ভারত কি চট্টগ্রাম দখল করবে

maxresdefault (33)
কি কেন কিভাবে

ভারত কি চট্টগ্রাম দখল করবে

ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো চারদিক থেকে ভূমিবেষ্টিত হবার কারণে, এই অঞ্চলে পণ্য পরিবহণ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। দীর্ঘদিন থেকেই একটি কন্সপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে যে, ভারত যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে নেয়, তাহলে ভারতের সেভেন সিস্টারর্স সরাসরি বঙ্গপোসাগরের সাথে সংযুক্ত হতে পারবে। যার ফলে এই অঞ্চলের মূল সমস্যা চিরতরে সমাধান হয়ে যাবে।

সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, সাম্প্রতিক সময়ে ফেনীর নজিরবিহীন মানবসৃষ্ট বন্যা এবং পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসী বনাম বাঙালি সহিংসতার পেছনে, ভারতের জড়িত থাকার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

[শুরুতেই বলে রাখা ভাল, আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু একাধিক কন্সপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব থেকে নেওয়া হয়েছে। কোন শক্তিশালী বা অশুভ গোষ্ঠীর গোপন ষড়যন্ত্রকে কন্সপিরেসি থিওরি বলা হয়। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিষয়বস্তু কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়। তবে এর সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।]

ভারত কি চট্টগ্রাম দখল করতে পারে ?

চিকেনস নেক

বাংলাদেশের কারণে ভারতের ৭টি রাজ্য দেশটির মানচিত্র থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত এই রাজ্যগুলোতে স্থলপথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো শিলিগুড়ি করিডোর। শিলিগুড়ি করিডোর এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশটি চিকেনস নেক হিসেবে পরিচিত। চিকেনস নেক যদি অবরোধ করা যায়, তাহলেই ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কারণ এই বিস্তৃত অঞ্চলের প্রয়োজনীয় সকল রসদ পরিবহণ করা হয় সংকীর্ণ এই একটি এলাকা দিয়ে।

শুধু ভৌগলিকভাবে সংকীর্ণ হবার কারণেই চিকেন নেক স্পর্শকাতর নয়, বরং এই এলাকার খুব কাছেই বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সীমান্ত রয়েছে। এই অঞ্চলে চীনের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য ভারত ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী সামরিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। স্পর্শকাতর এই এলাকায় ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি থাকার কারণে, ভারত তাদের চিকেন নেকে বাংলাদেশের আগ্রাসন নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। বরং ভারতের চোখ রয়েছে, বাংলাদেশের চিকেন নেকের দিকে।

বাংলাদেশেরও ভারতের চিকেনস নেক এর মত ভৌগোলিকভাবে সংকীর্ণ একটি এলাকা রয়েছে। বাংলাদেশের কৌশলগত এই চিকেন নেকটি হল ফেনী। শিলিগুড়ি করিডোরে ভারতের চিকেন নেক এর সবচেয়ে সরু অংশের দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। অন্যদিকে ফেনিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সরু অংশের দৈর্ঘ্য মাত্র ২৫ কিলোমিটার। তারমানে ফেনী জেলার এই ২৫ কিলোমিটার অংশ অবরোধ করতে পারলেই, সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রাম কে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব।

ভারত মূলত দুইভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চল দখল করতে পারে। এক হলো সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড দখল করা; এবং দ্বিতীয় উপায় হলো প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা করা; তারপরে পাতানো গণভোটের মাধ্যমে এই অঞ্চলকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অথবা একটি রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।

সামরিক পদ্ধতি

বাংলাদেশের ফেনী জেলার পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সর্ব দক্ষিণের এলাকাটির নাম হরবাতালি। এই হরবাতালি থেকে বঙ্গোপসাগরের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। ভারতীয় সেনাবাহিনী যদি এই ২৫ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়, তাহলে সেভেন সিস্টার্সের দুটি রাজ্য ত্রিপুরা এবং মিজোরাম সরাসরি বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত হতে পারবে। এরফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সমূহে নিয়ন্ত্র বজায় রাখার জন্য ভারতের চিকেন নেক এর উপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে। তখন ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে সরাসরি সমুদ্রপথে এই অঞ্চলে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন হবে।

সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে চট্টগ্রাম দখল করাটা হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। যা আন্তর্জাতিক সকল আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া এবং ২০২২ সালে ইউক্রেন দখল করার পর যে ধরনের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছিল, ভারতও চট্টগ্রাম দখল করলে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে শিলিগুড়ি করিডোর এর চিকেন নেক দখল করতে না পারলেও, এই অঞ্চলে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা তৈরি করার সক্ষমতা রাখে। শুধু তাই নয় ভারত এবং বাংলাদেশের দীর্ঘ ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সরাসরি স্থল সীমান্ত রয়েছে। এই বিস্তৃত সীমান্ত অঞ্চল যে ধরনের আক্রমণের শিকার হবে, তা প্রতিহত করতে গিয়ে, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নাস্তানাবুদ হতে হবে। একটি বৃহৎ দেশ হিসেবে কোন নির্দিষ্ট ফ্রন্টের যুদ্ধক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও, এত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সামরিক এবং বেসামরিক অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা শুধু ভারতের কেন পৃথিবীর কোন দেশেরই নেই। তাছাড়া এত বড় মাপের সামরিক আগ্রাসন চালানো এবং নিরাপত্তা ঝঁুকি প্রতিহত করতে ভারতের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এমনিতেই ভারতের অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। সামরিক আগ্রাসন চালানোর ফলে, যে ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরী হবে, তা ভারতের জনগণও ভালোভাবে দেখবে না। তার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞ সহ সবকিছু মিলিয়ে ভারতের অর্থনীতি ধুলোয় মিশে যেতে পারে। যতটুকু লাভের জন্য তারা চট্টগ্রাম দখল করবে, সমগ্র ভারত জুড়ে তার চেয়ে আরো বেশি ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে।

সিকিম মডেল

বাংলাদেশের ভূখন্ড দখল করার জন্য সামরিক উপায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, সেকারণে ভারত ভিন্ন কূটকৈৗশলের আশ্রয় নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেওয়ার মাধ্যমে, এই এলাকা দখলের জন্য সিকিম মডেল কে আদর্শ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর সহায়তায়, সিকিমের জনগনের মধ্যে রাজতন্ত্র বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে, একটি প্রহসনমূলক গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্র কে ভারতের ২২তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম দখলের ক্ষেত্রেও তারা প্রথমে পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্রোহীদের অস্ত্র সহ সকল ধরনের সহায়তা দিয়ে, বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন হতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন হওয়াও এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য সহজ নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি যে, ত্রিপুরা থেকে জলাধারের পানি ছেড়ে দিয়ে, এই অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে, পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ সারা দেশ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। একইসাথে যদি আবারো কোন মানবসৃষ্ট বন্যা তৈরী করা হয়, এবং পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের সেই সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকার সুযোগে, উপজাতী বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলো তাদের কার্যসিদ্ধির মোক্ষম পরিবেশ পাবে। সাম্প্রতিক সময়ের নজিরবিহীন বন্যা এবং পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি, ভারতীয় কোন ষড়যন্ত্রের মহড়া হিসেবেও সন্দেহ করার অবকাশ রয়েছে।

অভিযোগ আছে, ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সাক্ষর করেছিল, সরাসরি ভারতের প্রেসক্রিপশনে। সেই চুক্তির শর্তগুলো ভারত এমনভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছিল যে, সরকার চাইলেও সেই চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারবে না; এমনকি বাস্তবায়ন করলেও এই অঞ্চলে শান্তি আসবে না। যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারতকেই সুবিধা দিবে।

পার্বত্য অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী দলগুলো মধ্যে আগে থেকেই তীব্র অন্তঃকোন্দল রয়েছে। তাই তারা বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন হলেও, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। তখন ভারত ত্রাতার ভূমিকায় আর্বিভূত হওয়ার নাটক করে বলতে পারে, চট্টগ্রাম যেহেতু ক্ষুদ্র একটি অঞ্চল, তাই রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হওয়ার জন্য তাদের পূর্ণ সক্ষমতা নেই। সেক্ষেত্রে তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক দিকটা ভারত দেখভাল করবে। এভাবে কিছুদিন চলার পর এই অঞ্চলে একটি গণভোট অায়োজন করা হতে পারে। যার মূল প্রসঙ্গ থাকবে, এই অঞ্চলের বাসিন্দারা ভারতে সাথে যুক্ত হতে চায় কিনা? সিকিমের মত পাহাড়ি উপজাতি নেতাদের হাত করে, গণভোটের ফলাফল কারসাজি করে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হবে যে, এই অঞ্চলের মানুষ ভারতের সাথে যুক্ত হতে চায়।

এই দ্বিতীয় পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম অঞ্চল দখল করলে, বিপুল সামরিক শক্তিও খরচ করতে হবে না; সেই সাথে ভারতকে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞারও সম্মুখীন হতে হবে না। কারণ তারা তখন বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করবে, বাংলাদেশী স্যাটেলারা এই অঞ্চলে আদীবাসীদের জমি ছিনিয়ে নিচ্ছে। এবং বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী দিয়ে এই অঞ্চলে সেনাশাসন পরিচালনা করছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর কোন চাপও থাকল না। সেই সাথে দখল করেও ভারত সবার সামনে মহান হয়ে উঠবে।

দখলের পরিণতি

ভারত যে পদ্ধতিতেই চট্টগ্রাম দখল করুক না কেন, পরবর্তীতে এর জন্য ভারতকে অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে। ভারত যদি বাংলাদেশে এ ধরনের দখলদারি চালায়, সেক্ষেত্রে চিন মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিয়ে ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি করে দিতে পারে।  বলা হয়ে থাকে ভারত বর্তমানে আড়াই দিকে যুদ্ধে জড়িয়ে আছে। তারমানে একটি যুদ্ধক্ষেত্র হল পাকিস্তান সীমান্ত, আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্র চীন সীমান্ত এবং বাকি অর্ধেক যুদ্ধক্ষেত্র হল ভারতের বিদ্রোহীদের দমন করা। এই তিনটি ক্ষেত্র মোকাবেলা করতেই ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো নতুন আরেকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ চালু হলে ভারতের নিজেরই টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।

মিয়ানমারের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকায় চীনের প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভারত যদি চট্টগ্রাম দখল করতে পারে, তাহলে এই অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনী চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে। তবে, ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে এমনিতেই জনবলের সংকট রয়েছে। ভারতের বর্তমান জলসীমা সুরক্ষিত রাখাই দেশটির নৌবাহিনীর জন্য বেশ মুশকিলের কাজ। তারপর চট্টগ্রাম দখল করলে এই অঞ্চলের সমুদ্রসীমা পাহারা দেওয়া আরো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ভারতের মনোভাব

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এই সুসম্পর্কে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোন লাভ হয়নি। দ্বিপাক্ষিক আলোচন দুই দেশের দেওয়া নেওয়ার যে বিষয় থাকে সেখানে ভারত তাদের প্রত্যাশার সবই পেয়ে গেছে। বাংলাদেশের কাছে ভারতের চাহিদার প্রধান বিষয়গুলো ছিল, একাধিক ট্রানজিট সুবিধা আদায়। যার মাধ্যমে তারা ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে সহজে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণ করতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে রেল ট্রানজিট, নৌ ট্রানজিট, সড়ক ট্রানজিট, বাস ট্রানজিট এবং বিদ্যুৎ ট্রানজিট সহ সকল ধরনের ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে, ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তুলনায় কম খরচে, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরগুলো ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে।

বাংলাদেশে যদি আওয়ামীলীগের মত ভারতের কোন পুতুল সরকার থাকে, তাহলে সামরিক শক্তি ব্যয় করে, বর্হিঃবিশ্বে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে, চট্টগ্রাম দখল করার কোন প্রশ্নই আসে না। ভবিষ্যতেও যদি, বিএনপি, জামাত বা অন্যকোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে, বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার এবং ট্রানজিট সুবিধার বিষয়ে ভারতের সাথে আপোষ করে; তাহলেও চট্টগ্রাম দখল করার কোন প্রয়োজন পড়বে না।

তবে, ভবিষ্যতে যদি ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের আরো অবনতি হয়; এবং ভারতে হিন্দুত্ববাদী কট্টর ডানপন্থী সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাহলে শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্যই আরো বড় হুমকি অপেক্ষা করছে। কারণ ভারতের হিন্দু মৌলবাদী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন থেকে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করে, অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ২০২৩ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন। সেখানে এমন একটি মানচিত্রের মূরাল স্থাপন করা হয়, যে মানচিত্রে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং মিয়ানমারের কিছু এলাকাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। ভারতের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি ম্যুরালটিকে ‘অখণ্ড ভারত’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে প্রতিবেশী দেশগুলো এর ব্যাখা চাইলে, ভারত বলেছে এর মাধ্যমে তারা সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্যের ব্যাপ্তি মানচিত্রে ফুঁিটয়ে তুলেছে।

ভারত চট্টগ্রাম দখল করবে, বিষয়টি শুনতে খুব অস্বাভাবিক মনে হলেও, বিশ্বরাজনৈতিক পরিমন্ডলে একটি দেশ আরেকটি দেশ বা তার অংশ বিশেষ দখল করা মোটেও অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে খোদ ভারতেরই লাদাখ এবং অরুনাচল প্রদেশের বিস্তৃত অঞ্চল ধীরে ধীরে দখল করে আসছে চীন। ভারতের মত এক পারমানবিক শক্তিধর দেশের ভূমি দখল করলেও, এর জন্য চীনকে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে না। তাছাড়া ইউক্রেন দখল করে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেও, রাশিয়াও এখনও ভালোভাবেই টিকে আছে। তাই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে এসব সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। এবং বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে সম্ভাব্য কুটকৌশলগুলো চিহ্নিত করে, বাংলাদেশের ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষা করার ব্যাপারে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।