ব্রিকসে বাংলাদেশের লাভ কী

maxresdefault (61)
কি কেন কিভাবে

ব্রিকসে বাংলাদেশের লাভ কী

বৈশ্বিক জিডিপিতে ব্রিকস জোটের দেশগুলোর অবদান অনেক বেশি। ধারণা করা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে সমগ্র বিশ্বের মোট জিডিপির অর্ধেকের বেশি আসবে ব্রিকস জোট থেকে। সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো এই জোটে যোগ দিলে বৈশ্বিক জিডিপি ও বাণিজ্যে ব্রিকসের অবদান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিকসে যোগ দিলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রিকস জোটে যোগ দিলে বাংলাদেশের জন্য তা কতটুকু লাভজনক হবে?

BRICS জোটে বাংলাদেশের লাভ কী ?

ব্রিকস ব্যাংকে বাংলাদেশ

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক যত বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থায়নে এর ভূমিকাও ততই বাড়বে। ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়ার একটি বড় সুবিধা হল, ব্রিকস ব্যাংক বা, নিউ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক। ব্রিকস সদস্যদের বাইরে অল্প কিছু দেশকে ব্যাংকটির সদস্য হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশ কে ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্রিকস এর নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছে। বাংলাদেশই ব্রিকস জোটের বাইরের প্রথম দেশ, যারা এই ব্যাংকের সদস্যপদ পেয়েছে। তবে এই সদস্য পদ এমনি এমনি আসেনি। বেশ বড় অঙ্কের চাঁদা দিয়েই বাংলাদেশকে ব্রিকস ব্যাংকের সদস্য হতে হয়েছে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবসা–বাণিজ্যের সুযোগ ও ঋণের প্রাপ্যতার সুযোগকে বিস্তৃত করার জন্য ব্রিকস ব্যাংক বাংলাদেশের জন্য বেশ কাজে আসবে।

ব্রিকেস জোটে বাংলাদেশ

চাঁদা দিয়ে ব্রিকস ব্যাংকের সদস্য হবার কারণেই, যৌক্তিকভাবে বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়। চলতি বছর আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম নগরী জোহানেসবার্গে ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিকসের পরবর্তী সম্মেলনে যোগ দানের জন্য বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ব্রিকসের বর্তমান সভাপতি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা আসন্ন ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, বলে জানা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও  সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইন্দোনেশিয়া কে এই  শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই সম্মেলনের পাশাপাশি ব্রিকস নেতাদের আউটরিচ এবং ব্রিকস ডায়ালগও অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এই সম্মেলনে, মার্কিন ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্যকোনো মুদ্রায় লেনদেন করা যায় কি না, তার সিদ্ধান্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার একটি সুযোগ তৈরী হতে পারে। বাংলাদেশ যে ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করতে চাচ্ছে, তার সাথে ব্রিকসে যোগদানের সামঞ্জস্য রয়েছে বলেই অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন।

বাংলাদেশের লাভ কী?

ব্রিকসের দেশগুলো মূলত বাংলাদেশের রপ্তানির নয়, বরং আমদানির উৎস। ব্রিকসের দেশগুলো থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ৩৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি মাত্র মাত্র ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির প্রায় চার ভাগের এক ভাগ এবং ইউরোপে রপ্তানির সাত ভাগের এক ভাগ মাত্র। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২২ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শুধু পোশাক রপ্তানি করেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের তৈরী পোষাক। এছাড়া বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, উন্নয়ন ও অবকাঠামো ঋণ এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের সিংহভাগই আসে ব্রিকসবহির্ভূত দেশে থেকে। অন্যদিকে ব্রিকসের দুই দেশ ভারত ও চীনের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি বাজার হল বাংলাদেশ। তাই ব্রিকসে যোগ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হওয়ার ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। তাছাড়া ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের বিষয়ে উদারতার অভাব আছে। তাছাড়া চীনের সাথে বানিজ্যে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধা বাংলাদেশ এখনই পাচ্ছে। ফলে ব্রিকসের সদস্য হলেও, চীন থেকে নতুন করে পাবার মত কোনো বাণিজ্যসুবিধা আসলে নেই। এছাড়া ব্রিকসের অন্যান্য দেশগুলোর সাথেও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুবই সীমিত।

বানিজ্যিক সম্পর্কের বাইরে আরেকটি বিষয় থাকে, তা হল ঋণ প্রাপ্তি। ব্রিকসের সদস্য হলে বাংলাদেশ বেশ কিছু ঋণ পেতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এডিবি থেকে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কাজ করলে, প্রকল্পগুলোতে যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি থাকে। অন্যদিকে ভারতীয় ও চীনা ঋণে করা উন্নয়ন কাজগুলোতে হয় গুণমান কম থাকে, না হয় ধীরগতিতে চলে অথবা, পরিবেশগত বিষয়গুলোতে ছাড় দেওয়া হয়। মান নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি থাকে না বলে ভারতীয় ও চীনা ঋণ ভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগও বেশি ওঠে। তবে ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর যথেষ্ট বিনিয়োগের সক্ষমতা রয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হলে, বিভিন্ন খাতের মূলধন, দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলো বৃদ্ধি পাবে। যা দেশের সামগ্রিক শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে। ব্রিকস আধুনিক খাদ্য ও কৃষি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, শিল্প ও প্রযুক্তি বিকাশের ক্ষেত্রগুলো সহজ করতে পারে।

ব্রিকসের রাজনৈতিক দিক

বাংলাদেশ কেন ব্রিকসের সদস্য হতে চায়? এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এককভাবে কারও ওপর যেন নির্ভরশীল থাকতে না হয়, সেজন্যই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ উন্নয়নশীল অর্থনীতির এই জোটে অর্থনীতির পাশাপাশি যে, একটি বিরাট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে সে বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। মার্কিন নেতৃত্বাধীন একমুখী পশ্চিমা বিশ্ব ব্যবস্থায় বিরাট সংস্কার দরকার, সে বিষয়েও সবাই একমত। সেকারণেই সৌদি আরব সহ আরো বেশ কিছু দেশকে এই জোটে সামিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন এই মুহুর্তে বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদান যতটা না অর্থনৈতিক, তার চেয়েও অনেক বেশি রাজনৈতিক। কারণ বর্তমান সরকার উন্নত বিশ্বের দিক থেকে একধরনের চাপের মুখে রয়েছে। নির্বাচন তথা মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে অনেক বড় দেশ বাংলাদেশের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের তিরস্কারমূলক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবেও ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যদিও ব্রিকসে যোগদানের এই প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নির্বাচনের প্রশ্নে বাংলাদেশ যে একা নয়, সেটা দেখানোর জন্য ব্রিকসে যোগদান সরকারের পক্ষ থেকে একটি জবাব হিসেবে কাজ করতে পারে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।