জমজমের পানির উপকারিতা

maxresdefault (40)
কি কেন কিভাবে

জমজমের পানির উপকারিতা

মুসলমানদের কাছে জমজমের পানি অতি বরকতময় ও পবিত্র। হাজার বছর আগে থেকে আজও পর্যন্ত প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ এই পানি ব্যবহার করছে। বৈজ্ঞানিকভাবে জমজমের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানি হিসেবে স্বীকৃত। জমজম কূপ নিয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা গবেষকরা অবাক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের গবেষণায় জমজমের পানির নানান উপকারী দিক উঠে এসেছে।

পবিত্র কাবাঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দূরে অবস্থিত আল্লাহর কুদরতের বাস্তব নিদর্শন জমজম কূপ। কাবা ঘরের সামনে হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইব্রাহিমের মাঝ বরাবর জমজম কূপের অবস্থান। বর্তমানে জমজম কূপটি মাসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে অবস্থিত। হাদিসে এই পানির অশেষ কল্যান ও বরকতের কথা উল্লেখ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিস মতে, “ভূ পৃষ্ঠের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও কল্যাণকর পানি জমজম কূপের পানি। এই পানি ক্ষুধার্তের জন্য খাদ্য ও রোগীর জন্য পথ্য।” (ইবনে মাজাহ) হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের সঙ্গে থাকা পাত্রে এবং মশকে জমজমের পানি বহন করতেন। তিনি এই পানি অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন।” (তিরমিজি, বায়হাকি) জমজম কূপের পানির এই বিশেষত্ব বর্তমানে বিজ্ঞান দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। জমজমের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা পানি। শুধু তাই নয় এর সমমান সম্পন্ন পানি পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি। সাধারণত, যে কোনো কূপের পানি দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকার ফলে তার রঙ ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্ত হাজার হাজার বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও জমজমের পানি রয়েছে অবিকৃত। এর রং, স্বাদ ও বিশুদ্ধতায় সামান্যতম কোন পরিবর্তন আসেনি। শুধু তাই নয়, এই পানিতে কোন জীবাণু, শৈবাল, ছত্রাক বা পানি দূষণকারী কোন ধরনের বস্তু টিকতে পারে না। কোনো নদী বা জলাশয়ের সঙ্গে এই কূপের কোনো সংযোগ নেই। অথচ প্রতি মুহূর্তে লাখ লাখ মানুষ এই পানি ব্যবহার করছে, আবার সাথে করে নিয়েও যাচ্ছে। তবুও জমজম কূপের পানি কখনও শেষ হয়না।

জমজমের পানির উপকারিতা


জমজমের পানি নিয়ে এখনও পর্যন্ত বহু গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। সৌদি আরবে জিওলজিক্যাল সার্ভের অধীনে ‘জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ নামে আলাদা একটি গবেষণাকেন্দ্রই রয়েছে। যার কাজই হল জমজমের পানি নিয়ে গবেষণা করা। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সাধারণ পানির তুলনায় জমজমের পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সল্টের পরিমাণ সামান্য বেশি, যা ক্লান্তি দূর করতে বিরাট ভূমিকা রাখে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জমজমের পানি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। সম্প্রতি মাসারু এমাটো নামের জাপানী এক পানি গবেষক জমজমের পানি গবেষণা করে বলেছেন, জমজমের এক ফোঁটা পানির যে নিজস্ব খনিজ গুণাগুণ আছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো পানিতে নেই। তার গবেষণায় আরো দেখা যায়, পৃথিবীর সাধারণ পানির তুলনায় জমজমের পানি ১ হাজার গুণ বিশুদ্ধ। আর তাই ১ হাজার ফোঁটা সাধারণ পানির সাথে যদি ১ ফোটা জমজমের পানি মেশানো হয়, তাহলে সেই সাধারণ পানিও জমজমের পানির মতো বিশুদ্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ সাধারণ যেকোন পানির সাথে জমজমের পানি মেশালে, সে পানিও জমজমের পানির গুণাগুণ অর্জন করে। বিশ্বের অন্যকোন পানিতে এ ধরনের আচরণ লক্ষ্য করা যায় না। জার্মান বিজ্ঞানী নাট ফিফার এর গবেষণা মতে, জমজমের পানি আশ্চর্যজনকভাবে দেহের সেল সিস্টেমের শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। পানি বিশেষজ্ঞ ড. ইয়াহইয়া খোশগে জমজম কূপের পানির বিশুদ্ধতা নির্ণয় করার জন্য আলট্রাভায়োলেট রশ্মি পরীক্ষা চালিয়েছেন। এই পরীক্ষার পর তিনি বলেন, জমজমের পানিতে কোনো ধরনের দূষণকারী পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায়নি। জমজমের পানিতে ফ্লুরাইডের উপস্থিতি থাকায় এর জীবাণুনাশক ক্ষমতাও আছে। জমজমের পানি ফ্রেঞ্চ আল্পসের পানি থেকেও বিশুদ্ধ। ফ্রেঞ্চ আল্পসের পানির প্রতি লিটারে বাইকার্বনেটের পরিমাণ ৩৫৭ মিলিগ্রাম; এবং জমজমের পানির প্রতি লিটারে বাইকার্বনেটের পরিমাণ ৩৬৬ মিলিগ্রাম। জমজম কূপের পানির রাসায়নিক গঠন অ্যালকালাইন প্রকৃতির, যা শরীরের অতিরিক্ত এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও হৃদযন্ত্রে গঠিত বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।


জমজম কূপের গভীরতা মাত্র ১০১ ফুট। কূপের পানির স্তর মাটি থেকে প্রায় সাড়ে ১০ ফুট নিচে। ২টি বিশাল আকারের পানির পাম্পের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ১১শ লিটার থেকে ১৮শ ৫০ লিটার পর্যন্ত পানি উত্তোলন করা হয়। পানি উত্তোলন করার পর এর স্তর ৪৪ ফুট নিচে নেমে যায়। কিন্তু পানি উঠানো বন্ধ করার মাত্র ১১ মিনিট পরেই আবারও পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। প্রতিদিন মক্কার মসজিদুল হারাম ও মদিনার সমজিদে নববী থেকে প্রায় ২০ লক্ষ গ্লাস জমজমের পানি পান করা হয়। জমজমের পানির চাহিদা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকায়, পানি সরবরাহে সৌদি কর্তৃপক্ষ রীতিমত হিমশিম খায়। তাই ২০১০ সালে মক্কার কাদাই এলাকায় জমজমের পানি সরবরাহের জন্য বিশাল এক প্রকল্প তৈরী করা হয়। সৌদি আরব সহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে জমজমের পানি পৌছে দেওয়ার জন্য এখানে সয়ংক্রিয়ভাবে জমজমের পানি বোতলজাত করা হয়। এখান থেকে প্রতিদিন ১ লক্ষ ৫০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু হজের মৌসুমে এই পরিমান গিয়ে দাড়ায় দৈনিক ৪ লক্ষ লিটারে। এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ১০ লিটারের প্রায় ১৫ লক্ষ বোতল জমজম পানি সংরক্ষণ করা হয়। এখান থেকে পরবর্তীতে বিশেষ ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে মদিনার মসজিদে নববী সহ, সৌদি আরবের অন্যান্য স্থানে জমজমের পানি পৌছে দেয়া হয়। কিছু কিছু স্থানে জমজমের পানি শীতলীকরণ করেও পরিবেশন করা হয়। মুসল্লী ও দর্শনার্থীরা যাতে নিজেদের প্রয়োজনে জমজমের পানি নিয়ে যেতে পারে সে জন্যও রয়েছে পৃথক ব্যবস্থা। এছাড়া মক্কা ও মদিনার দুই সমজিদের মুসল্লিদের সুবিধার্থে, বহু স্বেচ্ছাসেবক জমজমের পানি পিঠে বহন করে, সরাসরি পরিবেশন করে। সেই সাথে বিভিন্ন ছোট ছোট বোতলজাতকৃত পানিও সরবরাহ করা হয়। সৌদি আরব সহ অন্যান্য মুসলিম দেশে বাণিজ্যিক ভাবে জমজমের পানি মজুদ ও কেনা বেচা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। দুই পবিত্র মসজিদের অসংখ্য কর্মী সাধারণ মানুষের কাছে জমজমের পানি পৌছে দেওয়া ও এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
জমজমের পানি সম্পর্কে অনেক আলোচনা হল। এবার জমজম কূপ সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাক। আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার বছর আগে, ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী হাজেরা ও আদরের শিশু পুত্র ইসমাইল কে মক্কার বিরান পাহাড়ী এলাকায় নির্বাসনে রেখে আসেন। এই নির্বাসন ছিল আল্লাহর আদেশ মোতাবেক সবচেয়ে প্রিয় কোনো কিছুর কোরবানি। এক মশক পানি ও এক থলে খেজুর সহ তাদের কে বিরান মরুভূমিতে রেখে তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করেন। ফলে মক্কার বালুময় প্রান্তরে একাকি বসবাস করতে থাকেন মা হাজেরা ও তার শিশু ইসমাইল। তাদের স্বল্প রসদ অতি দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। একদিন নিদারুন পিপাসায় শিশুপুত্র ইসমাইল কে খোলা প্রান্তরে রেখে, মা হাজেরা সাফা মারওয়া পাহাড়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। তিনি সাতবার এদিক থেকে ওদিক ছুটে বেড়ান। এক পর্যায়ে আল্লাহর হুকুমে হযরত জিব্রাইল (আঃ) মরুভূমির ভেতর থেকে পানির ঝরনা প্রবাহিত করে দেন। মা হাজেরা পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর কাছে এসে দেখলেন এক অভূতপূর্ব ঘটনা। শিশুপুত্র ইসমাইলের পায়ের আঘাতে শুকনো জমিতে তৈরী হয়েছে বিশুদ্ধ পানির স্রোত। তখন মা হাজেরা পানির চারপাশে বালির বাধ দিয়ে বললেন, “জমজম” অর্থাৎ থেমে যাও। সেই থেকে এখন পর্যন্ত জমজম কূপ বহাল রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে বলে মুসলমানদের দৃঢ় বিশ্বাস।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।