গোঁড়া ইহুদীরা কেন ইসরায়েলের বিপক্ষে

maxresdefault (32)
কি কেন কিভাবে

গোঁড়া ইহুদীরা কেন ইসরায়েলের বিপক্ষে

ইসরায়েলের ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি অংশ, ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরোধী। যেসব ইহুদি ইসরায়েলের বিপক্ষে তাদের বলা হয় Ultra-Orthodox Jews বা অতি গোঁড়া ইহুদি। এরা হারেদি ইহুদি হিসেবে পরিচিত। অতি ধার্মিক এই ইহুদি সম্প্রদায় মনে করে, তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্র ভেঙে েফলা উচিত। এবং ফিলিস্তিনীদের কাছে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তারা দেশে বিদেশে আন্দোলনও করে। তারা আরো মনে করে জায়নিস্ট মুভমেন্ট বা জায়নবাদী আন্দোলন মূলত প্রকৃত ইহুদি মতাদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।

গোঁড়া ইহুদিরা কেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ?

ইহুদিবাদ বানাম জায়নবাদ

ইহুদিদের মতপার্থক্য নতুন কিছু নয়। বহু আগে থেকেই ইহুদিদের মধ্যে নানা ধরনের মতবিরোধ চলে আসছে। সেজন্য একটি প্রবাদও আছে, Two Jews, Three Opinions.

গোঁড়া ইহুদিরা কেন ইসরায়েলের বিপক্ষে তা বুঝতে হলে Judaism এবং Zionism এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। Judaism হল ইহুদি ধর্মমত। যার দ্বারা ইহুদি ধর্মের মূলধারার চর্চা করাকে বোঝায়। শুধুমাত্র ইহুদিরাই Judaism চর্চা করে। অন্যদিকে Zionism হল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এর উদ্দেশ্য হল ইহুদিদের জন্য নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা। তবে Zionism এর সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হলে ইহুদি হওয়া আবশ্যক নয়। অনেক ইহুদি জায়নিষ্ট মোটেও ধার্মিক নয়। এমনকি প্রথমদিকের জায়নবাদীদের অনেকই ছিল খ্রিষ্টান।

হারেদি ইহুদি

ফিলিস্তিন দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও অনেক আগে থেকে, হারেদি ইহুদিরা জেরুজালেমে বসবাস করত। বতমানে জেরুজালেমের বাইরে লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কেও তাদের অবস্থান রয়েছে। গোঁড়া ইহুদিরা মনে করে, ইশ্বর তাদেরকে পবিত্র ভূমি থেকে নির্বাসিত করেছে এবং শুধুমাত্র ইশ্বরের সহায়তায় ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে। আর তা তখনই হবে যখন মসিহের আগমন ঘটবে।

হারেদিদের দাবি, Zionism বা জায়নবাদের সাথে ইহুদি ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। বরং Zionism তৈরীই হয়েছে ইহুদি ধর্মকে নষ্ট করার জন্য। ঠিক যেভাবে পবিত্র কুরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে, ইসলামের নামে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো, শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম খারাপ করছে। ঠিক একইভাবে জায়নবাদের নামে ইসরায়েলের সন্ত্রাসবাদী সরকার পবিত্র তাওরাতের শিক্ষার বিপরীতে কাজ করে, ইহুদি ধর্মের সম্মান নষ্ট করছে।

[বক্তব্য]

হারেদিরা মনে করে, প্রকৃত ইহুদিরা কখনও জায়নবাদ সমর্থন করতে পারে না।

ইসরায়েলে হারেদিদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমান ইসরায়েলের ১৪ শতাংশই হারেদি সম্প্রদায়ের ইহুদি। এরা ইসরায়েলের ভেতর বসবাস করলেও, ইসরায়েল সরকারকে অবৈধ মনে করে।

ইসরায়েল কেন ইহুদি নয়

হারেদিরা বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রকে মূলত দুটি কারণে অবৈধ মনে করে। প্রথমত, ১. বর্তমান ইসরায়েল একটি সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এবং দ্বিতীয়ত ২. এখনও মসিহের আগমন ঘটেনি। তাদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন অ-ইহুদি দেশের সহায়তা এবং সমর্থনে ইসরায়েল টিকে আছে। এবং তারা ইহুদি ধর্মের মতাদর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করছে না। বরং ইসরায়েল যেন এক পাপের দেশে পরিণত হয়েছে। তাদের মতে যারা ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের কাজ করছে, তারা ইশ্বররের দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে, এবং ইহুদিদের দেশ গঠনের বিষয়টিকে হাস্যকর বানিয়ে ফেলেছে। তারা মনে করে, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইহুদি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনীদের জমি দখল করে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তাওরাতের বাণীর সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করছে।

[বক্তব্য]

Ultra-Orthodox ইহুদিরা ইসরায়েল সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগীতা গ্রহণ করে না। সেজন্য তাদেরকে বেশ মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। ইসরায়েলী নিরাপত্তা বাহিনীর সাথেও তাদের নিয়মিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ইসরায়েলের সকল নাগরিককে দুই থেকে তিন বছর Israel Defense Forces বা IDF এ কাজ করতে হয়। কিন্তু হারেদিরা এই নিয়ম মানে না। ২০৫০ সালের মধ্যে ইসরায়েলের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগই হবে হারেদি। ইসরায়েলে সরকার মনে করে তখন হারেদিদের জন্য ইসরায়েলকে অনেক ভুগতে হবে। ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরাও হারেদিদেরকে ইসরায়েলের জন্য বোঝা বলে মনে করে। কারণ হারেদি সম্প্রদায়ের পুরুষরা কোন কাজ করে না। তাদের প্রধান কাজ হল দিন রাত তাওরাত পাঠ করা। পরিবারের ভরণ পোষণ এবং সন্তান লালন পালনের সকল কাজ করে হারেদি নারীরা।

তবে Ultra-Orthodox ইহুদিদের একটি অংশ রাজনীতিতেও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। Shas Party এবং United Torah Judaism নামের দুটি দল, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কোয়লিশন সরকারের অংশ।

অতি গোঁড়ামি

হারেদিরা আধুনিক জীবন যাপনকে পাপ মনে করে। তারা স্মার্টফোন এবং ইন্টারন্টে সংযোগ আছে এমন কোন ডিভাইস ব্যবহার করে না। তারা অতি সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, এবং খুব জরুরী না হলে ফোন কলও করে না। তারা ধর্মনিরপেক্ষ ইসরায়েলের অনেক বিষয়ের বিরোধিতা করে। বিশেষ করে ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর তেল আবিবের জীবন যাত্রা হারেদি ইহুদিদের একদমই পছন্দ নয়। কারণ তেল আবিব ইসরায়েলের পাপের শহর হিসেবে পরিচিত।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।