ডলারের ক্রলিং পেগ কী

maxresdefault (6)
বাংলাদেশ

ডলারের ক্রলিং পেগ কী

নতুন মুদ্রা বিনিময় হার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশও রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মার্কিন ডলার ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত এক ডলারে কত টাকা পাওয়া যায়, তার কোন সঠিক হিসেব ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক বলত, এক ডলারের দাম ১১০ টাকা। অথচ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডলার বিক্রি হচ্ছিল ১১৮-১১৯ টাকায়। পণ্য আমদানি এবং ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্তি দরে ডলার কেনাবেচা হচ্ছিল। বেশি দামে ডলার কিনেও, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম রক্ষার্থে ডলারের দাম কম বলতে হচ্ছিল। যা অনেকটাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মিথ্যাচারের সামিল।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিনিময়ে ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থা চালু করেছে। এর ফলে আর ডলারের মিথ্যা দাম বলতে হবে না। এখন থেকে ডলারের যা দাম, আনুষ্ঠানিকভাবেও তাই বলতে পারবে সবাই।

বাংলাদেশ ডলার বিনিময়ে ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থা নিল কেন ?

ক্রলিং পেগ কি?

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা এবং ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য নতুন পদ্ধতি ঠিক করেছে; এর নাম ‘ক্রলিং পেগ’। আক্ষরিক বাংলায় একে বলা যায়, এখন থেকে দেশের মধ্যে ডলারের দাম লাফ দিতে পারবে না, কেবল হামাগুড়ি দিতে পারবে। আর সেই হামাগুড়িও দিতে হবে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে। আপাতত ১১৭ টাকাকে সেই সীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থার নাম হচ্ছে ক্রলিং পেগ মিড-রেট বা মধ্যদর। এখন থেকে ডলারের বিনিময়মূল্য এর আশপাশেই থাকতে হবে।

২০১২ সালে ডলারের দাম ছিল প্রায় ৮১ টাকা। ২০২১ সালে ডলারের বিনিময় মূল্য দাড়ায় প্রায় ৮৪ টাকা। তারমানে ৯ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছিল মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু ২০২২ সালে ডলারের দর ওঠে ৮৬ টাকা। আর ২০২৪ সালে মাত্র কয়েকদিন আগ পর্যন্তও ডলারের আনুষ্ঠানিক বিনিময় মূল্য ছিল ১১০ টাকায়। অর্থাৎ মাত্র আড়াই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৩৬ শতাংশ। তারমানে এই সময়ের মধ্যে ডলারের দর ৩৬ শতাংশ লাফিয়ে উঠেছে। ডলারের দাম আরও বেশি লাফ দেওয়া ঠেকাতেই নতুন এই ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

বিনিময় হার কত ধরনের?

মুদ্রা বিনিময় হারে কেন্দ্রিয় ব্যাংেকর কোনো হস্তক্ষেপ না থাকাকে বলা হয় ফ্রি ফ্লোটিং বা ভাসমান বিনিময় হার। সেক্ষেত্রে বিনিময় হার হবে সম্পূর্ণ বাজারভিত্তিক। বাজারের চাহিদা আর যোগানের ভিত্তিতে ঠিক হবে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার কত হবে। উন্নত দেশগুলোতে এই আদর্শ মেনে চলা হলেও, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তা মানা সম্ভব হয় না।

সরকার যদি বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট মানে আটকে রাখে, তখন তাকে বলা হয় স্থির বিনিময় হার। একে পেগড বিনিময় হারও বলা যায়। এছাড়া সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি প্রয়োজন অনুসারে বিনিময় হার ঠিক করে দেয়, তখন তাকে বলা হয় ম্যানেজড বা পরিচালিত বিনিময় হার। এই পদ্ধতিকে অনেকে নোংরা বা ডার্টি ফ্লোটিং রেটও বলে। কারণ, এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে বিনিময় হারের অপব্যবহার করে।

ক্রলিং পেগ আসলে স্থির বিনিময় হারেরই আরেকটি রূপ। অর্থাৎ বিনিময় হার স্থির করা আছে, তবে সকল পক্ষ এর আশপাশের দরে ডলার বিনিময় করতে পারবে। বর্তমানে নির্ধারিত মধ্যদর ১১৭ টাকাও, বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময় বদল করতে পারবে।

ক্রলিং পেগ কেন করা হল?

সাধারণত তিনটি পরিস্থিতিতে কোনো দেশ ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে। ১. দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ২. বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা তৈরী হলে এবং ৩. মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেলে। বর্তমানে বাংলাদেশও এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই আছে; তাই দেশে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই এই পদ্ধতি দেখা যায়।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ডলারের সরবরাহ কমে যায়। ফলে তখন থেকেই বাংলাদেশে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। এরপর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। ডলারের দাম লাফ দেওয়া ঠেকাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েও কোন ফলাফল আসেনি। শেষ পর্যন্ত আইএমএফের শর্ত মেনে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারের নতুন পদ্ধতি ঠিক করেছে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।