ঘরে বসে আয় করার উপায়
ঘরে বসে আয় করার উপায়
ইন্টারনেটের কল্যাণে আমাদের জীবনে যত সুবিধা এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হল ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। করোনা মহামারীর পর থেকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বিষটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত হয়েছি। মহামারির ধকল কাটিয়ে বিশ্ব আবারো স্বাভাবিক হলেও, বহু মানুষ প্রথাগত চাকরি বাদ দিয়ে, ঘরে থেকে নিজের মত করে কিছু করতে চেষ্টা করছেন। ঘরে বসে আয় করার নানা উপায় রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই ঘরে বসে অর্থ উপার্জন সম্ভব।
ফ্রিল্যান্সিং
অনেকেই মনে করেন ঘরে বসে আয় করাটা হয়ত অনেক সহজ। কিন্তু বিয়য়টি মোটেও সেরকম নয়। এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে সহজ বিষয়টি হয়ত, কাজের জন্য আপনাকে অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না। কিন্তু সফলতা পেতে চাইলে, বাইরে গিয়ে করা যে কোন কাজের চেয়ে, ঘরের কাজে আপনাকে বেশি পরিশ্রম করতে হতে পারে। ঘরে বসে আয় করার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে, ঘরে বসে কী কী ধরনের সার্ভিস প্রদান করা যায়। তার পরে জানার বিষয় হল, কোথায় গেলে আপনি সার্ভিস গুলো প্রদান করে আয় করতে পারবেন। সেই বিবেচনায় ঘরে বসে আয় করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। যা অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোর মাধ্যমে করা যায়। বর্তমানে আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি মার্কেটপ্লেসে সহজেই কাজ পাওয়া যায়। এইসব মার্কেট প্লেসে আপনি ঘণ্টা হিসেবে অথবা সাার্ভিস হিসেবে আপনার কাজের দাম নির্ধারণ করতে পারবেন। দক্ষতা অনুযায়ী যে কোন বিষয়ের ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস ঘরে বসেই করা সম্ভব। এবং কাজ শেষে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম বা সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে পারিশ্রমিক চলে আসবে।
ব্লগিং বা নিজস্ব ওয়েবসাইট
ঘরে বসে আয় করার জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো ব্লগিং এবং নিজস্ব ওয়েব সাইট থেকে আয়। সেজন্য প্রথমেই আপনাকে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। নানান ফ্রি ব্লগ সাইট রয়েছে যেখানে আপনি আপনার ব্লগ চালু করতে পারেন। এছাড়া বর্তমানে খুব সামান্য টাকা খরচ করেও মোটামুটি ভালো মানের ওয়েবসাইট তৈরী করা যায়। ব্লগ অথবা ওয়েবসাইটে বিভিন্ন জনপ্রিয় বিষয়ে লেখালেখি করে বা, চাহিদা সম্পন্ন বিষয়ের আর্টিকেল পাবলিশ কতে হবে। ধীরে ধীরে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ভিজিটর বাড়তে থাকলে, গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে আয়ের সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ মাধ্যম হলো গুগল অ্যাডসেন্স। আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকেন না কেন, আপনার সাইটে নিয়মিত ভিজিটর বাড়ানোর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। আপনার পাঠকরা গুগল এর দেয়া বিজ্ঞাপন দেখলে বা, বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই আপনার উপার্জন শুরু হয়ে যাবে। প্রক্রিয়াটা খুব সহজ, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী। তবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করে নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোড করতে থাকলে, অবশ্যই সফল হওয়া যাবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো, অন্য কারো পণ্য বা সেবা প্রচার করে, তার বিক্রি বাড়ানো। এর মাধ্যমে আপনি বিক্রিত পণ্যের দাম থেকে নির্ধারিত হারে কমিশন পাবেন। আপনার মাধ্যমে যত বেশি পণ্য বিক্রি হবে, তত বেশি আয় হবে আপনার। এখন প্রশ্ন হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোথায় করা যায়? এর আসলে নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। কারণ অনলাইন প্লাটফর্মের সম্ভাব্য সকল মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্যের প্রচার বাড়ানেই উদ্দেশ্য। সাধারণত ওয়েবসাইটের মালিকেরা তাদের ওয়েব পোষ্টে কোন কম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন জুড়ে দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে। ইউটিউবাররা তাদের ভিডিওতে বিভিন্ন পণ্য বা সেবার প্রচার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে। এছাড়া আপনি চাইলে আপনার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংও বলা হয়। বিশ্বজুড়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অ্যামাজন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু ই কমার্স প্রতিষ্ঠানও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যবস্থা চালু করেছে।
গ্রাফিকস ডিজাইন
বর্তমানে ঘরে বসে আয় করার একটি সেরা উপায় হলো গ্রাফিকস ডিজাইন। ইন্টারনেটের পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে, ভিজ্যুয়াল গ্রাফিকসের চাহিদাও বাড়ছে। ইদানিং বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইটগুলোতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম গ্রাফিক ডিজাইনারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়। এছাড়া প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে মার্কেটপ্লেস থেকে আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠানের কাজ করেও বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। গ্রাফিকস ডিজাইন যেহেতু একটি জনপ্রিয় স্কিল, তাই এই ক্ষেত্রে কাজ পেতে বেশ প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গ্রাফিকস ডিজাইনের চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং ছাড়াও উপার্জনের আরেকটি ক্ষেত্র আছে। আর তা হল বিভিন্ন স্টক ওয়েবসাইটে গ্রাফিক টেমপ্লেট বিক্রি করা। বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রিক শুভেচ্ছা ডিজাইন, চাকরির সিভি, ইমেইল টেমপ্লেট, বুক কভার, ফেসবুক ইউটিউবের ব্যানার, লোগো সহ চাহিদা সম্পন্ন যে কোন বিষয়ের গ্রাফিক টেমপ্লেট তৈরী করে স্টক সাইটগুলোতে বিক্রি করা যায়। ফ্রিপিক, শাটারস্টক, আইস্টক সহ বহু ওয়েবসাইটে মানসম্পন্ন গ্রাফিক টেমপ্লেট বিক্রি করে, যে কোন চাকরীর চেয়ে বেশ ভালো অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
অনেকেই পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জনের আগেই, ঘরে বসে উপার্জনের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। কিন্ত কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা আর দক্ষতা থাকলে, কিছুটা দেরিতে হলেও, সফলতা আসবেই। বাংলাদেশে কাজের দক্ষতা অর্জনের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক অভাব রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হল, ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট। বিগত ১৩ বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটে কোর্স করেছেন, যাদের মধ্যে ২৩ হাজার জন, সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রাফিক আর্টস ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড সহ বহু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ক্রিয়েটিভ আইটি ইন্সটিটিউট। এখানে কোর্স শেষে সার্টিফিকেট প্রদান, ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করা, ৭০০ এর অধিক কম্পানিতে চাকরি পেতে সহায়তা সহ, ২৪ ঘন্টা অনলাইন চ্যাটের মাধ্যমে কোর্স সম্পর্কিত সকল ধরনের সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়। ক্রিয়েটিভ আইটির স্টুডেন্টদের বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল রিসোর্স এবং লক্ষ টাকারও বেশি দামের প্রফেশনাল টুলস সম্পূর্ণ ফ্রি দেওয়া হয়। ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের কাছ থেকে কাজ শিখে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফল হতে চাইলে, ডেসক্রিপশন এবং পিন কমেন্টে দেওয়া লিংক থেকে ক্রিয়েটিভ আইটির ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন।
ইউটিউবিং
বর্তমানে ঘরে বসে ইনকাম করার সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হল ইউটিউবিং। বিভিন্ন দিক থেকেই সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে ইউটিউব সেরা অবস্থানে রয়েছে। তার অন্যতম একটি কারণ হল, এই প্লাটফর্ম থেকে খুব সহজেই আয় করা যায়। স্মার্টফোন ব্যবহার কওে, কিন্তু ইউটিউব ব্যবহার করেনা, এমন মানুষ হয়ত খুব কমই আছে। কারণ প্রতিটি স্মার্টফোনে ইউটিউব অ্যাপ আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকে। তাই এই প্লাটফর্মে দর্শকের কোন অভাব নেই। ইউটিউব এর বিশাল অডিয়েন্সের বিপরীতে কনটেন্ট এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই কনটেন্টের চাহিদা পূরণ করতে আপনিও শুরু করতে পারেন ইউটিউবিং। মজার বিষয় হলো আপনি যে বিষয়েই ভিডিও বানান না কেন, ইউটিউবে ঐ বিষয়ের অডিয়েন্স নিশ্চই পাবেন। অর্থাৎ যে কোন ধরণের কনটেন্ট দিয়েই, ইউটিউব থেকে আয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে বাংলাভাষায় বহু মানহীন কন্টেন্টে ইউটিউব সয়লাব। বহু লোক আলতু ফালতু কন্টেন্ট আপলোড করেই ইউটিউবে জনপ্রিয় হতে চায়। অনেকে দু একটি ভিডিও দিয়েই, হতাশ হয়ে পড়ে। ইউটিউবে রাতারাতি সফলতা আসে না। এখানে টাকা উপার্জন করা যতটা সহজ, টিকে থাকা ততটাই কঠিন। ইউটিউবে সফলতা অর্জন করতেও, আপনাকে বেশ কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভিডিও এডিটিং তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া, আপনার কন্টেন্টের ধরন অনুযায়ী আপনার আরো কিছু স্কিলের দরকার হতে পারে। কোন একটি ইউটিউব চ্যানেল যখন এক হাজার সাবস্ক্রাইবার অর্জন করে, এবং বিগত এক বছরের মধ্যে চ্যানেলটি ৪ হাজার ঘন্টার বেশি দেখা হলে, ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জনের যোগ্যতা তৈরী হয়। ইউটিউব অনুমোদন দিলে, গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে উপার্জিত টাকা সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে চলে আসবে।