রাইড শেয়ারিং ভোগান্তি

maxresdefault (16)
জীবনযাপন

রাইড শেয়ারিং ভোগান্তি

ঢাকা শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা মোটেও যাত্রীবান্ধব নয়। পরিবহণ খাতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ২০১৬ সালে পাঠাও ও উবার রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে সেবা দেওয়া শুর করে। এরপর একে একে আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রাইড শেয়ারিং সেবা নিয়ে হাজির হলেও, সেগুলো জনপ্রিয় হতে পারেনি। রাইড শেয়ারিং চালু হবার পর দু এক বছর ভালো সেবা পাওয়া গেলেও, বর্তমানে ঢাকা শহরের পরিবহণ খাতে যাত্রীদের সবচেয়ে বড় ভোগান্তি উবার পাঠাও এর মত অ্যাপগুলো। শীর্ষ এই দুটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই।

ভোগান্তির আরেক নাম রাইড শেয়ারিং !

ঢাকা শহরের দীর্ঘ জ্যাম এবং প্রয়োজনীয় গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য গণপরিবহনের অভাব দীর্ঘ দিনের। এসব সমস্যার সমাধান হিসেবেই ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পাঠাও তাদের রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করে। একই বছরের শেষের দিকে উবারও বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপের যাত্রা শুরু করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এসব রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ১৪টি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নিবন্ধিত রয়েছে। পাঠাও উবারের পাশাপাশি, ওভাই, আমার বাইক, আমার রাইড, ইজিয়ার, লেটস গো, মুভ, ডাকো সহ অনেকগুলো অ্যাপ এখন এই সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় উবার বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, কারণ এখানে মোটর সাইকেলের পাশাপাশি সহজেই পর্যাপ্ত গাড়ি পাওয়া যেত। সাম্প্রতিক সময়ে তারা সিএনজিও অন্তর্ভুক্ত করেছে, কিন্তু তা খুব একটা সহজলভ্য নয়। গন্তব্যে পৌছানোর জন্য সাধারণ মানুষ এসব অ্যাপকে সাদরে গ্রহণ করলেও, প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রী এবং চালক কোন পক্ষেরই বিশ্বাসের জায়গাটা ধরে রাখতে পারেনি। সেজন্য যাত্রী এবং চালকদের অধিকাংশই কন্ট্রাক্টে বা খ্যাপে যেতে পছন্দ করে। চালকদের অভিযোগ অ্যাপ পরিচালনা কম্পানিগুলো অতিরিক্ত কমিশন আদায় করে। অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং করলে তাদের তেমন একটা লাভ হয়না। সেজন্য যাত্রীরা কোন গন্তব্যে যাওয়ার আগে, দীর্ঘসময় ধরে সার্চ করেও এসব অ্যাপে কোন রাইড পায় না। শুধু অ্যাপই নয়, রাইডারদেও দিক থেকেও নানা রকমের অনিয়ম আর অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর নিয়ে হাজারটা যাত্রী হাজার রকমের সমস্যার সম্মুখীন হন। যাত্রীদের তরফ থেকে আসা অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ১. অধিকাংশ সময়ই রাইডাররা গন্তব্য শুনে অনুরোধ ক্যানসেল করে দেয়। উবার বা পাঠাওয়ে প্রথম কলেই কোন রাইডার পাওয়া এক রকম বিরল ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ২. চালকদের পছন্দনীয় গন্তব্য হলেই কেবল যাত্রী পরিবহন করা হয়। এছাড়া ৩. বিকাশে বা কার্ডে টাকা দিতে চাইলেও রাইডার যেতে চায় না। সেক্ষেত্রে ৪. যাত্রীকে অনুরোধ ক্যানসেল করতে বাধ্য করা, কিন্তু সেই ক্যানসেলের জন্য যাত্রীকেই জরিমানা গুনতে হয়। ৫. অনেকে আবার সহজ পথে না গিয়ে, ইচ্ছে করে জ্যামওয়ালা রাস্তা দিয়ে ঘুরে যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। মনে করুন, যাত্রা শুরু আগে আপনাকে দেখানো হয়েছে, ভাড়া আসবে ৫০০ টাকা। কিন্তু গন্তব্যে পৌছে দেখবেন ভাড়া ৮০০ টাকা হয়ে গেছে। অনেক সময় জ্যামের দোহায় দিয়ে, প্রাথমিক প্রদর্শিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের মত ঘটনাও ঘটেছে। অনেক চালক ৬. অ্যাপে যেতে চায় না (অপারগতা প্রকাশ করে)। এবং অ্যাপে প্রদর্শিত ভাড়ার চেয়েও একশ দুইশ টাকা বেশি দাবি করে। এছাড়াও ৭. নারী সহ সাদারণ যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া যায়।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের বেহাল দশায় যাত্রীরা নাজেহাল হলেও, পাঠাও উবারের মত অ্যাপ পরিচালনা কম্পানিগুলো তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে, সরকারী বেশ কিছু নতিমালাও রয়েছে। কিন্তু অ্যাপ পরিচালনা কম্পানিগুলো এসব নীতিমালার অনেক গুরুত্বপূর্ণ শর্তই এখনও পূরণ করেনি। সরকারি নীতিমালায় উল্লেখ আছে: ১. প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের মালিককে বিআরটিএতে তালিকাভুক্ত হতে হবে। ২. সার্ভিস এলাকায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকতে হবে। ৩. যাত্রীর অভিযোগ জানানোর সুযোগ রাখতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো অফিস তো দূরের কথা সবচেয়ে বড় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের, যাত্রীদের সরাসরি অভিযোগ জানানোর কোনো সুযোগই নেই। ৪. অ্যাপে এসওএস সুবিধা রাখতে হবে, যাতে এক স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে চালক ও যাত্রীর লোকেশন ৯৯৯ নম্বরে চলে যায়। ৫. অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির সুযোগ থাকতে হবে। ৬. রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানের কল সেন্টার ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে। পাঠাও এর কল সেন্টার থাকলেও, উবারের যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর মত কোনো কল সেন্টারই নেই। ফলে যাত্রীরা যেমন গাড়ি পেতেও চালকের মর্জির ওপর নির্ভর করেন আবার গাড়ি বা বাইকে উঠেও অনেকে দুর্ব্যবহারের শিকার হন।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাও পিক আওয়ারে ১০ শতাংশ এবং অফ-পিক আওয়ারে ১৫ শতাংশ কমিশন রাখে। অন্যদিকে উবার চালকদের কাছ থেকে ২৫ শতাংশ হারে কমিশন কাটে। উবার যাত্রীদের কাছ থেকেও বেশি ভাড়া আদায় করে। গাড়ির জ্বালানী, গাড়ির সার্ভিসিং খরচ, চালকের দৈনিক খাবার খরচ এবং পারিশ্রমিক হিসেব করলে, কম্পানিগুলোর কমিশন কাটার পরে চালকেরা খুব একটা লাভ করতে পারে না। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকেরা আয়ের একটি বড় অংশ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানকে দিতে রাজি নন। ফলে দিন দিন অ্যাপের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার প্রবণতা অনেক কমেছে। তাই কোথাও দ্রুত যাওয়ার প্রয়োজন হলে, রাইড খুঁজতে খুঁজতেই আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা সময় লেগে যায়। কিন্তু শেষমেষ রাইডও পাওয়া যায় না, আবার মাঝখান দিয়ে যাত্রীর মূল্যবান সময়ও নষ্ট হয়। প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে রাইডার পাওয়া না গেলেও, রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অসংখ্য রাইডারদের জটলা পাকিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। রাইডারদের অনেকে অত্যধিক ভাড়া ছাড়া যায় না। এরা সারাদিও এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকে, কিন্তু নায্য ভাড়ায় যেতে তাদের আপত্তি। তারা যতি অধিক ভাড়া না নিয়ে, ন্যায্য ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণ করত, তাহলেও এর চেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারত। ঠিক একই রকমের আচরণ ঢাকা শহরের অধিকাংশ সিএনজি চালকদের মধ্যেও দেখা যায়। তাছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাইড শেয়ারিং বাইক চালকেরা দাড়িয়ে থাকার কারণে, বিভিন্ন জায়গায় জ্যামও সৃষ্টি হয়।
বাইক চালকরা অ্যাপ ব্যবহার না করায় শুধু যে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়। এতে বাইক চালকদের অসচেতনতা বাড়ছে। গ্রাহক সেবা নিয়ে কোনও জবাবদিহি নেই বলে, যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দরদাম করার সময় কটূক্তি করা, যাচ্ছেতাই ভাবে গাড়ি চালানো, ত্রুটিযুক্ত বাইকে রাইড দেওয়াসহ নানা বিষয়ে ঝুঁকি বাড়ছে। যাত্রী বা চালক কেউ কাউকে না চেনায় প্রায় প্রায় বিভিন্ন অপরাধও ঘটতে দেখা যায়। যাত্রিদের কাঙ্খিত সেবা দিতে না পেরে, বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের বর্তমান অবস্থা বেশ শোচনীয়। তারপরও অনেকে বাধ্য হয়েই এসব অ্যাপ ব্যবহার করছেন। রাইড শেয়ারিং এর নিরাপত্তা বাড়াতে এবং গ্রাহকদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদান করার লক্ষ্যে পাঠাও এবং উবার যৌথ উদ্যোগে কাজ করার আশ্বাস দিলেও, এখনও পর্যন্ত কোন ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়লেও, রাইড শেয়ারিং কম্পানিগুলো তাদের ভাড়া বাড়ায়নি, চালকেরা এমন অভিযোগও করছেন। এর ফলে, কম্পানিগুলোর সরাসরি কোন লোকসান না হলেও, তেলের মূল্যবৃদ্ধির অতিরিক্ত বোঝা চালকদের টানতে হচ্ছে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।