দুবাইয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
দুবাইয়ে ভয়াবহ বন্যার কারণ
দুবাই বন্যা
সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুবাইয়ে সাধারণত এক থেকে দুই বছরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়, সেই পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে মাত্র এক দিনে। ভয়াবহ বৃষ্টিতে নজিরবিহীন বন্যার কবলে পড়েছে দুবাই। যার কারণে শহরটিতে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দুবাইয়ে বন্যা শুরু হবার পর থেকে, সামাজিক মাধ্যমে দুবাই এর কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। একদল মনে করে দুবাই বৃষ্টিপাতের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া নষ্ট করার কারণে এমন ভয়াবহ বৃষ্টি ও বন্যা হয়েছে। অন্যরা মনে করছে, সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারনেই মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে এমন বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতি
দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি উপকূলীয় শহর। দুবাই মূলত একটি রুক্ষ অঞ্চল। এখানে সারা বছর মাত্র ১০০ মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র এক দিনে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টি অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এই অঞ্চরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড শুরু হবার পর থেকে, বিগত ৭৫ বছরের মধ্যে এমন কোন বৃষ্টিপাতের খবর জানা যায় না। যেকারণে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দুবাইয়ের এবারের বৃষ্টি খুবই বিরল ঘটনা।
দুবাইয়ে সচরাচর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতের সময় পানি নিষ্কাশনের অবকাঠামো সীমিত। তাই প্রবল বৃষ্টিপাতের পর শহরটি তীব্র বন্যার কবলে পড়ে। ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য দুবাইয়ের রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয় এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে গেছে এবং বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম এই বন্দরে বহু যাত্রী আটকা পড়ে আছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা
আবহাওয়াবিদরা দুবাই এর এমন অস্বাভাবিক বৃষ্টির প্রকৃত কারণ এখনও নির্ণয় করতে পারেননি। বৃষ্টির ধরণ দেখে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই, একে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করছেন। তবে কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানোর মাধ্যমে তা পরিবেশের স্থায়ী কোন ক্ষতি করেছে কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি; যার কারণে এই ধরনের অতি বৃষ্টি ও বন্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে এর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল যে, চলতি সপ্তাহে এক দিনে এক বছরের সম পরিমাণ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুবাই এর ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টির পেছনে কতটুকু প্রাকৃতিক এবং কতটুকু মানব সৃষ্ট কারণ রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝড়ের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে। জলবায়ুর উষ্ণতার সাথে এই ধরনের অতি বৃষ্টির সরাসরি সম্পর্ক আছে। ঝড় সৃষ্টিতে এবং ভারী বৃষ্টি ঝরাতে আর্দ্রতার পরিমাণ যত বাড়বে, এর সঙ্গে যুক্ত বন্যাও ক্রমশ শক্তিশালী হবে।
সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন অব্যাহত থাকায় চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ মধ্যপ্রাচ্যের এই এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে।
কৃত্রিম বৃষ্টির ভূমিকা
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আরব আমিরাত কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করে বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। বন্যা শুরু হওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা, দুবাই এর কৃত্রিম বৃষ্টিকেই এর জন্য দায়ী করে। কিন্তু আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র দাবি করেছে, কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের কারণে এই বন্যা সৃষ্টি হয়নি। এই আবহাওয়া কেন্দ্রেরই এক টাস্ক ফোর্স কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর কাজটি করে থাকে।
কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি তৈরী করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্লাউড সিডিং। তারা ঘটনার দিন কোন ধরনের কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা করেননি বলে দাবি করে। কিন্তু ভারি বর্ষণের আগের দুই দিন তারা ঠিকই ক্লাউড সিডিং করেছিল।
তাই দুবাই এর এই ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের সাথে কৃত্রিম বৃষ্টির সরাসরি সংযোগ নেই বলে দাবি করার হলেও, এর অবদানকে হয়ত একেবারেও অস্বীকার করা যায় না। তবে ক্লাউড সিডিং করে যেহেতু এত বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব নয়, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। এই অঞ্চলের জলবায়ু পরিস্থিতির অবনতির কারণেই বাহরাইন থেকে ওমান পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ভারি বর্ষণ এবং মরাত্নক বন্যা হয়েছে।
কৃত্রিম বৃষ্টি আবিষ্কার
প্রকৃতির গুরুত্বপপূর্ণ উপাদান মেঘ, মানুষের হস্তক্ষেপে কিভাবে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে তা সত্যিই এক বিষ্ময়। সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানের কথা অনেক বেশি শোনা গেলেও, এটি কিন্তু মোটেও নতুন আবিষ্কৃত কিছু নয়। ১৯৪৬ সালে বিজ্ঞানীরা সবর্প্রথম গবেষনার জন্য কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সফল হয়েছিলেন।