যার রানী হবার কথাই ছিল না, সে রাজত্ব করল ৭০ বছর
যার রানী হবার কথাই ছিল না, সে রাজত্ব করল ৭০ বছর
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে সিংহাসন আরোহন করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৭০ বছর রাজত্ব করে, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্রিটেনের সিংহাসনে থাকার রেকর্ড গড়েছেন। অতীতে রাজ পরিবারের নিয়ম ছিল, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বড় ছেলে সিংহাসনে বসবে। কিন্তু পরবর্তীতে নতুন নিয়ম অনুযায়ী ছেলে মেয়ে কোন বিভেদ রাখা হয়নি। রাজ পরিবারের যে বড় সন্তান সেই সিংহাসনের দাবিদার হবে। এই নিয়মের কারনেই বাবা মায়ের কোন ছেলে সন্তান না থাকায় অতীতে রানী ভিক্টোরিয়া এবং সাবেক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাজ ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন।
সদ্য প্রয়াত রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তখন, কেউ ভাবেনি তিনি কোন দিন ব্রিটেনের সিংহাসন আরোহণ করবেন। কারণ তার বাবা রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ ছিলেন তার দাদা পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় পুত্র সন্তান। সে হিসেবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবার কোনদিন রাজা হবার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। সেক্ষেত্রে রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ এর বড় ভাই ৮ম এডওয়ার্ড ছিলেন সিংহাসনের প্রকৃত দাবিদার। প্রথা অনুযায়ী ৮ম এডওয়ার্ড রাজাও হয়েছিলেন। কিন্তু তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা, স্বেচ্ছায় ব্রিটিশ সিংহাসন ত্যাগ করেছেন। তার এই ত্যাগের কারণ হল, তিনি ওয়ালিস সিম্পসন নামের দুইবার তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী রাজা হলেন চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান, তাই বিট্রেনের রাজা তালাকপ্রাপ্তা কোন নারীকে বিয়ে করতে পারেন না। কিন্তু রাজা অষ্টম এওয়ার্ড ওয়ালিস সিম্পসন কে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তাই শেষ পর্যন্ত রাজা ৮ম এডওয়ার্ড তার প্রেমের জন্য সিংহাসনই ছেড়ে দেন। তখন অনাকাঙ্খিতভাবে রাজ্যভার চলে আসে তার ছোট ভাই রাজা ষষ্ঠ জর্জের উপর। তিনি ছোট বেলা থেকে বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে বড় হয়েছিলেন। তার কখনও রাজা হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করার কথাই ছিল না, তাই তাকে সেভাবে প্রস্তুতও করা হয়নি। কারণ তার বড় ভাই রাজা হবার পর যদি মারাও যান, সেক্ষেত্রে তার বড় ভাইয়ের ছেলে মেয়েরা পরবর্তীতে সিংহাসনের উত্তরাধিকার হবার কথা ছিল। তাই ৬ষ্ঠ জর্জ যে কোন ভাবে রাজা হতে পারে, তা কেউ কখনও ভাবেনি। কিন্ত রাজা অষ্টম এওয়ার্ড স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে বিট্রিশ রাজতন্ত্রের মোড়ই ঘুড়িয়ে দেন। এর ফলে রাজা ষষ্ঠ জর্জের বংশধরেরা বর্তমানে ব্রিটেন শাসন করছে। ৬ষ্ঠ জর্জ অবশ্য মাত্র ১৫ বছর রাজত্ব করতে পেরেছিলেন। এরপর রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ মারা গেলে তার বড় মেয়ে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রিটিশ রাজত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই ছিলেন ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় শাসন করা ব্যক্তি। যিনি ৭০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তবে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ সময় রাজত্ব করা ব্যক্তি নন। ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই ৭২ বছর রাজত্ব করে গেছেন।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে প্রিন্স চার্লস, রাজা তৃতীয় চার্লস নাম ধারন করে ব্রিটেনের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী ব্রিটেনের সিংহাসন এক মুহুর্তের জন্যও ফাঁকা থাকতে পারে না। তাই রানীর মৃতুর সাথে সাথে তৃতীয় চার্লসের উপর রাজ্যভার চলে আসে। তার মা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ব্রিটেনের ক্ষমতায় থাকার কারণে, রাজত্ব গ্রহনের জন্য তাকে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। রাজা তৃতীয় চার্লসের বয়স যখন মাত্র ৩ বছর, তখন তার মা রানী হয়েছিলেন। বর্তমানে তার বয়স ৭৩ বছর। তিনিই সবচেয়ে বেশি বয়সে সিংহাসনে আরোহনকারী রাজা। এর আগে সর্বোচ্চ বয়সে ব্রিটিশ রাজা হবার রেকর্ড ছিল রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের। তার মা রানী ভিক্টোরিয়া মারা যাবার পর তিনি ৫৯ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেছিলেন। একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের অর্ধেক লোক চায়, বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস যেন রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে, তার বড় ছেলে প্রিন্স ইউলিয়ামের কাছে সিংহাসন হস্তান্তর করে।