সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘টাকার পাহাড়’

maxresdefault (20)
জীবনযাপন

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘টাকার পাহাড়’

বাংলাদেশের দুর্নীতির একটি ভয়াবহ দিক হল টাকা পাচার। দেশের দুর্নীতিবাজ লোকেরা নানা উপায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন করে, সেই টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এধরনের টাকা পাচারের স্বর্গ হল সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো, যা সুইস ব্যাংক নামে পরিচিত। দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশীরাও এখন সুইস ব্যাংকে কালো টাকা জমানোতে অনেক এগিয়েছে। কারণ বিগত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া ৩ হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। একদিকে দেশের টাকা পাচার ঠেকানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তোড়জোড় শুরু হলেও, গোপনে নজিরবিহীন গতিতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছে বাংলাদেশিরা।


সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক; এটি পৃথিবীর অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রা। বর্তমানে ১ সুইস ফ্রাংকের মূল্য বাংলাদেশী প্রায় ৯৯ টাকার সমান। সুইস ফ্রাংকের মুদ্রাস্ফীতি নেই বললেই চলে। বরং দিন দিন এই মুদ্রার মান বেড়েই চলেছে। সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া ব্যবসায়ী, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, সরকারী কর্মকর্তা এবং অসাধু লোকেরা তাদের সম্পদের পাহাড় গড়েছে সুইস ব্যাংকগুলোতে। একইভাবে বাংলাদেশীদেরও কালো টাকার ‘পাহাড়’ জমেছে সুইস ব্যাংকে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক কয়েকদিন আগে বিগত অর্থ বছরের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড – ২০২১’ শিরোনামের ওই বার্ষিক প্রতিবেদনে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমানোর ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমানো অর্থের পরিামণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাংক। আর ২০২১ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমানো অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয় ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাংক। তারমানে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশীরা ৩০ কোটি ৮১ লাখ সুইস ফ্রাংক সুইজারল্যান্ডে জমিয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় যার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ৮ হাজার ২৭৫ কোটি। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। অতীতে কখনও এত টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে, সুইস ব্যাংকে যায়নি।


সাম্প্রতিক সময়ে সুইস ব্যাংকে কিভাবে বাংলাদেশীদের অবৈধ টাকার পাহাড় জমেছে, তা মাত্র ৪ বছরের হিসেব দেখলেই বোঝা যাবে। ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ এই তিন বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের টাকা জমানোর পরিমাণ কিছুটা কমলেও, গত ১ বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালে টাকা পাচারের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সঞ্চয় ছিল ৫ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে বাংলাদেশিরা সুইস ব্যাংকে রাখে ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশীদের জমানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। তারমানে মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে ৩ হাজার ১৪২ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে। বর্তমানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের যে পরিমাণ অবৈধ অর্থ আছে তা, দেশের কমপক্ষে ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান। তবে এত টাকা কারা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব তথ্য কখনই প্রকাশ করে না। সুইস ব্যাকগুলোর সাথে আমানতকারীদের সম্পর্ক একজন আইনজীবী ও তার মক্কেলের মত। আইনজীবীরা যেমন মক্কেলের তথ্যের গেপানীয়তা বজায় রাখে, সুইস ব্যাংকগুলোও ঠিক তেমনিভাবে সকল আমানতকারীর তথ্য গোপন রাখতে বাধ্য। কয়েক বছর আগ পর্যন্তও সুইসজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাংকের কোন তথ্য প্রকাশ করত না। অনেক দেশে থেকে চাপ আসার পর থেকে, তারা শুধু কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায় যে, কোন দেশের কত টাকা জমা আছে। এর বাইরে আর কিছু জানা যায় না। আর তাই দুর্নীতবাজরা মনে করে, কালো টাকা কোনভাবে সুইস ব্যাংকে নিয়ে যেতে পারলেই তার টাকা নিরাপদ।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পাহাড় !

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।