এইচএমপিভি কি নতুন মহামারি নিয়ে আসবে
এইচএমপিভি কি নতুন মহামারি নিয়ে আসবে
ভূমিকা
সম্প্রতিক সময়ে একটি নতুন ভাইরাস নিয়ে গণমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যম পর্যন্ত বেশ আলোচনা চলছে। ভাইরাসটির নাম Human Metapneumovirus; যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে HMPV। চীনে ভাইরাসটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে, গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। েকাথাও কোথাও বলা হচ্ছে যে, বিশ্ব আরেকটি নতুন মহামারির ঝুঁকিতে রয়েছে।
HMPV পরিচিতি
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা HMPV একটি শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস যা ফ্লু এবং সাধারণ ঠান্ডার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি ২০০-৪০০ বছর আগে পাখিদের মধ্যে উদ্ভূত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সে হিসেবে HMPV কোন নতুন ভাইরাস নয়। তবে এই ভাইরাস খুব সাধারণ হলেও, এটি ছোট শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
HMPV কিভাবে ছড়ায়?
HMPV ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা এবং ফ্লুর মতো ছড়ায়। একজন সংক্রমিত ব্যক্তি যখন হাঁচি বা কাশি দেন, তখন তার নাক বা মুখ থেকে নির্গত জলকণার মাধ্যমে এটি ছড়াতে পারে। এছাড়াও, যদি সংক্রমিত ব্যক্তি মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করার পর, অন্য কোনো জিনিস স্পর্শ করে এবং তারপর সেই জায়গা অন্য কেউ স্পর্শ করে, তাহলেও HMPV ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তারমানে এই ভাইরাসও করোনা ভাইরাসের মত করেই ছড়ায়। ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৩-৬ দিন। তার মানে কারো শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
চীনের প্রেক্ষাপট
২০২০ সালে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর চীন শূণ্য কভিড নীতি গ্রহণ করেছিল। যার ফলে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে চীনেই সবচেয়ে কঠোর এবং দীর্ঘ সময় লকডাউন পালন করা হয়েছে। শূণ্য কোভিড নীতির কারণে চীনের জনগণ দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসেনি। ফলে তাদের ইমিউন সিস্টেম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর তারা হঠাৎ অনেক অনুজীবের সংস্পর্শে আসার কারণে, চীনে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছর চীনে HMPV সংক্রমণের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। তবে বিশ্ব গণমাধ্যম, বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া এই খবরকে এমন অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছে, যেন এটি পরবর্তী মহামারীর সূচনা হতে চলেছে।
HMPV কতটা বিপজ্জনক?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, HMPV-এ মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই কম। তবে ৬ মাসের কম বয়সী শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি গুরুতর হতে পারে।
২০১৮ সালের দ্য ল্যানসেট-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ওই বছরে HMPV-এর কারণে ১৬,১০০ জন মারা গিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ৬৫% ছিল ৬ মাসের কম বয়সী শিশু। এই ভাইরাসের মৃত্যুহার সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার কাছাকাছি, তবে কিছুতেই COVID-19 এর মতো অতটা বেশি নয়।
HMP ভাইরাস ২৪ বছর আগে আবিষ্কৃত হলেও, এখনো এর কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এর একটি ভাকসিন যদিও তৈরী করা হয়েছিল। কিন্তু ভ্যাকসিনটি প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালানোর সময় দেখা যায়, এর ফলে তাদের ফুসফুসের প্রদাহ আরো বেড়ে গেছে। সেকারণে সেই ভ্যাকসিন আর কখনও মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাস বহু বছর ধরেই প্রচলিত। এটি কোনো নতুন রোগ নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। HMPV সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে দূরত্ব বজায় রাখার মত সাধারণ সতর্কতা গুলো মেনে চলাই যথেষ্ট। এগুলো শুধু HMPV নয়, বরং যেকোনো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
কারণ, শুধু করোনা বা এইচএমপিভিই নয়, সাধারণ ঠান্ডা কাশির জন্য প্রায় ২০০টিরও বেশি ভিন্ন ভাইরাস দায়ী। তবে অনেক বিজ্ঞানীর মতে, মাঝেমধ্যে ঠান্ডা কাশির মত সামান্য অসুস্থ হওয়া ভালো।
কারণ এটি আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় এবং কর্যকর করে তোলে।