নতুন পোপ কিভাবে নির্বাচন করা হয়

Copy of নতুন পোপ কিভাবে নির্
কি কেন কিভাবে

নতুন পোপ কিভাবে নির্বাচন করা হয়

ভূমিকা

ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাসে পোপ নির্বাচন একটি পবিত্র ও ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া। পোপের মৃত্যু বা পদত্যাগের পর একটি গোপন সভার মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচিত হন। যিনি পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে অনুষ্ঠিত এই প্রক্রিয়া কঠোর নিয়ম, গোপনীয়তা এবং আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ। ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা গোপন ভোটের মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন পোপ নির্বাচন করেন।

প্রাথমিক পদক্ষেপ

পোপের মৃত্যু বা পদত্যাগের পর ভ্যাটিকানের পোপের আসন খালি থাকে, যাকে ল্যাটিন ভাষায় “সেদে ভাকান্তে” বলা হয়। এই সময়ে কার্ডিনালদের কলেজ ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে। একজন পোপ মারা যাবার পর ক্যামেরলেঙ্গো নামের ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক প্রধান তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন।

পোপের মৃত্যুর পর নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া কনক্লেভ নামে পরিচিত। এটি ক্যাথলিক চার্চের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি। কনক্লেভ শুরুর আগে ১৫-২০ দিনের একটি প্রস্তুতিমূলক সময় থাকে। এই সময়ের মধ্যে কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানে সমবেত হন এবং প্রয়োজনীয় আলোচনা করেন।

খ্রিস্টান প্রাদ্রী

কার্ডিনাল কারা সেটি বোঝার জন্য খ্রিষ্টান পুরোহিতদের পদানুক্রম সম্পর্কে একটু জানা দরকার। ক্যাথলিক গির্জায় পুরোহিতদের পদবি তিনটি প্রধান স্তরে বিভক্ত: ১. ডিকন (Deacon), ২. প্রিস্ট (Priest), এবং ৩. বিশপ (Bishop)। ডিকন হলো গির্জার সর্বনিম্ন পুরোহিত পদ। তাদের উপরে থাকেন প্রিস্ট, যারা গির্জার দৈনন্দিন ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রিস্টদের প্রধানকে বলা হয় বিশপ। এবং একটি বৃহত্তর অঞ্চলের প্রধান বিশপকে বলা হয় আর্চ বিশপ। সাধারণত বিশপ বা আর্চবিশপদের মধ্য থেকে কার্ডিনাল নির্বাচিত হয়। কার্ডিনালরা গির্জার সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা, যারা পোপের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। বেশিরভাগ কার্ডিনাল বিশ্বব্যাপী গির্জার গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। সর্বোচ্চ মর্যাদার কার্ডিনালরা ভ্যাটিকান ও রোমের নিকটবর্তী এলাকার দায়িত্বে থাকেন।

কার্ডিনালরাই মূলত পোপ নির্বাচনে ভোট দেন। তবে সকল কার্ডিনাল ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। শুধুমাত্র ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরাই পোপ নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারেন। তাদেরকে বলা হয় কলেজ অফ কার্ডিনালস। সাধারণত ১২০ জনের মতো সদস্য নিয়ে কলেজ অফ কার্ডিনালস গড়ে ওঠে। তবে এই সংখ্যা পরিবর্তিতও হতে পারে।

কনক্লেভ

ক্যাথলিক গির্জায় পোপ নির্বাচনের জন্য কনক্লেভ নামে যে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে কোনো আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন বা প্রার্থী হিসেবে নাম প্রস্তাবের ব্যবস্থা নেই। বরং, কার্ডিনালরা তাদের বিবেচনার ভিত্তিতে যেকোনো যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারেন। কনক্লেভের গোপনীয়তা এবং আধ্যাত্মিক প্রকৃতির কারণে মনোনয়ন প্রক্রিয়া এড়ানো হয়। বিশ্বাস করা হয় যে Holy Spirit বা পবিত্র আত্মা কার্ডিনালদের সিদ্ধান্তে পথপ্রদর্শন করে।

কার্ডিনালরা কনক্লেভ শুরুর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেন, একে জেনারেল কংগ্রিগেশন বলা হয়। এই আলোচনায় তারা গির্জার চ্যালেঞ্জ, প্রয়োজনীয় নেতৃত্বের গুণাবলী, এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে কথা বলেন।

কনক্লেভ অত্যন্ত গোপনীয়। তাই কার্ডিনালরা বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। সিস্টিন চ্যাপেলে ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা বাইরের হস্তক্ষেপ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কনক্লেভ শুরুর আগে কার্ডিনালরা গোপনীয়তা রক্ষার শপথও নেন।

কার্ডিনালরা গোপন ব্যালটে তাদের পছন্দের ব্যক্তির নাম লেখেন। ঐতিহাসিকভাবে, প্রায় সবসময়ই কার্ডিনালদের মধ্য থেকেই কাউকে নির্বাচিত করা হয়। প্রতিদিন সাধারণত দুই থেকে চার রাউন্ড ভোট হয়। পোপ নির্বাচিত হতে হলে কোনো ব্যক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। যদি একাধিক রাউন্ডে কেউ এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তবে ভোট চলতেই থাকে।

যদি কোনো প্রার্থী দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পান, তবে ভোটের কাগজপত্র পুড়িয়ে কালো ধোঁয়া তৈরি করা হয়, যা বাইরে থেকে দেখা যায়। এটি ইঙ্গিত করে যে পোপ নির্বাচিত হননি। যখন একজন প্রার্থী দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পান, তখন ভোটের কাগজপত্র পুড়িয়ে সাদা ধোঁয়া তৈরি করা হয়, যার মাধ্যমে বোঝানো হয় যে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

নতুন পোপের ঘোষণা

নির্বাচিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি পোপের দায়িত্ব গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিনা। যদি তিনি সম্মত হন, তবে তিনি নতুন পোপ হিসেবে ঘোষিত হন। তখন নতুন পোপ তার ব্যক্তিগত নামের বাইরে একটি পোপীয় নাম গ্রহণ করেন। যেমন জর্জ মারিও পোপ হওয়ার পর তিনি পোপ ফ্রান্সিস নাম ধারণ করেছিলেন।

এরপর সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার বারান্দায় কার্ডিনাল প্রোটোডিকন ঘোষণা করেন, “হাবেমুস পাপাম”। ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ “আমাদের পোপ আছেন”। এবং তারপর নতুন পোপের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়। তখন নতুন পোপ জনগণের উদ্দেশে তার প্রথম আশীর্বাদ প্রদান করেন। যাকে বলা হয় উর্বি এট অর্বি, এর অর্থ শহর ও বিশ্বের প্রতি আশীর্বাদ।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1
Latest Updates ×
কোর্স সংক্রান্ত বিশেষ কিছু সমস্যার সমাধান।

কোর্স সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে এই ভিডিওটি দেখুন: https://youtu.be/70IX2alcSnk কোর্স কিনতে কোন অসুবিধা হলে এই ভিডিওটি দেখুন: https://youtu.be/3W0kEwjlns4 কোর্স সংক্রান্ত…

See more
আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।