লাফিং গ্যাস দিয়ে নেশা
লাফিং গ্যাস দিয়ে নেশা
ভূমিকা
একসময় দাঁতের চিকিৎসায় ব্যথানাশক হিসেবে এবং বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যে ব্যবহৃত হত নাইট্রাস অক্সাইড, যা ‘লাফিং গ্যাস’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এই ল্যাফিং গ্যাসই যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের মধ্যে এক মারাত্মক আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গ্যাস ব্যবহারের পর ব্যাপক হাসির উচ্ছ্বাস এবং ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনার কারণে, তরুণরা লাফিং গ্যাসকে বিনোদনের জন্য ব্যহার করতে শুরু করেছে। রাসায়নিক এই পদার্থের অপব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি অনেকেই মৃত্যুও বরন করেছে।
‘লাফিং গ্যাস’ কী এবং এর প্রচলিত ব্যবহার:
নাইট্রাস অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি নাকে প্রবেশ করলে এক ধরনের উচ্ছ্বাস অনুভূতি তৈরি করে। যার ফলে মানুষ এক নাগাড়ে হাসতে থাকে। অনেক আগে থেকেই এটি দাঁতের চিকিৎসায় ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহৃত হত। এছাড়া কেক বা অন্যান্য খাবারে ব্যবহৃত ‘ক্যানড হুইপড ক্রিম’-এর মতো পণ্যে ‘হুইপিং এজেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করা হত। সম্প্রতি, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির চিকিৎসকরা বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যা প্রবণতা কমানোর চিকিৎসায় লাফিং গ্যাস ব্যবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করছেন। যেখানে দেখা গেছে যে লাফিং গ্যাস অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্টের মতো দ্রুত মেজাজের উন্নতি ঘটাতে পারে।
কীভাবে এটি মাদকে পরিণত হলো?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রান্নার কাজে ব্যবহৃত পণ্য হিসেবে নাইট্রাস অক্সাইড বিক্রি করা আইনসম্মত। কিছু বিক্রেতা এই আইনি ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে রান্নার সামগ্রী বিক্রির আড়ালে লাফিং গ্যাস মাদক হিসেবে বিক্রি করতে থাকে। তবে নাইট্রাস অক্সাইডের বিনোদনমূলক ব্যবহার নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারীর সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের মধ্যে এর অপব্যবহার আরো ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
অতীতে ছোট ছোট বোতলে লাফিং গ্যাস বিক্রি হলেও, মহামারির সময় থেকে প্রস্তুতকারকরা অনলাইনে দুই কেজি পর্যন্ত ওজনের বড় ক্যান বিক্রি করা শুরু করে। সেই সাথে ইলেকট্রনিক ‘ভেপ’ ও অন্যান্য ধূমপানের সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতেও এটি সহজলভ্য হয়ে ওঠে। ক্যানগুলোর ওপর কম্পিউটার গেমস বা টেলিভিশন সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্রদের ছবি এবং আকর্ষণীয় প্যাকেজিং করতে শুরু করে। এছাড়া লাফিং গ্যাস কে ‘গ্যালাক্সি গ্যাস’ বা ‘মায়ামি ম্যাজিক’ হিসেবে নামকরণ করে এই পণ্যটিকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলা হয়।
সাধারণত লাফিং গ্যাস এর ছোট ছোট সিলিন্ডার ফুটো করে সেগুলোকে বেলুনে ভরে, তরুণরা সেই বেলুন থেকে গ্যাস শোষন করে নেশা করে। এভাবে লাফিং গ্যাস ব্যবহারকারীদের ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হওয়া এবং তরুণদের নেশাগ্রস্ত হওয়ার ভিডিও ট্রেন্ডে পরিণত হওয়ার পর থেকে এর অপব্যবহার ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে গেছে। র্যাপ মিউজিক ভিডিও এবং টুইচ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমেও লাফিং গ্যাস এর ব্যাপক অপব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে।
ক্ষতিকর প্রভাব এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি
‘লাফিং গ্যাস’-এর অতিরিক্ত বা নিয়মিত ব্যবহারের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রাস অক্সাইড টানা হলে ‘হাইপোক্সিয়া’ হতে পারে, যেখানে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব দেখা যেতে পারে, যা স্নায়ুর ক্ষতি করে এবং মেরুদণ্ডকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলস্বরূপ প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতও হতে পারে। ব্যবহারকারীরা অনুভূতি হারানো, চলাচলে অক্ষমতা, দুর্বলতা, কাঁপুনি এবং শরীরে ঝিঝি ধরার মত অনুভব করতে পারে। কেউ কেউ হাঁটতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং হুইলচেয়ারের প্রয়োজন হয়।