কৃত্রিম বৃষ্টি

maxresdefault (21)
কি কেন কিভাবে

কৃত্রিম বৃষ্টি

সাম্প্রতিক সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে ভয়াবহ তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। এরফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে খরাসহ পানির ব্যাপক স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে। এর সামাধান হিসেবে দুবাই, চীনের মত আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে সামর্থবান দেশ গুলো কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টি পাত ঘটাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতির এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মেঘ কিভাবে মানুষের হস্তক্ষেপে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ছে, তা সত্যিই এক বিষ্ময়।

দুবাই কিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি নামায় ?

সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানের কথা অনেক শোনা গেলেও, এটি কিন্তু মোটেও নতুন আবিষ্কৃত কিছু নয়। ১৯৪৬ সালে বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম গবেষনার জন্য কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সফল হয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন সময় এর উন্নতি সাধন করা হলেও, সম্প্রতিক সময়ের আগে এই প্রযুক্তি খুব একটা ব্যবহার করা হয়নি। কৃত্রিম বৃষ্টি কিভাবে ঘটানো হয়, তা জানার আগে, প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টিপাত ঘটার প্রক্রিয়াটা বুঝতে হবে। বৃষ্টির মূল উপাদন হল মেঘ। অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা অথবা বরফের ক্ষুদ্র স্ফটিক একত্রিত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এসব পানির কণা গুলো এত ছোট থাকে যে, সেগুলো নিচে ঝরে না পরে, বাতাসে ভাসতে থাকে। একসাথে অনেক অনেক জলকণা জমে বড় মেঘের আকারে জমা হয়। অনেক সময় মেঘের ভেতর জলকণাগুলো একে অপরের পাশদিয়ে বয়ে বেড়ায় কিন্তু একটির সাথে আরেকটি জোড়া লাগে না। আবার কোন সময় এসব জলকণা একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে জোড়া লেগে যায়। সেসময় এসব জল কণা বাতাসে থাকা ধুলাবালির সাথে মিলিত হয়ে খানিকটা ভাড়ি হয়ে যায়। ভারি জলকণা আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না, তখন এগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ে। কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের জন্যও ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কৃত্রিমভাবে শুধু বৃষ্টিপাতই, তুষারপাত এবং শিলাবৃষ্টিও ঝড়ানো সম্ভব।
কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ক্লাউড সিডিং। বাংলায় যাকে বলা যায় মেঘের বিজ বপন করা। যখন মেঘের কণাগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না, তখন মেঘের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে, জলকণা গুলোকে যুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন উপায়ে মেঘের গঠন পরিবর্তন করে দেওয়াই হল ক্লউড সিডিং। বিমান অথবা ড্রোনের সাহায্যে মেঘের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ ছুড়ে দেওয়া হয়। তবে চীনারা রকেট বা ক্ষেপনাস্ত্রের মত যন্ত্র ব্যবহার করেও ক্লাউড সিডিং করেছে। এছাড়াও মাটিতে থাকা বিশাল যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে ভারী মেঘ তৈরী করে, সেগুলোকে প্রাকৃতিক মেঝের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সফলভাবে ক্লাউড সিডিং করাটা খানিকটা কষ্টসাধ্য। তবে ক্লাউড সিডিং ঠিকমত কাজ করলে মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। বিমান থেকে ক্লাউড সিডিং এর জন্য সাধারণত ড্রাই আইস ব্যবহার করা হয়। যা মূলত কার্বণ ডাই অক্সাইডের কঠিন রূপ। এছাড়া সিলভার আয়োডাইট এবং সোডিয়াম ক্লোরাইডের মত লবণ ছিটিয়েও ক্লাউড সিডিং করা যায়। এক্ষেত্রে সিলভার আয়োডাইটের ব্যবহার বেশি। কারণ সিলভার আয়োডাইটের রাসায়নিক গঠন পানির রাসায়নিক গঠনের সাথে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ। সেকারণে এগুলোকে যখন মেঘের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন তা মেঘের জলকণাগুলোকে আকৃষ্ট করে। এরপর ধীরে ধীরে জলকণা গুলো বড় হয়ে বৃষ্টি আকারে ঝড়ে পড়ে। এধরনের কৃত্রিম বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিক পরিবেশের, বিশেষ করে জলজ প্রাণীদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সেজন্য দুবাই এক নতুন পদ্ধতিতে ক্লাউড সিডিং করেছে। তারা বৈদ্যুতিক শকের মাধমে মেঘের মধ্যে থাকা জলকণার কাঠামো বদলে দিচ্ছে। এছাড়া সাধারণ ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে দুবাইয়ের মত মরুভূমিতে বৃষ্টি নামানোও সহজ নয়। কারণ দুবাইয়ে জলকণা বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ার আগেই আবার বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। সেজন্য দুবাই এর মেঘের জল কণাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বড় করার প্রয়োজন হয়। দুবাই অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর কারণে এর আশেপাশের অঞ্চল সহ ভারত বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এর ফলে ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের পানি প্রবাহ চক্র বিঘিœত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ধাপে অসময়ে সাগরে নি¤œচাপ সৃষ্টি সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।


কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর পদ্ধতি খুব সহজ হলেও, এর পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। মাত্র ৫০ থেকে ১২৫ মিলিমিটার বা ২ থেকে ৫ ইঞ্চি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটাতে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্যান্য উপায়ে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার খরচ হিসেব করলে, কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঘটানো তেমন বেশি ব্যয়বহুলও নয়। কারণ ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানি পরিবহণ ও বিশুদ্ধকরণ এবং পানি সংরক্ষণের জন্য নদীতে ড্যাম বা বাঁধ নির্মানের খরচ এর চেয়েও অনেক বেশি। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কৃত্রিম ভাবে যেহেতু বৃষ্টি তৈরী করা যায়, তাহলে যেসব অঞ্চলে দাবানলে কারণে, বিস্তৃত বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হয়ে যায়, সেখানে কেন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়ে দাবানলের আগুন নেভানো হয় না? এর প্রধান কারণ হল কৃত্রিম বৃষ্টি যেখানে খুশি সেখানে তৈরী করা যায় না। কোন অঞ্চলে যদি প্রাকৃতিক মেঘ থাকে, ক্লাউড সিডিং এর মাধ্যমে, শুধু মাত্র সেই প্রাকৃতিক মেঘকে বৃষ্টিতে রূপান্তর করা যায়। অর্থাৎ মানুষ কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি হবার মত পর্যাপ্ত মেঘ সৃষ্টি করতে পারে না। শুধু মেঘকে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি হিসেবে ঝরাতে পারে। অনেক এলাকার মেঘ, সেই অঞ্চলে বৃষ্টি না ঘটিয়ে আশে পাশের অঞ্চলে উড়ে গিয়ে বৃষ্টি হয়। অথবা কখনও কখনও এসব মেঘ থেকে বৃষ্টিই হয় না। কৃত্রিম পদ্ধতি শুধুমাত্র সেই অবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। সত্যিকার অর্থে কৃত্রিম বৃষ্টির মাধৗমে কোন অঞ্চলের খড়া দূর করাও সম্ভব নয়। কারণ, কোন অঞ্চল যদি ইতোমধ্যেই অত্যন্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাহলে সেখানে মেঘ সৃষ্টি হাবার মত পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প অবশিষ্ট থকার কথা নয়। আর মেঘ না থাকলে, বৃষ্টিও হবে না। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৫২ টি দেশ কৃত্রিমভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের গবেষনায় করছে। তাদের আশা একদিন হয়ত তারা নিজেদের ইচ্ছেমত আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।