পহেলা বৈশাখ

sddefault
জীবনযাপন

পহেলা বৈশাখ

পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন বা বাংলা নববর্ষ। অনেকেই একে হাজার বছরের সংস্কৃতি হিসেবে উল্লেখ করে। আসলেই কি বাংলা নববর্ষ উৎযাপন হাজার বছরের পুরনো? সত্যি কথা বলতে, বাংলা বর্ষপঞ্জিও হাজার বছরের পুরনো নয়।

বাংলা বছর গণনা কিভাবে শুরু হয়েছিল ?

পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় নববর্ষ উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এটি বিশ্বব্যপী বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত। অতীতে বাংলা নববর্ষ ছিল প্রধানত কৃষিনির্ভর ও অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জমিদারের পূণ্যাহ বা খাজনা আদায় থেকে দোকানীর হালখাতা সবক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক হিসেব নিকাশই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল নববর্ষ উৎযাপন বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত হয়। এ দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। ১৯৭২ সালে বা বাংলা ১৩৭৯ সালে ‘পহেলা বৈশাখ’ বাংলাদেশের জাতীয় পার্বন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

ভারতবর্ষে মুঘল স¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে খাজনা আদায় করা হত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি ফলনের সাথে তার কোন মিল ছিল না। ফলে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হত। খাজনা আদায়ে সুবিধার জন্য মুঘল স¤্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত এই অঞ্চলে প্রচলিত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সন গণনার বিষয়টি সমন্বয় করেন।

৯৯৩ হিজরীর ৮ই রবীউল আউয়াল বা ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় স¤্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের বছর ৯৬৩ হিজরী বা ১৫৫৬ সালের ৫ই নভেম্বর থেকে। সেসময় ৯৬৩ চন্দ্র সনকে ৯৬৩ বাংলা সৌর সনে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জির যাত্র শুরু হয়। অর্থাৎ বাংলা বছর গণনা ১ থেকে শুরু হয়নি, শুরু হয়েছে ৯৬৩ থেকে। সে হিসেবে বাংলা বর্ষপঞ্জির বয়স মাত্র ৪৬২ বছর। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরবর্তীতে “বঙ্গাব্দ” বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
ফতেহউল্লাহ সিরাজির বাংলা সাল প্রবর্তনের ভিত্তি ছিল হিন্দু সৌর পঞ্জিকা। সে পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বার মাস অনেককাল আগে থেকেই প্রচলিত ছিল এবং সে পঞ্জিকার নাম ছিল শক বর্ষপঞ্চি বা শকাব্দ। শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। ৯৬৩ হিজরি তে চন্দ্র সনের প্রথম মাস মহররম ছিল বাংলা বৈশাখ মাসে। তাই তখন থেকে বৈশাখকেই বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে গণনা করা শুরু হয়।
মুঘল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। তখন প্রজারা বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এরপরদিন পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। লাল কাপড়ের মলাটে মোড়ানো নতুন এই হিসাব খাতার উপরে লেখা হতো ‘এলাহী ভরসা’। এই এলাহী শব্দটিও সম্রাট আকবরের দ্বীন ই এলাহী বা ‘তারিখ ই এলাহী’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

আধুনিক কালে নববর্ষ উদযাপনের রীতি শুরু হয় ১৯১৭ সালে। সে বছর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। তবে বর্তমান পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের জনপ্রিয় ধরনটি এসেছে মূলত এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তৎকালীন আইয়ুব সরকারের আমলে পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা নিষিদ্ধ করা হয়। তখন বাঙালি সংস্কৃতি চর্চায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ হিসেবে “ছায়ানট” ১৯৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল বা বাংলা ১৩৭২ সনের ১লা বৈশাখ এক ভিন্নধর্মী আয়োজন করে। তখন রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম শহুরে বর্ষবরণের যাত্রা শুরু হয়। এ স্থানটি রমনার বটমূল হিসেবে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরি করা হয় সেটি বট গাছ নয়, একটি অশ্বত্থ গাছ।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।