টেরাকোটা আর্মি

maxresdefault (4)
কি কেন কিভাবে

টেরাকোটা আর্মি

ভূমিকা

চীনের শানসি প্রদেশের শিয়ানের কাছে একদল কৃষক ১৯৭৪ সালে একটি কুয়া খুঁড়তে গিয়ে মাটির নিচে এমন কিছু খুঁজে পান, যা কেবল চীনের ইতিহাস নয়, পুরো পৃথিবীর প্রত্নতাত্ত্বিক জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। হাজার হাজার মাটির তৈরি সৈন্য, ঘোড়া আর রথের এক বিশাল বাহিনী। এদের কেউ জীবিত নয়, তবুও তাদের চেহারায় এমন দৃঢ়তা, যেন হাজার বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে থেকেও এরা পাহারা দিয়ে চলেছে তাদের সম্রাটকে।

চীনের বিষ্ময়কর সেনাবাহিনী টেরাকোটা আর্মি !

টেরাকোটা সৈন্যবাহিনী কী?

চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং খ্রিস্টপূর্ব ২২১ সালে সমগ্র চীনকে একত্রিত করেছিলেন। কড়া হাতে চীন শাসন করা এই সম্রাট ছিলেন এক ত্রাসের নাম। টেরাকোটা সৈন্যবাহিনী হলো সম্রাট কিন শি হুয়াং এর সমাধির পাশে থাকা, মাটির তৈরি সৈন্য, ঘোড়া, রথ ও অন্যান্য সামরিক উপকরণের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল ভাস্কর্যসমূহের সমষ্টি। প্রায় ৮,০০০ সৈন্য, ৫২০টি ঘোড়া এবং ১৩০টি রথ এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত। এগুলি সম্রাট কুইন শি হুয়াংয়ের সমাধির পাশে মাটির নিচে সমাহিত করা হয়েছিল, যাতে তিনি পরকালে নিরাপদে থাকতে পারেন। এই বাহিনীর প্রতিটি সৈন্যের মুখাবয়ব ও পোশাক আলাদা, যা তাদের ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। এই সৈন্যরা তৈরি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২,২০০ বছর আগে।

প্রাচীন চীনে বিশ্বাস ছিল, মৃত্যুর পরেও একধরনের জীবন রয়েছে। সম্রাট কিন শি হুয়াং চেয়েছিলেন, সেই জগতে যাওয়ার পরও যেন তার চারপাশে একদল বিশ্বস্ত সৈন্য থাকে, যারা তাকে পাহারা দেবে। এই উদ্দেশ্যে, খ্রিস্টপূর্ব ২৪৬ সালে তার জীবদ্দশাতেই সমাধির নির্মাণকাজ শুরু হয়, যখন তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছিলেন। ধারণা করা হয়, প্রায় ৭ লক্ষ শ্রমিক কয়েক দশক ধরে এই প্রকল্পে কাজ করেছে। এটি ছিল একটি বিশাল পরিকল্পনার অংশ, যেখানে শুধু সৈন্য নয়, সম্রাটের থাকার ঘর, রাস্তা, নদী, এমনকি নকশা অনুযায়ী পুরো এক রাজ্যও তৈরি করা হয়েছিল।

টেরাকোটা সৈন্যদের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, তাদের কেউই দেখতে এক নয়। প্রতিটি সৈন্যের মুখমণ্ডল, চুলের ধরন, দাড়ি, হেলমেট, পোশাক সবই আলাদা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলো হয়তো বাস্তব সৈন্যদের আদলে তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ ধারণা করেন, এই ভাস্কর্যগুলো এমনভাবে বানানো হয়েছিল যেন প্রতিটি সৈন্য যেন জীবন্ত ও স্বতন্ত্র মনে হয়।

আবিষ্কারের ইতিহাস

১৯৭৪ সালের ২৯ মার্চ, শিয়ানের কাছে সিয়াংইয়াং গ্রামে কিছু কৃষক কুয়া খননের সময় মাটির ভাস্কর্যের টুকরো আবিষ্কার করেন। এই টুকরোগুলো চীনা প্রত্নতাত্ত্বিক ঝাও কাংমিনের নজরে আসে। তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাস্কর্যগুলো পুনর্গঠন করেন এবং এগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারেন। এই আবিষ্কারটি আন্তর্জাতিক মহলে চীনের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বর্তমানে, টেরাকোটা সৈন্যবাহিনী একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। শিয়ানে অবস্থিত এই বাহিনী দেখতে প্রতি বছর লাখো পর্যটক আসেন। ১৯৮৭ সালে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখনো পর্যন্ত তিনটি প্রধান গর্ত আবিষ্কৃত হয়েছে, যেখানে এই সৈন্যদের রাখা হয়েছিল। তবে পুরো এলাকাটি এখনো পুরোপুরি খনন করা হয়নি। ধারণা করা হয়, বিস্তৃত এলাকাজুড়ে খনন কাজ চালানো হলে, মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা আরো অনেক রহস্য হয়তো তুলে আনা সম্ভব হবে।

সম্রাট কুইন শি হুয়াংয়ের সমাধির আশেপাশে আরও অনেক সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে একটি সমাধিতে ১৬ টন ওজনের একটি কফিন পাওয়া গেছে, যা সম্ভবত সম্রাটের পুত্র প্রিন্স গাওয়ের। এই আবিষ্কারটি চীনা কিংবদন্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছে যে প্রিন্স গাও তার পিতার সমাধিতে তার সাথে পরকালীন জীবন কাটানোর জন্য আত্মবলিদান করেছিলেন।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।