ফাতাহ এবং হামাস এর মধ্যে দ্বন্দ কেন
ফাতাহ এবং হামাস এর মধ্যে দ্বন্দ কেন
ফাতাহ এবং হামাস উভয় দল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করলেও, এই দুই দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং কৌশল ছাড়াও বেশ কিছু পার্থক্য আছে। এমনকি অতীতে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধও করেছে।
ফিলিস্তিন ভূখন্ড মূলত দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে রয়েছে পশ্চিম তীর এবং অন্যদিকে গাজা। এই দুই অঞ্চল শুধু ভৌগলিকভাবেই আলাদা নয়, এদের রাজনৈতিক মতাদর্শও ভিন্ন। পশ্চিমতীরের ক্ষমতায় রয়েছে ফাতাহ, যারা প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও এর অধীনে পরিচালিত একটি রাজনৈতিক দল। আন্তর্জাতিকভাবে বহু দেশই ফাতাহকে স্বীকৃতি দেয় এবং ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি মনে করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ক্ষমতায় রয়েছে হামাস। হামাস কে বহু দেশ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করে।
ফাতাহ প্রথমদিকে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখন্ড নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইত। কিন্তু পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে তাদের সেই লক্ষ্যে পরিবর্তন আসে। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির পর থেকে, পিএলও বা ফাতাহ ফিলিস্তিনের ভূমিতে দ্বিরাষ্ট্র ব্যবস্থা মেনেই নিয়েছে। তারমানে তারা এই ভূমিতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় এবং নিজেদের জন্যও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অন্যদিকে হামাস মনে করে, ফিলিস্তিন শুধুই আরবদের। এখানে ইহুদিদের কোন জায়গা নেই। তাই তারা সমগ্র ফিলিস্তিন ভূমি জুড়ে স্বাধীন দেশ গড়তে চায়। তবে সমগ্র ফিলিস্তিন পাওয়া না গেলে, ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী তারা স্বাধীন ফিলিস্তিন গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করবে। তবে সেক্ষেত্রেও তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিবে না।
দেশ পরিচালনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও হামাস এবং ফাতাহ সম্পূর্ণ আলাদা। পিএলও এর অধীনে ফাতাহ একটি সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তৈরী করতে চায়। কিন্তু হামাস চায় জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ফাতাহ তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে চায়। কিন্তু হামাস আলোচনার চেয়ে সামরিক প্রতিরোধে অধিক বিশ্বাসী।
২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাস জয় লাভ করলেও, ফাতাহ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে। সেই সাথে পশ্চিমাবিশ্বের চাপে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সেসময় হামাস এবং ফাতাহ এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তখন হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ফাতাহকে সরিয়ে দিতে থাকে। একইভাবে পশ্চিমতীর থেকে হামাস কে সরিয়ে, ফাতাহ পশ্চিমতীরের দখল নেয়।
ফাতাহ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা পায়। অন্যদিকে হামাসে প্রধান শক্তি স্থানীয় ফিলিস্তিনীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা। হামাস তাদের ইসলামিক মতাদর্শ প্রচারের করে মসজিদ, মাদ্রাসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে তাদের সমর্থন গড়ে তোলার কাজ করে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সরকারী অফিস, সরকারী প্রকল্প এবং সরকারী কার্যক্রমের মাধ্যমে ফাতাহ তাদের জনসমর্থন ধরে রেখেছে।
বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী ফাতাহ তাদের নীতিগত অবস্থান বদলানোর কারণে, ফিলিস্তিনের জনগণ আসলে ফাতাহর বর্তমান আদর্শ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখে না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আবেগের কারণেই মূলত কিছু কিছু ফিলিস্তিনী এখনও ফাতাহকে সমর্থন করে। অন্যদিকে পরিষ্কার রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং সমর্থনের দিক থেকে হামাসই এখন ফিলিস্তিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় হামাস কে। কারণ হামাসই ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। অথচ এই হামাস এক সময় গড়েই উঠেছে ইসরায়েলের সহযোগীতায়। ইসরায়েলের বহু সামরিক কর্মকর্তা হামাস গঠনের সময় ইসরায়েলের সহায়তা করার বিষয়টি স্বীকার করেছে।