বিল্ডারবার্গ গ্রুপ
বিল্ডারবার্গ গ্রুপ
“New World Order” বা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যেসমস্ত গোপন সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম উচ্চারিত একটি নাম Bilderberg Group। ইউরোপ ও আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা সহ, পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রতি বছর একটি গোপনে সভায় মিলিত হয়। এত এত প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এক ছাদের নিচে মিলিত হলেও, মূল ধারার গণমাধ্যমে এ সম্পর্কিত কোন সংবাদ প্রচার করা হয় না। কারণ এই সম্মেলনে কোন সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার নেই।
বলা হয়ে থাকে বিল্ডারবার্গ মিটিংয়ে যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়, পরবর্তী বছর বিশ্বের সকল দেশের সরকার এবং নীতি নির্ধারকেরা জেনে বা না জেনে, সেসব বিষয়ই পৃথিবীজুড়ে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে। সেকারণে বিল্ডারবার্গ গ্রুপ কে বলা হয়, বোর্ড অব ডিরেক্টরস অব দ্যা ওয়ার্ল্ড। তারমানে, একটি কম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরসরা যেমন, কম্পানি কিভাবে চলবে না চলবে সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তেমনিভাবে বিল্ডারবার্গ গ্রুপের সদস্যরাও আমাদের পৃথিবী কিভাবে পরিচালিত হবে, তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বিল্ডারবার্গ এর আবির্ভাব
বিল্ডারবার্গ গ্রুপ কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে বিষয়ে সব জায়গায় বলা হয়, ১৯৫৪ সালে নেদারল্যান্ডের প্রিন্স বার্নার্ড সর্বপ্রথম এই সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নেন। তার সাথে বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল ভ্যান জিল্যান্ডও সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু এই দু্ই জনের বাইরে বিল্ডারবার্গ গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন পোল্যান্ডের এক রাজনৈতিক উপদেষ্ঠা জোজেফ রেটিঞ্জার। কিন্তু তার নাম কোথাও উচ্চারিত হয় না। এই লোককে বলা হয়, বিংশ শতকের সবচেয়ে রহস্যময় রাজনীতিবিদ। জোজেফ রেটিঞ্জার একাধারে ইহুদি ক্যাথলিক, গুপ্ত সংগঠন ফ্রিমেসনারীর প্রভাবশালী নেতা, ছদ্মবেশী কমিউনিস্ট এবং বর্ণবাদী দাম্ভিক পোলিশ জাতীয়তাবাদের নেতা। ইউরোপ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত একাধিক দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জোজেফ রেটিঞ্জার একাধিক যুগান্তকারী ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও, ইতিহাসের পাতায় কোথাও তার নাম নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলমান স্নায়ু যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলা করা এবং ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে তৎকালীন সময়ে এই দুই মহাদেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সহ গুরুত্বপূর্ণ লোকজন নেদারল্যান্ডের বিল্ডারবার্গ হোটেলে মিলিত হন। সেখান থেকেই এই সংগঠনের নাম হয়ে যায় বিল্ডারবার্গ গ্রুপ।
১৯৫৪ সালের পর থেকে প্রতিবছর ইউরোপ ও আমেরিকার কোন এক শহরে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়ে আসছে। যেখানে বিল্ডারবার্গ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তার একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে কোন সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যদি কেউ এর ভেতর প্রবেশ করে, তবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তারা আসলে কী গোপন করতে চায়, তা কেউ জানে না। এমনকি বিল্ডারবার্গ নামে যে একটি দল আছে, অতীতে দীর্ঘ সময় যাবৎ সেই বিষয়টিই অস্বীকার করা হয়েছে।
বিল্ডারবার্গ সম্মেলন
বিল্ডারবার্গ গ্রুপ এর ভিত্তিই যে গোপনীয়তা, তা তাদের ওয়েবসাই দেখলে সহজেই বোঝা যায়। কোন আন্তর্জাতিক সংগঠনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এত কম তথ্য কোথাও দেখা যায় না। এখানে বলা আছে, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প, শ্রম, শিক্ষা এবং গণমাধ্যম খাতের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ১৩০ জন ব্যক্তি প্রতি বছর এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে। গণমাধ্যমের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে বলে, এই মিটিং এর তথ্য বাইরের লোক জানতে পারবে বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। কারণ এখানে সাধারণত পশ্চিমা গণমাধ্যমের মালিক এবং পুঁজিবাদের পক্ষে কাজ করা প্রভাবশালী সাংবাদিকদেরকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিল্ডারবার্গ মিটিং Chatham House Rule অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তারমানে হল, অংশগ্রহণকারীরা মিটিং থেকে প্রাপ্ত যেকোন তথ্য নিজেদের মত ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু এই তথ্য বিল্ডারবার্গ মিটিং এ কে উপস্থাপন করেছিল সে বিষয়ে কোন কথা বলা যাবে না। বিল্ডারবার্গ এর ওয়েবসাইটেই বলা আছে, এখনও পর্যন্ত কোন অংশগ্রহণকারী তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেনি।
সম্মেলনে কে কে অংশগ্রহণ করবে তা ঠিক করে বিল্ডারবার্গ এর পরিচালনা সংসদ। প্রতিবছর সম্মেলনের কয়েকদিন আগে ভেন্যু এবং আলোচনার বিষয় জানিয়ে দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং বিখ্যাত কন্সপিরেসি থিওরিস্ট ডেভিড ইকা বিল্ডারবার্গ গ্রুপ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে ২০টিরও বেশি বই লিখেছেন। তিনি মনে করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে পুরনো বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, সেই সুযোগে বিল্ডারবার্গ গ্রুপ একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করে। এবং তখন থেকেই প্রকৃত গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নের যুগ শুরু হয়। বিল্ডারবার্গ গ্রুপ বিশ্বায়নের যাত্রায় ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় সাধনের কৌশল অবলম্বন করে, যার মাধ্যমে সবাইকে একটি কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়।
মানব জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন প্রতিটি ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ লোকদেরকে একত্রিত করে, তারা একটি কমন পলিসি তৈরী করার চেষ্টা করে। গবেষকেরা মনে করেন, বিল্ডারবার্গ মিটিং এ অংশগ্রহণ করা সবাই আসলে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত নয়। বিল্ডারবার্গের মূল হোতারা এসব প্রতিভাবান মানুষদের জ্ঞান থেকে উপকৃত হয়ে, তাদের ছূড়ে ফেলে দেয়। সেজন্য অসংখ্য মানুষ এই সম্মেলনে আসে যায়, কিন্তু এদেরকে আর পরবর্তীতে দেখা যায় না। এদের কেউ এখানে স্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। শুধুমাত্র তারা ব্যতীত, যারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। ডেভিড রকফেলার এবং হেনরি কিসিঞ্জার এর মত সুপরিচিত ব্যক্তিরা তাদের জীবদ্দশার পুরোটা সময়জুড়ে বিল্ডারবার্গ গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এদের বাইরে এই গোপন সংগঠনের অন্যান্য স্থায়ী সদস্যরা নিজেদেরকে অনেক বেশি আড়াল করে রাখে। তবে এরাই হল বিশ্বের সেই অভিজাত শ্রেণী, যারা নিজেদের স্বার্থে সমগ্র বিশ্বকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে চায়।
এরা আসলে কারা?
বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র আর পুঁজিবাদ টিকিয়ে রাখার পেছনে সবচেয়ে গভীর পরিকল্পনা নিয়ে যারা কাজ করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে বিল্ডারবার্গ গ্রুপ এর নাম আসে সবার আগে। বিশ্ববাসীর অজান্তে বৈশ্বিক ছায়া সরকার পরিচালনা করাই বিল্ডারবার্গ মিটিং এর মুল উদ্দেশ্য।
আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ড. রিচার্ড ডি ওলফ মনে করেন, আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা যারা পরিচালনা করে, তাদের মধ্যে কিছু মতভেদ রয়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় দ্বন্দ হল, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা কি আসলেই পুঁজিবাদের উপর নির্ভর করবে নাকি অন্য কোন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করবে; যার মাধ্যমে তাদের অর্থ বিত্ত এবং সমাজে প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রাখতে পারবে।
এই স্যোশাল এলিটদের একদল মনে করে প্রচলিত বাজার কাঠামোতে তারা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে সবার জন্য একটি সেরা সমাজ গড়ে তুলেছে। অন্যদল মনে করে, প্রচলিত পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণেই সমাজে ব্যাপক বৈষম্য তৈরী হচ্ছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ একসময় বর্তমান আধুনিক ব্যবস্থার উপর চূড়ান্ত রকমের আশাহত হয়ে, এই ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে পারে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, উভয় পক্ষই চায় পঁুজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা চলমান থাকুক। তাদের একদল সমাজিক প্রভাবগুলোর কোন পরোয়াই করে না, অন্যদল সামাজিক বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে, সেই অনুযায়ী তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চায়। সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই গোষ্ঠীর মধ্যে এমন মতপার্থক্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। তাদের সেই মতভেদ প্রশমিত করার জন্যই মূলত তারা প্রতিবছর মিটিং করে থাকে।
গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা
বিল্ডারবার্গ গ্রুপই হল সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা। গণতন্ত্রকে তারা ঐষী বাণীর মত প্রচার করে। এরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে বিশ্বের জনগণকে উপলব্ধি করায় যে, সাধারণ মানুষের নিজস্ব ভয়েস এবং চয়েস আছে। জনগণ চাইলেই তাদের নিজেদের পছন্দ মত সরকার নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা ঘটার পরও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না। এটা এক প্রকার নিষিদ্ধ বিষয়। বরং তারা এমনভাবে গণতন্ত্রকে প্রচার করে যেন, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কায়েম হলে, পৃথিবীর সকল দুঃখ আর অশান্তি দূর হয়ে যাবে।
এসব এলিটদের আসলে গণতন্ত্রের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। তারা গণতন্ত্র কে অনেকটা আফিমের মত বিক্রি করে। তারা নিজেরা তাদের বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য পরিচালনা করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে। কারণ গণতন্ত্র মানেই হল বিশৃঙ্খলা। বিল্ডারবার্গ মিটিংয়ে অংশ নেওয়া, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় ব্যাংক, এয়ারলাইন কম্পানির প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে, শীর্ষ কম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরসরা কখনও তাদের কম্পানির পরিকল্পনা ও কৌশল তাদের কর্মচারীদের সাথে শেয়ার করে না। তারা কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কম্পানি চালায় না। উল্টো তারা মানুষের মন মগজ থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও চিন্তা মুছে দেওয়ার জন্য কাজ করে। আপনি যদি সপ্তাহে ৫ দিন, সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোন কারখান বা অফিসে কাজ করেন, তাহলে আপনি এমন এক পরিবেশে জীবন পার করছেন, যেখানে আপনার মস্তিষ্ক শুধু আপনার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার আদেশ পালন করতে শেখে। এখানে কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। আমদেরকে এমন এক গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখানো হয়, বাস্তবে যার কোন অস্তিত্বই নেই। কিন্তু মুখে মুখে গণতন্ত্রের মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, আমাদের এক ধরণের ঘোরের মধ্যে রাখা হয়। আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে বোকা বানিয়ে রাখি।
কোন দেশে গণতন্ত্র থাকলে সে দেশের পঁুজিবাদী কাঠামোতে হস্তক্ষেপ করা সহজ হয়। আফ্রিকার দেশগুলোতো পশ্চিমা ধারার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাজ করে না। কিন্তু তারপরও ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোর মদদে আফ্রিকায় এমনসব গনতান্ত্রিক সরকার বসানো হয়, যারা কোন স্বৈরশাসকের চেয়ে কম নয়। তার চেয়েও বড় কথা এসব দেশের জনগণ তথাকথিত গণতন্ত্র চায়ই না। কিন্তু আফ্রিকার মূল্যবান খনিজ সম্পদ লুট করতে, নিজেদের স্বার্থেই তারা গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়। শুধু আফ্রিকা নয়, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা সহ সমগ্র এশিয়ার দেশগুলোতেও নামে মাত্র টিকে থাকা গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও তাদের কোন আপত্তি নেই। যদি েকান দেশ তাদের পঁুজিবাদী স্বার্থে আঘাত করে, তখন সেই দেশের সরকার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে Humanitarian Intervention বা মানবিক কারণে হস্তক্ষেপের দোহায় দেয়।
সহজ করে বলতে গেলে সব দেশে যদি একই ধরনের সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে, তাহলে সমগ্র বিশ্ব শাসন করা বিল্ডারবার্গ গ্রুপের জন্য অনেক সহজ হয়।
বিল্ডারবার্গ গ্রুপের প্রভাব
বিল্ডারবার্গ গ্রুপের অতি গোপনীয়তা নীতির কারণেই, তাদের নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবির্ভূত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ইউরোপী ইউনিয়ন গঠনের পেছনে এই দলের ব্যাপক অবদান ছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি রিপোর্টে বলা হয়, সার্বিয়া আক্রমণ, ইরাক যুদ্ধ সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে তৈরী হওয়া বেশ কিছু যুদ্ধ ও আঞ্চলিক অস্থিরতাও বিল্ডারবার্গ গ্রুপের স্বার্থ রক্ষার জন্যই পরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছিল। অনেকেই দাবি করেন, ১৯৭৩ সালের Oil Shock বিল্ডারবার্গ গ্রুপের পরিকল্পনার অংশ। যার পর থেকে সমগ্র বিশ্বের জ্বালানী নিরাপত্তা ও সরবরাহের চিত্রই বদলে গিয়েছিল। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার আগের বছর বিল্ডারবার্গ মিটিংয়ে শরিক হয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন এখান থেকেই তাদের নির্বাচনের নীল নকশা তৈরী করা হয়েছিল।
কোন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীর যদি আরেকটি দেেশর সরকার প্রধানের সাথে একান্তে কথা বলার প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে? বিল্ডারবার্গ মিটিং হল সেই জায়গা। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সিআইএর প্রধান, যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬ এর প্রধান, ন্যাটোর সামরিক প্রধান থেকে শুরু করে, গুগল, মাইক্রোসফট এমনকি সম্প্রতি আলোচনায় আসা ওপেনএআই এর সিইও পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী কেউ এই মিটিং এর অতিথি তালিকা থেকে বাদ যায় না। এমন সব লোক যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনা সামনি মিলিত হয়, তাহলে সেখানে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠবে। গণমাধ্যম তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইবে। কিন্তু বিল্ডারবার্গ সম্মেলনে তারা যা খুশি আলোচনা করতে পারে, একসাথে বসে নিজেদের মত নানা পরিকল্পনা সাজাতে পারে। তাদের সেই পরিকল্পনায় যদি অন্য কোন প্রভাবশালী লোকের সহায়তার দরকার হয়, তাহলে তাকে হয়ত পাশের টেবিলেই পাওয়া যাবে।
বিল্ডারবার্গ গ্রুপ কে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী তীব্র অবিশ্বাস দানা বাঁধতে শুরু করার পর থেকে, বিগত কয়েক বছর যাবৎ বিল্ডারবার্গ এর পরিচালনা সংসদ এবং মিটিং এ অংশগ্রহণকারীদের নাম প্রাকাশ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রযুক্তির সহায়তার কোন বিকল্প নেই। তাই মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, পেপাল এর প্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েল এর মত ব্যক্তিদের বিল্ডারবার্গ এর পরিচালনা সংসদে রাখা হয়েছে। ২০২৩ সালের বিল্ডারবার্গ সম্মেলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন ওপেরএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান। কারণ এই মুহুর্তে প্রযুক্তি বিশ্বের যে কয়জন ব্যক্তির হাত ধরে, আগামীর পৃথিবী গড়ার কাজ চলছে, তাদের মধ্যে স্যাম অল্টম্যান অন্যতম।