শয়তানের নিঃশ্বাস

maxresdefault (47)
জীবনযাপন

শয়তানের নিঃশ্বাস

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর মাদকের নাম স্কোপোলামিন। এই মাদকটি উবারষ’ং ইৎবধঃয বা শয়তানের নিঃশ্বাস নামে অধিক পরিচিত। ভয়ংকর এই মাদক যেন শয়তানের মতই মানুষের আতœাকে চুরি করে। মানুষ নিজে নিজে নেশা করার উদ্দেশ্যে স্কোপোলামিন খুব কমই ব্যবহার করে। সাধারণত এই মাদকের সাহায্যে কারো মগজ ধোলাই করে, তার সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়া হয়। সামান্য পরিমাণ স্কোপোলামিন যদি কোন ব্যক্তির নিশ্বাসে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে দিয়ে যা খুশি তাই করানো সম্ভব। এছাড়া এই মাদক ব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের জবান বন্দী আদায় করে। কারণ স্কোপোলামিনের ঘোরে থাকার সময় মানুষ মিথ্যা কথা বলতে পারে না। সেকারণে স্কোপোলামিন ব্যবহার করে তৈরী করা হয় ঞৎঁঃয ঝবৎঁস বা সত্য বলার ঔষধ।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া, ইকুয়েডর এবং ভেনিজুয়েলায় ডেভিলস ব্রিদ বা শয়তানের নিঃশ্বাসের উৎপত্তি। মূলত লাতিন আমেরিকার একধরনের ফুল থেকে এই মাদক তৈরী করা হয়। যার নাম বুরুনডাঙ্গা। ফুলগুলো দেখতে আমাদের দেশের ধুতরা ফুলের মত। এই ফুলও ধুতরা ফুলের পরিবার ভুক্ত। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বুরুনডাঙ্গা ফুলের বীজ থেকে ভয়ংকর মাদক ডেভিলস ব্রিদ প্রস্তুত করা হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে বুরুনডাঙ্গার উপাদানটি হায়োসিসিন বা স্কোপোলামিন নামে পরিচিত। শয়তানের নিঃশ্বাস মাদকটি অবিকল কোকেন পাউডারের মতো দেখতে। তবে এর ক্ষতির মাত্রা কোকেন থেকে অনেকগুণ বেশি। এর প্রতিক্রিয়া এতটাই তীব্র যে, মাত্র ১ গ্রাম স্কোপোলামিনের প্রভাবে ১২ থেকে ১৫ জন মানুষ মারা যেতে পারে। স্কোপোলামিন নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সহজেই শরীরের ভেতরে ঢুকতে পারে। তারচেয়েও ভয়াবহ বিষয় হয় এই মাদক মানুষের শরীরের চামড়া দিয়েও প্রবেশ করানো যায়। কারো দেহে স্কোপোলামিন প্রবেশ করালে ২০ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং তা আট ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে স্কোপোলামিন গ্রহণকারী ব্যক্তি যে অবস্থায় থাকে তাকে বলা হয় ঞরিষরমযঃ ঝষববঢ় বা গোধূলি নিদ্রা। এ সময়ে স্কোপোলামিনের শিকার ব্যক্তিকে দিয়ে সব কিছুই করানো সম্ভব। শয়তানের নিঃশ্বাস মানুষের মন ও শরীরকে এতো গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে যে, ব্যক্তি নিজের চিন্তা শক্তি হারিয়ে অন্যের কথা মতো কাজ করতে থাকে। যখন এই মাদকের কার্যকরিতা শেষ হয়ে যায় তখন ভিকটিম তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছুই মনে করতে পারে না।

শয়তানের নিঃশ্বাস | সবচেয়ে ভয়ংকর মাদক


স্কোপোলামিন ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে মানুষকে শিকারে পরিণত করা হয়। সবচেয়ে প্রচলিত একটি পদ্ধতি হল, কেউ একজন কোনো একটি ঠিকানা লেখা কাগজ আপনার মুখের সামনে ধরে বলবে, “এই ঠিকানাটা কোথায় জানেন?” অথবা দেখতে অত্যন্ত নিরীহ ব্যক্তি একটি প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে “এখানে লেখা ওষুধের নামটা কী বলতে পারেন?” সাধারণত এ রকম পরিস্থিতিতে যে-কেউ স্বতস্ফূর্ত ভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। আর এখানেই ঘটে বিপত্তি। এসব কাগজে ইচ্ছাকৃতভাবে খুব ছোট ছোট অক্ষরে লেখা থাকে। লেখাগুলো ভালোভাবে পড়ার জন্য কাগজটি যখনই আরেকটু চোখের কাছে নিবেন, তখনই কাগজে ছড়িয়ে রাখা স্কোপোলামিন আপনার নাক দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করবে। আর এভাবে মুহুর্তের মধ্যেই শয়তানের নিঃশ্বাস আপনাকে গ্রাস করে নিতে পারে। তারপর থেকে আপনার স্বকীয়তা বলতে কিচ্ছু থাকবে না। অনেক সময় এটিএম বুথের কী-প্যাডেও স্কোপোলামিন পাউডার লাগিয়ে রাখা হয়। নিশ্বাসের সঙ্গে অথবা ত্বকের সাহায্যে স্কোপোলামিন গ্রহণ করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার মাথা ঝিমঝিম করতে থাকবে। এবং আপনি নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলবেন। তখন আপনার নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে অন্যের হাতে চলে যাবে। আপনি কী করছেন তা নিজেও বুঝবেন না। আপনাকে বলা মাত্র আপনি নিজ থেকেই সব কাজ করতে থাকবেন। আপনার কাছে থাকা টাকা পয়সা, গহনা, মোবাইল যা আছে তা চাওয়ার সাথে সাথে অপরাধীদের হাতে দিয়ে দেবেন। এমন বহু উদাহরণ আছে যে, মানুষ স্কোপোলামিনের শিকার হয়ে নিজের বাড়িতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে গিয়ে টাকা পয়সা, সোনা, গহনা, আসবাবপত্র পর্যন্ত সকল কিছু স্বেচ্ছায় দিয়ে দিয়েছে। এরপর জ্ঞান ফেরার পর তারা মনেও করতে পারেনি তাদের সাথে আসলে কি ঘটেছে। এমনকি তারা অপরাধীর চেহারাও ভুলে গিয়েছে। এছাড়া স্কোপোলামিন পাউডারের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে, ভিকটিম মারাও যেতে পারে।


স্কোপোলামিনের প্রভাবে, মুহুর্তের মধ্যে এক জন মানুষের চিন্তাশক্তি কিভাবে অকার্যকর হয়ে যায়? ১৯১০ সালে ড. রবার্ট হোস সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে, স্কোপোলামিন দেহে প্রবেশ করালে ভিন্ন এক মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ স্কোপোলামিন মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশের উপর প্রভাব ফেলে। স্কোপোলামিনের রাসায়নিক উপাদান মানুষের স্পাইনাল কর্ডের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সে প্রবেশ করে। তখন মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশগুলো একই সাথে একাধিক সংকেত বিশ্লেষণ করতে পারে না। সেই সাথে মস্তিষ্কের একসঙ্গে একাধিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়। এই অবস্থায় মানুষ কে যা করতে বলা হয়, তাই করে। কোনো কথা বললে স্মৃতি থেকে শুধু সত্য কথা গুলোই বেরিয়ে আসে। তখন ভেবে চিন্তে মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ মিথ্যা কথা বলার সময় চিন্তা করে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে হয়। এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে, স্কোপোলমিন পাউডারের সাথে আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে তৈরী করা হয় ঞৎঁঃয ঝবৎঁস বা সত্য বলার ঔষধ। ট্রুথ সিরামের প্রভাবে মানুষ মিথ্যা না বলে শুধু সত্য কথা বলে। ডক্টর রবার্ট হোস চেয়েছিলেন ট্রুথ সিরামের সাহায্যে নিরাপরাধ মানুষ যেন পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারে। কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোপন তথ্য আদায় করার জন্য সেনাবাহিনীর ডাক্তাররা শত্রুপক্ষের গোয়েন্দাদের ওপর ব্যাপক হারে ট্রুথ সিরাম প্রয়োগ করতে শুরু করে।
ভিডিওর এই পর্যায়ে আমাদের আজকের স্পনসর সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক। আপনি কি জানেন এখন ঘরে বসেই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে, সহজেই ঔষধ সহ যাবতীয় ঐবধষঃযপধৎব ঢ়ৎড়ফঁপঃ অর্ডার করতে পারবেন আরোগ্য এপে? আরোগ্য একটি হেলথকেয়ার প্লাটফর্ম, যেখানে প্রতিটি ঔষধের বিস্তারিত বিবরণ, জেনেরিক অনুযায়ী বিকল্প কোম্পানীর ঔষধের বিবরণ ও দাম সম্বলিত সঠিক তথ্য জানতে পারবেন। এছাড়াও প্রতি অর্ডারের সাথে থাকছে আকর্ষনীয় ডিস্কাউন্ট, ক্যাশব্যাক এবং সামগ্র দেশজুড়ে ফ্রী হোম ডেলিভারি। আমরা জানি, মাঝে মাঝে কিছু মেডিসিন অনেক ফার্মেসীতে খুঁজেও পাওয়া যায়না, সেক্ষেত্রে বেশ ভোগান্তিরও শিকার হতে হয়। এই সমস্যাটির সমাধান আরোগ্য এপেই পেয়ে যাবেন, কারন যাবতীয় সকল ঔষধ রয়েছে আরোগ্যতে। এপটি ইন্সটলের সাথে সাথে ৪০ টাকা বোনাস পেতে চাইলে ডেস্ক্রিপশন বক্সের লিংক থেকে ইন্সটল করুন অথবা এপ স্টোরে গিয়ে ধৎড়মমধ লিখে সার্চ করুন। সেক্ষত্রে বোনাস পেতে কওকঊঘঙ কোডটি ব্যাবহার করুন এপের রেফার বক্সে।


আবার মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক; ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে স্নায়ু যুদ্ধের সময় আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ব্যাপকহারে ট্রুথ সিরাম ব্যবহার করে। বর্তমানে অনেক দেশে এই ড্রাগ আইন সঙ্গতভাবে প্রয়োগ করা হয়। ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাই হামলার আসামী আজমল কাসাব কে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ট্রুথ সিরাম প্রয়োগ করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ট্রুথ সিরাম হিসেবে স্কোপোলামিন ব্যবহার করলে, মানুষের মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কেউ কেউ চিরদিনের মত পাগল হয়ে যায়। এছাড়া অনেকে আবার কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলে। একজন অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার আইনসঙ্গত নয়। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পরে। সেকারণে ট্রুথ সিরামের প্রভাবে দেওয়া জবানবন্দী অনেকে দেশের আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৮৫ সালের দিকে চিকিৎসার কাজে, বিশেষ করে অ্যানেসথেসিয়া বা অপারেশনের আগে অজ্ঞান করার জন্য স্কোপোলামিনের ব্যবহার শুরু হয়। তখন মায়েদের প্রসব বেদনা কমানোর জন্যও স্কোপোলামিন ব্যবহার করা হতো। তবে এটি সরাসরি প্রয়োগ করা হতো না। মরফিনের সঙ্গে মিশিয়ে অতি সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করা হতো।
ডেভিলস ব্রিদ বা শয়তানের নিঃশ্বাসের দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কলম্বিয়া। একটা সময় এই স্কোপোলমিন পাউডার ব্যবহার করে প্রচুর মানুষকে অপহরণ করা হত। ২০০০ সালের দিকে পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ অপহরণই হত কলম্বিয়ায়। যার অধিকাংশই হয়েছে স্কোপোলমিন প্রয়োগ করে। এছাড়া কলম্বিয়ায় এই মাদক ব্যবহার করে, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বা ধর্ষণের মত ঘৃন্য সব অপরাধ ছিল নিত্য নৈমেত্তিক ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও স্কোপোলামিন ব্যবহার করে ছিনতাইয়ের খবর শোনা গেছে। রাস্তা ঘাটে সবজায়গায়, রিক্সা, সিএনজি বা বাসে ওঠার সময় সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংক এবং জুয়েলারির দোকান থেকে বের হবার পর অতি সাবধান হতে হবে। রাস্তায় অপরিচিত কারো দেওয়া কাগজ এবং অপরিচিত কারো মোবাইল ফোন ধরবেন না। মাস্ক পরা থাকলে অপরাধীরা আপনাকে সহজে টার্গেট করবে না এবং টার্গেট করলেও মাস্কের কারণে বাড়তি সুরক্ষা পাবেন।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।