শ্রমিক দিবসের সূচনা হল কিভাবে

শ্রমিক দিবসের সূচনা হল কিভাবে
কি কেন কিভাবে

শ্রমিক দিবসের সূচনা হল কিভাবে

ভূমিকা

প্রতি বছর ১লা মে মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনটি শ্রমিকদের অধিকার, ত্যাগ এবং সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। শিল্প বিপ্লবের সময়কালে শ্রমঘণ্টা কমিয়ে আনার আন্দোলন থেকে মে দিবসের সূচনা হয়েছিল। এই দাবি আদায়ের জন্য বহু শ্রমিক জীবন বিসর্জন দেন। সেই আত্মত্যাগের ইতিহাসই আজকের মে দিবস।

শিল্প বিপ্লব ও শ্রমিকদের অবস্থা

১৮ এবং ১৯ শতাব্দীতে ইউরোপ ও আমেরিকায় শিল্প বিপ্লবের ফলে শিল্প কারখানা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়। সেই সময়ে শ্রমিকরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতেন। কোন ধরনের বিশ্রাম ছাড়া শ্রমিকদের ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হত। সেই সাথে তাদের মজুরি ছিল জীবনযাপনের জন্য অপ্রতুল। কারখানাগুলোতে নিরাপত্তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না, যার ফলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ছিল সাধারণ ঘটনা। বড়দের সাথে শিশুদেরও কঠিন পরিশ্রমের কাজে নিয়োজিত করা হত। সেসময় শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন বা আইনি সুরক্ষাও ছিল না।

এমন নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে, শ্রমিকরা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে শুরু করেন এবং তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন গড়ে ওঠে। শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল দৈনিক ৮ ঘণ্টার কাজের সময় নির্ধারণ। ১৯শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই দাবি জোরালো হয়। ১৮৬৬ সালে আমেরিকার বাল্টিমোরে প্রথম জাতীয় শ্রম সম্মেলনে দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত শ্রমিকরা সেই অনুযায়ী সুবিধা পাচ্ছিল না। যা পরবর্তীেত শ্রমিক আন্দোলনকে আরো জোরদার করে তোলে।

মে দিবসের ইতিহাস

মে দিবসের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। ১৮৮৬ সালের ১লা মে, আমেরিকার বিভিন্ন শহরে শ্রমিকরা দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ শুরু করেন। এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিকাগো, যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসেন।

১লা মে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কয়েক দিন ধরে চলতে থাকে। ৩রা মে শিকাগোর ম্যাককরমিক হার্ভেস্টার কারখানায় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। এর প্রতিবাদে ৪ঠা মে হেমার্কেট স্কয়ারে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার সময় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি পুলিশের দিকে বোমা নিক্ষেপ করে। এতে একজন পুলিশ নিহত হন এবং পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৭ জন পুলিশ এবং বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন, আহত হন শতাধিক। এই ঘটনা ইতিহাসে ‘হেমার্কেট গণহত্যা’ নামে পরিচিত।

হেমার্কেট ঘটনার পর শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু হয়। আটজন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনা শ্রমিক আন্দোলনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হলেও এটি শ্রমিকদের মধ্যে আরও ঐক্য ও সংহতি তৈরি করে। হেমার্কেটের শহীদরা শ্রমিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

মে দিবসের স্বীকৃতি

হেমার্কেট ঘটনার তিন বছর পর, ১৮৮৯ সালে প্যারিসে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক সংগঠনের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, হেমার্কেট শহীদদের স্মরণে এবং শ্রমিকদের অধিকারের জন্য ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হবে। ১৮৯০ সালের ১লা মে প্রথমবারের মতো ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনটি পালিত হয়।

২০শ শতাব্দীতে মে দিবস বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দেশে শ্রমিকরা এই দিনে সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরে। অনেক দেশে এটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর মে দিবস বাংলাদেশে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো এই দিনে ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

শ্রমিক দিবসের সূচনা হল কিভাবে ?

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।