আশুরা

maxresdefault (15)
কি কেন কিভাবে

আশুরা

ভূমিকা

হিজরী সনের প্রথম মাস মহররম। এই মাসের ১০ তারিখ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী পরিভাষায় মহরম মাসের ১০ তারিখ কে আশুরা নামে অভিহিত করা হয়।

পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায় সৃষ্টির শুরু থেকেই মহান আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২ টি; এর মধ্যে চারটি মাস অত্যন্ত সম্মানিত। (সূরা তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াত) সেই সম্মানিত চারটি মাসের একটি হল মহরম।

হাদিস শরীফে মহরম কে “শাহরুল্লাহ” বা আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই মাসের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সৃষ্টির আদি থেকে মহরমের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরায় বহু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। সে হিসেবে এই দিনটিকে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি তারিখ বললেও ভুল হবে না।

আশুরা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ?

আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনা

ধারণা করা হয় হযরত আদম (আ) এর সৃষ্টি এবং তাকে পৃথিবীতে অবতরণ করানো হয়েছিল এই আশুরার দিনে। হযরত নুহ (আ) এর সময়কার মহাপ্রলয়ে, তার নৌযান যাত্রা আরম্ভ করেছিল এবং তৎকালীন বন্যা পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটেছিল আশুরা কেন্দ্রিক সময়ে।

একাধিক তফসিলের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ইসলামের ইতিহাসের আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং সুসংবাদ এসেছে আশুর দিনে। হযরত ইব্রাহিম (আ) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে আশুরার দিনেই মুক্তি পেয়েছিলেন। হযরত ইউনুস (আ) মাছের পেট থেকেও মুক্ত হয়েছিলেন এই দিনে। হযরত দাউদ (আ) আশুরার দিনে জালুত বাহিনীর উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। হযরত আইয়ুব (আ) ১৮ বছর অসুস্থতার পর এই দিনে রোগ মুক্ত হয়েছিলেন। হযরত ঈসা (আ) কে আশুরার দিনেই আসমানে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এর বাইরেও আরো বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে আশুরা।

আশুরার রোজা

অতীতের ইসলামের সকল নবী রাসূলের আমলেই আশুরার দিন রোজা পালন করা হতো। ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) মক্কায় থাকতে আশুরার রোজা পালন করতেন।

নবীজি (সা) মদিনায় আসার পর দেখতে পান ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখে। আশুরার দিনেই মুসা (আ) সিনাই পর্বতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে মূসা (আ) এর নেতৃত্বে বনী-ইসরাঈল ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করেছিল এই আশুরার দিনে। এবং এই দিনেই মূসা (আ) তার উম্মতকে নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যায়।

তারই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখত। মহানবী (সা) বলেন মুসা আলাই সালাম এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইহুদিদের চেয়েও বেশি ঘনিষ্ঠ। তাই তিনি তার সাহাবীদেরকে মহরমের ৯/১০ অথবা ১০/১১ তারিখ মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বলেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়।

অতীতে আশুরার রোজা রাখা ছিল ফরজ। কিন্তু দ্বিতীয় হিজরীতে রমজান মাসের রোজা ফরজ হবার পর আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজার পর আশুরার রোজাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তায়ালা এর ওসিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। শুধু তাই নয়, একাধিক হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মহরম মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য সকল মাসের চেয়ে উত্তম।

কারবালা

আশুরার ইতিহাসের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কারবালার ঘটনা। কারবালার যুদ্ধের হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক ইতিহাস আশুরাকে আরো বেশি অবিস্মরনীয় করে রেখেছে। এই দিনে নবীজি (সা) এর নাতি হোসাইন ইবনে আলী (রা) এবং উমাইয়া খলিফা প্রথম ইয়াজিদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

ইয়াজিদ খিলাফতের উত্তরাধিকার পাওয়ার পরপরই হোসাইন (রা) সহ আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তার আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। কিন্তু হোসাইন (রা) ইয়াজিদের আনুগত্য অস্বীকার করেন। কারণ তিনি মনে করতেন ইয়াজিদ ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নত পরিবর্তন করেছে।

৬৮০ খ্রিস্টাব্দ, ৬১ হিজরির আশুরার দিনে উমাইয়া সৈন্যরা হোসাইন (রা) পরিবার ও সফরসঙ্গীদের ৭২ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তখন থেকে কারবালার যুদ্ধ শিয়া মতাবলম্বীদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে।

শিয়া মুসলিমরা প্রতিবছর মুহাররম মাসে কারবালার যুদ্ধ কে গভীরভাবে স্মরণ করে। পহেলা মহরম থেকে তাদের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে, আশুরার দিনে সেই আনুষ্ঠানিকতার শেষ হয়। বিশ্বের ৫০ টিরও অধিক দেশে কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণ করে শোক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। ইরান, ইরাক এবং সিরিয়ায় কারবালা কেন্দ্রিক আশুরা সবচেয়ে বেশি ঘটা করে পালন করা হয়। ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের শিয়া মতাবলম্বীদেরও আশুরার দিনে ঘটা করে তাজিয়া মিছিল বা শোক র‌্যালি করতে দেখা যায়।

Leave your thought here

Your email address will not be published. Required fields are marked *


দিন
ঘণ্টা
মিনিট
সেকেন্ড
আমাদের লাইভ ক্লাস শেষ হয়েছে, তবে আপনি এখন ফ্রি রেকর্ডেড কোর্সে ইনরোল করে দেখতে পারবেন।
আপনার রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

আপনার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি হয়েছে। প্রদত্ত ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

কোর্সের তারিখ: ০৩/১০/২০২৫
সময়: রাত ৯টা থেকে
(বাংলাদেশ সময়)

আপনার সঠিক - নাম, ইমেইল দিয়ে
Sign Up এ ক্লিক করুন।