্রের জোরে এই অঞ্চল দখল করে রেখেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আগ্রাসন যদি সামান্য কিছুটা কমে; তাহলেই এই অঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটতে পারে। আর সেকারণেই সেভেন সিস্টার্সে কর্তৃত্ব বজায় রাখা ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।