আয়নাঘর
আয়নাঘর
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে, একের পর এক তার নানা কুকীর্তি বেরিয়ে আসছে। রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণকারীদেরকে দমন করতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বহু মানুষকে গুম করা হয়েছে। যে গোপন কারাগারে গুম করা হতো, সেই জায়গাটার ছদ্মনাম হল আয়নাঘর। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার কিছু অসৎ অফিসার এই আয়না ঘর পরিচালনা করতো।
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা Directorate General Of Forces Intelligence বা DGFI হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে যে ডিজিএফআই-এর Counter Terrorism Intelligence Bureau বা CTIB আয়নাঘর নামে পরিচিত কুখ্যাত কারাগারটি রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।
২০২২ সালে সুইডেন ভিত্তিক একটি স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ এর করা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আয়নাঘর এর বিষয়টি সবার সামনে উঠে আসে। সেখান থেকেই দেশের মানুষ জানতে পারে যে, বিভিন্ন সময়ে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদেরকে আয়নাঘরে আটক করে নির্যাতন চালানো হত।
আয়নাঘর ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরেই অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। আয়নাঘরে বন্দি থাকা সাবেক এক সেনা সদস্য জানিয়েছেন অতীতে এই জায়গাটি Joint Interrogation Cell নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে একে সংস্কার ও বর্ধিত করে আয়নাঘর বানানো হয়েছে।
গুমের শিকার হওয়া বেশ কয়েকজন সাবেক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আয়নাঘরে অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন এই আয়না ঘরটি ডিজিএফআই এর অফিসের ঠিক পেছনেই অবস্থিত। এখানে কমপক্ষে ১৬টি কক্ষ রয়েছে; যেখানে একসাথে ৩০ জনকে বন্দী করে রাখা যায়। আয়নাঘরের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা গোপন এই কারাগারের ছবিও প্রকাশ করেছেন। এসব ছবি দেখলেই বোঝা যায়, গোপন এই কারাগারে কাউকে বন্দী করা কতটা অমানবিক। এখানে বহু লোক কে বিনা বিচারে বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ আটকে রাখা হয়েছে।
আয়নাঘরের বন্দিদের একজন বলেন, এসব কয়েদখানার দেয়ালে বহু লোকের নানা রকমের আর্তনাদ খোদাই করে লেখা আছে। কত লোককে যে এখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কোন উয়ত্তা নেই। সবাইকে যে এখানে দীর্ঘ সময় বন্দী করে রাখা হয়েছে এমনও নয়। অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে আবার, অনেকে এখান থেকে হত্যা করা হয়েছে।
আয়নাঘরের ছবি হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে এরকম কয়েকটি ছবি প্রচারিত হচ্ছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে বহু মানুষের কঙ্কালের স্তুপ। ছবিটির সততা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আয়না ঘরের বন্দিদের নির্যাতনের কথা শুনে যেকোনো হৃদয়বান ব্যক্তির মনে হবে, এমন অমানবিক পরিবেশে দীর্ঘদিন বন্দি করে রাখার চেয়ে, কাউকে হত্যা করাও অনেক ভালো।
অভিযোগ রয়েছে ডিজিএফআই এর কিছু অসৎ কর্মকর্তা, শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে অবৈধ রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য এসব কর্মকান্ড করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। হাসিনা সরকার পতনের পরপরই এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, শুধু ঢাকা সেনানিবাস নয় সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম আরো বেশ কিছু আয়নাঘর থাকতে পারে।
শেখ হাসিনা মনে করতো ওরা আমাদের দয়া করে শাসন করতেছে । ঠিক ব্রিটিশদের মতো মনে করতো এই দেশ শাসন করা অধিকারতার অধিকার। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য থেকে সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।